আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙালি’র সাংস্কৃতিক দরিদ্রতার উৎস সন্ধানে ... ০১



বাঙালি’র সাংস্কৃতিক দরিদ্রতার উৎস সন্ধানে ... ০১ বাঙালির দরিদ্রতার কারণ অনুসন্ধান চারটিখানি কথা নয়। দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবীদগণও বিষয়টি নিয়ে অনেক ভেবেছেন। সমাজবিজ্ঞানীগণও বিভিন্ন সময়ে দারিদ্রের সমাজতাত্ত্বিক কারণসমূহ চিহ্নিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। তাই, এ বিষয়টি আমার মৌলিক কোন ভাবনা নয় বরং এ পর্যন্ত সময়ের গবেষণাগুলো সর্ম্পকে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিমত। এতটা দুঃসাহস না দেখালেও পারতাম কিন্তু বরাবরেরমত ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার অভ্যাসবশত: কিছু অপরিণত ও অপরিপক্ক কথামালা রচনার লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না।

সে যাই হোক, আমার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনার জন্য আমি প্রস্তুত এবং গঠনমূলক সমালোচনা প্রাপ্তির আশা রাখছি। কবি নজরুল বলেছিলেন, হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছ মহান... ... ... দুখু মিয়া দুঃখকে ভালবেসে না পাওয়ার কষ্ঠ ভুলতে চেয়েছিলেন নাকি প্রকৃতই আগুনে পুড়ে পুড়ে খাটি সোনা হতে চেয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে না গেলে ও একটি কথা স্বীকার করতে দোষ নেই যে, এই দুটি লাইন বাঙালি জাতিকে একটি দারিদ্রের ছকে আবদ্ধ করেছে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতই এত মহান একজন দার্শনিক ছিলেন যে, বাঙালির স্বভাব, চিন্তা-চেতনার সীমা তাঁর নজর এড়ায় নি। তিনি তৎকালিন বিখ্যাত সোমপ্রকাশ পত্রিকায় লিখেছিলেন, “বাঙালি অনাহারে ঘরে পড়িয়া মরিবে তথাপি আহার অšে¦ষণ করিবে না। ” শুধু কবিগুরু নন, সুদূর অতীতে বঙ্গদেশে আগত ভ্রমণকারীর দলও এমন মন্তব্য করে গেছেন বাঙালিদের নিয়ে।

এবারে দারিদ্রতার সংস্কৃতি বিষয়টির দিকে খানিকটা অলোকপাত করছি। সংস্কৃতির সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন নৃবিজ্ঞানী টেইলর। তাঁর মতে, সমাজে বসবাসের কারণে মানুষ যুগ যুগ ধরে যা কিছু অর্র্জন করে তাই হল সংস্কৃতি। এখানে একটি বিষয় বলা রাখা ভালো যে, তিনি অর্জন করা শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং এ থেকে বোঝা যায় সংস্কৃতি জিনগত সূত্রে উত্তরাধিকার স্বরূপ প্রাপ্ত মূর্ত বা বিমূর্ত কোন বিষয় নয়। তাহলে স্বভাবতই যে প্রশ্নটি মনে উকি দেয় তা হল, বাঙালি কি নিজেই জাতি হিসাবে দারিদ্রকে উপভোগ করে? আমার মতে, না।

ইতিহাস পর্যালোচনা করতে গেলেই আমরা ১৭৫৭ সাল অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসন থেকেই শুরু করে একটা দিকনির্দেশ লাভের চেষ্টা করি। কিন্তু ১৭৫৭ পূর্ববর্তী সময়েও আমরা স্বাধীন ছিলাম না। সামাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে কেবলমাত্র ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের দোষ দেয়ার সংস্কৃতিটি আমরা পেয়েছি ইতিহাসের চরম পক্ষপাতিত্ত্বের কারণে। স্বাধিনতা, পরাধিনতা বিষয়গুলো আসলেই আমরা গদগদ মুখস্ত বলে ফেলি, “১৭৫৭ সালে সিরাজউদ্দোল্লার পতনের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য ২০০ বছরের জন্য নিভে যায়। প্রকৃতঅর্থে এ পরাজয় বাঙালি জাতির পরাজয় ছিলনা বরং একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে অন্য একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজ পরিবারের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছিল।

আর এখনো পর্যন্ত যে মিরজাফর নামটি আমরা প্রতারক অর্থে ব্যবহার করি তাও ইতিহাসের পক্ষপাত। বরং বর্তমান সময়ে আমরা অবাঙালি মিরজাফরের পরিবর্তে প্রতারক অর্থে খন্দকার মোশতাক নামটি ব্যবহার করতে পারি। তাহলে অন্তত বাঙালির চরিত্রে কিছুমাত্রায় অন্যায়, নেমকহারামি আর প্রতারণার দায়টি হালকা হবে। শুধুশুধু অবাঙালি মীরজাফরের সাথে আমাদের চারিত্রিক তুলনার কারণে হয়ত এখনো বাঙালির বোধদোয় হচ্ছে না। ঘোলাভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের ইতিহাস আমরা পার করে এসেছি।

কিন্তু, এত ঐশ্বর্যের পরে ও আমরা কখনোই স্বাধীন ছিলাম না। মোগল, তুর্কি, পাঠানরা সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে আমাদের শাসন করে গেছে। এমনকি তাদের ক্রয়কৃত আফ্রিকান হাবশি গোলামরাও ক্ষমতা পেয়েছিল এবং শাসন করেছিল আমাদের। এত ইতিহাস আলোচনার পর সরলরৈখিক একটি সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, বাঙালি চিরকাল (১৯৭১ পূর্ব পর্যন্ত) শাসিত হয়েছে। তাহলে কি বাঙালি নিজেই মর্ষকামিদের মত অন্যের শাসনে সুখ পেয়েছিল? সম্ভবত না।

তবে দীর্ঘদিনের এ শাসন ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে বাঙালিকে মনস্তাত্ত্বিক পরাধিনতার শৃঙ্খলে বন্দি করে রেখেছিল। এ শাসনের সাথে যখনই শোষণ যোগ হয়েছে কেবলমাত্র তখনই বাঙালির চরিত্রে শ্রেণী সংগ্রাম ও প্রতিবাদী মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে যেখানে আমরা আবার একটি নতুন সংস্কৃতির উৎসমূল আবিষ্কার করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.