আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধ ও ভালবাসার মালিকানার মামলা ৩ : মেহেরজানের নারীরা

হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।

এটা যখন লিখছি, তখন এই শুক্রবার দুপুরে খবর পেলাম বলাকা থেকে মেহেরজান ছবি নামানো হয়েছে, সিনেপ্লেক্স থেকেও নেমে যাবে আজকের শো-এর পর। যেহেতু অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে, তাই একদিন দেরি)।

ওপর মহলের চাপে ওপর মহলের তৈরি ছবি বন্ধ হচ্ছে। বলি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্বয়ং। ওপর মহলের নিষিদ্ধবাদীদের জয় হোক। তাদের হুমকি ও নিন্দার মধ্যে সুস্থ বিতর্ক করতে যাওয়াও আত্মঘাতী। কিন্তু নীতি ও দায়িত্বের স্বার্থে সেই আলোচনা আমাকে করতেই হবে।

আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু এটাও একটা বক্তব্য। কেউ আমাকে যুক্তির ভিত্তিতে খণ্ডন করতেই পারেন। কিন্তু আমাকে বেজন্মা-রাজাকার-টাকা খাওয়া সাংবাদিক বলা আমার পরিবারকে জঘন্যভাবে কলঙ্কিত করার বিরুদ্ধে আমি একা ও নিরস্ত্র। বহু বছর ধরে আমি আমার লড়াই চালাচ্ছি ডানপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিপ্লবী রূপান্তরের পক্ষে। এই চরিত্রহননো সহ্য করা সেই লড়াইয়ের অংশ।

এরকম অবস্থায় মাথাঠাণ্ডা রেখে আলোচনা করা কঠিন। তবু চেষ্টা করছি। আহমদ ছফা লিখেছিলেন, ‘একাত্তর মহাসিন্ধুর কল্লোল’। হাসান আজিজুল হক তাঁর বাংলাদেশ: পালিয়ে বেড়ায় দৃষ্টি এড়ায় প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘যদি কোটি মানুষের আমি একা আমার এই বুক থেকে খালাস করে দিতে পারতাম, যদি পুরো একটি আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতে কষ্টের শোকের ক্ষোভের ক্রোধের আক্রোশের উচ্ছ্বাস আমার একার বুক ফাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারত, যদি লক্ষ লক্ষ মানুষের অশ্র“ আমার দুখানি চোখ থেকে মুক্তি পেত, তাহলে হয়তো খানিকটা ন’মাসের অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যেত। ’ এ পর্যন্ত বলেই বলছেন, ‘কিন্তু কিছুই করা গেল না’।

আমি বলব এই যে গেল না, এটাই একাত্তরকে ধারণ করায় বাংলাদেশের শাসক-লেখক-শিল্পী-ইতিহাসবিদদের ব্যর্থতা। একাত্তর শাসকদের কাছে রাজনীতির বিষয়, আর যারা সেই রক্তকল্লোল সাঁতরে পেরিয়েছে, তীব্র জীবনীশক্তি আর ধ্বংসশক্তির লড়াই দেখেছে তাদের রয়েছে কেবল সেই অভিজ্ঞতার পাথর। যে পাথর আজো বুকে চেপে আছে, কিন্তু সেই ব্যথা খালাস করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। একাত্তর নিয়ে যে কোনো কথা-কাজে-শিল্পে মানুষ তাই সেই নিকষ অভিজ্ঞতার ছাপ দেখতে চায়, যন্ত্রণা ও প্রতিবাদটা দেখতে চায়। প্রশ্ন উঠেছে মেহেরজানে কি আমরা তা দেখতে পাই? গণহত্যা-গণধর্ষণ-নিপীড়ন ও বসতি পোড়ানো আগুন কি এই ছবিকে ছুঁয়েছে? আগেই বর্ণনা করেছি, কীভাবে ছবিতে একাত্তরের দুঃসহ অভিজ্ঞতা শুরুতেই অনুভব করিয়ে বোঝানো হয়েছে এই কাহিনী ঘটছে কোন পটভূমিতে।

কিন্তু এই দেখানো আরো বাস্তব ও তীব্র হতে পারতো। আরো যুদ্ধ-মৃত্যু-নৃশংসতা দেখানোর কথা বলছি না। বলছি চরিত্রগুলোর মধ্যে, গ্রামের পরিবেশের মধ্যে সেই থম ধরানো যুদ্ধদিনের ছাপ ততটা জীবন্তভাবে ফুটে ওঠেনি। এটা ছবির শৈল্পিক দুর্বলতা। একই জিনিস দেখতে পাওয়া যাবে, তিন নারী চরিত্রের মধ্যেও, এমনকি মুক্তিযোদ্ধা চরিত্ররাও যেন প্রাণ খুলতে পারছে না, উঠে দাঁড়াতে পারছে না।

নানা, মেহের আর ওয়াসিম যতটা যতœ পেয়েছে, ততটা যতœ অন্য চরিত্রগুলো পায়নি। মেহের ও নীলা এখানে বিশেষ। তার আলোচনা আমরা আলাদা করে ‘মেহেরজানের নারী’ অংশে আবারো করবো। আপাতত নানা চরিত্রের মধ্যে আরেকটু প্রবেশ করা যাক। নানাজানের পাকিস্তান বিরোধিতা ছিল ৪০ থেকে ৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রতারণার প্রতিক্রিয়া।

যে প্রতারণার বিষে বিষাক্ত হয়েছিলেন পূর্ব বাংলার অধিকাংশ বুর্জোয়া রাজনীতিবিদরাও। আগের পর্বে নানাজান চরিত্রের যে বিশ্লেষণ দেখানো হয়েছে, তাতে প্রমাণ হয় তিনি একজন জাতীয়তাবাদী মুসলিম কৌম পুরুষ। জাতীয়তাবাদে যেভাবে শ্রেণীকে আড়াল করা হয়, কৌমচিন্তার কাঠামোতেও তা একইভাবেই ঢেকে রাখা হয় একাত্মতার ঝালরের নীচে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ হিন্দু-মুসলিম পরিচয়কে নাকচ করে নয়, আত্মীকৃত করার মাধ্যমেই ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক প্রকল্প হয়ে উঠতে পারে, এটা তাঁর থিসিস। মুসলমানিত্ব আর সেকুলার জাতীয়তাবাদীত্বের মধ্যে আবশ্যিক কোনো অন্তর্গত বিরোধ নেই বলে যদি মানি, তাহলে নানাজান চরিত্রকে গ্রহণ করতে অসুবিধা কোথায়? ভাসানী মুসলিম পরিচয় নিয়েই সাম্যবাদে সমর্থন দিয়েছিলেন, মুজিব মুসলিম পরিচয় নিয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদী হয়েছিলেন।

’৭২ এর ফেব্র“য়ারি মাসে কলকাতার প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, সোনার বাংলা আমাদের থাকবে, পশ্চিম বাংলা ভারতের থাকবে। সেই বক্তৃতায় তিনি তাঁর বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বাংলাদেশের গণ্ডীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দেখিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ওআইসি-তে যোগদান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তার এবং ভুট্টোর প্রতি ‘আও মেরে ভাই’ বলে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেই জাতীয়তাবাদের সীমা-সরহদ্দ। (দেখুন: বাঙালি জাতীয়তাবাদরে গণ্ডি কি বাংলাদশেই সীমাবদ্ধ? Click This Link) ৭২ সালেই বদরুদ্দীন উমর ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি’ নামক নিবন্ধে অভিযোগ করেছিলেন, শেখ মুজিব কার্যত বাংলাদেশী বাঙালি পরিচয়কে রাজনৈতিক রঙে রঞ্জিত করার মাধ্যমে বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ পত্তন করছেন, যা আসলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদেরই ভিত্তি। এবং যা শেষ বিচারে পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের আদলেই নির্মিত।

এ কারণে যে, মুসলিম পরিচয় ছাড়া বাংলাদেশি কথাটার কোনো জাতীয়তাবাদী অর্থ হয় না। নানাজানের বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদী চরিত্রের যে রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক দুর্বলতা, তা আসলে তাঁর শ্রেণীরই দুর্বলতা। (এই উচ্চবর্গীয় রোমান্টিক জাতীয়তাবাদ যে শেষপর্যন্ত অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে ধারণ করতে পারবে না, শ্রেণী ও নিম্নবর্গের প্রতিনিধিত্ব যে তাদের দ্বারা সম্ভব হবে না, সেটা অন্য আলোচনা। সেটা আমরা উপসংহারের দিকে গিয়ে করবো। ) নানাজান নিশ্চিতভাবেই চলমান ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন।

বাঙালি কৃষকের যে মুক্তির কথা তিনি বলেন, তা বাস্তবায়নের ভরসা তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন শক্তির মধ্যে পান না। (স্বাধীনতার ৪১ বছর পরে একথা অকাট্য সত্য যে, তাঁর সংশয় প্রমাণিত হয়েছে) তাহলেও, মুক্তি সংগ্রামে তাঁর সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে তাঁর মেয়েকে যুদ্ধে পাঠান, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেন, বলেন যে পাকিস্তান হলো দারুল হরব এবং পাকিস্তান আর্মির হাতে নিহত হন। এসব থেকে আমার সিদ্ধান্ত হলো, যাঁরা তাঁকে মুসলিম লীগার ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বলে দুষছেন, তাঁরা ভুল করছেন। তিনি বিপরে শক্তি তো ননই, বরং অহিংস জাতীয়তাবাদী ইউটোপিয়ার শহীদ। তাঁর নীতির মতোই ইউটোপিয় ছিল তা বাস্তবায়নের পন্থা।

শেখ মুজিবও আলোচনার পথে অধিকার আদায় করতে চেয়েছিলেন। সে পথে সর্বোচ্চ সীমিত স্বায়ত্তশাসন এবং কমজোরি প্রধানমন্ত্রীত্ব তিনি পেতে পারতেন। কিন্তু স্বাধীনতা আলোচনা করে আসতো না। গান্ধিও একই ভুল করেছিলেন শ্রেণী দোষে। ফলে যে ঘৃণা ইংরেজের বিরুদ্ধে হওয়ার কথা, তা পথ না পেয়ে রিভার্স প্রক্রিয়ায় ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় পর্যবসিত হলো।

ইতিহাস যখন রক্ত ছাড়া এগবে না, তখন তা এড়াতে গেলে আরো রক্তপাতকেই ডেকে আনা হয়। এবং তা হয় আÍঘাতী। আবারো বলছি, মিলগুলো গুণে নয়, লক্ষণে। মেহেরজানের নারীরানানাজান যদি এই ছবির রাজনৈতিক ঈমান হন, তবে নারীরা হলো এই ছবির নিশান। জাতীয়তাবাদী ডিসকোর্সের মধ্যে নানাজানের ভূমিকা রা পেলেও শেষ বিচারে নারীদের বাঁচাতে পারেননি পরিচালক।

উদ্দেশ্য যা-ই হোক, মেহের-নীলা বা সালমার প্রতি সুবিচার করা হয়নি। নানাজান বন্দী ইতিহাসের গোলকধাঁধায় আর মেহের বন্দী তার বাসনার পাকেচক্রে, নীলা বন্দী তার সাহসিকতায়, সালমা বন্দী তার কল্পলোকে আর মেহেরের মা ও আরেক খালা বন্দী পুরুষের ঘরকন্নার কাজে। ভিন্ন ভিন্ন প্রবণতার আইডিয়া হিসেবে এই নারীরা যতটা দাঁড়ায়, বাস্তব সত্তা হিসেবে ততটা প্রতিষ্ঠিত হয় না তাদের শেকড়। তাহলেও আইডিয়াগুলো বিশ্লেষণের দাবি জানায়। সেই বিশ্লেষণের অংশ হিসেবে আমি কাহিনীর মধ্যে কতগুলো স্রোত বা নকশার দিকে মনযোগ কাড়তে চাই।

ক. রূপান্তরের গতিসূত্র ছবিতে যে কাহিনী বিবৃত হয়েছে, তা একধরনের রূপান্তরের গতিসূত্র মেনে চলে। এই রূপান্তর ঘটে মনোজগতের দ্বন্দ্বে নয় শুধু, স্বাধীনতাযুদ্ধের অভিজ্ঞতার চাপেও। এই অভিজ্ঞতা ও সেই সূত্রটা আমরা এখন চিহ্নিত করার চেষ্টা করবো। ১. [sbনানাজান: নানাজানের ঐতিহাসিক সফর (৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব, ৪৬ এর দাঙ্গা, ৪৭ এর দেশভাগ ও দেশান্তর, পাকিস্তানের প্রতারণা, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ) তাঁকে মুসলিম লীগার থেকে বাঙালি জাতির পে সওয়ালকারী এক কমিউনিটি লিডার হিসেবে রূপান্তরিত করে। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক রূপান্তরটিও কিন্তু একইভাবে ঘটেছিল।

ইতিহাসের যৌক্তিক বিশ্লেষণ করার সমতা দেখালেও অভিজ্ঞতা নানাজানকে নিজেকে প্রত্যাহারের মরমি অভিমানের দিকে ঠেলে দেয়; যা যত সুন্দরই হোক অকার্যকর। তিনি প্রাসঙ্গিকতা থেকে অপ্রাসঙ্গিকতায় চলে যান। শুরুতে যে মহীরুহ থাকেন, দৃশ্যের পর দৃশ্যে সেই মহীরুহের পতন ঘটতে দেখি। ছবির অন্তিমে তিনি পতিত হন। তাঁর পতনের মাধ্যমেই গ্রামটি ধ্বংস হয়।

২. [sbনীলা: নীলা পূর্ববাংলার ছাত্র ইউনিয়ন করা বিপ্লবী নারী, এ ছাড়া তার অতীত সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তার সাহসিকতার প্রমাণ মেলে আর্মির কাছ থেকে পিতার লাশ দাবি করায়। তার নৈতিক উচ্চতা জানতে পারি, ধর্ষণের ট্রমা কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টায়। তার প্রেম ছিল, বিপ্লবের আশা ছিল, সক্রিয়তা ছিল। কিন্তু সব ধনের পুরুষ কর্তৃক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তাকে নিরাশ ও বিক্ষুব্ধ করে তোলে সব কিছুর প্রতি।

পাকিস্তানী সৈন্যরা তার কাছে ‘সুয়োরের বাচ্চা, জানোয়ার’, যাদের সে নিজ হাতে খুন করতে চায়। বাড়ীতে আর্মিরা এলে না লুকিয়ে বরং সে বটি হাতে তাদের মারতে যেতে চায়। পুরুষের প্রতি কোনো প্রেমবোধ আর সে করে না। তার সাময়িক সঙ্গী সুমনের আকর্ষণের মধ্যেও সে কেবল শরীরিপণাই দেখে। ‘সব পুরুষই সমান’ হয়ে দেখা দেয় তার কাছে।

এই নীলার দুটো পরিণতি হতে পারতো_ একাত্তরের অন্যসব নির্যাতিতদেরও যা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করতে পারতো বা লুকিয়ে পড়তে পারতো কলঙ্ক দাগের নীচে। অথবা সে প্রতিশোধ নিয়ে শেষ হয়ে যেতে পারতো। দ্বিতীয় পথেই সে যায় এবং পেয়ারাবাগানের কমরেডদের সঙ্গে শহীদ হয়। এই ছবির অন্যতম চুম্বক চরিত্র এই নীলা।

তারপরও দুর্বোধ্য থেকে যায়, সুমনের সঙ্গে তার যৌনসম্পর্কের মিনিং। সে কি এর মাধ্যমে ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল? নাকি চেয়েছিল তার বিধ্বস্ত ও অপমানিত যৌনসত্তাকে রিকেইম করতে? এর উত্তরটি আমার কাছে স্পষ্ট নয়। যারা এধরনের নারী-অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা করেছেন, তাদের জেনেছেন, তারা এ ব্যাপারটির সুরাহা করতে পারেন। কিন্তু ঘটনাটিকে নিন্দনীয় বলার সুযোগ নেই। সন্তানের শোকে মা যদি পাগলের মতো হাসে, নীলা যদি পুরুষ ঘৃণা করে আবার পুরুষের কাছেই যায়, তা বোঝার মতো মন পুরুষের আছে কিনা আমি জানি না, জানি না কোন তাত্ত্বিক হাতিয়ার দিয়ে আমরা তার মনের এই দুরূহ অবস্থাকে ব্যাখ্যা করবো।

দেখুন: সেইসব ‘বীরাঙ্গনা’, তাদরে না-পাক শরীর এবং একাত্তররে কাজলরখোদরে কথা http://www.nirmaaan.com/blog/faruk-wasif/5796 ৩. সালমা: সালমা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, বাবার আদরের সন্তান এবং দেশভাগের বীভতস অভিজ্ঞতার শিকার। সালমা গর্ভাবস্থায় তার মা ছেচল্লিশের দাঙ্গায় কলকাতা থেকে পালিয়ে আসবার সময় যে নৃশংস দৃশ্যের সামনে পড়েন, তা তাঁর মনে যে বিলোড়ন ঘটায়, তার প্রভাব পড়ে গর্ভে থাকা সালমার মধ্যে। ধারণা করি, সালমার জন্ম আর ভারত-পাকিস্তানের জন্ম একই সময়ে। যে বিকৃত পথে দুটি রাষ্ট্র জন্মায়, সেই ঐতিহাসিক বিকারই সালমাকে স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত করে। সালমা হয়ে ওঠে একইসঙ্গে প্রতিবন্ধী পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতীক ও শিকার: অবিকশিত, বালসুলভ কল্পনাশ্রিত।

সালমা ৪৭-এরই সন্তান। এই চরিত্রের মধ্যে আহমদ ছফার ওঙ্কার উপন্যাসের সেই বোবা মেয়েটির মিল পাওয়া যায়, যে ভাষাবঞ্চিত বাঙালির বলতে না পারার প্রতীক। সেই বোবা মেয়েটি ঊন্নসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের তেজে কথা বলে উঠতে চায়। জনতার রূপান্তরের সঙ্গে তারও রূপান্তর ঘটে। আর এক মুক্তিযোদ্ধাকে ভালবেসে সালমাও যেন মুক্তি পায় ইতিহাসের অভিশাপ থেকে।

সালমার মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মপ্রক্রিয়ার গভীর অসঙ্গতির সমালোচনাই আসলে করা হয়, এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ সেই অসঙ্গতি থেকে যে বেরিয়ে আসছে, সেটাও বলা হয় তার প্রেমের অভিমূখে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে স্থাপন করার মাধ্যমে। তার প্রথম জন্ম ছিল অপরিণত, দ্বিতীয় জন্মে তার মুক্তির পথ খুলে যায়। তারও ইতিবাচক রূপান্তর ঘটে। সে হয়ে ওঠে ‘জয় বাংলা’র মেয়ে। পরের পর্ব: মেহেরজান ও তার নিষিদ্ধ প্রেম আগের দুই কিস্তি মেহেরজান: যুদ্ধ ও ভালবাসার মালিকানার মামলা ২ Click This Link মেহেরজান: যুদ্ধ ও ভালবাসার মালিকানার মামলা ১ Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.