আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড - জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যার মাধ্যমে ভূমিষ্টপ্রায় একটি স্বাধীন দেশকে মেধাহীন করার সংঘবদ্ধ প্রকল্প

একজন ইউনুস খান বেঁচে থাকতে চান গণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং উদ্যেগ গ্রহণের মাঝে।

৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত, ৩ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এক নদী রক্ত পেরিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতার জন্য নিরস্ত্র বাঙালী অকাতরে প্রাণ দিয়েছে। সেই বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বছর পেরিয়ে আরেকটি ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস আগত।

কিন্তু সমস্ত সুখকে শোকে পরিণত করে আজ আমাদের চোখ ছলছল। কারন বিজয়ের ঠিক আগ মুহুর্ত্তে এদেশীয় কিছু দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামসের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে এদেশের মেধাবী সূর্যসন্তানদের। সেই ভয়বহ যজ্ঞ অনুষ্টিত হয় ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এ। যার শুরু হয় ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ রাত থেকে। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ প্রতিষ্টার পর থেকেই বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রাকাশ্যে বিষোদগার শুরু করেন রাজাকার, আলবদর, আল-শামস আর শান্তি কমিটির নেতারা।

পাক হানাদারের দোসররা দেশপ্রেমিক, মুক্তিকামী বাঙালীকে দাবিয়ে রাখা যাবেনা এবং পরাজয় নিশ্চিত জেনে নতুন জাতির মেধা বিকাশে, মৌলিক চেতনা বিকাশে যারা অবদান রেখেছিলো তাদের একটি গোপন তালিকা তৈরী করে। সেই গোপন তালিকায় শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, চিকিৎসক, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, উকিল, স্থপতি, নাট্য-কর্মী সহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের নাম ছিলো। এক সপ্তাহ কারফিউয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনা বুদ্ধিজীবিদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে হত্যার পর ৭০ ভাগ মৃতদেহ ফেলা হয়েছিলো বিভিন্ন জলাশয়ে। ডাঙায় নিহত ৩৩ ভাগ গুলি করে হত্যা করলেও বাকিদের দেশীয় অস্ত্র এবং বিভিন্ন ধারালো ও ভারী অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মারা হয়।

তাতে এ দেশীয় দোসরদের এ সূর্যসন্তানদের উপর ক্ষোভ বোঝা যায়। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবিদের হত্যার এই নৃশংসতার সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে রায়ের বাজারের বধ্যভূমি। এর আগেও মিরপুর সহ ঢাকার কয়েকটি স্থানে বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করা হয়। ঢাকার অন্য যেসব বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো হলো−মিরপুরের আলোকদী, কালাপানি, রাইনেখালা, বাংলা কলেজের পিছন, হরিরামপুর গোরস্থান, মোহাম্মদপুর থানার উত্তর সীমানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া ও জগন্নাথ হল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বধ্যভূমি ও গণকবর৷ ধারণা করা হয় দেশে ছোট বড় প্রায় পাঁচ হাজার বধ্যভূমি রয়েছে। বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের কথা লিখতে গিয়ে প্রিয়ভাষিনী সুফিয়া কামালের একটি কথা বারবার মনে পড়ছে।

উনি তার রোজ নামচায় লিখেছিলেন, "এক সপ্তাহ ধরে কারফিউ দিয়ে জালেম হারামজাদারা এই কান্ড করেছে। আল্লাহ, তুমি কি এখনো কিছু করবেনা। " না জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বুদ্ধিজীবিদের হত্যাকান্ডের জন্য কারও শাস্তি হয়নি, বিচারের কাঠগড়াতে দাঁড়াতে হয়নি একজনকেও। জানা যায় বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের প্রধান ঘাতক আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন এবং জল্লাদ আশরাফুজ্জামান বহাল তবিয়তে লন্ডনে আছেন। দেশের আপামর জনগণ বিশ্বাস করে যুদ্ধাপরাধীদের মতো বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের বিচারও হবে।

জাতির সূর্যসন্তানদের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে সেটা কখনও পূরণ করা সম্ভবনা। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসকে সামনে রেখে বুকে হাত দিয়ে শপথ করছি, এতো প্রাণের বিনিময়ে যে দেশকে আমরা পেয়েছি তাকে বিশ্ববাসীর কাছে মর্যাদার আসনে অধিষ্টিত করবোই। সাক্ষী বাংলার রক্তে ভেজা মাটি সাক্ষী আকাশের চন্দ্রতারা ভুলিনি শহীদের কোনো স্মৃতি ভুলব না কিছুই আমরা। দেশের এই বরেণ্য সন্তানদের গভীর শোক, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় স্মরণ করছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.