আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঠ্যবই নির্ভুল হওয়া কেন জরুরি



বর্তমান সরকারের সবচেয়ে সফল মন্ত্রীদের একজন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তার সততা, নিরলস পরিশ্রম ও একান্ত প্রচেষ্টায় শিক্ষাক্ষেত্রে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। সম্পূর্ণ নকলমুক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণীতে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছেন তিনি। এছাড়া বড় সফলতার চিহ্ন রেখেছেন পাঠ্যপুস্তকের ক্ষেত্রে, প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদানের ব্যবস্থা করে। প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে দু-তিন মাস লেগে যেত।

কিন্তু এ বছর আমরা লক্ষ্য করেছি, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বছর শুরুর প্রথম দিন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে নতুন বইয়ের উৎসবে। তবে শিক্ষামন্ত্রীর এ পরিশ্রম ও সফলতা কিছুটা ম্লান হয়ে গেল একটু অসতর্কতার জন্য। গত ৭ জানুয়ারি দেশের অধিকাংশ জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছেÑ পাঠ্যপুস্তক ভুলেভরা, ফেরত দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের অভিযোগ, ডিজিটাল বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নতুন পদ্ধতি চালু হলেও পাঠ্যপুস্তকের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে সেই ১৫ বছর আগের পরিস্থিতি। শুধু তা-ই নয়, বইয়ের ভেতরে পৃষ্ঠা নেই।

বাংলা বইয়ের এক অধ্যায় ইংরেজি বইয়ের ভেতর। আছে তথ্যগত ভুল। এসব সমস্যার জন্য এনসিটিবির কর্মকর্তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। নবম শ্রেণীর ভূগোল বইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্যে ভুল রয়েছে।

ভুল করা হয়েছে বিমানপথ প্রসঙ্গেও। বাংলা সংকলন গদ্য বইয়েও আছে অনেক ভুল। বীরশ্রেষ্ঠ আবদুর রউফের স্থলে লেখা হয়েছে আবদুর রব। নির্মলেন্দু গুণের কবিতা পাঠ্যপুস্তকে সংযোজিত হলেও খুলনা অঞ্চলে প্রদান করা বইয়ে ছাপা হয়নি। অনেকে মনে করেন, এসব ভুল তাড়াহুড়ো করে ছাপানোর জন্য হয়েছে।

তাড়াহুড়োর জন্য বইয়ের পৃষ্ঠা পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু কবিতা ছাপা হবে না তা কেমন করে হয়? ২০০৮ সালের পরিমার্জিত সংস্করণ করা হয়েছিল। সেখানেও কিছু ভুল পরিলক্ষিত হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ বছর তা সংশোধন করা হবে। কিন্তু হয়নি। হুবহু ২০০৮ সালের ভুল তথ্য ও মুদ্রণজনিত ভুল আবার করা হল।

এটা অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতির কারণে হয়েছে। পৃষ্ঠা না থাকার বিড়ম্বনার চেয়েও ভুল তথ্য ছাপা ক্ষতিকর । গ্রামের শিক্ষার্থীরা দূরে থাক, অনেক শিক্ষকও সঠিক অনেক তথ্য সম্পর্কে অবগত নন। তারা নির্ভরশীল হন সরকারি বইয়ের ওপর। তাছাড়া অনেক সরকারি তথ্য আছে, বই ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।

এসব ভুল তখন শিক্ষকদের কাছে সঠিক হিসেবে বিবেচিত হয়। ধার শিক্ষার্থীদের তারা অনুরূপ শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তাদের ধারণা, সরকারি বইয়ে সরকারি পর্যায়ের তথ্য ভুল ছাপা হতে পারে না। শিক্ষার্থীরা এ ভুল তথ্য শিখে পরবর্তী জীবনে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে নবম-দশম শ্রেণীর ছাত্ররা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এসব ভুল তথ্য তারা পরীক্ষার খাতায় লেখে। পরীক্ষক সঠিক তথ্য জানলে ওই ছাত্রকে নম্বরদান থেকে বিরত থাকেন। ওই ছাত্র যে ভুল শিখেছে তা প্রমাণও করতে পারে না। তখন ভালো ছাত্ররাও খারাপ ফলের সম্মুখীন হয়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া এ সময় শিক্ষাজীবনের ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠে।

শুরুটাই যদি ভুল দিয়ে হয়, তাহলে সামনের আলোকিত জীবন অন্ধকারে ডুবে যায়। তাই বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আগামী দিনে যেন নবীন শিক্ষার্থীরা নির্ভুল একটা নতুন বই হাতে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। শামস সাইদ, ভাণ্ডারিয়া, পিরোজপুর


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.