আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে ধরা পড়ল সেই জ্বীনের বাদশা।

সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
''" ' ' ' ' ' ' ' ' ' ' ' ' ' কৃষি মজুর আজমল হোসেন নিজের কোটিপতি আর অপরাধ জগতের দুর্ধর্ষ গডফাদার হয়ে ওঠার বর্ণনা দিয়েছে পুলিশের কাছে। গ্রেপ্তারের পর তার সকল অপরাধের কথা স্বীকার না করলেও আজমল অপরাধ জগতের গডফাদার হিসেবে তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের নাম-ঠিকানা ফাঁস করে দিয়েছে। সে একজন জ্বীনের বাদশা। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদী বেষ্টিত বিশ্বনাথ গ্রামের বাসিন্দা আজমল হোসেন। দরিদ্র পিতার একমাত্র সন্তান।

পিতার নিজের কোন জায়গাজমি ছিল না। নদীর পাড়ে টিনের দোচালা বাংলাঘরে মাথা গুঁজে থাকতো। অন্যের জমিতে কাজ করে এবং নদীতে মাছ বিক্রি করে সংসার চলতো। ১৯৮৯ সালে আজমলের পিতার মৃত্যু হয়। তখন তার বয়স ২৫ বছর।

পেটের দায়ে মাছ ধরে বিক্রি করা এবং অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো আজমল। ১৯৯০ সালে সে বিয়ে করে। তারপর স্ত্রীকে রেখে ধান কাটার কামলা হিসাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে যায়। বছরের বেশির ভাগ সময় ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন বাড়িতে দিনে ক্ষেত খামারে কাজ করে রাত কাটাতো ওইসব বাড়িতেই। ওই সময় হিসাবু নামের এক প্রতারকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

সেই হিসাবুর কাছেই তার অপরাধকর্মে হাতেখড়ি। জিনের বাদশা সেজে কিভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা যায়, কিভাবে সোনার মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা বিক্রির নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়া যায় ইত্যাদি বিদ্যা তার মাধ্যমে সে শেখে। ভিন্ন কৌশলে লোকজনকে আকৃষ্ট করতে মোবাইল ফোনে কণ্ঠ বিকৃত করে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং গুপ্তধন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে কণ্ঠস্বর পরিবর্তনও রপ্ত করে সে। তারপর ১৯৯৫ সালে আজমল চলে আসে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নিজ বাড়িতে। তারপর গোসাইপুর, রামনাথপুর, বিশুবাড়িসহ কয়েকটি গ্রামের বেকার যুবকদের সংগঠিত করে।

শুরু হয় পুরাতন আমলের মূল্যবান ধাতব মুদ্রা এবং সোনার ও কষ্টি পাথরের মূর্তির ব্যবসা। এই ব্যবসা করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ফরিদপুর জেলায়। তারপর একে একে বাড়তে থাকে ঘটনা ও প্রতারণার সংখ্যা- বাড়তে থাকে মামলার সংখ্যাও। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জে একাধিক হত্যা, অপহরণ, প্রতারণা, অস্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। ততক্ষণে আজমল সারাদেশে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।

পুলিশও আজমলকে গ্রেপ্তারে মরিয়া হয়ে ওঠে। ৫ বছরে শতাধিক অপরাধ কাজ করলেও পুলিশ ছুঁতে পারেনি তাকে। ইতিমধ্যে আজমলের অপরাধ জগতের কথা ফাঁস করতে হুমকি দেয় তার এমএ পাস স্ত্রী ফারজানা আকতার। এ কথা জানতে পেরে আজমল তাকে হত্যার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে আজমলের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানার স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা করেন।

আজমলের প্রতারণার প্রথম টার্গেট যে বাড়িতে যখন থাকতো সেই বাড়ির ধনী মালিক। তার কাছে খুলে বলতো গোবিন্দগঞ্জে কমদামে সোনার ও কষ্টিপাথরের মূর্তি ছাড়াও ধাতব মুদ্রা পাওয়া যায়। এসব সস্তায় কিনে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করতো। সহজ সরল মালিক তার আশ্রিতা কৃষিমজুরের কথায় বিশ্বাস করে রাতারাতি আরও বড়লোক হওয়ার মতো সোনার হরিণ ধরতে পা বাড়ায় আজমলের বাড়িতে। তারপর মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে লোহার মূর্তিতে রঙ করা মূর্তি সোনা হিসেবে তুলে দেয়া হয়।

আবার এসব নিয়ে যাওয়ার সময় করতোয়া নদীর গোসাইপুর ঘাটে তার লোকজন দিয়ে কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে প্রতারক আজমল চক্রের ফাঁদে পড়ে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার আশায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২ শতাধিক মানুষ শিকার হয় প্রতারণার। শুধু তাই নয়, আজমলের আহ্বানে প্রতারণার ফাঁদে পা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েসহ কয়েকজন গৃহবধূ। তার বাড়িতে এসে ধর্ষণের পর খুন হয়েছে কয়েকজন। কিন্তু আজমল ছিল পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

ইতিমধ্যে একের পর এক জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা করে আজমল বাড়িঘরসহ তার এবং তার পরিবারের চেহারা বদলে দেয়। রাতারাতি তার দরজাবিহীন দোচালা টিনের ঘরের স্থানে গড়ে তোলে বিলাসবহুল বাড়ি। দেশ বিদেশ থেকে কাঠ এনে তৈরি করে বাড়ির দরজা জানালা। বিয়ে করে একের পর এক। তার এলাকায় জমি কেনে কমপক্ষে ১শ’ বিঘা।

নিজের তিন ছেলের জন্য ৩টি দামি মোটরসাইকেল এবং নিজের জন্য একটি মোটরসাইকেল কেনে। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ব্যস্ততম বালুয়া বাজারে কোটি টাকায় একটি দোকান কেনে। সেই দোকানটি একটি মোটরসাইকেলের শো-রুম। আর এই শো-রুমের মালিক জিনের বাদশা নামের প্রতারক চক্রের গডফাদার আজমল হোসেন। সমপ্রতি র‌্যাব-৫ অভিযান চালিয়ে বালুয়া বাজার থেকে আজমলকে গ্রেপ্তার করে।

দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গোবিন্দগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। পুলিশের কাছে আজমল তার অনেক অজানা কাহিনী স্বীকার করে। Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।