আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধের আওয়ামী সংজ্ঞা অনুযায়ী নিম্মোক্ত ব্যাক্তিরা যুদ্ধাপরাধী কিনা?



পাকিস্তানী রাষ্ট্র কাঠামোকে সমর্থনকারী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে অপরাধ বলা যায় কিনা? শুধুমাত্র অখন্ড পাকিস্থানের সমর্থক ছিলো বলে আওয়ামী লীগ আজ জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পাকিস্থানের অখন্ডতাকে সমর্থন করছিলেন এরকম হাজার হাজার লোক আওয়ামী লীগে আছে। যেমন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের বেয়াই মুসা-বিন শমসের, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আজমের বাবা মীর্জা কাশেম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের শ্বশুর বর্তমান সরকারের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও উনার পিতা ফরিদপুরে রাজাকারদের তালিকায় ১৪ নম্বরে থাকা খন্দকার নুরুল হোসেন নুরু মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা ১৯৭১ সালে মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য ওবায়দুল্লাহ মজুমদার, ও শামসুল হক, ১৯৭২ সালে দালাল আইনে গ্রেপ্তার হওয়া ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী এ কে ফায়জুল হক, রাজাকার কমান্ডার ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী সরকারের ধর্মমন্ত্রী মাওলানা নুরুল ইসলাম ও মামুদ-উস সামাদ প্রমূখ। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুর আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে এক বৈঠকে উনার মেয়ের দাদা শশুড় ফরিদপুরের রাজাকারদের তালিকায় ১৪ নম্বরে থাকা খন্দকার নুরুল হোসেন নুরু মিয়াকে যুদ্ধাপরাধী না বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, "রাজাকার মানেই যুদ্ধাপরাধী নয়।

" আমাদেরও একই কথা... পাকিস্থানের অখন্ডতাকে সমর্থন করা যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ কোনটাই নয়। আর সারাদেশের রাজাকার, আল-বদর ইত্যাদীর তালিকা প্রকাশ করলেও দেখা যাবে যে সমস্ত জামায়াত নেতাদের টার্গেট করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে উনারা ঐ সমস্ত বাহিনীর সদস্যই ছিলোনা। কিন্তু সরকার যখন জামায়াত নেতাদের টার্গেট করে ফাসি দেয়ার প্রকাশ্য হুমকি দেয় তখন আমরা সংকিত। সরকার কি আসলে যুদ্ধাপরাধের বিচার চাচ্ছে নাকি জামায়াতে ইসলামীর বিচার করতে চাচ্ছে? পাঠকদের জানার সুবিধার্থে বিস্তারিত ভাবে আমরা তৎকালীন পাকিস্থানী বাহিনীকে সহযোগীতাকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের কিছু নাম দিচ্ছি। ভবিষ্যতে আরো নাম আসবে।

যেমন নোয়াখালী থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের ‘এমএনএ’ (জাতীয় পরিষদ) মো. ওবায়দুল্লাহ মজুমদার ও চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত ‘এমপিএ’ (প্রাদেশিক পরিষদ) অধ্যাপক শামসুল হক দু’জনই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর তৈরি এমএ মালেকের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। এরপর নিম্মোক্ত আওয়ামী লীগ নেতারা সরাসরি পাকিস্থানের পক্ষে ১৯৭১ সালে কাজ করেছেন। চট্টগ্রামের প্রাদেশিক আসন ২৪ থেকে নির্বাচিত ‘এমপিএ’ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, পটুয়াখালী থেকে নির্বাচিত ‘এমপিএ’ মুজিবুর রহমান তালুকদার, যশোর থেকে নির্বাচিত ‘এমপিএ’ মো. মঈনুদ্দীন মিয়াজী, খুলনার ‘এমপিএ’ হাবিবুর রহমান খান, বগুড়া থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নির্বাচিত ‘এমএনএ’ জহির উদ্দিন, লে. কর্নেল একেএম মাহবুবুল ইসলাম (পাবনা), সৈয়দ হোসেইন মনসুর (পাবনা), মো. আবদুল গাফফার (খুলনা), মো. সাঈদ (খুলনা), মোশাররফ হোসেন শাহজাহান, একে ফায়জুল হক (বরিশাল), এবিএম নুরুল ইসলাম (ফরিদপুর), আমজাদ হোসেন খান (ফরিদপুর), মো. নুরুল ইসলাম (ঢাকা), আখতারুজ্জামান (ময়মনসিংহ), সৈয়দ বদরুজ্জামান ওরফে এসবি জামান (ময়মনসিংহ), ডা. আবুল হাসেম (সিলেট)। উল্লিখিত ২০ নেতার প্রত্যেকে জাতীয় পরিষদ অথবা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। দৈনিক পাকিস্তান ও আজাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় এসব নেতার স্বাধীনতাবিরোধী বিবৃতি প্রকাশ হয়।

তালিকাভুক্ত এসব আওয়ামী লীগ নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় কেবল বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে ইয়াহিয়া সরকারের পক্ষই নেননি, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করেন। বর্তমান সংসদ উপনেতা মাননীয়া সাজেদা চৌধুরী সহ ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের ১৬৭ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৮৮ জন সংসদ সদস্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও তার গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাদের সদস্যপদ পুনর্বহাল করেছিলেন। পাকিস্তান সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঐ ৮৮ জন আওয়ামী লীগ এমপির নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা এবং সংসদীয় এলাকার উল্লেখ করে তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকার ৮৪ নম্বরে বেগম সাজেদা চৌধুরীর নাম রয়েছে। বেগম সাজেদা চৌধুরী এই ঐতিহাসিক তথ্যকে অস্বীকার করতে পারেননি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্তমান আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম স্বীয় রাজাকার পরিচয় পত্র সবসময় সাথে সাথে রাখতেন যেন পাকিস্থানী বাহিনীর কাছ থেকে কোন রকম ঝামেলায় পড়তে না হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মাওলানা নুরুল ইসলাম একাত্তর সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭১ সালে তৎকালীন ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন, টাঙ্গাইলের সাবেক আওয়ামী লীগ এমপিএ খোদাবক্স মুক্তার, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মহকুমা আওয়ামী লীগের কোষাধ্য মো. ফিরোজুর রহমান, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবদুস শুকুর মিয়া, ফরিদপুর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল মিয়া মোক্তার, অ্যাডভোকেট কাজী খলিলুর রহমান, অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন মিয়া, চট্টগ্রাম সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আবুল বাশার, নেত্রকোণার আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম খান, নেত্রকোণা শহর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, মহকুমা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি চাঁদবক্স পাটওয়ারী মোক্তার, নেত্রকোণার বায়লাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি ডা. গিয়াসউদ্দিন আহমদ, নেত্রকোণা শহর আওয়ামী লীগ সদস্য সোহরাব হোসেন, নেত্রকোণা মহকুমা আওয়ামী লীগ সদস্য এমদাদুল হক, চাঁদপুর আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. মুজিবুর রহমান চৌধুরী, চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী মোক্তার, চাঁদপুর রেডক্রস সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের কার্যকরি সদস্য খুরশিদ আলম চৌধুরী, মহকুমা আওয়ামী লীগের কোষাধ্য বজলুর রহমান শেখ, চাঁদপুর আওয়ামী লীগ সদস্য ও তরপারচান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মৃধা, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজ শেখ পাটওয়ারী, চাঁদপুর আওয়ামী লীগ সদস্য ও ঠিকাদার মোফাজ্জল হোসেন, ফরিদগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক ডা. নুরুল ইসলাম, রাজশাহীর সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান, যশোর আওয়ামী লীগ নেতা মীর তৈয়ব, মোহাম্মদ আবদুল হাকিম বিক্রমপুরী প্রমূখ আওয়ামী লীগ নেতা পাকিস্থানের পক্ষে এবং স্বাধীনতা বিরোধী কাজ করেন। এসব তথ্য শুধু আমাদের নয়। বর্তমান আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংসদকে জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য '৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত মোট ৪৩ জন গণপরিষদ সদস্যকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তবে, এসব সদস্যের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার কিংবা আদেশ বহাল রাখা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রালয়ের কিছু করণীয় নেই। এছাড়া ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ থেকে বিজয়ী নুরুল আমিন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মেজর রাজা ত্রিদিব রায় বিদেশী রাষ্ট্র অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার কারণে বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ অনুসারে তারা কখনই বাংলাদেশ গণপরিষদ সদস্য ছিলেন না। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (নেত্রকোনা-৫) তারকা চিহ্নিত (১১৫ নং) প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী সংসদে এতথ্য জানান। ওয়ারেসাত হোসেনের প্রশ্ন ছিল, এটা সত্য কিনা যে, ১৯৭০ সালে তৎকালীন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত পরিষদ সদস্যদের মধ্যে ৭১ এ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য কতিপয় সদস্যদের সদস্য পদ স্বাধীন বাংলাদেশে গণপরিষদ গঠনকালে বাতিল করা হয়েছিল।

উত্তর হাঁ হলে বাতিলকৃত সদস্যদের নাম ও নির্বাচনী এলাকার নাম কি? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, ময়সনসিংহ থেকে নুরুল আমিন ও পাবর্ত চট্টগ্রাম হতে মেজর রাজা ত্রিবিদ রায় তদানীন্তন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হলেও বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ ১৯৭২-এর ৪ অনুচ্ছেদ কার্যকরি হওয়ার ফলে তারা বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য নন। তারা ১৯৭১ সালের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে একটি বিদেশী রাষ্ট্র অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তাই তারা কখনই বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য ছিলেন না। এছাড়া গণপরিষদ সদস্যদের মধ্য হতে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হতে মোট ৪৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা হচ্ছে- মোঃ হাবিবুর রহমান, সৈয়দ হোসেন মনসুর, মোঃ আব্দুল গফ্ফার, আবুল কালাম ফয়জুল হক, এবিএম নুরুল ইসলাম, আজমাদ হোসেন খান, মোঃ নুরুল ইসলাম, জহির উদ্দিন, মোঃ ওবায়দুল্লাহ মজুমদার, একেএম মাহাবুবুল ইসলাম, মোঃ সাঈদ, মোশাররফ হোসেন, আক্তারুজ্জামান, সৈয়দ বদরুজ্জামান, ডাঃ আবুল হাশেম, অধ্যাপক শামসুল হকম মোঃ আবদুল বারেক, ডাঃ আজহার উদ্দিন আহমেদ, গোলাম আহাদ চৌধুরী, এ হাদী তালুকদার, আদিল উদ্দিন আহমেদ এডভোকেট, মুজিবুর রহমান তালুকদার, শামসুদ্দিন আহমেদ, খন্দকার আব্দুল মালেক, ডাঃ আবু সোলায়মান মন্ডল, ডাঃ জাহিদুর রহমান, তাহেরুল ইসলাম খান, রিয়াজ উদ্দিন আহম্মদ, মোঃ আব্দুস সালাম, কেবিএম আবু হেনা, জহুরুল হক, মোশাররফ হোসেন, হাবিবুর রহমান খান, কাজী হেদায়েত হোসেন, আব্দুল হাকিম মাস্টার, মোঃ সাজেদ আলী মিয়া, মাসুদ আহমেদ চৌধুরী, ডাঃ কাজী সিরাজউদ্দিন আহমেদ, গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ হাশেম, এম. সাখাওয়াতুল্লাহ এডভোকেট, মীর্জা আবু মনসুর এবং আখতারুজ্জামান চৌধুরী।

অর্থাৎ উপরোক্ত নেতারা শেখ হাসিনার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দেয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। কিন্তু তাদের বিচারের কথা কি কেউ বলছে? বরং প্রশ্ন করা হচ্ছে তাদের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে কিনা। অন্যদিকে ১৯৭১ সালে জামায়াত ছিল একটি ক্ষুদ্র দল। জামায়াতের তুলনায় মুসলিম লীগ ছিল শতগুণে বড় দল। আর আওয়ামী লীগ ছিলো হাজার গুণ বড়।

যেহেতু জামায়াত ছোট দল ছিল সেহেতু ১৯৭১ সালে তাদের ভূমিকাও খুবই নগণ্য ছিল। শান্তি কমিটি, রাজাকার ইত্যাদি সংগঠন ও বাহিনীর তালিকা দেখলে বোঝা যাবে জামায়াতের উপস্থিতি সেখানে নেই বললেই চলে। সারাদেশে ১৯৭১ সালে গঠিত শান্তিবাহিনীতে জামায়াতকে একটি চেয়ারম্যানের পদও দেয়া হয়নি অতি ক্ষুদ্র দল ছিল বলে এবং নেতা-কর্মী ছিলনা বলে। বরং শান্তিকমিঠি, রাজাকার, আল-বদরে আওয়ামী লীগ ও মুসলিম লীগের লোক জনই ৯৫% এর চাইতেও বেশী ছিলো। একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি আরো পরিস্কার হবে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের একটি আসনে জামায়াতে ইসলামী ভোট পেয়েছিলো ৩৫০ মতো। আর ১৯৭১ সালে ঐ এলাকায় তালিকাভূক্ত রাজাকারই ছিলো ১১৫০০ জনের উপরে। আওয়ামী লীগের কথা মতো যদি জামায়াতের প্রাপ্ত সকল ভোটকেই রাজাকার হিসেবে ধরা হয় তাহলে বাকি ১১ হাজারেরও বেশী লোকগুলো কারা ?? নিশ্চয় তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক বা ভোটার ছিল। কারণ ঐ এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিল। সে হিসেবে সারাদেশের রাজাকার, আল-বদর ইত্যাদীর তালিকা প্রকাশ করলেও দেখা যাবে ৯০% রাজাকার আওয়ামী লীগ থেকে এসেছে।

কিন্তু এখন কি সরকার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে এর বিচার করবে? আসলে জামায়াতে ইসলামীকে সেদিনের কোন অপরাধে নয়, বরং ১৯৭১ সালে অখন্ড পাকিস্থানের সমর্থক ছিল এমন সব দল বর্তমানে বিলীন কিন্তু একমাত্র জামায়াত দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এই জনপ্রিয়তায় জামায়াতের জন্য কাল হয়েছে। অথচ স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে চীনপন্থী বাম দলগুলোর ভূমিকার কথা কেউ আজ বলেনা। কারণ তারা কেউই আজ আর রাজনৈতিক মাঠে নেই। জামায়াতে ইসলামীর অপরাধ হলো জামায়াত আজ ইসলামের আদর্শবাদী একটি শক্তিশালী দল।

আরেকটি তথ্য হলো ১৯৭১ সালে জামায়াতের সদস্য (রুকন) সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০০ জনের মতো। এখন সে সংখ্যা প্রায় ৩৫০০০ জন। শুধু জামায়াতের সদস্য (রুকন) সংখ্যার ১৯৭১ সালের তুলনায় বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯০ গুণ। এটা জামায়াতের ক্রমবদ্ধমান জনপ্রিয়তা ও সাংগাঠনিক শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম উদাহরণ। এই জনপ্রিয়তার কারণে বিএনপি জামায়াতের পাশে থাকে।

আবার আওয়ামী লীগের জামায়াত বিরোধীতার কারণও ওই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি। জামায়াত যদি আজ মুসলিম লীগের অবস্থায় পতিত হতো তাহলে নিজামী-মুজাহিদেরকে কেউ শুধু তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী নয় সাধারণ অপরাধীও বলতো না। যেমন এখন কেউই মুসলিম লীগের নাম স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে মুখেও আনেনা। অথচ আজকে জামায়াত নেতাদেরকেই অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এর বিপরীতে মাহমুদ আলী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে বেগম আখতার সোলায়মান (বেবী), আবদুল মালেক, রাজা ত্রিদিব রায় কারো নামই আজ বলা হচ্ছেনা যারা সরাসরি স্বাধীনতার বিপক্ষে দেশে বিদেশে ভূমিকা রেখেছিল।

তাদের নাম আজ কেউ অপরাধী হিসেবে উচ্চারণ করেনা। মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আবদুল হক একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন, স্বাধীনতার পরও তিনি তার দলের নাম পূর্ব পাকিস্থান কমিউনিস্ট পার্টি রেখে দিয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাকে আজ কেন যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছেনা? তার দলের লোকেরা কি অপরাধী নয়? জামায়াতের কোন নেতা কি আবদুল হকের মতো ভূমিকা রেখেছিল? সর্বশেষ প্রশ্ন----- আওয়ামী লীগ কি নিজ দলের কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে? NB: পোস্টটি সংকলিত। মুল পোস্ট http://www.nagorikblog.com/node/3490

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.