আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রীমঙ্গলে গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সের ত্রি-মাতৃক ভূতাত্বিক জরিপ ঃ বিস্ফোরণের ফলে অর্ধ শতাধিক বাড়ী ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে \ জনমনে আতংক

আমি সততা ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়ন থেকে ১০ কিলোমিটার পথ পেড়িয়েই আলিয়াছড়া খাসিয়া পান পুঞ্জি। গ্রামীণ জনপদে অবস্থিত এই পুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়া আদিবাসীদের জবিীকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে পান চাষ। পাহাড়ের পাদদেশে ঘনবসতিপূর্ণ খাসিয়া পুঞ্জিতে পান সংগ্রহে এখন দেখা দিয়েছে ভাটা। অন্যদিকে বাপেক্সের ত্রি-মাতৃক ভূতাত্বিক জরিপের কারণে তাদের মনে বিরাজ করছে নানা আতংক।

বোম্বিং এর শব্দে রাতের বেলাও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছে না খাসিয়ারা। তাদের মনে একটাই আতংক, কবে তাদেরকে সরিয়ে দেবে বোম ওয়ালারা (যারা বোম্বিং করছে)। সার্ভের জন্য এলোপাতারিভাবে টানা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে কখন যে কার প্রাণ যাবে সেই চিন্তায় অস্থির খাসিয়া বাবা মায়েরা। এদিকে দিনভর বোম্বিং এর দ্বারা সৃষ্ট প্রচন্ড কম্পনে এখানকার অধিকাংশ ঘরের দেয়ালে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। দিনভর এভাবে বম্বিং চলতে থাকলে এখানে বসবাস করা নিরাপদ হবে না বলে মনে করছেন খাসিয়ারা।

পাশাপাশি বম্বিং এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের ক্ষতিপূরণও দাবী করছেন। স¤প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের কাছে এলাকাবাসী জানান, প্রায় মাসখানেক ধরে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতায় এ অঞ্চলে বাপেক্সর থ্রি-ডি সিসমিক (ত্রি-মাতৃক ভূতাত্বিক) জরিপ শুরু হয়। জরিপের কারণে প্রতিদিন বাড়তে থাকে বোম্বিং এর সংখ্যা। এক পর্যায়ে বাড়ী ঘরে দেখা দেয় ফাটল। প্রচন্ড শব্দে আতংকিত হয়ে পড়ে শিশু ও বয়ঃবৃদ্ধরা।

এনিয়ে বাপেক্স এর লোকজনের সাথে এলাকাবাসীর দ্বন্দ সৃষ্টি হয়েছে বহুবার। ইতোপূর্বে বিস্ফোরণের ফলে সবুজ মিয়া নামের এক কৃষকের ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গে গেলে তাকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বাপেক্স। এরকম আরো অনেক সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেন পার্শ্ববর্ত্তী রাবার বাগানের কর্মচারী আব্দুল জলিল, গ্রামের জহুর আলী, আয়শা খাতুন ও আমেনা বেগম প্রমুখ। তারা বলেন, বোম্বিং এর কারনে তাদের ঘরের মাটির দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভূনবীর ইউনিয়নের মেম্বর আমিরুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের লাহারপুর, খিলগাও, বিহারী বস্তি থেকে শুরু করে পাশ্ববর্তী সিন্দুরখান ইউনিয়নের মাধবপাশা, আওই ও পশ্চিম লইয়ারকুল গ্রামের ২০/২৫টি বসত বাড়িতে ফাঁটল দেখা দিয়েছে।

গুলঘর থেকে শুরু করে হুগলিয়া, গাজীপুর, সাতগাঁও ও লইয়াকুল পর্যন্ত চলছে ভূতাত্বিক জরিপের কাজ। ফলে এসব এলাকার জনমনে সবসময় আতংক বিরাজ করছে। অন্যদিকে আলীয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জীর রোনাল তং পেয়ার বলেন, পাশ্ববর্তী মুছাই পাহাড়ে বোম্বিং হলেই আমাদের এই এলাকা ভুমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে বাচ্চারা ভয়ে তাদের মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরছে। বাড়ীর উঠানের ওপর দিয়ে হাই-বোল্টেজ ইলেকট্রিক তার টানার ফলে বাচ্চারা এই তার ধরে খেলা করে।

এতে যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকায় অভিভাবকরা থাকেন তটস্থ। পুঞ্জির উনেম খংলা বলেন, “৬৫ বছর ধরে আমরা এই পুঞ্জীতে বসবাস করছি। আমাদের জীবিকার একমাত্র উৎস পাহাড়ে পান চাষ”। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “গ্যাস পেয়ে সরকার যদি আমাদেরকে এখান তেকে সরে যেতে বলে তবে আমরা কোথাও যাবো”। জন খাসিয়া বলেন, “মাটির নিচে বোম্বিং হলে মাঠির উর্বতা নষ্ট হবে, তখন আর আগের মতো পান চাষ করা যাবে না”।

প্রতিদিন পুঞ্জীতে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার পান বিক্রি হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পান যাচ্ছে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। পুঞ্জীর সুলেমং খংল, বিজয়, চার্লস ও রতন খাসিয়া বলেন, পান চাষের সাথে সাথে সুপারি, লেবু, কাঠাল ও গোল মরিচের চাষও হচ্ছে আমাদের পুঞ্জীতে। তাদের দাবী দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা আলীয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জীতে যাতে কোন ধরনের জড়িপ কাজ চালানো না হয়। এব্যাপারে বাপেক্সের পাবলিক রিলেশন অফিসার মো. আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বোম্বিং এর কারণে এলাকার বাড়ি ঘরে ফাটল দেখা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবং বাপেক্সের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।

তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করবেন এবং বাড়ি-ঘরের মালিককে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.