আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাউকে অপবাদ দেয়ার আগে একটু ভেবে নিয়েন

আমার মতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে মানুষের হাসি। তাই আমি সারাজীবন মানুষকে হাসি মুখে দেখতে চাই একজন ব্যাক্তি মসজিদে গেছেন নামায পড়তে। নামায শেষ করে বের হচ্ছেন এমন সময় কেউ একজন তার হাত চেপে ধরল। কারন জিজ্ঞাসা করলে ঐ ব্যাক্তি বলল আপনি আমার জুতা চুরি করেছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বললেন আপনি জুতার বাক্সের পাশে বসেছেন ।

আপনি ছাড়া এ কাজ আর কেউ করতে পারে না। কিন্তু ১ম ব্যাক্তি বলল আমি জীবনে একটা সুতাও চুরি করিনি । আপনার জুতা দিয়ে আমি কি করব? ২য় ব্যাক্তি তার কথা শুনতে নারাজ। এমন সময় বাইরে চিৎকার চেচামেচি শোনা গেল। একটু পর একজন লোককে কয়েকজন মিলে ধরে আনল।

তার হাতে একটা ব্যাগ। কেউ একজন বলল পাশের এক বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। তাকে এখন ইমাম সাহেবের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে। পেছনের কাতারের একজন বলল আরে এত আমার সাথেই নামাজে দাঁড়িয়েছিল। পরে দেখি হাওয়া।

তার ব্যাগটি খোলা মাত্র অনেক জিনিসের সাথে একজোড়া জুতাও বের হল। জুতা দেখে ২য় ব্যাক্তির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল । উনি বলে ঊঠলেন আরে এইত আমার জুতা। ১ম ব্যাক্তিও খুশি হয়ে উঠলেন। পরে ২য় ব্যাক্তি ১ম ব্যাক্তির হাত ধরে অনেক ক্ষমা চাইলেন ।

১ম ব্যাক্তি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। বললেন আমি আপনাকে ক্ষমা করেছি তবে সকল ক্ষমার মালিক আল্লাহ তাআলা। কিছুদিন আগে এমনকি এখনো বলে শাহবাগ নাস্তিকদের আন্দোলন। এই আন্দোলনের সবাই নাস্তিক। এটা কোন ধর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন না।

কাজেই সব ধর্মের মানুষ এমনকি দুই একজন নাস্তিকও েই আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল। তাই বলে দুই এক জনের জন্য এটা নাস্তিকদের আন্দোলন হয়ে যাবে?মসজিদে নামাজীরা যায় আবার দুই একজন চোর ও যায় । এটা মাথায় রাখতে হবে। আবার বলেছেন এখানে পতিতারা যায় । আমি নিজে আমার বোন, চাচিকে নিয়ে গিয়েছি ।

আরও অনেক মেয়ে সেখানে গিয়েছে। অনেক রাত্রি পর্যন্ত তারা আন্দোলন করেছে। কই তারা কি পতিতা? যে মা তার সন্তানের হাত ধরে নিয়ে গেছে সেকি পতিতা? আরেকটা হল গাজাখোরদের আস্তানা শাহবাগ। এটা শুনলে। হাসি পায়।

মানুষ এখানে একত্রিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে। তারা কেন গাজা খাবে? এখানে সব বয়সের মানুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই গিয়েছে। তারা কি গাঁজাখোর? আমি তো জীবনে সিগারেটই ধরি নাই । আমাকেও গাঁজাখোরের উপাধি দেয়া হল। বিশ্বাস করেন আর না করেন এখনো এসব কথা শুনতে হয়।

আমরা অনেক সময় না জেনে কাউকে অপবাদ দিয়ে দেই। ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকারক অন্যায় কাজগুলোর একটি হলো অপবাদ। যে ব্যক্তি অন্যকে অপবাদ দেয় সে অন্যের ক্ষতি করার পাশাপাশি নিজেরও ক্ষতি করতো। নিজের আত্মাকে পাপের মাধ্যমে কলুষিত করে। এখন প্রশ্ন হলো, অপবাদ কি? কোন ব্যক্তির মধ্যে যে দোষ বা ত্রুটি নেই তাকে সে জন্য দোষী সাব্যস্ত করাকেই অপবাদ বলা হয়।

কাউকে অপবাদ দেয়া কবিরা বা মারাত্মক গোনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কোরআনে কাউকে অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেয়া আছে। যে অপবাদ দেবে তাকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলেও কোরআনে উল্লেখ করা আছে। ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেছেন, একজন নিরপরাধকে অপবাদ দেয়ার পাপ, বড় পাহাড়গুলোর চেয়েও বেশি ভারী। অপবাদ বা কুৎসা রটনা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার।

এটা যদি ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে করা হয় তাহলে তা গীবত হিসেবেও বিবেচিত হয়। অর্থাৎ অপবাদ দেয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ প্রকৃতপক্ষে দুই ধরনের পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। এক ব্যক্তি একদিন ইমাম সাদেক (আ.) এর সঙ্গে হেটে এক জায়গায় যাচ্ছিলেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার কাজের লোকটিও ছিল। হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে কাজের লোকটি পেছনে পড়ে যায়।

এ অবস্থায় ইমামের সঙ্গী ব্যক্তিটি তার কাজের লোককে তার কাছে আসতে ডাক দিল। কিন্তু কাজের লোকটি কোন জবাব দিল না। এভাবে কয়েক বার ডাকাডাকির পরও যখন কাজের লোকটি কোন উত্তর দিল না তখন ওই ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে গালি দিল যা আসলে কাজের লোকটির মায়ের প্রতি এক ধরনের অপবাদ। ইমাম সাদেক ওই ব্যক্তির আচরণ ও কথা শুনে অসন্তুষ্ট হন এবং ব্যক্তিটি যে নিন্দনীয় আচরণ করেছে তা তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ইমামের সঙ্গে চলা ব্যক্তিটি তার ভুল স্বীকার না করে নিজের আচরণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা চালায়।

ইমাম যখন বুঝতে পারলেন যে, ওই ব্যক্তি অপবাদ দেয়ার ভুল স্বীকার করতেও রাজি নয় তখন তিনি ওই ব্যক্তিকে বললেন তোমার আর আমার কাছে আসার দরকার নেই। ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন, যখনই কোন ব্যক্তি কোন মুমিনকে অপবাদ দেয় তখন তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায় যেমনিভাবে লবন পানিতে গলে যায়। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এ সম্পর্কে বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিন নারী বা পুরুষকে অপবাদ দেবে তাকে পরকালে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। অপবাদ দুই ধরনের। এক ধরনের অপবাদ হলো, ব্যক্তিটি দোষী নয় এটা জেনেও তাকে কোন কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা বা নিজে অন্যায় করে তা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সে ব্যাপারে কুৎসা রটনা করা।

আরেক ধরনের অপবাদ হলো, অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশে কাউকে কোন দোষের জন্য দায়ী করা। অন্যের বিষয়ে খারাপ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণের প্রবণতা থেকেই এ ধরনের অপবাদের সূত্রপাত। অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশে অপবাদ দেয়ার ঘটনাই সবচেয়ে বেশি ঘটে। এ কারণেই পবিত্র কোরআনের সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক বিষয়ে সন্দেহ বা ধারণা করা থেকে বিরত থাক কারণ কোন কোন ধারণা বা সন্দেহ গোনাহ। ' কাজেই সন্দেহের বশে কারো বিরুদ্ধে কোন দোষ চাপিয়ে দেয়া অপরাধ।

সূরা ইসরাঈলের ৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, সেটার পেছনে যেও না। এখন আমরা দেখবো কোন অপবাদের কথা শোনার পর আমাদের করণীয় সম্পর্কে। সূরা হুজরাতের ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন খরব আনে তাহলে তা পরীক্ষা করে দেখবে,যাতে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ হলো, আমরা যখন কারো ব্যাপারে কোন কথা বা অপবাদ শুনব তখন আমাদের দায়িত্ব হলো প্রথমে তা পরীক্ষা করে এর সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হবো। কোন বিষয়ে তাৎক্ষণিক এবং প্রমাণ ও তদন্তবিহীন মূল্যায়ন নিষিদ্ধ।

আশা করি ব্যাপারটা এবার তারা বুঝতে পেরেছেন। যারা এসব বলে আল্লাহ তাদের জ্ঞান দান করুক। আমিন। (তথ্য গুলো দিয়ে সাহায্য করেছেন তনি ভাই) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.