আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্লিওপেট্রা ২য় পর্ব

পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয় ,,,,,পথের পাশেই আছে মোর দেবালয়
রোমান সিনেটে সঙ্গীদের সাথে সীজার কুশলী রাস্ট্রনায়ক বিখ্যাত সেনাপতি জুলিয়াস সীজার রোমের গর্ব বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখলো কার্পেট থেকে বেরিয়ে এসে তার সামনে দাড়িয়ে আছে অপরূপা সুন্দরী রানী ক্লিওপেট্রা। তার সেই স্বর্গীয় রূপসুধায় মুগ্ধ সীজার মুহুর্তেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন যা ছিল ক্লিওপেট্রার অন্যতম গোপন উদ্দেশ্য। তার আকর্ষনকে কাজে লাগিয়ে ইজিপ্টের সিংহাসনের উপর তার দাবীর কথা জানালে সীজার দ্বাদশ টলেমীকে পরদিন তার সামনে হাজির হওয়ার জন্য ডেকে পাঠান। কিন্ত রাজা টলেমী ক্লিওপেট্রার ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে নিজেকে প্রতারিত মনে করে সীজারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে। আলেকজান্দ্রিয়ার এই ছয়মাস ব্যাপী যুদ্ধে রণকুশলী সীজারের কাছে সহজেই পরাজিত হয়ে পালাতে গিয়ে নীলনদে ডুবে মারা যায় অনভিজ্ঞ কিশোর রাজা দ্বাদশ টলেমী।

যুদ্ধে আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইব্রেরীর একাংশ সহ অনেক গুরুত্বপুর্ন স্হাপনা জ্বলেপুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। সীজারের সহযোগীতায় যুদ্ধে জয়লাভ করেন ক্লিওপেট্রা। এরপর তৎকালীন মিশরের রীতি অনুযায়ী তিনি এবার তার ১১ বছর বয়সী ছোটো ভাইকে বিয়ে করে সিংহাসনে আরোহন করেন। মিশরের সিংহাসন ছাড়াও ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে সীজার তাকে আরো কিছু এলাকা তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত করে দেন। ক্লিওপেট্রা এক বছর পর ৪৭ খৃঃ পুঃ জুন মাসে ক্লিওপেট্রার সিজারিয়ান নামে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করেন।

ক্লিওপেট্রা তাকে সীজারের সন্তান বলে দাবী করেন এবং তার আশা ছিল পুত্রসন্তানহীন রোমান অধিপতি সীজারের উত্তরাধিকারী তার ছেলেই হবে। কিন্ত সীজার সিজারিয়ানকে নিজ সন্তান হিসেবে অস্বীকার করে ভাগ্নে অক্টেভিয়াসকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। এতে ক্লিওপেট্রা মনক্ষুন্ন হলেও কোনো কথা বলেনি। পরের বছর ৪৬ খৃঃ পুঃ এ সীজার আরও কিছু সফল অভিযান শেষ করে রোমে ফিরে গেলে রোমের অধিবাসীরা তাকে বিরাট সম্বর্ধনা দেয়ার আয়োজন করেন। সীজারের আমন্ত্রনে ক্লিওপেট্রা মিশরের ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনে নির্মিত স্বর্নমন্ডিত সিংহাসন আকৃতির রথে চেপে অত্যন্ত জমকালো সাজে সেজে ছেলে সিজারিয়ান সহ সেই অনুষ্ঠানে উপস্হিত হন।

তার সেই অতুলনীয় রূপ-সৌন্দর্য এবং ঐশ্বর্য আর বৈভবের সেই জমকালো উপস্হিতি সবাইকে হতবিহ্ববল করে তোলে। সীজার ক্লিওপেট্রাকে রোমের অদুরে এক প্রাসাদে থাকার ব্যবস্হা করে দেন। তার প্রতি বিবাহিত সীজারের এই অনুরাগ ও পক্ষপাতিত্ব রোমের রক্ষনশীল সমাজের একটি অংশ পছন্দ করতে পারেনি। এছাড়াও সীজারের প্রচন্ড ক্ষমতাশালী হয়ে উঠা ও নিজেকে সারা জীবনের জন্য ডিক্টেটর ঘোষনা করায় সিনেটে অনেকেই তার প্রতি বিরূপ হয়ে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে দুই বছর পর ৪৪ খৃঃ পুঃ ১৫ ই মার্চ সিনেট ভবনের বাইরে সীজারকে তারই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং রোম সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী ব্রুটাস ও তার সহযোগী ষড়যন্ত্রকারীরা ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে।

উল্লেখ্য যে এই ব্রুটাস নামটি থেকেই ইংরেজী ব্রুট শব্দটির উৎপত্তি। এ ঘটনার পরই ক্লিওপেট্রা তার সন্তানসহ মিশরে পালিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর তার ভাই তথা স্বামী ত্রয়োদশ টলেমীর রহস্যজনক মৃত্যু হলে ক্লিওপেট্রা তার ছেলে সিজারিয়ানকে সাথী করে সিংহাসনে বসেন। ক্লিওপেট্রা ও মার্ক এ্যন্টনী ইতিহাসে লাইলী মজনু আর শিরি ফরহাদের মতই অমর হয়ে আছে ক্লিওপেট্রা আর মার্ক এ্যন্টনীর প্রেম। মার্ক এ্যন্টনী ল্যাটিন ভাষায় যার নাম মার্কাস এ্যন্টোনিয়াস রোমের একজন বিখ্যাত সেনাপতি ও রাজনীতিবিদ।

রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও তিনি ছিলেন সীজারের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সমর্থক। সীজারের মৃত্যুর পর অক্টেভিয়াস ও লিপিডাসের সাথে যৌথভাবে রোমের শাসন ক্ষমতা লাভ করেন মার্ক এ্যন্টনী। কৌশলগতভাবে ইজিপ্ট তখনও স্বাধীন ছিল যখন ভুমধ্যসাগরের তীরবর্তী সমস্ত এলাকাই ছিল রোমের শাসনাধীনে। এর মধ্যে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে তা হলো ক্লিওপেট্রা সীজারের এক হত্যাকারী ক্যাসিয়াসকে সহায়তা করছে। শিল্পীর তুলিতে আঁকাএক ভোজসভায় এ্যন্টনী ও ক্লিওপেট্রা এ অবস্থায় ৪২ খৃঃ পুঃ ক্লিওপেট্রার আনুগত্য সম্পর্কে জানার জন্য এ্যন্টনী তাকে ভুমধ্যসাগরের তীরবর্তী নগরী টরসাসে (আধুনিক তুরস্ক) দেখা করার আমন্ত্রন জানান।

ক্ষমতা আর সিংহাসনের প্রতি অপরিসীম লোভী ও নিষ্ঠুর ক্লিওপেট্রা একে একে তার পথের কাটা ভাইবোনগুলোকেও রেহাই দেয়নি। সে জানতো বাকী দুজন শাসকের চেয়ে এ্যন্টনী অনেক ক্ষমতাশালী, তাকে হাত করতে পারলে তার সিংহাসন নিরুপদ্রব। সে আরও জেনে ছিল কূটনীতিতে এ্যন্টনীর সীমাবদ্ধতা এবং মদ ও নারীর প্রতি তার চরম আসক্তি ও দুর্বলতার কথা। এই দুর্বলতাগুলোকেই ব্যবহার করার লক্ষ্য নিয়ে ক্লিওপেট্রা এ্যন্টনীর সাথে টরসাসে দেখা করা সিদ্ধান্ত নেয়। শিল্পীর তুলিতে আঁকা এ্যন্টনী ও ক্লিওপেট্রা।

কাঠের অপরূপ কারুকাজ করা সোনালী রঙের নৌকায় বেগুনী পাল, তাতে সুরের ছন্দে ছন্দে রুপার বৈঠা বেয়ে নদী পথে নৌকা এগিয়ে যাচ্ছে এ্যন্টনীর শিবিরের দিকে। সে নৌকায় স্বর্নের পোশাক আর অলংকারে প্রেমের দেবী আফ্রোদীতির সাজে সেজে বসে আছেন অবর্ননীয় রুপের অধিকারী ক্লিওপেট্রা। তার দুপাশে দুজন কিশোর প্রেমের দেবতা কিউপিডের সাজে সেজে পাখার বাতাস বুলিয়ে যাচ্ছে। আর সহচরীরা রয়েছে জলপরীর সাজে বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততার ভঙ্গীমায়। ভেনাসরূপী ক্লিওপেট্রার সেই স্বর্নখচিত রাজকীয় বেশভুষা অভুতপুর্ব সেই সুগন্ধীর ঘ্রান আর উপস্হানার প্রকাশভঙ্গী যা মুহুর্তেই এ্যন্টনীকে তার প্রেমে মাতাল করে তুল্লো... চলবে... ছবি ও তথ্যসুত্র: ইন্টারনেট ক্লিওপেট্রা ১ম পর্ব Click This Link
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।