আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামীলীগ নেতা কর্তৃক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে জুতা পেটা এবং জাগ্রত বিবেকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা



আজ সকালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় একটি সংবাদ দেখে ঠমকে গেলাম। আবার কষ্টও পেলাম। খবরটির শিরোনাম হচ্ছে, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করলেন আ’লীগ নেতা। খবরটি শোনা যাক তারপরে বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পাবো। বাগেরহাটের মংলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর সর্দারকে (৬৫) প্রকাশ্যে জুতাপেটা করেছেন।

সোমবার বিকালে শহরের শ্রমিক কলোনির সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর ভয়ে মংলায় চিকিত্সাসেবাও নিতে পারেননি। তার বাড়ি সুন্দরবন ইউনিয়নের মাদুরপাল্টা গ্রামে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পেলে জেলার মুক্তিযোদ্ধারা আসন্ন বিজয় দিবসের সব কর্মসূচি বর্জন করবেন বলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার জানান। লাঞ্ছিত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর সর্দার জানান, সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মংলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় থেকে বের হয়ে মংলা শ্রমিক কলোনির সামনে পৌঁছলে উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ইজারাদার আমার সামনে এসে মোটরসাইকেল থামিয়ে পথরোধ করে দাঁড়ান।

এ সময় আমার সঙ্গে মংলার আর এক মুক্তিযোদ্ধা ও আইন সহায়তা কেন্দ্র মংলার সভাপতি মো. আ. রাজ্জাক ছিলেন। এরপর আমাকে গালাগাল করে শত শত লোকের সামনে প্রকাশ্য পায়ের জুতা খুলে আমাকে মারতে থাকেন। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যাই। এরপর চেয়ারম্যান মোটরসাইকেলে চলে যাওয়ার সময় আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যান, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকতে এই পাঁচ বছর যেন তোকে মংলায় আসতে না দেখি। ’ আমরা আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে সোচ্চার।

আওয়ামীলীগ এ বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধি করছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতা কর্তৃক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে কোন অজুহাত ছাড়াই জুটাপেটার ঘটনা জাগ্রত বিবেক কে ভাবিয়ে তুলবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা সকলে জানি, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছেন, কোন একজন মুক্তিযোদ্ধা যাতে কষ্ট না পায় সে দিকে আওয়ামীলীগ নজর দিবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, নাতী , নাতনীও সরকারি চাকুরিতে কোটা সুবিধা পাবে।

এ সংবাদ যখন শুনেছিলাম তখন দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আনন্দিত হয়েছিলাম। আমি অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকারের সন্তান নয়। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাকে নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মাত্র কয়েক মাস পরেই যে ঘটনা ঘটলো তাতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা যেমন হতাশ তেমনি জাগ্রত বিবেকও হতাশ। যে দেশে সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদের ক্ষমতাসীন দলের নেতা জুটাপেটা করতে পারে সে দেশে সবই সম্ভব।

সে দেশেই সবই অসম্ভব। এ ঘটনা প্রমাণ করলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কতটা সুষ্ঠুভাবে হবে। ইতোপূর্বে বহুবার পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি, অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করে, রিক্সা চালায়। ঘটনা শুনে কষ্ট অনুভব করেছি। কিন্তু বাগেরহাটের আওয়ামীলীগ নেতা ইদ্রিস আলীর এ জঘন্যকাজ দেখে শুধু কষ্টই পায় নি আমি ভিষণ লজ্জিত।

এ দেশ ৩০ লাখ বীর শহীদের এক সাগর রক্তের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশ। এ দেশে সবচেয়ে কষ্ট অনুভব করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। কারণ, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিল যে আশা নিয়ে । সে আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি বাংলাদেশে। কিন্তু যখন একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে আওয়ামীগ নেতা জুটাপেটা করলো তখন মানুষ বুঝতে পেরেছে আসলে এ সরকারের নেতা কর্মীরা কতটা হিংস্র।

কোন মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় । কিন্তু জুটাপেটা করা মুক্তিযোদ্ধা কি আদতে বিচার পাবে। নাকি গোপনে এর সুরাহা হয়ে যাবে। আমরা চাই, এ আওয়ামীলীগ নেতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আওয়ামীলীগ শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে দেশবাসী রাজপথে নামবে।

আমরা হরতাল চাই না, ভাংচুর চাই না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাকে জুটা পেটা করবে আর আমরা চুপ করে সহ্য করবো। এটা হতে পারে না। আসুন আমরা এ ব্যাপারে শুধু ধিক্কারই নয়, আন্দোলন গড়ে তুলি। মুক্তিযোদ্ধারা শ্রেষ্ট সন্তান আগেও ছিল, এখনও থাকবে।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের যে জুটাপেটা করলো তার শাস্তি কি হওয়া দরকার। আমি রীতিমত হতবাক। ............................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.