আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোহাচ্ছন্ন মহিমান্বিত রজনী

বাস্তবতার ভার্শন ২.৭.১২ এ আছি। নিয়মিত আপডেট হচ্ছি।

শবে কদর, শবে বরাত, শবে মেরাজ এসব 'মহিমান্বিত রজনী' নিয়ে সুজিত তেমন একটা ভাবে না। ছোট থাকতে ধর্ম কর্ম খুব করতো। আস্তে আস্তে মন উঠে গেছে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ পুরুষ মানুষ জীবনে দুইটা সময় একেবারে মন থেকে ধর্ম কর্মে মনোযোগ দেয়। এক টিন এজ বয়সের পুরোটা সময় ধরে, আর আরেকবার বার্ধ্যকে জড়ানো থেকে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত। এর বাইরের সময়গুলোতেও ধর্ম কর্ম করে, তবে সেগুলোর একটিও নি:স্বার্থভাবে না। অবশ্যই কোন না কোন কিছুর বিনিময় থাকবেই। সুজিত এখন এই দুই সময়ের কোনটাতেই নেই।

ভার্সিটি বন্ধ। সারারাত জেগে মুভি আর ফেসবুকিং করেই রাত কাটে। আজ শবে কদর। নামাজ যা পড়ার মসজিদে তারাবীই পড়েছে। আলাদা নফল নামাজ পড়া হয়নি।

আজ কাটাবনের পাইলট মুভি মার্কেট থেকে দ্যা আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং সিনেমার ডিস্ক এনেছে। রাত জেগে মুভি দেখা হবে। এমন সময় মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। মাহীর মেসেজ। "দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে হেদায়েত দান করুক, তুমি যেন সুস্থ থাকো, আর তোমার বাসার সবাই যেন খুব ভালো থাকে।

আল্লাহ হাফেজ, ভালো থেকো। " মাহীর সাথে ঝগড়ার দুইমাস চলছে। দুইমাসে কেউ কারোর সাথে কথা বলেনি। হুট করে এমন মেসেজ পাঠানোয় সুজিতের টেনশন বাড়ছে। ফোনে ট্রাই করে মাহীকে পাওয়া যাচ্ছে না।

কল রিসিভ করছে না। সুসাইড করে ফেলেনি তো? টেনশনে গোল্ডলীফ একসাথে দুটো ধরালো। সুজিতের দিকে রুমমেট নয়ন ভাই তাকায়। সুজিত এখন টেনশনের মিড লেভেলে আছে। বেশি টেনশনে থাকলে একসাথে ৪টাও ধরায়।

পনেরো মিনিট ট্রাই করার পর মাহী কল রিসিভ করল। -কি হয়েছে তোমার? -তুমি এই মেসেজ কেন লিখলা? -কেন কি হয়েছে? -আই লাভ ইউ। -তো? -তুমি সুসাইড করবা না। খবরদার না। -পাগল, সুসাইড করতে যাবো কেন? -তাহলে এরকম মেসেজ কেন লিখলা? -আজকে কি? -কি? -আজকে না শবে কদর।

-হুমম তো? -এজন্য দোয়া করলাম তোমার জন্য। -ও। ফোনের ওপাশ থেকে মাহী খিলখিল করে হাসছে। সুজিত চুপ করে সেই হাসি শুনছে। নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগছে।

প্রেমে পড়লে মানুষ বোকা হয়, কিন্তু ঝগড়ার সময়ও যে বোকা হয় জানা ছিল না। মাহীর হাসির পাশাপাশি ওর মার কড়া গলাও শোনা যাচ্ছে। "নিজেও নামাজ পড়ো, যার সাথে কথা বলছো, তাকেও নামাজ পড়তে বলো। আল্লাহ না কপালে লিখে না রাখলে সারাজীবনেও পাবে না। " -মাহী রাখি।

-ওকে। আই লাভ ইউ টু। সুজিত ফোন রেখে দিল। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ওজু করে নামাজের বিছানা পেতে বসল। সারারাত নামাজ পড়বে।

নয়ন ভাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। -হঠাত নামাজ পড়তেছো যে? -এমনি মনে হল। -সিনেমা দেখবা না? -সেহরীর পর। নয়ন ভাই কিছুই বুঝতে পারছে না। মানুষ কি নামাজ সত্যিই আল্লাহকে খুশি করার জন্য মন থেকে পড়ে না আল্লাহর সাথে কিছু অফার এক্সচেঞ্জ করার জন্য পড়ে? নয়ন ভাই বাথরুমে যায়।

গোসল করে নেয়। ইফতারীর পর ব্লু ফিল্ম দেখেছিল। কাপড় সামান্য নষ্ট হয়েছে। গোসল শেষে সেও নামাজের বিছানা পেতে নামাজে বসে যায়। নামাজ পড়তে তো বেশ ভালোই লাগে।

কেন তাহলে পড়ে না? -সুজিত দাঁড়াও। আমিও নামাজ পড়বো। -আচ্ছা। টেবিলে পড়ে আছে মুভির ডিস্ক, সিগারেটের প্যাকেট, ড্রয়ায়ের কোনায় লুকানো ব্লু ফিল্মের ডিভিডি। সবকিছুকে পিছনে রেখে নামাজ পড়ছে দুই যুবক।

লাইলাতুল কদরের মহিমান্বিত রজনীর ইবাদাত।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।