আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিহাইন্ড দ্যা সিন অফ অ্যা টিকেট ট্রাজেডী



একটি ফেসবুক থ্রেড দিন পনের আগের কথা। ফেসবুক খুলে দেখি, মুকুল ভাইয়ের থ্রেড। আর মুকুল ভাইয়ের থ্রেড মানেই জরুরী জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু। এই থ্রেডেও তার ব্যতিক্রম হল না। মুকুল ভাই আমাদের সবাইকে নিয়ে বিশ্বকাপের খেলা দেখতে চায়।

সেই জন্যেই এই মহৎ উদ্যোগ। শুরুতেই থ্রেডের সবাইকে একবার শুধিয়ে নেয়া হল, কার কার স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখার ইচ্ছা আছে? বলা বাহুল্য, ভারত-পাকিস্তান, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, ম্যানইউ-বার্সা সবাই এক পায়ে খাড়া। প্রব্লেম হল, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে যাবে কে? একে তো আমাদের টার্ম ফাইনাল চলছে, তার উপর বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কেনার ব্যাপারে সবারই চরম ঔদাসীন্য লক্ষণীয়। এ ওকে বুক করে তো ও তাকে বুক করে। তখন পর্যন্ত আমরা জানতাম যে একজন সর্বোচ্চ চারটে টিকেট কিনতে পারবে।

এই সুযোগে আমাদের বান্ধবীমহলে তুমুল জনপ্রিয় ফয়সালকে মেয়েরা বুক করে নিয়েছে দেখলাম। শেষমেষ আমিও রাজি হয়ে গেলাম লাইনে দাঁড়ানোর জন্য। সঙ্গী আরো তিন বন্ধু- প্রসূন, সার্থক এবং অতি অবশ্যই মুকুল। অতঃপর কিছু দুঃসংবাদ ক'দিন পর পরই একটার পর একটা দুঃসংবাদ কানে আসে। প্রথম দুঃসংবাদ- মিরপুর স্টেডিয়ামের সংস্কারের ফলে এর ধারণ ক্ষমতা নাকি ৪০ হাজার থেকে নেমে ২৫ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।

তার মানে টিকেট পাবার প্রোব্যাবিলিটি পূর্বে ১০০% হলে এখন তা ৬২% এ নেমে এসেছে। পরবর্তী দুঃসংবাদ- এই ২৫ হাজার টিকেটের মধ্যে নাকি মাত্র ১৫ হাজার আমাদের মত ম্যাঙ্গো পিপলের জন্য ছাড়া হবে। বাকিটা মহামান্য রাজা-উজির, তাদের ভাই-বেরাদর ও ক্লাব ক্রিকেটারদের জন্য। বন্ধু, সম্ভাবনা এখন ৩৭% মাত্র। তাতে কী? মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন, টিকেট কিনিতে হবে এই যাদের পণ- তাদেরকে কী আর প্রোব্যাবিলিটির হিসেব কষে থামানো যায়? আমরা চারজন তখনও স্থির- থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, কিনবো টিকেট পকেট পুরে।

এর মধ্যে হলের কিছু ফ্রেন্ডের সাথেও যোগাযোগ হয়েছে। ওরাও ১ তারিখেই (তখন পর্যন্ত আমরা জানতাম, ১ তারিখ থেকে টিকেট ছাড়বে) আমাদের সাথে টিকেট কিনতে যাবে। আমাদের দুচোখ জুড়ে তখনো স্বপ্নেরা হাডূডূ খেলছে। এই তো সুযোগ। হলে মজাসে থার্টিফার্স্ট করবো।

দেন, একটা বাজতে না বাজতেই দলবল নিয়ে সিটিব্যাঙ্কের সামনে গিয়ে তাবু গাঁড়বো। একটুখানি পিছুটান আরো একখান দুঃসংবাদ। একজন নাকি সর্বোচ্চ দুটো টিকেট কিনতে পারবে। এইবার তো আবাল-ব্‌দ্ধ-বণিতা সবার মাথায় হাত। দু'সপ্তা ধরে যা যা প্ল্যানিং করে রেখেছিলাম, সব শালা ভেস্তে গেলো।

বিশেষতঃ আমাকে যারা বুকিং করে রেখেছিলো, তাদের সবাইকে হতাশ করতে হল। থার্টিফার্স্টের খুব সম্ভব দু'দিন আগে জানা গেলো, ১ তারিখ থেকে নয়, ২ তারিখ থেকে টিকেট বিক্রয় শুরু হবে। এদিকে ৫ তারিখ আমাদের ডিএসপি এক্সাম। এই খবর শুনে অনেকেই আবার এক পা পিছিয়ে গেলো। তাদের বুঝানো হল, ১ তারিখ সন্ধ্যায় হলে এসে সবাই কোপায়ে পড়াশুনা করবো।

৩ বছরের কোশ্চেন-টোশ্চেন সব সল্‌ভ করে উড়িয়ে দেবো। তারপর পেনাংযে উদরপূর্তি সেরে ঠিক ১২ টা বাজার আগেই সটান লাইনে দাঁড়িয়ে পড়বো। ট্রাজেডীর শেষ অঙ্কে সবকিছু ভালোই এগোচ্ছিল। আজ সকালে মুকুল ভাই ফেসবুকে আরেকটা দুষ্টখবর শেয়ার করলেন। খবরটা এরকম-এক ব্রাঞ্চ থেকে নাকি এক দিনে ৪৮০'র বেশি টিকেট বিক্রি হবে না।

ওরা হিসেব কষে দেখিয়েছে, প্রতিটা টিকেট প্রসেস করতে যদি ওদের ৩ মিনিটের মত সময় লাগে, তবে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসে এর চেয়ে বেশি টিকেট বেঁচা সম্ভব নয়। মনটা একটু দমে গেলো। হতাশা-টতাশা সব ঝেড়ে উঠতে উঠতে দুপুর হয়ে গেলো। খেয়েদেয়ে একটু জিরিয়ে নেবো ভাবছি, তখনই শুনলাম, বাংলার আকাশে আজ মেঘের ঘনঘটা। অতি উৎসাহী মানুষজন নাকি এবেলাতেই চেয়ার-টেবিল আর বিছানাপত্তর সমেত লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে।

মালিবাগ, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ২৭-সব জায়গা থেকেই খারাপ খবর আসতে লাগলো। অমুক ব্রাঞ্চে ৩টার মধ্যেই ১০০ লোক দাঁড়িয়ে গেছে, তমুক ব্রাঞ্চে ৪টা বাজে অনুমান ২৫০ লোক দেখা গেছে। টিকেট পেতে হলে এই মুহূর্তে কোন একটা ব্রাঞ্চে পৌঁছানো চাই। কিন্তু, পূর্বপ্রস্তুতি বলে তো একটা ব্যাপার আছে। এই অল্প সময়ের নোটিশে চেয়ার-টেবিল, বিছানা-পত্তর যোগাড় হবে কোত্থেকে? দু'দিন পরেই পরীক্ষার খাতায় ডিজিটাল সিগন্যালের বাপ-মা, ভাই-বোন সবাইকে প্রসেস করে আসতে হবে।

অথচ, বই খুললে এখনো যাই পড়ি, তাই হিব্রু ভাষায় লিখিত দুর্বোধ্য শ্লোক মনে হয়। অগত্যা, টিকেট কেনার প্ল্যান আপাতত স্থগিত করতেই হল। সে যাই হোক, মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারি বা নাই পারি, টাইগাররা, আমরা তোমাদের সাথেই আছি। তোমরা করবে জয়, এ বিশ্বাস আছে বলেই আজও আমরা গান গাই, আজও আমরা পরীক্ষার পূর্বরাত্রে কীবোর্ডের বারোটা বাজাই। টাইগারদের জন্য এবং যারা মাঠে গিয়ে খেলা দেখছেন, তাদের সবার জন্য শুভকামনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.