আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবর্তিত একজনঃ দ্বিতীয় পর্বঃ মগজ ধোলাই

থিংক সিম্পল।

প্রথম পর্ব ১৯৭১? এদেশে গণহত্যা? জামায়াত নেতা কতৃক ধর্ষণ, হত্যা দখল? মিথ্যা কথা! সব বানোয়াট, অসত্য তথ্যে ভরপুর ইতিহাস। হ্যা, ভারত পাকিস্তান ভাগ হবার পর এদেশের অদুরদর্শী নেতারা (শেখ মুজিব সহ অন্যান্য) সবসময়ই সমস্যা সৃষ্টি করছিল। দেশভাগের জন্যে মুলত এইসকল ধর্মবিমুখ লোকেরাই দায়ী। জামায়াত পাকিস্তান সৃষ্টিতেই অখুশি ছিল, সেইখানে আবার বাংলাদেশ! কথাগুলো বলছিলেন রনির বাবা।

আরো কি বলেছেন তা বলার আগে চার বছরের কিছু ঘটনা বলে নিতেই হচ্ছে। আমার জীবনটা মুটামুটি প্ল্যান করাই ছিল। হাফেজী শেষে দাওরায়ে হাদীস পাশ করে কাগজের ব্যবসা করব আর দ্বীনের দাওয়াত দিব। সেই সময়ে শর্ট কোর্স নামে একটা ব্যবস্থা জনপ্রিয় হচ্ছিল। মুলত দাওরা হাদীসকেই সংক্ষেপ করে আরবীর উপর গুরুত্ব দিয়ে চার চছরে একটা সার্টিফিকেট দেয়া হয়।

সেখানে ভর্তি হলাম, আগের পরিবেশ থেকে তেমন কোন পরিবর্তন এখানেও পেলাম না। সমস্যাও হচ্ছিল না। এক বছর পর শীতের বন্ধে পুরোন বন্ধু আব্দুল্লার বাসায় গেলাম কয়েকদিন। আব্দুল্লাহ আলিয়ায় ভর্তি হয়েছিল। আলিয়া সম্পর্কে কওমীর প্রায় সবার ধারনা এরকম যে আলিয়া ওয়ালা ভুল ইসলাম শিখে।

সেখানে মুলত ইংরেজদের গোলামী করার আলেম তৈরী করা হয়। তাই স্বাভাবিক কারণে আমিও অচ্ছুৎ মনে করতাম। একদিন যেয়ে দেখলাম আব্দুল্লাহ অংক করছে, একটা অংক উত্তর সাথে মিলছিল না। কয়েকবার করে ও বলল উত্তরে ভুল আছে! আমি অবাক হলাম, জিজ্ঞেস করলাম সবগুলো অঙ্ক করে উত্তর মিলিয়ে নিচ্ছিলা কিন্তু এটার বেলায় উত্তর ভুল বললা কেন? আমাকে বলল যে সুত্র দিয়ে করছি তাতে উত্তর আসার কথা ৪০ কিন্তু উত্তরে লেখা আছে ৪৭, আমি বললাম তাহলে সাত যোগ করে নিলেই তো মিলে যায়! ও আমাকে বলল দেখ, আমরা উত্তর জেনে তারপরতো অঙ্ক মেলাই না। নির্দিষ্ট কতগুলো পদ্ধতি আছে, সেগুলো যদি একই উত্তর দেয়, তখন আমরা বলি উত্তর ঠিক আছে।

তুমি যদি উত্তর জেনে নিয়ে সেটাকে মিলাতে যোগ বিয়োগ করতে থাকো, তাহলে সেটা ভুল হবে। কারণ এই যে তুমি সাত যোগ করতে বললা, এই সাত কোথেকে পেলা? তোমাকে উত্তর বের করতে হবে, উত্তর মেলানো নয়। এমনিতেই আমি ভবিষ্যত নিয়ে হতাশ ছিলাম। কয়েকবার এরকম আহাম্মকী মার্কা প্রশ্ন করে এবং পরামর্শ দিয়ে হাসির পাত্র হয়েছি। মামাকে অনেক বলেছিলাম যে দাড়ি রাখেন, দাড়ি না রাখলে রাসুলের কলিজায় ক্ষুর চালানো হবে।

তাবীজ, পানি পড়া, ঝাড়ফুক, নামের অর্থ ইত্যাদি কাজের জন্যে মানুষ প্রায়ই আমার কাছে ধর্ণা দিত। একবার কেন জানি মনে হল তাবীজের মধ্যে আরবী একটা বাক্য লিখে ভরে দিলাম, পরে সেটা কাজে লাগায় আমার তাবীজের চাহিদা গেল বেড়ে। ঝারফুকের ক্ষেত্রেও একই কাজ ঘটল, কিছু না পড়েই কতক্ষন বিরবির করে ফুকে দিলাম, ঝড়েই বক মারা পড়ল। যে বাসায় প্রথম তারাবী পড়াতাম, তাদের উপর এসব প্রয়োগ করতাম। এভাবে যখন দেখলাম মানুষজন সত্যিই বোকা বনছে, ব্যপারটা আর ভালো লাগল না।

সবার সামনেই ঘটনা গুলা বললাম, এটাও বললাম এইসব তাবীজ তুক তাকে কোন কাজ হয় না। আপনারা যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, তাদের জন্যে আল্লাহ যা মঙ্গল তাই প্রদান করবেন। বিস্ময় আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল, আমি ভাবলাম সত্য বলায় অনেকে খুশি হবে, বাস্তবে দেখলাম অনেকেই এইসব যে কাজে লাগে তা নিয়া অনেক কিছু বলতে লাগল, কেউ আবার বলল তুমি এইসব কে মিথ্যা মনে কর, আসলে তোমার ভেতর কুরানের যে নুর আছে, সে নুরের উসিলাতেই এসব ঘটেছে! অনেকে আবার আমাকেই অপছন্দ করা শুরু করল। এইসব ছোটখাট কারণ সবসময়ই আমাকে একটু একটু নাড়া দিয়েছে, যেমনটা জ্বীনের ঘটনা দিয়েছিল। ঠিক করলাম আর মাদ্রাসায় পড়ব না।

যদি আমি এমন কেউ হই যারা সমাজের কাজে আসে, প্রভাব রাখে, তাহলে মানুষ আমার কথা শুনবে, ধর্মে যে বাণী প্রচার করব তা আরো বেশী করে গ্রহন করবে। বন্ধ শেষে যখন মাদ্রাসায় ক্লাস শুরু হল, আমি আর গেলাম না। কিন্তু আব্বাকেও বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। এভাবে সপ্তাহ কেটে গেল। একদিন সন্ধ্যায় আমার এক হুজুর আর এক ছাত্র বাসায় এসে বিষয়টি আব্বাকে জানালেন।

আব্বা কোনদিন আমার উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাননি। তাই যখন জানলেন যে আমি আর পড়তে চাচ্ছি না, তখন হুজুরকে বলে দিলেন আমি মাদ্রাসায় আর যাচ্ছি না। আমার মনে হল শুধু শুধুই ভয় করছিলাম। ডিসেম্বরের শেষ পনেরো দিন ধরে বিভিন্ন স্কুলের পেছনে ছুটলাম। বেশীরভাগ স্কুল ক্লাস ফোরের উপরে আমাকে দিতে চাইছিল না।

এমনিতেই তখন আমার বয়স ক্লাস এইটের কাছাকাছি। তাই ফাইভ ছাড়া কোথাও ভর্তি হব না, আবার স্কুলটা ভালো হোক সেটাও চাচ্ছিলাম। তখন শুনলাম রাইফেলস এর দুটি স্কুলেই ক্লাস ফাইভে ছাত্র নিবে। আমাকে দেখে দুটো স্কুলের প্রিন্সিপাল ফরম দিতেই মানা করে দিলেন। আব্বুর এক বন্ধু তখন শিক্ষা বিষয়ক প্রধানের হালকা পাতলা পরিচিত ছিলেন।

তাকে নিয়ে গেলাম, তিনি স্রেফ মানা করলেন না, অপমানো করলেন এটা বলে, আর কত গরু ছাগল যে আসবে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে! খুবই খারাপ লাগল। সেদিনই আব্দুল্লার সাথে আবার দেখা হল। আমাকে বলল তুমি আমাদের মাদ্রাসায় ভর্তি হও, নতুন হিসেবে আমাদের মাদ্রাসা অনেক ভালো করেছে, লাস্ট তিন বছর ফাইভের তিনটা বৃত্তিই আমাদের মাদ্রাসা পেয়েছে। এইটেও তারা ভালো করেছে। তাদের ছাত্র দরকার, তোমাকে ফাইভেই নিয়ে নেবে।

আমার কাছে মনে হত ভুল ইসলাম শেখার চেয়ে যেখানে ইসলাম শেখায় না (স্কুল), সেখানেই যাওয়া ভাল। তাই ভীষণ অনিচ্ছা নিয়ে মাদ্রাসায় গেলাম। প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল, কাবলী স্যুট এর সাথে কেডস আর টুপি, কেমন জানি আজব লাগছিল নিজের কাছেই। কিন্তু পড়ার বিষয় সমুহ আমার কাছে খুবই ভাল লাগল। নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে নিতে প্রতিটা মুহুর্ত কাজে লাগানো শুরু করলাম।

এমনকি দুই ক্লাসের মাঝখানে বাড়ীর কাজ সেরে ফেলতাম। বাসায় কখনই আরবী লেখার কাজ নিয়ে যাই নাই। বেশীরভাগ সময় ইংরেজী আর অংকে ব্যবহার করতাম। এর ফলাফল দ্রুতই পেলাম, সে বছরের ব্যাচটা খারাপ ছিল। রেকর্ড থাকবেনা সেটা স্যাররা ধরেই নিয়েছিলেন।

তাই আমি বৃত্তি পাওয়ায় স্যারেরা বেশ খুশি ছিলেন। ভাল ফলাফলের কারণে ডাবল প্রমোশন পেয়ে ক্লাস সেভেনে উঠে গেলাম। সেভেনে আমার একজন শিক্ষক নতুন একটি পথে নিয়ে গেলেন। মাহমুদ স্যার, তিনি আমাদের ইংরেজী ১ম পত্র পড়াতেন। সবসময়ই পনেরো মিনিটের মধ্যে ক্লাস শেষ করে নিজের জীবনের গল্প বলতে শুরু করতেন।

মুলত সংগঠন করা কেন ভাল, কেন সেটা করা দরকার, কিভাবে সংগঠনের জন্যে টিফিনের টাকা থেকে এয়ানত জমাতেন, আরো অনেক গল্প বলতেন। তার ক্লাসের পর শুরু হত টিফিন পিরিয়ড। সেই সময়ে রনি ভাই আর কিছু ছেলেপুলে এসে ক্লাসে শিবিরের দাওয়াতী কাজ করত। প্রতিদিন স্যারের বিভিন্ন গল্প শুনে সংঘবদ্ধভাবে থাকার ইচ্ছা আমার মধ্যে বাড়তে লাগল। যদিও তাবলীগ করতাম, তারপরেও মনে হত যে তাবলীগ পরিপূর্ণ ইসলামী সংগঠন না।

রনির সাথে কথা বলার সময় এ বিষয়গুলোতেই ফোকাস করত। ওর কথা ছিল তাবলীগ রাসুলের জীবনের একটা অংশ মাত্র। তাবলীগের মাধ্যমে ইসলামের পূর্ণ খেদমত সম্ভব নয়, তাবলীগ যে দ্বীনি আন্দোলন নয় তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ সেক্যুলার সমাজ একে সেরকম ভয় পায় না। তুমি ভেবে দেখ, ইজতেমায় লাখো মুসল্লির সমাবেশ হচ্ছে, অথচ শিবিরের দশ পনেরো হাজার কর্মীর সমাবেশকে এরা কত ভয় পায়। সভা সমাবেশে বাধা দেয়।

কারণ তাগুতি শক্তির মোকাবেলায় শিবির আপোসহীণ। কিন্তু আমার প্রশ্নের শেষ হয় না। তাই রনি আমাকে বলল ছুটির পর বা বিকালে সময় দিতে। তখন আমার সব প্রশ্নের উত্তর সে দেবে। কথামত কয়েকদিন বিকালে আমরা বসলাম, মাদ্রাসায় থাকাকালীন আপত্তিগুলো নিয়ে প্রথম কথা বললাম।

বললাম শিবির প্যান্ট শার্ট পড়ে। প্যান্ট শার্ট সুন্নতি পোষাক না। --কথা হল সুন্নতি পোষাক বলে কিছু আছে কিনা? ইসলামে সতর ঢাকা সংক্রান্ত কথা আছে। এবং সেটা যেই পোষাকে সম্ভব হয়, সেই পোষাকই ইসলামে বৈধ। আর পাঞ্জাবী পায়জামা সহ আরবীয় পোষাক ইসলামী পোষাক নয়।

এগুলো স্থানীয় কালচার। -শিবিরের ছেলেরা দাড়ি কাটে --দাড়িও স্থানীয় কালচার। ইসলামী দাড়ি রাখতে হবে এমন কোনই বাধ্যবাধকতা নেই। দাড়ি রাখার গুরুত্ব হয়ত দেয়া আছে, কিন্তু তা মোটেও ফরজের পর্যায়ে না। আর যা ফরয না, তা ব্যক্তির ইচ্ছাধীন হওয়া উচিত।

-শিবিরের ছেলেরা গান শুনে। --হ্যা বাদ্যযন্ত্র বিহীন ইসলামী গান শুনে। আমরা কোন দায়িত্বশীলের কাছে ইসলামী গান ব্যতিত অন্য গান পেলে কঠোরভাবে নিষেধ করি, তারপর তাকে শাস্তিও দেয়া হয়। শুধু গান না, সিনেমা দেখাও শিবিরের কর্মীদের জন্যে নিষিদ্ধ। -শিবির সাহাবাদের সমালোচনা করে, নবীরাও ভুল করে এমন বিশ্বাস লালন করে।

--প্রথমত সমালোচনা বলতে তুমি কি বুঝ? সমালোচনা বলতে তুমি যদি ভাবো সাহাবাদের অপছন্দ করা। সেটা শিবির মোটেও করেনা। কয়েকজনের ক্ষেত্রে সাহাবী হওয়া নিয়ে আপত্তি আছে। যেমন মুয়াবিয়া, তার কাজ জানলে তুমিও তাকে সাহাবার কাতারে ফেলতে চাইবা না। আর নবীরাও মানুষ, ভুল করেনা একমাত্র আল্লা আর ফেরেশতারা।

তাই নবীদের মাধ্যমে আল্লার আদেশ বিরুদ্ধ কোন কাজ ঘটে থাকলে তাকে ভুল বলতেই হবে। যেমন আদম আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিলেন। কুরান যদি গভীরভাবে পড়, তাহলে দেখতে পাবা আল্লা অনেক জায়গায় মহানবীকে সতর্ক করেছেন আবার অনেক জায়গায় তার দ্বারা ঘটে যাওয়া কাজকে বৈধ করেছেন। তাই নবীরাই যদি ভুল করতে পারে তাহলে সাহাবীরাতো সাধারণ মানুষ। রনির সাথে সামনের কথাগুলা বলার আগে আপনাদের কিছু কথা বলে নেই, আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করছি না, আমি সেরকম শিক্ষাতেই বেড়ে উঠেছিলাম বলে আমার চিন্তাভাবনা সেরকমই ছিল।

তাই বিষয়গুলো আমার কাছে ঠিক মনে হত। যাহোকঃ রনিকে আবার জিজ্ঞেস করলাম –শিবির শরিয়তের আইন বাস্তবায়নে কি উদ্যোগ নিয়েছে? --প্রথমত দেশের মানুষ ইসলামকে সমর্থন করে না। যদি করত তাহলে ইসলাম জয়ী হত এই দেশে। তাই শিবির যেসব জায়গায় শক্তিশালী হয়েছে সেসব জায়গাতেই সীমিত আকারে শরিয়তের আইন প্রয়োগ করেছে। যেমন ঢাকার বাইরের অঞ্চলে কেউ প্রকাশ্যে প্রেম করতে পারে না।

কাউকে প্রেম করতে দেখলে আমরা বেত দিয়ে পিটিয়ে উঠিয়ে দেই। -জামায়াত নারী নেতৃত্ব সমর্থন করেছে। --দেখ, নারী নেতৃত্ব বলতে কি বুঝ? জামায়াতের নেতৃত্বে কোন নারী আছে? নেই, জামায়াত দুই শয়তানের মধ্যে ছোট শয়তানকে সমর্থন দিয়েছে। রাসুল ওকাজ মেলায় দাওয়াতী কাজ করতেন, সেখানে সবাই নেংটা থাকত, কাউকে নেংটা দেখা অবৈধ। তাহলে রাসুল কি অবৈধ কাজ করেছেন? মোটেই না, এটা দ্বীন প্রচারের কৌশল মাত্র।

জামায়াত সম্পুর্ণ পুরুষ দ্বারা পরিচালিত। প্রচলিত গণতন্ত্রের চর্চাও জামায়াতের কর্মকৌশলের অংশ মাত্র। -শিবিরে অমুসলিম সমর্থক আছে শুনেছি। --অমুসলিম সমর্থক বিষয়টা আসলে তেমন না। ধর তোমার এক হিন্দু বন্ধু আছে, তাকে একটা ফরম পুরন করালে।

সেটাই সমর্থক। বিধর্মীরা শিবিরের কোন পদেই নেই, কারণ সমর্থক ফরমেই যা লেখা আছে, তা একজন বিধর্মীর পক্ষে পালন করা সম্ভব না। -শিবিরের ছেলেরা জিহাদ করে না। --জিহাদ করে না সেটা কিভাবে বললা? শিবিরের এই পর্যন্ত আশির বেশী শিবির কর্মী শহীদ হয়েছে এই দ্বীনের আন্দোলন করতে যেয়ে। ঢাকার বাইরের প্রায় সব বিশ্ব্যবিদ্যালয়ে আধিপত্য বজায় রাখতে সবসময়ই জিহাদ করতে হয়।

-শিবির অবৈধ অস্ত্র রাখে। অবৈধ কিছু করা ইসলামে নিষেধ আছে। --তুমি কিন্তু এইখানে পরস্পরবিরোধী কথা বলছ। প্রথমত এই অবৈধ কি আল্লা করেছেন? অবৈধতো করেছে বাংলাদেশের অ-ইসলামিক সরকার। আর জিহাদ করা যদি ফরয মনে কর।

তাহলে অস্ত্র ছাড়া জিহাদ করবা কিভাবে? এটাতো খুবই স্বাভাবিক বুদ্ধির ব্যাপার যে অস্ত্রের মোকাবেলা অস্ত্র দিয়েই করতে হবে। সবার শেষে ট্রাম্প কার্ড ফেললাম। শিবির স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এদেশের বিরোধীতাকারীদের সমর্থন দেয়। তারা সেই লোকদের সমর্থন করে যারা সেই সময়ে হত্যা, লুট, ধর্ষণ ইত্যাদির মত বিষয়ের সাথে যুক্ত ছিল। দেশপ্রেম ঈমানের অংগ, সো যারা দেশদ্রোহী, তাদের সমর্থন করলে কিভাবে ঈমান ঠিক থাকে? কিন্তু রনি ভাই ওভার ট্রাম্প করলেন এই বলে, “দেশ? পাকিস্তান আমলে কোনটা এদেশের মানুষের দেশ ছিল? বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান? ধর এখন যদি পার্বত্য চট্ট্রগ্রাম স্বাধীন হতে চায়।

কোনটা তোমার দেশ?" -বাংলাদেশের কেউ যদি পাহাড়ীদের অত্যাচার করে, তাহলে আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ করব, তাদের সাথে কথা বলব, তাদের দাবীগুলো নিয়ে ভাববো। --ওহ! তুমি জানোনা তাহলে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পাহাড়ীদের উপর কি নির্যাতন করছে না? এখন নির্যাতন করছে বলেই কি তাদের স্বাধীনতার দাবী মেনে নিতে হবে? -অবশ্যই, যদি তাদের উপর নির্যাতন বন্ধ না হয়, তাহলে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করতেই পারে। --হুমম, তাহলে তুমি হচ্ছ দেশদ্রোহী, তুমিই ঈমানের অংগ হানি করলে। আর দেশের পক্ষে থাকলে তুমিই রাজাকার। তাহলে তোমার কাছে কোনটা বড়? দেশ না ঈমান? আর সেই সময়কার সত্যিকার অবস্থা জানতে চাইলে আমার আব্বার কাছে চল।

রনি ভাই এর সাথে তার বাসায় গেলাম, তিনি আমাকে যা বললেন তা এরকমঃ দেখ, যুগে যুগে ইসলামের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র চলেছে, যারা ষড়যন্ত্র করেছে তারা ইসলামকে এবং ইসলামী আন্দোলনকে সবসময়ই কলংকিত করতে চেয়েছে। তারা মুসলমানদেরকে টুকরো টুকরো করে রাখতে চেয়েছে, সেই কারণেই যখন একটা বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রের জন্ম হল। তখন পার্শবর্তী কুফরদেশ ভারত ভয় পেল। আজকে যদি বাংলাদেশ আর পাকিস্তান একসাথে থাকত। তাহলে ভারতের দুদিক থেকে পরমাণু বোমার আতংকে থাকতে হত।

কিন্তু ভারত তা চায়নি, আর সে কারণেই সৃষ্টির পর থেকেই তারা এদেশের মানুষের সাথে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। আমাদের দেশে কোন সমস্যা ছিল না, এখানে খাদ্যের অভাব ছিল না, চাকুরির অভাব ছিল না। তাহলে কিসের জন্যে এদেশের মানুষ আন্দোলন করেছে? তুমি আমাকে জানাতে পারবা যে এই দেশে যে যুদ্ধ হল, তা মানুষের কোন মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাবে হয়েছিল? আমারতো মনে হয় একাত্তুরে নিরাপত্তার জন্যে যে বাহিনী ছিল, তার উপর মুক্তিবাহিনীর হামলার কারণেই এত হত্যাযজ্ঞ ঘটে গিয়েছিল। আর জামায়াত ভাংগন রক্ষায় সব রকম প্রচেষ্টাই চালিয়েছে, এর মধ্যে বিদ্রোহীদের ধরিয়ে দেয়াও তাদের দেশপ্রেমের প্রমাণ। রনির আব্বার সাথে ঐদিন কথা বলার পর শিবিরের সমর্থক ফরম পূরণ করি।

কাজ শুরুকরি ইসলামী আন্দোলনের সৈনিক হিসেবে। চলবে... পুনশচঃ অতীতের কিছু অবুঝ সময়ের জন্যে আমি দুঃখিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.