আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারা

লেখক/কবি

বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০০৭ এ ৫.২ ভাগ বেড়েছে। এ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে চীনের ১১%, ভারতের৯% এবং রাশিয়ার৮% প্রবৃদ্ধি বাড়ার কারণে। এখন বিশ্ব অর্থনীতি ১৯৭০ এর মত মুদ্রাস্ফীতি ও উৎপাদন হ্রাসের ঝুঁকি মোকাবেলা করছে। যদিও বর্তমানে সম্পদের সীমাবদ্ধতা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী। অর্থনীতির এ গতিধারা খুব একটা স্বপ্নিল ঠেকছিল ২০০৭ এর শুরুর দিকে।

এ সময় চীন, ভারত, রাশিয়া এবং ব্রজিলের (ব্রিক দেশ গুলোর)নেতৃত্বে ক্রমশ বড় হতে থাকা বাজার বছরে ৭ থেকে ১০শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ করেছে। বিষয়-সম্পত্তি এবং স্টক মার্কেটের আকস্মিক তেজি ভাবের কারণে সঙ্গত ভাবে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের প্রবৃদ্ধি এসময় বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বেশীরভাগ অংশে বিনিয়োগের কারণে অর্থনীতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। এমনকি জাপান পর্যন্ত এসময় বিগত বছরের মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনতে পেরেছিল। খুব বেশী ভালো করতে পারছিলনা এমন অন্যান্য দেশ গুলোর অর্থনীতিক আবহ নির্ধারণে এসব দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে।

অন্যান্য আরও অনেক দিক দিয়ে, উন্নয়নশীল এবং স্বল্প উন্নত দেশ গুলো নিজেদের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য উন্নত দেশ সমূহের উপর নির্ভর করে। এমনকি এমন তত্ত্বের কথাও শোনা যায় যেখানে উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রবৃদ্ধিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। দেখা গেছে সেসব জাগায় সফলভাবে নতুন বাজার স¤প্রসারণ ঘটেছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় অন্যান্য স্থানে প্রবৃদ্ধি হ্রাস হয়েছে। আর একারণে উন্নত বিশ্বের অনেক বড় অংশীদার আমেরিকায় বছর জুড়ে খুবই কম মাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় এশিয়ার আমেরিকা নির্ভরতা কমতে শুরু করেছে।

তারা নিজেদের দু'দুটি বড় অর্থনীতিক শক্তিধর দেশের সহায়তায় নিজ ধারাবাহিকতায় বেড়ে উঠছে। এখন প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক বিগত এক বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের কি কি পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি খুব দ্রুত এমন কয়েক ধাপ এগিয়েছে যাতে করে অচিরেই মন্দা থেকে সরে আসা সহজ হবে। তেমন একটা আর্থিক মূল্য নেই এমন বন্ধকি সম্পত্তির মাধ্যমে ঝুঁকি বহুল ঋণ প্রদান থেকেই আমেরিকার মন্দা অবস্থার সূত্রপাত। সেখানে বাসাবাড়ির দাম যখন বাড়তে শুরু করেছিল তখন কিন্তু সমস্যাটির ব্যাপারে আচ করা যায়নি।

কিন্তু যখনি এসবের দাম কমতে থাকলো আর কমতে কমতে একদম মাটির দামের সমান হলও তখনই কেবল ঋণ খেলাপির সংখ্যা বাড়তে থাকলো। আর এ আগুনে ফুঁ দিতে থাকে পরোক্ষ ঋণের ওপর ছাড়া বন্ড গুলো। বার বার এসব বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাত বদল হচ্ছিল। এসময় এগুলো ভাঙ্গানো, একত্রিত এবং পুনঃ বিক্রিত হতে থাকে। এভাবে কিন্তু প্রায়ই ঝুঁকি প্রবণ ঋণ সমূহকে কম ঝুঁকির উপাদানে পরিণত হতে দেখা যায়।

তাই বলা যায় সব সময় এধরনের ঋণপত্রের সামঞ্জস্যতা স্পষ্ট নয়। পরোক্ষ ঋণের ওপর বড় ধরনের আটকে যাওয়া বিনিয়োগ অবলোপন করা হয়, এবং ব্যাঙ্ক নিরাপত্তা সম্বন্ধে নিশ্চিত হবার আগপর্যন্ত বিনিয়োগ, ধার এবং ঋণ দেবার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করতে থাকে। এক সময় ব্যাঙ্ক এই আর্থিক ধ্বসের আঘাতে ধারদেয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। তার পরপরই আমরা আমেরিকা ও যুক্ত রাষ্ট্রে সরকারের প্রচণ্ড নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেখতে পাই। এটা করা হয় ব্যাঙ্ক গুলোকে আর্থিক ধ্বসের ধাক্কা থেকে রক্ষা করে তারল্য কমাবার জন্য।

এবং উন্নয়নশীল বিশ্ব বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিটি ব্যাঙ্ক বা ইউবিএস এর মত পশ্চিমা যেসব ব্যাঙ্ককে রুগ্ন করে তুলেছিল তাদের বাঁচাবার জন্য সার্বভৌম সম্পদ তহবিল(এসডব্লিউ) নামের তহবিল গঠন করে। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়িঘরের দাম ২০শতাংশ নেমে আসার পর ঋণের ওপর ছাড়া বন্ডের মালিকরা নিজেদের লোকসানের বিষয়টি আবিষ্কার করে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। আমেরিকার মোট বন্ধকি সম্পত্তির পুরো অর্ধেকের নিশ্চয়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ফেনি মে এবং ফ্রেডই মে এর দায়দায়িত্ব নেবার ব্যাপারে ফেডারেল সরকার অব্যাহত চাপের মুখোমুখি হতে থাকে। মন্দার দ্বিতীয় আরেকটি ক্ষতিকর প্রভাব হলও দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর বছর দুয়েক আগে গড়ে ব্যরেল প্রতি তেলের দাম ছিল মাত্র ১৬ মার্কিন ডলার।

এর দশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ২০০৮এর জুলাইতে ব্যরেল প্রতি তেলের দাম দফায় দফায় বেড়ে ১৪৬মার্কিন ডলারে এসে ঠেকে। দাম বাড়ার এ হার ৮০০ ভাগেরও বেশী। ব্যরেল প্রতি এ তেলের দাম ২০০৭ এর শুরু থেকে ২০০৮এর মাঝ পর্যন্ত তিন গুন বেড়েছে। সেসময় তেলের দাম ছিল ৪০ মার্কিন ডলার। ১৯৭০এর তেল সঙ্কটের সময় এর দাম নমনিয়ভাবে বেড়ে ৩৮ মার্কিন ডলারে এসে ঠেকেছিল।

আজকে তারল্যের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের পরও এর দাম ১০৬ মার্কিন ডলারে এসে ঠেকেছে, ২০০৮এর শুরুর দিকেও কিন্তু এদামেই তেল বিক্রি হচ্ছিল। খাবারের দামও এসময় হতে বাড়তে থাকে। চাল সহ অন্যান্য শস্যের দাম ২০০৭ থেকে ২০০৮ এর মধ্যে দ্বিগুণ হয়, বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম দশগুণেরও বেশী বাড়ে। বেশীরভাগ কৃষি খামার তাদের উৎপন্ন ফসলের আকাশচুম্বী দাম হাঁকতে থাকে। বিদ্যুৎ, নির্মাণ, ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে ব্যবহার হয় এমন সব দ্রব্যসামগ্রী সহ সব ধরনের পণ্যের দাম দ্রুত বাড়তে থাকে।

বিশেষ করে ব্রিক দেশ সমূহে বাজার সম্প্রসারণে চাহিদা বৃদ্ধি দ্রব্যমূল্য বাড়ার এ অনুষঙ্গে জ্বালানি সরবরাহ করতে থাকে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং জনগণের দারিদ্র দুর করতে এসব দেশের আরও অনেক বেশী পণ্যের দরকার হয়। এমন চাহিদার মোকাবেলা করার জন্য আদৌ যথেষ্ট পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদের যোগান পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে অর্থনীতি বিদেরা শঙ্কিত আছেন। ১৯৭০তেও একই ধরনের সঙ্কটের মোকাবেলা করতে হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট সময়ে শক্তিশালী বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পর, যখন বিশ্বজুড়ে ৫শতাংশ হাড়ে জিলিপি বাড়ছিলো বিশ্ব তখন তেল এবং খাবার সরবরাহের বাধা দুর করতে পেরেছিলও ।

এর পরবর্তী পনর বছর বৈশ্বিক জিডিপি বছরে ৩.২ শতাংশ হারে কমেছে। এই দশকটি মন্দার দশক হিসেবে পরিচিতি পায়। এসময় প্রবৃদ্ধির সুযোগ সীমিত হয়ে আসে ও অব্যহতভাবে সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে দাম বাড়তেই থাকে। আমাদের এমনতর প্রবৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে, পৃথিবী কি শেষ পর্যন্ত তার ভার সইতে পারবে এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ক্লাব অব রোম এ বিষয়টি নিয়েই ১৯৭২ বিতর্কে মেতে উঠে ছিল যা কম বেশী সবারই যানা, এসময় অনেকটা নিশ্চিতভাবে বলা হচ্ছিল বিশ্ব অর্থনীতিতে ধ্বস নামবে।

তার বদলে ঠিক উল্টোটা ঘটেছিল। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের পরিচালক জেফরি ডি. স্যকস এর মতে ১৯৬০ এ বিশ্বে অশোধিত তেলের উৎপাদন ছিল দৈনিক একুশ মিলিয়ন ব্যারেল। ১৯৭৩তে এর পরিমাণ ১৬৬শতাংশ বেড়ে দাড়ায় দৈনিক ৫৬ মিলিয়ন ব্যারেল। কৃষি বিপ্লবের কারণে রাসয়ানিক সার এবং সেচ পদ্ধতির উন্নয়ন ও অধিক উৎপাদনশীল বীজ উৎপাদনের কারণেও তারল্যের সঙ্কট ঘনীভূত হয়। কৃষি উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব হয়।

১৯৭০ সালে বিশ্বজুড়ে অশোধিত তেলের উৎপাদন মাত্রা ত্রিশ শতাংশ বাড়ে। তখনো পর্যন্ত সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় ছিল ১৯৭৪ পর্যন্ত মধ্য প্রাচ্যের অশোধিত তেল উৎপাদনের পরিমাণ সর্বোচ্চ দৈনিক ২১মিলিয়ন ব্যরেল এ স্থির হয়ে ছিল। অন্যদিকে উত্তর সাগর, আলাস্কা, এবং নরওয়ের পরিণত খনিগুলোর উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছিল। তার পরও সেসময় নিজেদের এমন কতগুলো ক্ষেত্র ছিল আমেরিকা বিশ্বাস করতো এদের সাহায্যে সে অচিরেই সর্বোচ্চ তেল উৎপাদনকারী সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। ড. এম কিং ১৯৫০ এর দশকে আমেরিকার মূল ভূমিতে অবস্থিত তেল কোম্পানি গুলোর উৎপাদন হ্রাস বৃদ্ধি সম্বন্ধে সঠিক ভবিষ্যৎবাণী করতে পেরেছিলেন।

তার এ তত্ত্বটি সেসময় দ্যা হুবার্ট পিক থিওরি নামে পরিচিতি পায়। এতে আরও ভবিষ্যৎবাণী করা হয় ২০০০থেকে ২০১০ সালের মাঝে বিশ্বের তেল উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছাবে। আর তার পর হতে উৎপাদনের মাত্রা ক্রমেই কমতে থাকবে। আসন্ন সেই সঙ্কটও খাবারের দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে, এর সাথে যোগ হয়েছে বায়োডিজেল উৎপাদনের জন্য আলাদা শস্য চাষে ভূমির ব্যবহার বাড়ার প্রভাব এবং তেলের দাম বাড়ার কারণে সারের দাম ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহনের খরচ বৃদ্ধি পাওয়া। এতে করে মনে হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের আরও একটি মন্দা কাল ঠেকাবার জন্য এখনি নবায়ন যোগ্য শক্তি খাতটিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার রয়েছে।

এটি নির্ভর করছে কত দ্রুত তেলের সরবরাহ কমে আসবে অথবা কত দ্রুত বিকল্প শক্তির উৎস গুলোকে সচল করা যাবে। এক নজরে বিশ্ব অর্থনীতির হিসেব নিকেশ বিশ্ব জিডিপি(পিপিপি):৬৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার:৫.২% শিল্পখাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার:৫% খাতওয়ারি জিডিপি:সেবা-৬৪%, শিল্প-৩২%, কৃষি-৪% জনপ্রতি জিডিপি প্রবৃদ্ধি:৯৭৭৪মার্কিন ডলার জনসংখ্যা:৬.৬৫ বিলিয়ন দরিদ্র:৩.২৫বিলিয়ন(দৈনিক আয়২ ডলারের নিচে),প্রায়৫০% মিলিয়নিয়ার:৯মিলিয়ন শ্রমশক্তি:৩.১৩ বিলিয়ন রপ্তানি:১৩.৮৭ ট্রিলিয়ন ডলার আমদানি:১৩.৮১ ট্রিলিয়ন ডলার তারল্যের হার-উন্নত বিশ্বে : ১%-৪% তারল্যের হার-উন্নয়নশীল দেশ সমূহে: ৫%-২০% বেকারত্ব- উন্নত বিশ্বে: ৪%-১২% বেকারত্ব ও কাজের অনুপযুক্ত: উন্নয়নশীল দেশ সমূহে: ২০%-৪০% সূত্র: সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক, আইএমএফ, ইউএনডিপি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.