আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আন্ডারওয়ার্ল্ডের অধিপতি?



এ মুহূর্তে চরমপন্থি সংগঠনের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুই ধরণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। একটি হলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য এবং অন্যটি পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির (এমএল) প্রধান হওয়ার প্রতিযোগিতা। আন্ডারওয়ার্ল্ডের দায়িত্ব নেয়ার আগে বেশ কয়েকজন নেতা পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হতে চান। এই প্রতিযোগিতার দৌড়ে আছেন অন্তত ৫ জন। তবে লাল পতাকার কয়েকজন নেতা তাত্তিক নেতা মধু বাবুকে দায়িত্ব নিতে বলেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছেন।

তিনি শর্ত দিয়ে বলেছেন লাল পতাকা ও জনযুদ্ধ এক হলেই তিনি দায়িত্ব নেবেন। তবে অনেকেই বলেছেন খুলনার ডুমুরিয়ার শৈলেনের কথা। জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কমরেড হক (যশোর) যখন এ চরমপন্থি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন সেই সময় তার সঙ্গী হিসাবে ছিলেন কমরেড তোহা, নড়াইল জেলার হেমন্ত সরকার, বিমল বিশ্বাস, খুলনার জীবন মুখার্জী, চুয়াডাঙ্গার আনিছুর রহমান মল্লিক, ঝিনাইদহের আনোয়ার জাহিদ, পাবনার আলাউদ্দীন টিপু বিশ্বাস, আব্দুল মতিন, সিলেটের মোফাখখার চৌধুরী ও খুলনার মধুবাবু। অভ্যন্তরীন দ্বন্দ ও আদর্শগত বিরোধের জের ধরে ৭৪ সালের দিকে আঃ মতিন, আলাউদ্দিন, লুৎফর রহমান বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টি থেকে বের হয়ে এসে গঠন করে ইপিসিপি। যার মূল নেতৃত্ব দেন পাবনার টিপু বিশ্বাস।

দূর্নীতি, স¦জনপ্রীতি ও আদর্শগত বিরোধের জের ধরে মোফাখখার চৌধুরী ও মধুবাবুকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পরে মধুবাবু ও মোফাখখার চৌধুরী এবং রাজশাহীর জামাল মাষ্টার পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি (এম.এল) নামে এক বেআইনি চরমপন্থী সংগঠন তৈরী করে কার্যক্রম চালাতে থাকে। দলটি গোপনে কার্যক্রম চালাতে থাকে এবং জনগনের আস্থা অর্জন করতে সামাজিক ও সাংগঠনিক কাজে হাত দেয়। খুজতে থাকে একাধিক শিক্ষিত যুবক যারা ভবিষ্যত কর্ণধার। ৮৭/৮৮ সালে পার্টির তৃতীয় দফা ভাঙ্গন দেখা দেয়।

মোফাখখার হোসেনের সাথে মনোমালিন্য দেখা দেয় মধু বাবু ও জামাল মাষ্টারের। তারই ফলশ্রুতিতে এরা লাল পতাকা নামের আরো একটি সংগঠনের জন্ম দেয়। অপরদিকে, বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টির একাংশ কমরেড তোহা সাহেবের সাথে সাম্যবাদী দলে যোগদান করে। ইপিসিপির অন্যান্যরা গঠন করে কমিউনিষ্ট লীগ। পরবর্তীতে ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগ নামে পরিচিত।

৮২ সালে এই পার্টির বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পাটি নামে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০০ সালের দিকে দল বদল করে মোফাখ্খার চৌধুরী পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি (এম এল) এ যোগদান করে। মোফাখখার চৌধুরীর সাথে যোগ দেয় ঝিনাইদহ জেলার বিষয়খালী গ্রামের আব্দুর রশীদ মালিথা ওরফে তপন। মোফাখখার চৌধুরী খুলনা যশোর এলাকাতে শিমুল, পলাশ, তুষার চন্দনসহ অনেককে নিয়ে কার্যক্রম চালাতে থাকে। আর তপনকে দেয়া হয় বৃহত্তর কুষ্টিয়ার দায়িত্ব।

একের পর হত্যাকান্ড চাঁদাবাজীসহ কালো টাকার পাহাড় গড়াকে কেন্দ্র করে মোফাখখার ও তপনের মধ্যে এক দ্বন্দ দেখা দেয়। একই সময়ে ধরা পড়ে চরমপন্থী রানা। ২০০২ সালের দিকে তপন মোফাখখার দ্বন্দে ভাগ হয়ে যায় দলটি। তপন গঠন করে জনযুদ্ধ আর বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব নেয় প্রয়াত কমরেড আবীর হাসান। মূল দলে মোফাখখার হোসেনের সাথে থাকে চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার জামাল ওরফে রবি।

এর আগে ১৯৯৪ সালে তপন একবার ধরা পড়েও কৌশলে পালিয়ে যায়। একই সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও অভ্যন্তরীন কোন্দল আদর্শগত বিরোধের জের ধরে আলমডাঙ্গা কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরুজ্জামান লাল্টু দল থেকে বেরিয়ে আসে এবং বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি নামে একটি সংগঠন তৈরী করে। ২০০৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুর থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন মোফাখখার চৌধুরী। এর একদিন পরই রাজধানীতে র‌্যারের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা যান। মোফাখখার চৌধুরী নিহত হওয়ার পর দ্বায়িত্ব পান চুয়াডাঙ্গার পলাশ পাড়ার জামাল ওরফে রবি।

শেষ পর্যন্ত রবিও বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এর পর থেকে দলটি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে ১৭ জুলাই র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লাল পতাকার পাবনার কামরুজ্জামান মাষ্টার ওরফে কামরুল মাষ্টার ওরফে জামাল মাস্টার নিহত হন। তার দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করতেন তাত্তিক নেতা মধু বাবু। এরপরই দলের দায়িত্ব আসেন তাকে তাত্তিক নেতা ডা. মিজানুর রহমান টুটুল।

সর্বশেষ ২০০৭ সালে নওগাঁর রানীনগরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে সেও নিহত হয়। ডা. টুটুলকে পার্টির কাজে সাহায্য করতেন মধু বাবু। অন্যদিকে, এম এল জনযুদ্ধের প্রধান তপন মালিথা ২০০৭ সালের ১৮ জুন কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। গত ১০ বছরে শ্রেণী ষত্রু খতম ও ক্রস ফায়ারে চরমপন্থি সংগঠন লাল পতাকা ও জনযুদ্ধের প্রথম সারির সব ক'জন নেতার মৃত্যু হয়েছে। শুরু হয় রক্তের হোলি খেলা।

কমিউনিষ্টের আদর্শ থেকে বিচ্যুত এসব সংগঠন চাঁদাবাজি ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অশান্ত করে তুলেছে। বেআইনী চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির ভাঙ্গন ঠেকাতে সকল চরমপন্থি গ্রুপ গুলো এক হচ্ছে এবং পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির দুই গ্রুপকে (এমএল লাল পতাকা ও এম এল জনযুদ্ধ) এক করে দায়িত্ব নিতে চান বলে লাল পতাকার তাত্তিক নেতা মধু বাবু ওরফে সাইফুল ইসলাম ওরফে দাদা বাবুল ওরফে মধু মিয়া। শ্রেণীশত্রু খতম ও পুলিশ র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে চরমপন্থি সংগঠনের প্রথম সারির নেতারা নিহত হবার পর সংগঠনগুলো এক রকম নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, জনযুদ্ধ তাদের সঙ্গে না এলেও লাল পতাকার দায়িত্ব নিচ্ছেন মধু বাবু। এভাবেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ মুহূর্তে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে সে অন্যতম। সেও পুরো চরমপন্থি দলের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। এছাড়া ভারতে পালিয়ে থাকা খুলনার ডুমুরিয়ার চরমপন্থি নেতা শৈলেন বিশ্বাসও দেশে ফিরে পুর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্ব নিতে চান। তিনি বর্তমানে নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। তার সহযোগীরা এখন সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন তারা। সূত্র মতে, ১৯৯৩ সালের দিকে শৈলেন বিশ্বাস বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। ২০০০ সালের দিকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙ্গে মৃণালের নেতৃত্বে নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি গঠন হলে তিনি ওই দলে চলে যান। পরে ২০০৩ সালের দিকে মৃণাল ভারতে খুল হলে তার নেতৃত্বে নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয়ে পড়ে। খুলনার ডুমুরিয়ার শলুয়া গ্রামের প্রেমচাঁদ বিশ্বাসের ছেলে শৈলেন।

ইতিমধ্যে একটি হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। শৈলেন ১৯৯৯ সালে সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। দলীয় প্রধানের পদটি দখলের প্রতিযোগিতায় শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, গনবাহিনীর ছাড়াও কয়েকটি বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি নামের একটি সংগঠনের কয়েকজন নেতা রয়েছে বলে জানা গেছে। এখন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির ১০ জন লিয়াজো নেতা রয়েছেন। এরা বিভিন্ন এলাকায় এখন দায়িত্ব পালন করছেন।

এদের মধ্যে আছেন রাজশাহীতে নিমাই, বগুড়ায় ওমর ফারুক, সৈয়দপুরের পাভেল, ঈশ্বরদীর ইবনুল, শাহাজাদপুরের সুমন, ফরিদপুর, ও কুষ্টিয়ায় রাশেদ, মেহেরপুরের গাংনীর আন্টু, যশোরে তাপস এবং খুলনায় রানা। এই আঞ্চলিক লিয়াজোঁ নেতাই এখন বসে দলের নেতা নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। জনযুদ্ধের দাদা তপন নিহত হলে পার্টির আঞ্চলিক নেতার দায়িত্ব নেয় ঝিনাইদহের কুদ্দুস। (সম্প্রতি কুদ্দুস গ্রেফতার হয়েছে নাকি নিহত হয়েছে তা সন্দিহান)। কিন্তু বিভাগীয় সম্পাদক ও প্রধানের পদটি দখল করে নেয় কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার আসাননগর গ্রামের এনামূল হক স্বপন ওরফে স্বপন চক্রবর্তী।

তবে সব চরমপন্থী এক হলে কে দায়িত্ব নেবেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা। শৈলেন একজন খুনী হিসাবে পরিচিত। অন্যদিকে, মধু বাবু হচ্ছেন তান্ত্রিক নেতা। দলীয় লোকজন পরিচালনায় তার দক্ষতা বেশী বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন বাম সংগঠনের অনেক নেতা। তাদের মতে খন্ড খন্ড দলে বিভক্ত হওয়া এ সংগঠনের প্রত্যেকটি নেতা ক্ষমতা চায়।

ইচ্ছামত কাজ করে। এক হলে সেটা হবেনা। ফলে চরমপন্থি গ্রুপ গুলো এক হবার সম্ভাবনা নেই। তবে শ্রেণীশত্রু ক্ষতমের নামে এক দল অন্য দলের ক্যাডার খুনের বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে। এব্যাপারে মেহেরপুরের পুলিশ সুপার শাহরিয়ার হোসেন সিডি নিউজ২৪.কমকে জানান, চরমপন্থিদের এক হবার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

তবে সন্ত্রাস দমনে পুলিশ বদ্ধ পরিকর/ মুল নিউস


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.