আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুয়েটীয় ফাইট এবং তার প্রকারভেদ

পকেট ভর্তি টাকা। । but হৃদয় এখনো ফাঁকা। ।

fight শব্দটি ইংরেজি ভাষার একটি অতি পরিচিত শব্দ।

যার অর্থ আমরা সবাই জানি। মারামারি বা প্রতিযোগিতা টাইপ কিছু বুঝাতে শব্দটা ব্যবহার করা হয়। আমিও তাই জানতাম আজ থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগ পর্যন্ত। কিন্তু বুয়েটের হল জীবনে প্রবেশ করার পর এই শব্দটার সম্পূর্ণ নতুন কিছু প্রয়োগের সাথে পরিচিত হলাম। এবং আজকাল আসল অর্থের চাইতে এই বিশেষ অর্থগুলোই বেশি ব্যবহার করি।

জানিনা অন্য কোথাও এই অর্থগুলো ব্যবহৃত হয় কিনা। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথেও একটু শেয়ার করি। এখন পর্যন্ত ৩ প্রকার(যতদূর মনে পড়ছে এই মুহূর্তে) ফাইটের নামকরণ করা হয়েছে। তবে কোনোটির সাথেই মারামারি/কাটাকাটি জাতীয় কোনো ব্যাপার-স্যাপার জড়িত নেই!!! আপাতত এই ৩ টিই জানাই। পরে সুযোগ পেলে অথবা নতুন কোন ফাইটের কথা জানতে পারলে সাত্থে সাত্থে আপ্লোডিয়ে দিবো প্রথমেই আসবে ফোনফাইটের কথা।

ফাইট সমাজে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে এই ফাইট। বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ডের মধ্যে(কিংবা উড বি বি,এফ-জি,এফ) ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুঠোফোনে যে আজাইরা আলাপ চলে তাকেই ফোনফাইট শিরোনামে আখ্যায়িত করা হয়। যদিও আজাইরা লিখে দিলাম তবে যারা এই ফাইট দিয়ে থাকে তাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ফাইট কোন কারণে বন্ধ থাকলে তাদের বদহজম সহ অন্যান্য গুরুতর শারীরিক গোলযোগ হয় বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে। তেমন কোন সময় বাঁধা না থাকলেও দেখা গ্যাছে মধ্যরাত্রির পরই এই ফাইট বেশি দেওয়া হয়।

এই সময় হলের বিভিন্ন রুমের সামনের করিডরে ফাইটার রা তাদের অত্যাধুনিক এল,এম,জি থুক্কু মুঠোফোন গুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন বারান্দার গ্রিল ঘেঁষে। কেউ কেউ আবার মাঠেও নেমে পড়েন(হলের মাঠ)। আর বাসায় থাকলে বিভিন্ন সুনিপুণ পন্থা অবলম্বন করে পরিবারের সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে এবং কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক না ঘটিয়ে ফাইটার রা তাদের কার্যসিদ্ধি করেন। এবং এই ফাইট চলাকালীন সময়ে তাঁরা আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কিছুটা হলেও প্রয়োগ দেখতে পান। কখন যে সময় পার হয়ে যায়!!! সমীক্ষায় দেখা গ্যাছে এসময় ফাইটার রা তাদের ভয়েসের ডেসিবেল লেভেল প্রায় শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনেন।

লেখকের তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, তারা নিজেরা নিজেদের কথা শুনতে পান তো!! লেখক তার কয়েকজন ফাইটার বন্ধুর ফাইট চলাকালীন সময়ের কথোপকথন কৌতুহল বশতঃ শোনার চেষ্টা করতে গিয়ে তাদের মুখের কাছে প্রায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে কানের পর্দা স্থাপন করেও ব্যর্থ হয়েছেন!!! তবে এসময় তাদের মুখে সাধারনতঃ মিটিমিটি হাসি খেলা করতে দেখা যায়। তবে এর ব্যতিক্রম যে ঘটেনা তাও নয়। যেমন আমার এক বদরাগী বন্ধু প্রায়ই হলের মাঠে গভীর রাতে টর্চ জ্বালিয়ে তার মোবাইলের বিভিন্ন অংশ খুঁজে বেড়ায়, যা সে নিজেই এর খানিকক্ষণ আগে ছুঁড়ে মেরেছিল। কারণটা সচেতন পাঠক বুঝে নিন। এই ফাইটের ক্ষেত্রে কোন ভেদাভেদ নেই যে কেউ এই ফাইট দিতে পারে।

তবে মাঝে মাঝে এইটি যখন প্রতিদিন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার মত আবশ্যিক কাজে পরিণত হয় তখন অনেকে কিছুটা বিরক্ত বোধ করে। এবার দ্বিতীয় ফাইট। এটিকে শুধু ফাইট ই বলা হয় তবে পার্থক্য করার জন্য আমি এর নাম দিয়েছি শিক্ষাফাইট। মূলত কয়েকজন মিলে একত্র হয়ে কোপানো লেভেলের পড়াশোনা করা কে শিক্ষাফাইট বলা হয়। একটু আঁতেল টাইপের পোলাপান এটি বেশি দিয়ে থাকলেও পরিক্ষার আগে প্রায় সবাই ই অন্তঃত একবার এটি দিয়ে থাকে।

এটি করা যেতে পারে হলের কোনো সুবিধাজনক রুমে কিংবা লাইব্রেরিতে। তবে ফাইটে বিপরীত লিঙ্গের কেউ অন্তর্ভুক্ত হলে লাইব্রেরিই ভরসা। সাধারণতঃ ৩/৪ জন দরকার এই ফাইট সঠিক ভাবে দেওয়ার জন্য। এজন্য আগে থেকে প্ল্যান করা হয় যে কি কি নিয়ে আলোচনা হবে, কে কোন বই,চোথা সাথে আনবে। এই শিক্ষাফাইটের কারণে ফাইট ক্ষেত্রের আশেপাশের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।

তৃতীয় ফাইটটি হল মুভিফাইট। কয়েকজন মিলে একসাথে বসে কোন একটি মুভি দেখা এবং মুভি দেখাকালীন সময়ে ব্যাপক কেওয়াজ করা এই ফাইটের বৈশিষ্ট্য। সবসময়েই চললেও সাধারণত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার প্রতিটি পরীক্ষার শেষে এই ফাইট খুব আয়োজন করে দেওয়া হয়। আর প্রত্যেক ফাইটার একেকজন বড়সড় মুভি সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হয়। সব মিলিয়ে সেই মাপের মজা হয়।

তো এই গেলো ফাইট বিষয়ক আলাপ আলোচনা!! ভবিষ্যতে নতুন কোন টার্মিনোলজি পাওয়া গেলে তা নিয়ে আবার বকবক করব নিশ্চয়ই!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.