আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুয়েটের উইং র‌্যাগ!!!!!!!!

স্বপ্ন ছুঁয়ে

প্রথমেই যারা উইং র‌্যাগ বিষয়টা কি জিনিস, কই থিকা আইল , এইটা ভাবছেন তাদের একটু বুঝিয়ে বলি। বুয়েটের হলগুলোতে সিঁড়ির এক পাশে সাধারনত ৬ টা করে রুম থাকে। এভাবে সিঁড়ির দুই পাশকে বলা হয় দুই উইং। এই উইং এ সবচেয়ে জ্যাষ্ঠ ব্যাচের যেই ছাত্ররা থাকেন তাদের ফাইনাল টার্ম এর সময় উইং এর অন্য জুনিয়র ছাত্ররা বিদায় দেয় একটা অনুষ্ঠান করে , এটাকেই বলা হয় উইং র‌্যাগ। এই অনুষ্ঠানে আসলে বড় ভাইদের মজা করে র‌্যাগ দেয়া হয়! নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্ন করে ভাইদের একেবারে হালুয়া টাইট করে দেয়া হয়! তো আমার উইং এ আজ ০৫ ব্যাচের ভাইদের উইং র‌্যাগ হবে ।

তাই ইচ্ছে হল উইং র‌্যাগ নিয়ে কিছু লিখি!এই অনুষ্ঠানের জন্য জুনিয়র ছাত্ররা মোটা অঙ্কের চাঁদা দেয়, সবাই মিলে খাওয়া -দাওয়া করে, বড় ভাইদের গিফট দেয়া হয়। আর বড় ভাইরাও পরে আমাদের খাওয়ান, বেশিরভাগ ই বুফেতে উইং র‌্যাগ এর সবচেয়ে মজার অংশ হচ্ছে রাতের বেলা খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই মিলে একসাথে বসা। উইং এর সব লাইট অফ, মোমবাতি জ্বালানো থাকে। এবার শুরু হয় র‌্যাগ! জুনিয়র রা একেকটা প্রশ্ন করে আর বড় ভাইরা তার উত্তর দেন! সেই প্রশ্নের যা নমুনা! ভাইদের কেউ কেউ মন খুলে উত্তর দেন কেউবা আবার লজ্জায় লাল হয়ে যান! গতবার ০৪ এর বিদায়ের সময় , এক ভাইকে প্রশ্ন করা হল , "ভাই , আপনি ভার্জিন তো?"। ভাইতো অত্যন্ত স্মার্টনেসের সাথে বললেন, অফ কোর্স! পোলাপাইন তো সেরকম বদ! তারা তো প্রশ্নটা করছেই ভাইরে ট্র্যাপ এ ফেলার জন্য! এবার শুরু হইল, ভাই ভার্জিন মানে তো কুমারী, আপনে কি তাইলে মেয়ে? আমরা আপনারে তাইলে ভাই কই ক্যান! বুয়েটে ঢোকার সময় আপনার মেডিকেলে টেস্ট হয় নাই! অসংখ্য মন্তব্য! অন্য বড় ভাইরাও হাসাহাসি শুরু করছে।

ওই ভাই এর অবস্থা আর কি বলব! উইং র‌্যাগ এর সময় একেক জন বড় ভাইকে নিয়ে একেকটা পোষ্টার বানানো হয়, আর তা লাগান হয় উইং এর দেয়ালে। সেই পোষ্টার এর যে ভাষা! হাইলি সেন্সর্ড! খুব সাধারন একটা উদাহরন দেই, এক বড় ভাই কে নিয়ে লেখার মত কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না, ভাই যথেষ্ঠ ভদ্র, "হাবিজাবি" দেখেন না, জুনিয়রদের সাথে অকারনে ভাবও নেন না! কি করা যায়,! তো ,সেই ভাই এর পোষ্টারের একটা কার্টুন এমন, অনেকগুলা বিড়ালের বাচ্চা, পাশে ভাই দাঁড়ান। বিড়ালের বাচ্চাগুলো বলছে, "কে আমাদের বাবা জানতে চাই!" পাশে থাকা এক জুনিয়র বলছে, "আমাদের উইং এ বিড়াল এত বাচ্চা দেয় কেন!" উল্লেখ্য সেবার উইং এ অনেক বিড়াল এসে জুটেছিল কোথেকে জানি! উইং র‌্যাগ এর আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে , মানপত্র লেখা! যে জুনিয়র ব্যাচ যত বান্দর তাদের লেখা মানপত্র তত ডেঞ্জারাস! তবে এবার ০৫ এর ভাইদের জন্য লেখা মানপত্রটা খুবই ভদ্র ! সেটা দেখুন হে বিদায়ী 05 এর বুড়ো ভাইয়েরা, আজকের এই রাতে আমরা আনন্দের সহিত আপনাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এই উইং থেকে বিতাড়িত করব। এতে আপনারা যতই দুঃখ ভারাক্রান্ত অথবা ক্ষিপ্ত হোন না কেন, আমরা কিন্তু খুশি!কিন্তু কেন? কারন এই সুযোগে আমরা যেমন আপনাদের হাল্কা পাতলা র্যা গ দেয়ার চান্স পাব সেই সাথে একটা বুফে ডিনার এর আগাম নিশ্চয়তাও লাভ করব! আহা কি আনন্দ, উইং এর রুমে- বাথরুমে! হে জ্ঞানের ভারে নুয়ে পড়া সদ্য ইঞ্জিনিয়ারগন, গত পাঁচ বছর ধরে আপনারা যেমন হলের ডাইনিং এ মাংস খুঁজে না পাওয়া ফার্মের মুরগির পিস খেয়েছেন ঠিক তেমনি খেয়েছেন বুয়েটের বাঁশ। আর আমরা জুনিয়ররা খেয়েছি আপনাদের একটু হুমকি-ধামকি, বকাবকি অথবা রাগারাগি।

ভাবতেই আজ ভাল লাগছে যে, আপনারা আবার জুনিয়র হয়ে যাচ্ছেন! কিভাবে? কারন চাকরিতে তো আপনারা আপনাদের বসদের জুনিয়রই হবেন! তখন একটু ধমকাধমকি, গুতাগুতি………….. থাক আর নাই বা বললাম! তবে হ্যাঁ, বুয়েটে যেমন জুনিয়র মেয়ে দেখেলেই আপনারা বিগলিত হয়ে পড়তেন, চাকরিতে তেমনি জুনিয়র নারী কলিগ দেখলেই খুশিতে লাফ দিয়েন না যেন! বুয়েটের চেয়েও বড় বাঁশ খেতে পারেন! বয়স তো আর কম হল না! এবার চরিত্রটা একটু সামলান! হে সফল অথবা ব্যর্থ প্রেমিকগন, গত পাঁচ বছরে আপনাদের অনেকেই রুমের বারান্দায়, উইং এর করিডোরে , কেউ বা আবার বাথরুমের চিপায় মোবাইলে দিয়েছেন চরম ফাইট। আপনাদের এই ফাইটের ঠেলায় কত জুনিয়র যে দিনের পর দিন তার ফাইট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে তা বলতে গেলে আপনাদের আর র্যা গ দেয়া হবে না। সুতরাং বাদ দিলাম এ কথা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনাদের বিদায়ে কেন জুনিয়ররা খুশি! আর যারা মোবাইলে ফাইট দেয়ার মত কাউকে জোগাড় করতে না পেরে “কি কথা যে কয় পোলাপানগুলা, ফালতু সব” এই কথা বার বার বলেছেন, আর অচেনা নাম্বার থেকে মিসকল এলেই তড়িঘড়ি করে কলব্যাক করে শুনেছেন, “কেডা, আক্কাস নাকি?”, তাদের যন্ত্রনায় তো ল্যান এ বিশেষ জিনিস ছাড়া অন্য কিছু শেয়ারেই পাওয়া যেত না! সবশেষে হে ভাইজানগন, আপনারা ভাগতিছেন অসুবিধা নাই, ভাগেন। আপনাদের এই ভেগে যাওয়ার সুফল পাবে, না চাইতে চোথা পাওয়ার যন্ত্রনায় অস্থির বুয়েটের জুনিয়র রমনীকূল, আর সিনিয়রিটির ভাবে মশগুল উইং এর সদ্য বড় ভাইয়েরা।

যাই হোক, দেশে থাকলে পকেট ভর্তি টাকা আর বাইরে থাকলে ক্রেডিট কার্ড ভর্তি ডলার কামান এই কামনা রইল। মাঝে মাঝে ফেসবুকে আপনাদের আন্ডা–বাচ্চা সহ ছবি দিয়েন, আর আমাদের কথাও একটু মনে রাইখেন। ভাল থাকুন সব সময়। এভাবেই অনেক মজা হয় উইং র‌্যাগে, যা বুয়েটের হল লাইফের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। জুনিয়ররা যেমন এটা উপভোগ করে, তেমনি বড় ভাইরাও নিশ্চই অনেক দিন পর হল লাইফের কথা মনে পড়ে গেলে এই উইং র‌্যাগ এর স্মৃতিটাও একটু দেখে নেন!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.