আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতিময় স্থাপনা

প্রীয় মৃত্তিকা প্রিয়তম স্বদেশ

অপরাজেয় বাংলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্বরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য অপরাজেয় বাংলা। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার নারী-পুরুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং বিজয়ের প্রতীক এই ভাস্কর্য। এর স্থপতি সৈয়দ অব্দুল্লাহ খালিদ। স্বাধীনতার সংগ্রাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিল ছাড়িয়ে সামান্য দক্ষিণে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যের বাগান। এখানকার ২৫ ফুট উঁচু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের প্রতিকৃতি ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, লালন শাহ, হাসন রাজার মতো অনেক বরেণ্য ব্যক্তির ছোট প্রতিকৃতি রয়েছে।

এছাড়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনেরও একটি প্রতিকৃতি আছে এখানে। এগুলোর স্থপতি শামীম সিকদার। স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়ক দ্বীপে মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি ভাস্কর্য স্বোপার্জিত স্বাধীনতা। এটির স্থপতিও শামীম সিকদার। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নিদর্শন ও স্মারক চিহ্নসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকা শহরের সেগুনবাগিচার একটি পুরোনো দ্বিতল বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়।

সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, প্রমাণাদি, নিদর্শন, রেকর্ডপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে এখানে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ছয়টি গ্যালারি রয়েছে। প্রথম গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে বাঙালির ঐতিহ্যের পরিচয় এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চিহ্ন। দ্বিতীয় গ্যালারিতে ১৯৪৭-এর দেশভাগ-পরবর্তী পাকিস্তানি শাসন-শোষণের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয় গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চ সংঘটিত গণহত্যা, স্বাধীনতার ঘোষণা, প্রতিরোধ ও শরণার্থীদের জীবনচিত্র।

দোতলার তিনটি গ্যালারিতে রয়েছে প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক, পাকিস্তানী সেনা ও তাদের দোসরদের বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং বাঙালির বিজয় দৃশ্য। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশ্বের অপরাপর আটটি দেশের সমভাবাপন্ন জাদুঘরের সঙ্গে মিলে গঠন করেছে ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব হিস্টিরিক সাইট মিউজিয়ামস অব কনসান্স। এ জাদুঘরের সংগৃহীত স্মারকসংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। রায়েরবাজার বধ্যভূমি ঢাকা শহরের পশ্চিমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশেই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের প্রখ্যাত সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে এই স্থানের পরিত্যক্ত ইটের ভাটার পশ্চাতের জলাশয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল।

এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইটের ভাটার আদলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এই স্মৃতিসৌধে লাল ইট ও সিমেন্টের গাঁথুনির প্রাধান্যই বেশি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, খোলা আকাশের নিচে সৌধের একমাত্র দেয়ালটি নির্ভীক প্রহরীর মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এর স্থপতি ফরিদউদ্দীন আহমেদ। সপ্তাহের সাতদিনই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে।

এখানে ঢুকতেও কোনো টিকেট লাগে না। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় এদেশের সূর্য-সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের স্মরণে '৭১-এর ২২ ডিসেম্বর মিরপুরে এ স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজারো মানুষ আসেন এখানে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে নির্মিত হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৮২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ১৫০ ফুট।

সাতজোড়া ত্রিভুজাকার দেয়ালের মাধ্যমে ছোট থেকে ধাপে ধাপে উঠে গেছে সৌধটি। কংক্রিটের এ সাতজোড়া দেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি সময়কালকে নির্দেশ করা হয়েছে। মোট ১০৮ একর উঁচু-নিচু টিলা আকৃতির জায়গার উপর বিস্তৃত সবুজ ঘাসের গালিচায় আবৃত দেশি-বিদেশি গাছের বাগান আর লাল ইটের রাস্তা সমৃদ্ধ এই সৌধটি ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে। স্মৃতিসৌধ চত্বরের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের দশটি গণকবর। আর এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে কৃত্রিম লেক।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে টিকেট লাগে না। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তাদের একজন হতে পারেন আপনিও। ঢাকার গুলিস্তান ও গাবতলী থেকে নবীনগর, ধামরাই ও মানিকগঞ্জগামী যে কোনো বাসে সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনেই নামা যায়।

জাগ্রত চৌরঙ্গী ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের এই ভাস্কর্যটি অবস্থিত। ১৯৭১ সালে নির্মিত হয় এ ভাস্কর্যটি। এর স্থপতি আব্দুর রাজ্জাক। শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ময়মনসিংহ ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ। শম্ভুগঞ্জের বাংলাদেশ চীনমৈত্রী সেতুর কাছেই রয়েছে এ স্মৃতিসৌধটি।

এ সৌধটি নির্মাণ করেছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন। এই স্মৃতিসৌধটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি রাইফেল। রাইফেলের বেয়োনেটে ফুটন্ত শাপলা। ৫০ ফুট উঁচু স্তম্ভটি দাঁড়িয়ে আছে মশালের আকৃতিতে। সৌধটির চারদিকের চারটি দেয়ালে রয়েছে চার রকমের মুর্যাল।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের বিমূর্ত চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চার দেয়ালের মুর্যালে। ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রয়েছে বিজয় ৭১ ভাস্কর্য। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অন্যতম একটি স্থান হলো মেহেরপুরের মুজিবনগর। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ আম্রকাননে বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল। এর আগে ১০ এপ্রিল বাংলাদেশে বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।

ওইদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এবং মন্ত্রীসভা শপথ গ্রহণ করেন। এরপরে বৈদ্যনাথতলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিবনগর। ১৯৭১-এর এ ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল এখানে উদ্বোধন করা হয় এ স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধটির ডিজাইনের নকশা করেন স্থপতি তানভীর করিম। সৌধটির বৈশিষ্ট্য হলো ১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভের উপর মূল বেদিকে কেন্দ্র করে ২০ ইঞ্চি পুরু ২৩টি দেয়াল রয়েছে।

যা উদীয়মান সূর্যের প্রতিকৃতি ধারণ করে। সৌধের ২৩টি স্তম্ভ ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরের সংগ্রমের প্রতীক। ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতিকে স্মরণ করে রাখতে বসানো হয়েছে ৩০ লাখ পাথর। স্মৃতি অম্লান মহান মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতিসৌধটি রয়েছে রাজশাহীর শহরের কেন্দ্রস্থলে। শহরের শহীদ ক্যাপ্টেন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সড়কের দ্বীনেভদ্রা এলাকায় এর অবস্থান।

১৯৯১ সালের ২৬ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। স্মৃতি অম্লান-এর নির্মাণ ও ডিজাইনে নির্দেশনা দেন স্থপতি রাজিউদ্দিন আহমদ। এই স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক। সৌধে মোট তিনটি স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভের গায়ে ২৪টি করে ধাপ, ধাপগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত আন্দোলনের ক্রমবিবর্তন ও স্বাধীনতার ফসল।

মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের নির্দেশ করা হয়েছে স্তম্ভের গায়ের ৩০টি ছিদ্রের মাধ্যমে। প্রতিটি স্তম্ভে রয়েছে ১০টি করে ছিদ্র। বেদিমূলে রাখা আছে নীল শুভ্র পাথরের আচ্ছাদন, যা দুই লাখ নির্যাতিত নারীর বেদনাময় আর্তির কথা ইঙ্গিত করে। সৌধের চূড়ায় রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্রের লাল গোলক, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের উদীয়মান লাল সূর্যের প্রতীক। সাবাশ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের এই স্মারক ভাস্কর্যটিও রাজশাহীতে অবস্থিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার সবুজ চত্বরে মুক্তাঙ্গনের উত্তর পাশে এটি অবস্থিত। রাকসু এবং দেশের ছাত্র-জনতার আর্থিক সাহায্যে শিল্পী নিতুন কুণ্ড এই ভাস্কর্যটি বিনা পারিশ্রমিকে নির্মাণ করেন। ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এটি উদ্বোধন করেন। এই স্মৃতিস্তম্ভে আছে দুজন মুক্তিযোদ্ধার মূর্তি। একজন অসম সাহসের প্রতীক, অন্য মুক্তিযোদ্ধার হাত বিজয়ের উল্লাসে মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে পতাকার লাল সূর্যের মাঝে।

 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।