আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকাংখা আর আশংকা

হাজারো বিন্দু এখনো একটি বৃত্ত আঁকতে পারে নি

আগামি কাল কলকাতায় শুরু হচ্ছে "বাংলাদেশ উৎসব"। বিজয় দিবস সামনে রেখে আগামী ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ৫ দিন ব্যাপি এই অনুষ্ঠানের শুরু হতে যাচ্ছে। উৎসবে বাংলাদেশের শাড়ি,বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পন্য, প্রসাধনী, বইসহ বিভিন্ন পন্য পাওয়া যাবে। থাকবে বাংলাদেশের ইলিশ, ভুনা খিচুড়ি, কাচ্চি বিরিয়ানি,সন্দেশ ,পিঠা। থাকবে লোকগীতি, ভাওয়াইয়া, বাউল,নজরুল গীতি, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক গান ও নৃত্যানুষ্ঠান।

উৎসবে যোগ দেবেন সৈয়দ আব্দুল হাদি, সুবির নন্দী, শাহীন সামাদ, শামা রহমান , অদিতি মহসিনসহ শিল্পকলা একাডেমীর ১০ সদস্যের দল। (মানবজমিন,১৪/১২/১০ ই) মন ভালো করে দেয়ার মত একটি সংবাদ। বাংলা ও বাঙালির সাথে দুই বংগের নাড়ির সম্পর্ক। বাংলা সাহিত্যের পূর্নজাগরনে যেমন মূখ্য অবদান পশ্চিম বংগের বাঙালিদের, অন্যদিকে বাংলা ভাষার সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস '৫২, পূর্ব বংগের বাঙালিদের একক কৃতি। কলিকাতার অনেককেই ব্যথিত হতে দেখেছি সেই ইতিহাসের অংশ হতে না পারার জন্য।

অনেকের চোখেই সমবেদনা দেখেছি ভাষা শহিদদের জন্য, সে চোখেই ঘৃনা দেখেছি জান্তাদের প্রতি। ৭১রে যখন পূর্ববাংলার সূর্যসন্তানরা লড়ছিল হায়নাদের বিরুদ্ধে ; পশ্চিম বংগ তখন আশ্রয় দিয়েছিল তাদের ১ কোটি বাঙালি ভাইকে, সর্বাত্মাক সাহায্য করেছিল মুক্তিসেনা আর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের। আজো কলিকাতা বাংলাদশের সবচেয়ে বড় অর্জনের উৎসবে শামিল হচ্ছে। সংগত কারনেই অনেকেই তাই দুই বাংলার একত্রিতকরনের কথা বলছেন। নি:সন্দেহে বাঙালিদের জন্য অনেক বড় অর্জন হবে এটি।

দুই বাংলা সংস্কৃতিতে পারস্পারিক সহযোগীতা করলে বিশ্বের দরবারে আরেকবার মাথা উচু করতে পারবে বাঙালি। পাশ্চাত্যে আমাদের আর ইনডিয়ান বলে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন পরবে। রবীন্দ্রনাথ,অমর্ত্য সেন, জগদিশ বসুদের বাঙালি পরিচয়ই মূখ্য হয়ে উঠবে। হিন্দু-বাঙালি আর মুসলিম বাঙালির সংস্কৃতির মাঝে বাঙালি সংস্কৃতি আরো শক্তিশালি হবে। আমরা যেমন পূজোতে যাই, এ দেশের হিন্দুরা ঈদে আমাদের বাড়ি আসে।

পূজোর নাড়ু যেমন কিশোরের মাসীমা আমাকে খেতে দেন, আমার মা ও ওকে যত্ন করে সেমাই খাওয়ান। তাই এমন আরো হাজারো স্বপ্নের বুনোজাল গড়ি। তবে মোহভংগো হয় যখন বক্তারা আবেগের অতিশয্যায় ভৌগলিক ভাবে দুই বাংলার একত্রিতকরনের কখা বলেন। ধর্মকে কুৎসিত গাল দেন । নিজের অজ্ঞতা থেকে প্রশ্ন করি , ধর্মের কি দোষ? অনেক খুজেও কুরানের কোথাও দুই বাংলার পৃথকীকরনের কোন আদেশ পাই না।

হাদিসেও কিছু খুজে পাই না। তবে? হয়তো মুসলিমলীগ এর জন্য দায়ী, তাই ধর্মের কপালে গাল পড়ছে। আবারো জিজ্ঞাসা করি , তাহলে ধর্ম নয় ,ধার্মিক দায়ী। আবারো প্রশ্ন করি, মুসলিমলীগের এই নেতারা কি প্রকৃত ধার্মিক ছিলেন? ফজলুল হক , দেশ বন্ধু ,মাওলানা আজাদ যখন দুই বাংলা একত্রিত রাখার আপ্রান চেষ্টা করছিলেন , সেদিন ওপার থেকে কেন কোন সাড়া এলো না? ভোটের রাজনীতির হিসেব কি হিন্দু রাজনীতিবিদরা করেন নি? কংগ্রেস কি দায় এড়াতে পারে? দেশ বিভাগের জন্য ধর্মকে একশো গাল দিতে পারি, হিন্দু- মুসলিম তর্ক করে সাম্প্রদায়ীক সম্প্রিতিকে ক্ষত-বিক্ষত করতে পারি। কিন্তু কোন দিন সম্ভব না বাংলাদেশ নামক সত্যকে অস্বিকার করা ।

সম্ভব না স্বাধীন দুটি রাষ্ট্রের সত্তাকে অস্বীকার করা। তবুও যদি দুই বাংলার একত্রিতকরন সম্ভবশয় , আমি খুশি হবো। চিৎকার করে স্লোগান দেবো রাজপথে। একত্রিতকরন সম্ভবহয় , আমি খুশি হবো। চিৎকার করে স্লোগান দেবো রাজপথে।

তবে এই একত্রিতকরনের প্রক্রিয়া কি হবে? কলিকাতা ভারত থেকে স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশের সাথে যোগ হবে, নাকি বাংলাদেশ স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে ভারতের সাথে যুক্ত হবে?বক্তারা স্পষ্ট করে কিছু বলেন না। আমি আমার অনেক প্রশ্নের মত এই প্রশ্নের ও কোন উত্তর পাই না। অস্পষ্টতা থেকে আশংকা তৈরি হয়; অজানা, অশুভ আশংকা। তবুও আশা করি অস্পষ্টতার আধার চিরে সত্যের সূর্য উদিত হবে। বাঙালিদের ভালোবাসি , তবে বাংলাদেশিদের থেকে বেশি নয়।

বংগকে ভালোবাসি, তবে শহিদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।