আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শোলাকিয়ার ঈদ জামাত

শোলাকিয়া। এ সম্পর্কে আর নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতরে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের এই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী এ ময়দানটি কালের স্রোতে পরিণত হয়েছে এক ঐতিহাসিক স্থানে। এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করে তুলছে কিশোরগঞ্জকে।

বৃহত্তম ঈদ জামাতকে সামনে রেখে প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শেষ হয়েছে ঈদগাহ সংস্কারের কাজ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এবার শোলাকিয়ায় ১৮৬তম ঈদুল ফিতরের জামাতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসলি্ল অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর এখানে তিন লাখেরও বেশি মুসলি্ল অংশ নেন।

জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের (পদাধিকারবলে) সভাপতিত্বে একটি কমিটি শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পরিচালনা করে আসছে।

জানা গেছে, শোলাকিয়ার প্রস্তুতি শেষের দিকে। ঈদগাহ সম্প্রসারণের বিষয়ে একটি কনসালটিং ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে সার্বিক সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। অজুখানাও প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে অন্যান্য সরঞ্জামাদিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে বৃষ্টি এলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নামাজ আদায় করা যায়। অন্যদিকে, ঈদের জামাত নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঈদগাহ মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দায়িত্ব পালন করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরিহিত নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি ছদ্মবেশে গোয়েন্দা পুলিশও মোতায়েন থাকবে মাঠ ও মাঠের বাইরে। ঈদকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আনা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এ ময়দানটির অবস্থান। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসলি্ল জামাতে নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সংকেত দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ এই ময়দানকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন। বর্তমানে ঈদগাহটির আয়তন সাত একর। মাঠের পূর্ব প্রান্তে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। ময়দানটির ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যনির্বাহী কমিটিও রয়েছে।

নামাজের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড এ কমিটিই করে থাকে। ১৮২৮ সাল থেকে নিয়মিত ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এ মাঠে ঈদের নামাজ শুরু হয় ১৭৫০ সালে। মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁর ওয়াকফনামায় ১৭৫০ সাল থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে লেখা রয়েছে। এ তথ্যানুযায়ী মাঠের বর্তমান বয়স ২৬৩ বছর। জঙ্গলবাড়ির জমিদার ১৮২৮ সাল থেকে নিয়মিত এখানে ঈদের নামাজ আদায় করতেন।

ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া 'সাহেব বাড়ির' পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ওই জামাতের ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই।

অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসলি্লদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে 'সোয়া লাখ' কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে এক লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে সোয়া লাখ থেকে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়।

আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া_ সেখান থেকে শোলাকিয়া। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে সুদূর আসাম ও কুচবিহার থেকে অসংখ্য মুসলি্ল ঈদের নামাজ পড়তে এখানে আসতেন। কয়েক বছর ধরে গণমাধ্যমে প্রচারের ফলে দেশ-বিদেশে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের পরিচিতি আরও বেড়েছে। এখনো ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসেন।

এছাড়া ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও সিলেটের হাজার হাজার মুসলি্ল অংশ নেন শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করতে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকা থেকেও অনেক মুসলি্ল এই ঈদের জামাতে অংশ নিতে সেখানে ছুটে যান।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।