আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐতিহ্যবাহী বিডিআর আজ বিলুপ্ত হচ্ছে..?

অতীত এবং বর্তমানকে সাথে নিয়ে আগামীর সপ্ন দেখি । সময়ের সাথে আগামীর পথে -সদা নির্ভীক..

0বিজিবির আনুষ্ঠানিক যাত্রা আজ শুরু00 শহীদুল ইসলাম : সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) আজ বিলুপ্ত হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করছে আজ। বহু ঐতিহ্য, সৌর্য, বীর্য আর সাহসের স্বাক্ষর রেখে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা বিডিআরের নাম, পোশাক ও লোগো পরিবর্তন হচ্ছে সেই সাহসের প্রতীক হিসেবে নয় বরং অপরাধীর প্রতীক হিসেবে। বিডিআর বিদ্রোহ আর সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যাকান্ডের কলংক মাথায় নিয়ে বিডিআরের এই বিলুপ্তি ঘটছে।

এ প্রসঙ্গে বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান দৈনিক সংগ্রামকে বলেছেন, নতুন নামে, নতুন পোশাকে বিজিবি আর গর্ববোধ করবে না। আগে বিডিআর ছিল পাদুয়া, বড়াইবাড়িসহ বহু বিজয় ও সৌর্য বীর্যের প্রতীক। এখন নতুন পোশাকে তাদেরকে বিদ্রোহ ও খুনের প্রতীক বলে মনে হতে পারে। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদের ৭ম অধিবেশনে গত ৮ ডিসেম্বর পাস হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিল ২০১০। গত সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এই বিলে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করেছেন।

এর মাধ্যমে আইনটি চূড়ান্তভাবে কার্যকর হওয়ার সমস্ত আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। আজ ২৩ ডিসেম্বর থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইনটি কার্যকর হচ্ছে। অর্থাৎ আজ থেকেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যাত্রা শুরু করছে আনুষ্ঠানিকভাবে। একইসাথে বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআরের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটছে আজ। সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিডিআরের নাম এর আগেও কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে।

সেইসব পরিবর্তন ছিল ঐতিহাসিক প্রয়োজনে। কিন্তু এবারের পরিবর্তন হলো একটি কলংকজনক অধ্যায়কে কেন্দ্র করে। বর্তমান আওয়ামী মহাজোট সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দেড় মাস পরেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন ব্যক্তির নৃশংস হত্যাকান্ড এবং একইসাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিডিআর বিদ্রোহের পর সরকার এই বাহিনীর নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনা কর্মকর্তাদের এই নৃশংস হত্যাকান্ড দেশে বিদেশে চরম ঘৃণার জন্ম দেয়। এতদসত্ত্বেও বিডিআরের নাম, পোশাক, লোগো পরিবর্তনের পক্ষে সর্বসম্মত মতামত ছিল না।

দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীগণ বহু শৌর্য বীর্য ও বীরত্বগাঁথার নজীর স্থাপনকারী বিডিআরকে স্বনামে রেখেই বিদ্রোহ ও হত্যাকান্ডের সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার একক সিদ্ধান্তে বিডিআরের নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। আজ থেকে বিজিবি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও নতুন পোশাক পরিহিত অবস্থায় কয়েক মাস আগে থেকেই এই সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে। ২০০১ সালে বীরত্বের সাথে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে বিজয়ী হয়ে পাদুয়া উদ্ধার করেছিল বিডিআর। ঐ একই বছর কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ি সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় বিএসএফকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিল বিডিআর।

এমনি অনেক শৌর্য বীর্য আর গৌরব গাঁথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে বিডিআরের ৩৮ বছরের কার্যক্রমে। ১৯৭১ সালের কালো ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর আর রাজারবাগ পুলিশের ওপরই সর্বপ্রথম হামলা করেছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। তৎকালীন ইপিআর তার প্রতিরোধ করেছিল। পয়লা ইপিআরই প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ ৮ জনের মধ্যে দুইজনই হলেন বিডিআরের সদস্য।

এরা হলেন লেন্সনায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ ও লেন্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ। এই বাহিনী থেকেই ৪০ জন সদস্য বীর বিক্রম এবং ৯১ জন বীর প্রতীক খেতাব পান। সেই বীরত্বগাঁথা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা বিডিআর আজ বিলুপ্ত হচ্ছে বিদ্রোহ আর খুনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে। বিডিআর নাম ও এর ইউনিফরমের সাথে রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের যোগ ১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) স্বাধীন বাংলাদেশে সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ১৯৭২ সালে ইপিআরের নাম পরিবর্তন করে বিডিআর নাম ধারণ ছিল ঐতিহাসিক প্রয়োজনে।

স্বাধীন দেশের নতুন বাহিনী হিসেবে তাদের আবির্ভাব ঘটে। এর আগে ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান স্বাধীন হলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে ইপিআর গঠন করা হয়। বৃটিশ ভারতে ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন হিসেবে এই সীমান্ত রক্ষীবাহিনী প্রথম গঠন করা হয়। ১৮৯১ সালে এই বাহিনীর নামকরণ করা হয় বেঙ্গল মিলিটারি গার্ড। ১৯২০ সালে এই বাহিনীর নামকরণ করা হয় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস।

বৃটিশ ভারতে এই ৩ বার নাম পরিবর্তন ছিল তাদের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ও পরিবর্তিত কাঠামোর অংশ হিসেবে। ১৯৪৭ সালে নতুন দেশ হিসেবে ইপিআর আর ১৯৭২ সালে আরেক নতুন দেশ হিসেবে বিডিআর গঠন করা হয়। আর এবার ২০১০ সালে বিডিআরের নাম পরিবর্তন করা হলো কলংকজনক অধ্যায়ের প্রেক্ষাপটে। এখন দেখার বিষয় যে নতুন পোশাক, নতুন নাম, নতুন লোগো নিয়ে বিজিবি সেই বীরত্বগাঁথা ভূমিকা রাখতে কতটা সক্ষম হয়। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে তারা কতটা দেশের মাটি ও মানুষকে রক্ষায় দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়।

সীমান্ত প্রতিরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করাই হলো বিডিআরের কাজ। বর্তমানে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬৭ হাজার। পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার আজও শুরু হয়নি। তবে বিদ্রোহের বিচার চলছে। এরই মধ্যে বিডিআরের নাম পরিবর্তন হয়ে গেলো।

বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, বিডিআরের নাম এর আগেও কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। তবে আগের ব্যাকগ্রান্ড আর এবারের ব্যাকগ্রাউন্ড এক নয়। আগের প্রতিটি পরিবর্তন ছিল সময়ের প্রয়োজনে, ঐতিহাসিক কারণে। তাতে প্রতিবারই এই বাহিনীকে গর্বিত করেছে। তাদের মনোবল বৃদ্ধি করেছে।

এবারের নাম পোশাক ও লেগো পরিবর্তন হচ্ছে শাস্তিস্বরূপ। এই নতুন ইউনিফর্ম তাদেরকে প্রতিনিয়তই স্মরণ করিয়ে দিবে যে, তারা বিদ্রোহী, তারা খুনী, তারা অপরাধী। অন্যায়ের প্রতীক এই নতুন পোশাক। বিদ্রোহের বিচার চলছে। এর মধ্যে নাম ও পোশাক পরিবর্তন ও আরেক ধরনের বিচার।

দেখার বিষয় তাদের মনোবল কি হয়। জেনারেল ফজলুর রহমান আরো বলেন, বিডিআরের নাম, লোগো ও পোশাকের পরিবর্তনটা আমি সঠিক মনে করতে পারছি না। এই ইউনিফর্ম পরে কোন বিডিআর সদস্য হয়তো প্রাউড ফিল করবে না। সবাই ভাববে আমরা অন্যায় করেছি। তাদেরকে অপরাধীর কাতারেই দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো।

http://www.dailysangram.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.