আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়িতে নিমন্ত্রণ

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

আজ আমার সুখের দিন। আজ বড় আনন্দের এক দিন অতিবাহিত করছি আমি। সকাল থেকেই ঘর ঘুছানো সমানে চলছে আর সাথে পরিপাটি করে সবকিছু সাজাচ্ছি। সকালে যে নাস্তা করি নাই তা ভুলেই গিয়েছিলাম। নাস্তার কথা মনে হয়েছে দুপুর ১ টায়।

ততক্ষনে দুপুরের রান্না হয়ে গিয়েছে। বুয়া কে দিয়ে আজকে রান্না করিয়েছি। এদিকে অহনার আসার সময় হয়ে গেল। আজকে বাহিরে দেখা না করে অহনা কে বাসায় আসতে বলেছি। এক অন্যরকম পরিবেশ!! তাই এত সাজগোজ করে রেখেছি ঘর।

বাসার কেউ দেখলে হয়ত চিন্তাই করতে পারবে না যে এটা আমাদের বাসা। অহনার সাথে আমার পরিচয় ৩ বছর আগে কোন এক বন্ধুর বিয়েতে। প্রথম দেখাতে তাকে খুব সাধারণ মনে হয়েছিল আমার। সাদাসিধে বাঙ্গালী ঘরনার মেয়ে বলেই মনে হয়েছে। শান্ত, ভদ্র গোছের।

আমার সাথে সেই বিয়ের অনুষ্ঠানেই অহনার কথা হয়েছিল। তবে একটু অন্য ভাবে। সিড়ি দিয়ে তারাহুড়ো করে নামতে গিয়ে প্রায় হোচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল সে। সেই সময় আমি সিড়ি দিয়ে উঠছিলাম। নিচ থেকে এই দৃষ্য দেখে জলদি তাকে ধরে ফেলি।

কিন্তু ততক্ষনে সে ২ ধাপ পরে গিয়েছিল বিধায় পায়ে ব্যথা পেয়েছিল। আমি না ধরলে হয়ত আরো বড় অঘটন ঘটতো। সেদিন এই ঘটনার পর তার পাশেই বসে ছিলাম আর সে বরফ দিচ্ছিল পায়ে। আমি এক দৃষ্টিতে তাকে দেখছিলাম। মাঝে মাঝে তার সাথে কথা বলছিলাম।

এভাবে করেই তার সাথে আমার পরিচয়। সে আমার থেকে ৫ বছর এর ছোট হলেও তাকে সেরকম আমার কখনই মনে হয় নি। মনে হয়েছে সে আমার সমবয়সী অথবা বড় কেউ হবে। এখন ও মনে পরে তাকে নিয়ে একবার লং ড্রাইভ এ দিয়েছিলাম সেই আশুলিয়ার দিকে। সেদিন আমার জ়ীবনের সেরা এক সময় কেটেছিল অহনার সাথে।

অসাধারণ একটা আবহাওয়া বিরাজ করছিল সেদিন। এতদূরে একটা মেয়ে আমার সাথে এসেছে এটাতে একটু অবাক করেছিল আমাকে। তাই অহনা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই কথা। সে কোন উত্তর না দিয়ে শুধু মুচকি হেসে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলো। এখন ও মনে আছে সপ্তাহে অন্তত ৩/৪ দিন তার সাথে দেখা করতাম।

মোবাইল এ সারারাত কথা বলতাম। এত কথা যে ফুরাতো না। আবার দেখা যেত মাঝে মাঝে সে আমার মোবাইলে হুট করেই টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। তার এমন পাগলামি দেখতে ভালই লাগত। আমার খুবই ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম।

সে আমার বাসায় কখন ও আসে নাই কিন্তু আমি তার বাসায় অনেক বার ঘুড়তে গিয়েছি। তার বাবা আর মা আমাকে অনেক পছন্দ করেন। বাসায় গেলেই ভাত না খাওয়ায় ছাড়তেন না। অহনা নিজে বেড়ে খাওয়াতো আমাকে। দেখতে ভালই লাগত।

এভাবে করেই আমাদের মধ্যে একটা পরিচ্ছন্ন সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। যা অন্যদের কাছে ঈষর্ণীয় ছিল। আমারা এটা বেশ উপভোগ করতাম। এভাবে চলতে চলতেই অহনার প্রতি আমার ভালবাসার জন্ম হয়। অহনা সেটা বুঝে কি না আমি জানি না।

তবে সে আগের থেকে এখন আমাকে বেশি কেয়ার করে যা আমার সন্দেহ কে আরো ঘনীভুত করে। ইদানিং সে আমার চোখ এ চোখ রেখে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। যখন খুব ভাল বন্ধু ছিলাম আমরা তখন চোখ এ চোখ রেখে কথা বলতে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন কেন জানি সে পারে না। সেদিন প্রথম বারের মত আমার বাসায় তাকে দুপুরের খাবার এর জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলাম।

সে তা গ্রহণ করেছিল তবে বেশ খানিক ক্ষন চিন্তা করে। তার এই চিন্তা ভাবনা করার বিষয়টা আমাকে অবাক করেছিল। দুপুর যখন ২ টা বাজে তখনই কলিং বেটা বেজে উঠল। দৌড়ে যেয়ে দরজা খুলে দেখি অহনা দাঁড়িয়ে। অসাধারণ লাগছে আজকে তাকে।

নীল পারের সুতি শাড়ি পরে এসেছে সে। আমি কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম হা করে। পরে অহনা আমার গালে একটা চিমটি কেটে আমার সৎবিৎ ফিরালো। আমি খানিক লাজুক ভঙ্গি করে তাকে আসতে বললাম ভিতরে। সে এসে বসলো সোফায়।

কথা চলছিল সমান তালে। কি জানি আমার কি হল। আসতে করে ঊঠে দাঁড়িয়ে অহনার সামনে যেয়ে তার চোখ এ চোখ রেখে বললাম আমি তোমাকে ভালবাসি। এতে সে অবাক হয়ে অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। পরে কিছু না বলে আমার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিল।

পিছন থেকে ডেকেও অহনা কে থামাতে পারলাম না। দ্রুত সে চলে গেল। চিঠি টা খুলবো কি না এমন চিন্তা করতেই করতেই খুলে ফেললাম। খুলে যেন পুরো শরীর শিহরিত হল আমার। অহনা আমাকে ভালবাসে অনেক আগে থেকেই।

সেই প্রথম দেখার পর থেকেই। কিন্তু মেয়ে বলে আমাকে সে এতদিন বলতে পারে নি। আমার কাছ থেকেই শুনতে চেয়েছিল। আমি বলতে দেরি করাতে সে আজকে চিঠি লিখে নিয়ে এসেছিল আমাকে দেয়ার জন্য। তার বাবা মা ও আমাকে পছন্দ করেছে জামাই হিসেবে।

এসবই লেখা ছিল চিঠি তে। তখন ই আমার মোবাইলে একটা এস এম এস আসল। অহনা দিয়েছে। সেখানে লেখা - love u 2

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।