পৌষের এক শীতার্ত সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুননাহার হলের সামনে জোহান্সের সাথে আমার প্রথম দেখা।
বন্ধু রঞ্জুর স্কুল বেলার বন্ধু। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল বিশেষত্বহীন এক সাধারণ চেহারা। কৃষকায়, ছোটখাটো দেখতে পাতলা গড়নের একটি ছেলে। কাছে আসতেই ভাল করে তাকালাম।
ছেলেটির চোখ দুটির মধ্যে কেমন যেন একটা ব্যাপার ঠিক উপেক্ষা করা যায়না।
চারুকলায় দিনব্যপী পৌষ মেলা। রঞ্জুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছি আমি আর হীরা। মেলা প্রায় শেষ। তবু মেলা শেষের রেশ লেগে আছে চারুকলা ঘিরে।
ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের গেট থেকে শুরু করে পাবলিক লাইব্রেরি পর্যন্ত লেইস ফিতার দোকানগুলোতে কমদামী অলংকারের সারি। রঞ্জুকে দেরি করে আসার জন্য বকাঝকা করে মেলায় যেতে না পেরে কি আর করা চারজন মিলে ওসব দেখতে লাগলাম। একটা চুড়ি জোহান্স পছন্দ করল আমার জন্য। জানিনা কেন হাত বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে। ও খুব সহজেই আমার হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিল।
যেন অনেক দিনের চেনাজানা আমাদের। কিন্তু কি ভেবে চুড়িটা আমি নিলাম না।
ঠিক এমনি ছিল প্রথম পরিচয় পর্ব। খুব সাধারণ আর স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠেছিল আমাদের নর-নারীর জীবনের কঠিন রসায়নের সরল গল্প।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া মেয়ে আমি বৃষ্টি অনেক প্রাণময় আর আবেগী এক মানুষ।
পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের মন ভাল করার ভার যেন আমারই হাতে। তাই আবেগশুন্য, নিজের প্রতি চরম উদাসীন এই ছেলেটিকে দেখে খুব মায়া হলো আমার।
ভাবিনি দুঃখ সুখের বন্ধু হয়ে পৃথিবীর এ বন্ধুর পথ আমি ওর সাথেই পাড়ি দেব কখনো।
কিন্তু কোথা দিয়ে যে কি হয়ে গেল!
পরিবার থেকে দূরে থাকা সাতাশ বছরের যুবক জোহান্সের চেহারায় কেমন রুক্ষতা। দেখলেই মনে হয় পৃথিবীর কারো প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই এই ছেলের।
ভালবাসার মত কোমল শব্দটির সাথে যেন পরিচয় নেই তার।
অপেক্ষাকৃত ভাল লেখাপড়ার সুযোগের জন্য ছেলেবেলাটা কেটেছে নানাবাড়ি। এরপর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেড়িয়েছে রংপুর-রাজশাহীতে। মায়ের স্নেহের আঁচলে থাকাই হয়নি সেরকমভাবে। তাইতো অমন কাঠখোট্টা আর চরম বাস্তববাদী ও।
-কোথায় থাকো?
-গুলশান অফিসের কাছে একটি মেসে।
-চেহারা এমন কেন দেখে মনে হয় যতœ নাওনা?
-ইচ্ছে করে না
-কেন?
-কেউ যতœ করে দেয়না তাই।
মনে মনে ভাবি বাহ কথাতো ভালই জানে দেখছি।
এবার ও নিজেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলতে থাকে আমার অফিসে একজন দিদি আছে তিনি প্রায়ই আমার জন্য নুডুলস রান্না করে আনেন কাজের ব্যস্ততায় খাওয়ার সুযোগ মেলেনা।
এবার আমি হাসতে হাসতে বলি ‘এ জন্যইতো শরীরের এমন বেহাল দশা’।
-ঠিকই বলেছ।
হীরা আর রঞ্জু ও হেসে ওঠে আমার কথা শুনে।
তারপর খুব সহজভাবেই অল্প সময়ে গড়ে ওঠে আমাদের বন্ধুত্ব। আমি নিয়ম করে খোঁজ নেই ও ঠিকমত খেয়েছে কী না, ঘুমাচ্ছে কী না।
ঠিক ভালবাসার চাহিদার তীব্রতা থেকে নয়, একজন কাউকে ওর ভীষণ দরকার ছিল ঠিক নির্মলেন্দু গুণের কবিতার মত কেউ একজন যে ভেতর থেকে ওর দরজা খুলে দিবে, বাহির থেকে দরজা খুলতে খুলতে ও ভীষণ ক্লান্ত।
আমি বা আমার কবিতা অথবা আমার শরীর কোনটাই ওকে টানেনি তীব্রভাবে।
‘আমার বুকের জমিনে অনেক ফলা লাঙলের এখন তুমি দিতে পার কর্ষণে সবুজ ফসল সেখানে। হবে কি সেই বীজ, বৃষ্টি তুমি?”এমন একটি মোবাইল এসএমএস জানিয়ে দিল আমাদের ভালবাসার বার্তা।
সহজিয়া অনুরাগে একজন পাথরপ্রাণের মানুষকে জড়িয়ে নিলাম জীবনে। আমার জীবনের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে পাথরে ফুল ফোটাব বলে ওকে আমার ভালবাসার বানে ভাসালাম।
আমি পাথরের বুকে বৃষ্টির গান হব ভেবে পৃথিবীকে জানিয়ে দিলাম আমিই হব তার সন্তানের জননী।
তারপর আমাদের দিনগুলো হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছিল। অফিস শেষ করে যখন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসত আমার সন্ধ্যাগুলো হয়ে উঠত বর্ণীল। শামসুননাহার হল, টিএসসি, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, হাকিম চত্বর, আইবিএ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা, পাবলিক লাইব্রেরি, শাহবাগ জুড়ে আমাদের ভালবাসা-রাগ-অভিমান মাখামাখি হয়ে রইলো। কোন সন্ধ্যার আলো-আধাঁরিতে পাশাপাশি বসে থাকা বৃষ্টিকে যখন আরো একটু কাছে টেনে নিয়েছে, ভালবাসার ভারে অবনত বৃষ্টি হৃদয়ে থেকে ঝরেছে সুখের জল।
মানুষ পরিবেশ থেকে যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে বড় হয় সে মৌলিক বিষয়গুলি কখনো সে বদলাতে পারে না যদি না সে বদলাতে চায়। জোহান্স হয়তো ভাবে ওর এই যে রুক্ষতা, উদাসীনতা এটাই ওর বৈশিষ্ট্য, এটাই ওর ব্যক্তিত্ব। তার এই স্বভাবের সাথে যে খাপ খাইয়ে থাকতে পারবে তার সাথেই সম্পর্ক টিকে থাকবে।
সব জেনে ও তার নিদারুণ উপেক্ষা মাঝে মাঝে হৃদয়ের বাঁশীতে কোথায় যেন টান পড়ত।
তাই কখনো কখনো আমার প্রণয়ের কোমল কুঁড়ি পাপড়ি মেলে না।
আমি হয়ত অনেক স্বপ্ন নিয়ে একটা স্মৃতি তৈরি করি। ভাবি ওকে নিয়ে বুড়িগঙ্গায় নৌকায় ভাসব, অথবা কোন বইমেলা, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া আরো কত কী... কিন্তু ও খুব সহজেই আমার স্বপ্নগুলো ধুলোয় উড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে অনেক বার।
তারপরও কোন এক বৃষ্টির বিকেলে আমি ওকে জানাই ভেজার নিমন্ত্রণ।
-মাথা খারাপ এই বৃষ্টিতে কিছুতেই বের হওয়া যাবে না কি যে বল, আমি ঘুমাব।
আমি বারবার ফোন করি, এসএমএস করি ‘তুমি আসো, রিকসার হুড ফেলে আমরা একঘন্টা রিকসা করে ঘুরব....রিকসা আমাদের শামসুননাহার হল থেকে জগন্নাথ হল হয়ে বুয়েট থেকে পলাশীর রাস্তা পার হয়ে এসএম হলের রাস্তাটা দিয়ে ফুলার রোড হয়ে কলা ভবনে নিয়ে যাবে।
বৃষ্টি বালিকা আমি কদম ফুলের গন্ধ মেখে তোমার কবিতা নারী হব......’।
আমার এমন বেনো বৃষ্টির অহ্বান উপেক্ষা করে জোহান্স জানিয়ে দেয় সে আসলে এরকমই। ভালবাসার মানুষকে খুব সহজেই উপেক্ষা করতে পারে সে। কিন্তু ও জানল না ওর এমন একটি ‘না’ এ বৃষ্টির চোখের জলের সাথে শ্রাবনের জলের কি গভীর সখ্য হয়ে গেল।
শ্রাবণের শেষ বরষায় ভিজব বলে/আমরা দুজন বেরিয়ে এলাম কদম বনের অন্ধকারে...........আমার আর কবিতা পড়া হয়না।
কখনো কখনো হয়ত অনেক বেশি অধিকার নিয়েই বলি সিগারেট খেও না, ড্রিঙ্ক করোনা। হয়ত কখনো আমার কথা শুনেছে কখনো শোনেনি। তবু থেমে থাকেনি পথ চলা । অভিমান হয় আবার সময়ের সাথে তা মিলিয়ে ও যায়।
আজ তোমার জন্মদিন প্রিয় পারফিউম, আফটার শেভ লোশন, একটা শার্ট আর আমার প্রিয় ক্যাকটাস আর গ্লাডিউলাস তোমার জন্য।
‘আজ ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াব আমরা বলো তো কেথায় যাওয়া যায়?’
জানতে চাইলেই ও বলল ‘আজ অফিস আমাকে ছুটি দেবেনা’।
খুব সকালে উঠে ওর মেসে গিয়ে ওকে গিফটগুলো দিয়ে চমকে দিব ভেবে সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি। অথচ আমি জানিনা আমার এত মন খারাপ হলো কেন? ভালবাসলে কি প্রত্যাশা বাড়ে? আমি তো ওকে বদলাব বলে ভালবেসেছি তবে কেন এত কষ্ট পাচ্ছি আমি। উত্তর মেলেনা।
ওর কাছে ভালবাসা ব্যাপারটা হচ্ছে খুব সাধারণ একটা বিষয়।
বাবা-মা যেমন দীর্ঘদিন একসাথে থাকতে থাকতে আবেগশূন্য হয়ে যায় কেবল একজন অন্যজনের প্রয়োজন মেটায় অনেকটা সেরকম।
ভালবাসা যে একটা অন্যরকম ও যেন তা জানেইনা। ভালবাসলে নারীরা হয় নরম নদী আর পুরুষরা জ্বলন্ত কাঠ কবিতার মত করে ও ভাবতেই শেখেনি। বিম্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়টি সে কাটিয়েছে নেশার নীল আসক্তিতে। সেটা কাটিয়ে উঠেছে ঠিকই কিন্তু ভালবাসতে পারেনি এখন পর্যন্ত নিজেকে ও।
তারপর ও আমার কবিতায় মুখর প্রিয় পুরুষ সে। জোড় করেই কখনো কখনো ওর হাত ধরে হাঁটতে চাই। আমার যে ভীষণ ইচ্ছে করে ও আমার হাত ধরে পার করে দিক রাস্তাটা সেদিকে ওর খেয়ালই যেন নেই। পিচনে না ফিরে হনহন করে কখন পার হয়ে গেছে সে। এপারে দাঁড়িয়ে মন খারাপ করা বৃষ্টি।
ওর কোন বিকার নেই যেন।
সম্পর্কের শুরুতেই আম্মুকে জানিয়েছিলাম এই ছেলেটাকে বিয়ে করব। পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে আব্বু মেনে নিলেন মেয়ের পছন্দ। দুই মেরুর দুজন একই পথে হাঁটব। কবিতা, নদী, পাহাড় আর জোৎøায় ভিজে ভিজে পার করে দেব আমাদের অনাগত বসন্তদিনগুলি।
আমি ওকে বলেছিলাম আমার জন্য একটা চিঠি লিখ। ও বলেছে চেষ্টা করবে। বিকেলের ডাকে নীল খামের শরীরের ভেতর সাদা কালো অক্ষরে লেখা চিঠিটি আমি কোনদিন পাইনি।
আমি ওকে লিখেছিলাম অনেক চিঠি এই প্রযুক্তির যুগে ও আমি ওর বুকপকেটে ভরে দিতাম আমার ভালবাসার কথামালা।
‘প্রিয় পুরুষ শুধু তোমাকেই ভালবাসি।
’ হয়ত ও কোনদিন মন দিয়ে পড়েই দেখেনি আমার চিরকুট।
রাত জেগে জেগে ক্লান্ত হয়ে যেতাম ওর একটা ফোনের জন্য। কথা বলতে নাকি ওর ভাল লাগে না। মন খারাপ হতে হতে একসময় আমার ভেতর পাহাড় সমান না পাওয়া জমা হয়। কখনো কখনো হিসাব মিলত না আমি কি খুব ভুল করলাম?
এরপর একদিন আমার জন্মদিনে আমি সারাদিন অপেক্ষা করতে থাকি জোহান্স আসবে ওকে নিয়ে আমার ছোট ভাই যে বাসায় থাকে সেখানে যাব।
আম্মু এসেছে ফরিদপুর থেকে। জন্মদিন উপলক্ষে আম্মু অনেক আয়োজন করেছে।
বিকেল বেলা ওর আসার কথা। আমি রেডি হয়ে বসে আছি ও আসবে। সন্ধ্যা হয়ে আসে আমি ফোন করি ও বলে ও আসছে কিন্তু সময় যাচ্ছে ও আসে না।
আমি আর হীরা অপেক্ষা করতে থাকি ওর জন্য। ক্রমেই কান্না পেতে থাকে।
অবশেষে ও আসে। রাত ৯টা বেজে যায় ওর আসতে। এসেই ফোন করে বলে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে যেতে।
আমি রাজি হইনা কারণ আমি হলের সামনে থেকে রিকসা নিয়ে ধানমন্ডি যাব। আমি ও কে হলের সামনে আসতে বলি।
ও কিছুতেই এখানে আসবে না কারণ ও আমার জন্য ফুল কিনেছে। ফুল নিয়ে মেয়েদের হলের সামনে আসতে ওর লজ্জা লাগছে।
একে তো আসতে দেরি তার উপর আবার হলের সামনে আসবে না শুনেই আমার খুব খারাপ লাগতে শুরু করল।
আমি ও গোঁয়ড়ের মত বললাম আমিও যাব না।
জোহান্স তার স্বভাবসুলভ আচরণেই পাবলিক লাইব্রেরি থেকে চলে যাচ্ছিল তার গন্তব্যে। হীরা ফোন করে তাকে অনেক অনুরোধ করে থামাল। টিএসসির সামনে আমাদের দেখা হল।
আসলে আমার কোন চাওয়ার মূল্য ও কোনদিন দেয়নি এ কারণে হয়তো আমার ভেতর একটা বিদ্রোহী মন তৈরি হয়েই ছিল।
তাই ও সামনে এসে দাঁড়াতেই ওর হাতের ফুলগুলো আমি মাটিতে ছঁড়ে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলাম।
হীরা ফুলগুলি তুলে আমার হাতে দিল। অনেক মন খারাপ নিয়ে রিকসায় উঠে বসলাম আম্মুর কাছে যাচ্ছি। পুরো রাস্তায় ওর সাথে আমি কোন কথা বললাম না, ও ও বলল না।
কেবল ভাবছি আমি পাথরে ফুল ফোটাতে পারিনা, অতখানি মানসিক জোড় আমার নেই।
সব এলোমেলো হয়ে গেল।
যাহোক বাসায় গেলাম। আম্মু ও কে খাবার খাওয়ালো। একটা ও কথা বললাম না ওর সাথে। তারপর আমার কী যে হলো আমি আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁেদ বললাম ‘আম্মু আমি ওকে বিয়ে করব না’।
আমার কান্না দেখে আম্মু জোহান্সকে বলল তোমরা যদি এত ঝগড়া কর আর একে অপরকে সম্মান না কর তাহলে কি দরকার এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার। তোমরা কেন শুধু কষ্ট পাবে।
জোহান্স নিজে ও ভাবেনি আমি এমন করতে পারি। ও কোন কথা না বলে চলে গেল। আমার মোবাইলে একটা মেসেজ ‘বৃষ্টি, আজকের ঘটনায় আমি হতবাক, নির্বিকার’।
আর কখনো আমাদের দেখা হবে না। সারারাত কেঁদেছি এই ভেবে, যে খেলাঘর আমি সাজিয়েছি আমি নিজের হাতেই তা ভাঙলাম কেন? আমি, তো জানিই আমার জোহান্স এমনই।
খুব সকালে জোহান্স ফোন করল ‘তুমি কি ক্যম্পাসে যাবে আমি তোমাকে নিতে এসেছি’।
আমি প্রথমে না করে দিলাম তারপর ও আমাকে বলল ‘আমি সারারাত ধরো কেশেছি আমার গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে আমার মনে হয় যক্ষা হয়েছে তুমি যদি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও তবে আমি যাব। ’
আমি ছাড়া এই ছন্নছাড়া ছেলেটির আর কে আছে!! ভুলে গেলাম গত রাতের কথা।
আজকের সকালটা অন্যরকম মায়াবী লাগছে। আমাদের রিকসা পার হয়ে যাচ্ছে ধানমন্ডি লেক, রাইফেল স্কয়ার.....চারপাশের ব্যাস্ত মুখরতা আমাদেরকে স্পর্শ করছে না।
‘দেখি কোথায় তোমার থুথুতে রক্ত’ বলে আমি টিস্যু পেপার এগিয়ে দিলাম, দেখি সেখানে হালকা রক্ত।
ওকে বললাম ও কিছুনা আজকাল এটা কোন রোগই না চল ল্যাব এইডে ডাক্তার দেখিয়ে আসি।
-আর কখনো আমার সাথে এমন করবে?
-না না তুমি যা বলবে তাই শুনব।
ও সাহস করে আমার হাতটা ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। আমি ছাড়িয়ে নেইনা।
আমরা দুজন প্রথম প্রেমে পড়ার মুগ্ধতায় বুঁদ হয়ে অনাদি কালের পরিচিত পথ ধরে এগুচ্ছি।
অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। বছর চার তো হবেই।
আমি তার সন্তানের মা। আজ পর্যন্ত জোহান্স আমার একটা ইচ্ছে ও পূরণ করেনি। কোন কথা ও সে আমার শোনেনি। যখন খুব রেগে যাই কেন আমার কথা সে শুনল না তখন কেবল চুপচাপ আমার বকা শোনে। আজ আমাদের বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল ও বলেছিল অফিস থেকে তাড়াতাড়ি আসবে।
আসেনি। আমার অনাগত বসন্তদিনগুলি ও না পাওয়া দিয়েই ভরা থাকবে। তবু এভাবেই আমাদের জীবন যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।