আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের পুকুরে শাপলা দেখা

"I may disagree of what you say, but I will defend to the death - your right to say it." – Voltaire

অনেক পুরোনো একটি গল্প বলি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি গল্পটিঁ অনেক আগেই শুনে থাকবেন, মৃদু হেসে থাকবেন কিংবা মুখ বাঁকিয়ে থাকবেন। গুরু প্রথম দিনের পাঠের শুরুতে পরিচয় পর্ব সেরে নিচ্ছেন। প্রথম বালককে শুধালেন তার নাম কি এবং কি তার শখ। বালক বলল তার নাম টাল্টু এবং শখ পুকুরে শাপলা দেখা।

দ্বিতীয় বালককে শুধালেন একই প্রশ্ন। সে জানালো তার নাম পল্টু এবং শখ পুকুরে শাপলা দেখা। তৃতীয় বালককেও একি প্রশ্ন করা হলে সে জানালো তার নাম বল্টু এবং শখ পুকুরে শাপলা দেখা। এবার গুরু উপস্থিত একমাত্র বালিকার দিকে তাকালেন এবং তাকেও একি প্রশ্ন করলেন। বালিকা জানালো তার নাম শাপলা এবং শখ পুকুরে গোসল করা।

গ্রামীণ জীবনে দৈনন্দিন কাজের বিশাল অংশের সাথে পুকুর জড়িত এবং একারণে সাংসারিক নানাবিধ কাজ শেষে পুকুরে গোসল করে নেওয়াতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যেহেতু দুপুর বেলা বেশীরভাগ গ্রামীণ পুরুষ কাজের খোঁজে এদিক-ওদিক চলে যান তাই ঢিলে চরিত্রের উঠতি তরুণেরা একটি নির্মল বিনোদনের সুযোগ পায়। তা হল পুকুর পাড়ে সারি সারি গাছের ফাঁকে কিংবা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পুকুরে স্নানরতাদের দেখা। অনেক সময় ব্যপারটা শুধু দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। অনেক সময় আদিরসাত্মক হয়, অনেক সময় মর্মান্তিক হয়ে পড়ে।

একবার এক গ্রামে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম গাছের সাথে বাঁধা এক তরুণ। দেখে বোঝা যায় ব্যপক ধোলাই খেয়েছে। তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে কারণ তার চোখ উপড়ে নেওয়া হবে। এর কারণ হল, সে গ্রামের নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে এক ফাঁকে বাড়ির মেয়েকে পুকুরে স্নান করতে দেখে কুপ্রস্তাব দেয় এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। মেয়েটির আর্ত-চিৎকারে সবাই ছুটে এসে তাকে রক্ষা করে এবং এই তরুণকে যথেষ্ট আপ্যায়ন করে বেঁধে রাখে।

গ্রাম্য সালিসে তার চোখ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরকম অনেক অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে হয়ত ঘটতে থাকবে। তরুণীদের স্নানদৃশ্য নিয়ে আরেকটি বাজে ব্যপার ঘটেছিল এক ছাত্রীর জীবনে। ব্যক্তিগত দ্বন্দের জের ধরে একই হোষ্টেলে অবস্থানরত এক সহপাঠী অন্যজনের স্নানদৃশ্য মোবাইলে ধারন করে তা মিগ,ফেইসবুক এবং ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়। অপমানের মাত্রা এতটাই বেশী হয়ে গিয়েছিল যে মেয়েটি আত্মহত্যা করে।

তবে একটা জিনিষ আমরা সবাই করি এবং খুব উপভোগ করি। আগে দেশের বাইরে গিয়ে করে আসতাম আর আজকাল দেশেই করি। পরিবারপরিজন, নিজের অতি আপনজন আর ভালবাসার মানুষকে নিয়ে চলে যাই বিভিন্ন থীম-পার্কগুলোতে। যেখানে কৃত্রিম ঢেউ আর সাগরতীর তৈরী করা আছে। অবলীলায় শত শত লোক নেমে যাই জলকেলী করতে।

ভুলে যাই স্নান অত্যন্ত ব্যক্তিগত একটি ব্যপার। আমরা তো আধুনিক, আমাদের চোখের পর্দা থাকলেই চলে, আমাদের মনের কাপড় দিয়ে আমরা বিবেক ঢেকে রাখার দীক্ষায় দীক্ষিত। আমারদের পরিবারের দিকে কেউ কামুক চোখে তাকালেই বা কি, কেউ ভীড়ের মাঝে সুযোগ নিলেই বা কি? হয়ত বা আমরা নিজেরাও তক্কে তক্কে থাকি সুযোগের। জলকেলীর পর আবার চলে যাই আলো-আঁধারীর Dj-party-তে। যেখানে বিক্ষিপ্তভাবে নাচানাচির নামে মন যা চায় তা করতে কোন আপত্তি নেই।

এখানে সু্যোগ নেওয়ার সু্যোগটাও বরং আরো বেশী। আমারা সভ্য, আমরা মুক্ত, আমরা স্বাধীন এবং আমরা আদিম। আমরা পুরুষেরা নিজেকে কখনও এটা প্রশ্ন করি না যে আমার সামনে আমার মা,বোন,স্ত্রী কিংবা ভালবাসার মানুষটির এই প্রক্রিয়াটি পরস্পরের জন্য কতটা সম্মানজনক। আর আমাদের নারীরা এটা ভেবে দেখেন না স্বাধীনতার নামে এতগুলো মানুষের সামনে স্নান করা আর দিনে দুপুরে চৌরাস্তার মোড়ে শ্লীলতাহানী হয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য। অসুস্থ এই সংস্কৃতি আমাদের সমাজের অংশ ছিল না, হতে পারে না।

আমরা সাময়িক উত্তেজনা, আমোদ ও মনের গহীনের আদিমতার ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে নিজের সবচেয়ে আপন মানুষগুলোকে এভাবে অপমান করে চলি। তাই আজ আমাদের অনেকের সবার প্রিয় শখ পুকুরে শাপলা দেখা।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.