আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একুশ মানে নতুন জন্মের প্রসব বেদনা........

আমি বাধঁনহারা, মৃত্তিকা বুকে, আপন রূপে...........

আজ ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন। ১৯৫২ সালের এই সময়টা বাগ্ঙালী জাতির জন্য একটি বেদনা পু্র্ন মাস। এ বেদনা ছিল একটি ভাষা আন্দলনের জন্মের প্রসব বেদনা। একটি নতুন ভাষা জন্মের প্রসব বেদনা সময়ের ঘূর্ণাবর্তে ৫৯ বছর পর আবার বাঙালির জীবনে এসেছে এ মাস। পাকিস্তানি রাষ্ট্রচক্ষু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অনেক বাঙালি তাজা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন ১৯৫২ সালের এ ফেব্রুয়ারিতে।

বুকের রক্ত ঢেলে তারা বাংলাকে দিয়ে গেছেন শ্রেষ্ঠ সম্মান। তাদের এ মহান ত্যাগের কারণে বিশ্বজুড়ে ২১ ফেব্রুয়ারি এখন পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বায়ান্নর ভাষা শহীদদের আত্মদান বাঙালি জাতির সংগ্রামী চেতনার 'মহাকাব্য'র সূচনা। ফেব্রুয়ারির 'একুশ' এখন কোন সাধারণ তারিখ নয়। এখন একুশ মানে শোক-প্রেরণা-গর্ব আর অঙ্গীকারের মিলিত স্রোতধারা।

একুশের পথ ধরেই মুক্তি পাগল বাঙালি হেঁটেছে স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার পথে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগেই সূচনা হয়েছিল ভাষা বিতর্কের। ১৯৪৭ সালের ১৭ মে হায়দ্রাবাদে এক উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু। এ ঘোষণার পর থেকেই বাড়তে থাকে ভাষা বিষয়ক বিতর্ক। বিতর্কিত এ ঘোষণার প্রতিবাদে ২৯ জুলাই ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আজাদ পত্রিকায় বলেন, বাংলায় হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।

তবে দু'টি রাষ্ট্রভাষা করা হলে উর্দু বিবেচনা করা যায়। পাকিস্তান গঠনের পর উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকার শুরু করে নানা চক্রান্ত। ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার আলামত পাওয়া যায় সরকারি মহল থেকে। মানি অর্ডার ফরম, পোস্টকার্ড, খাম ও কাগজের টাকা থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় জনগণের সামনে চলে আসে শাসক শ্রেণীর এ চক্রান্ত। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নানা চক্রান্তের পাশাপাশি জোরদার হতে থাকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত হয় তমুদ্দুন মজলিশ। সচেতন জনগণের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ সারা পূর্ববঙ্গে ধর্মঘট আহ্বান করে সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসেন। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া বক্তৃতায় জিন্নাহ বলেন, আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের বলতে চাই 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা; অন্য কোন ভাষা নয়'।

জোরালো প্রতিবাদ না হলেও শ্রোতাদের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন ওঠে। ৩০ মার্চ জিন্নাহ'র বক্তৃতার সমালোচনা করে একে ফজলুল হকের বিবৃতি প্রচার হয়। ২৪ মার্চ কার্জন হলে জিন্নাহ ভাষা সম্পর্কে তার বক্তৃতার পুনরাবৃত্তি করেন। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন হলভর্তি মানুষ। ঘটনা এগিয়ে যেতে থাকে স্রোতস্বিনী নদীর মতো।

এ স্রোতেই এক সময় চলে আসে ৫২ সাল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।