আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম সর্বপ্রথম দাস প্রথা উচ্ছেদ করেছে

Mahmood Khan

বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এমন এক সময় আরব দেশে আগমন করেছিলেন যখন সারাবিশ্ব অজ্ঞতা, বর্বরতা ও জঘন্য সব কার্যকলাপে ডুবে ছিল। মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করা, ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে দাস-দাসী বানিয়ে নির্মমভাবে অত্যাচার করাটা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। হজরত মোহাম্মদ (সা.) জাহিলিয়াতের এ অবস্থা থেকে মুক্ত করেছিলেন। দিয়েছেন মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা, নারী-পুরুষের আলাদা মর্যাদা। সঙ্গে সঙ্গে দাস প্রথার বিলুপ্তির ঘোষণা।

পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো সংস্কারই হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ন্যায় এত বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। এ জন্য ঐতিহাসিক রেমন্ড লজি বলেছেন, ''The founder of Islam is, in fact, the promoter of the first social and International revolution of which history gives mention'' অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক বিপ্লবের সূচনাকারী হিসেবে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তকের নাম ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে। তখন গ্রিস, রোমান, ইহুদি ও খ্রিস্ট জগতে, বিশেষ করে আরব সমাজে দাস-দাসীর এই কুপ্রথার প্রচলন ছিল। মনিবরা তাদের জীবন-মরণের প্রভু ছিল বলে তাদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করতো। মানুষ হিসেবে তাদের কোনো অধিকার ছিল না, তাই তাদের পশুর মতো জীবনযাপন করতে হতো।

এ পরিস্থিতিতে তিনি তাদের মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তাদের মুক্তির পথ নির্দেশ করেন। তাইতো ঘোষণা করেন, ‘গোলামকে আজাদি দানের চাইতে শ্রেষ্ঠতর কাজ আল্লাহর কাছে আর কিছু নাই। ’ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘সৎ কর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎ কাজ হলো এই, যে ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সমগ্র নবী-রাসুলগণের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তারই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। ’ (বাকারা-১৭৭) অপর আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আর পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয় এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।

’ (সুরা-নিসা ৩৬) পবিত্র কোরআনুল কারিমের এসব আয়াত থেকে দাস-দাসীদের ব্যাপারে এই হক সাব্যস্ত ও অপরিহার্য করে দেওয়া হয়েছে যে, তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে হবে। সাধ্যানুযায়ী তাদের খাওয়া-পরার ব্যাপারে কার্পণ্য করা যাবে না। তা ছাড়া তাদের সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ তাদের দ্বারা করাবে না। আবু মুসা আশ আরী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আপন ক্রীতদাসীকে উত্তম শিক্ষা দান করে এবং শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়, এরপর তাকে মুক্ত করে শাদি করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। (বুখারি খ--৮ ইফা পৃ ৩৯৩) শুধু ঘোষণা দিয়েই শেষ করেননি, নিজ হাতে অনেক দাসকে যুক্ত করেছেন।

এই পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক সাহাবি দাস-দাসীদের মুক্ত করেছেন, ক্রীতদাস জায়েদকে সেনাপ্রধান এবং হাবসী ক্রীতদাস হজরত বেলাল (রা.)-কে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত করে তাদের মুক্তির ও পদমর্যাদার উন্নতির পথকে সুপ্রশস্ত করে গেছেন। এ ছাড়া সলেমান ফারসী, সুহায়েল রুমী এবং অনেক ক্রীতদাসকে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দাস প্রথামুক্ত দিবস। আল্লাহ আমাদের কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক তাদের মুক্ত করে তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ ও মানবাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার তাওফিক দান করুন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.