আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাছের প্রতি ভালোবাসা

আমি একজন নিরিহ মানুষ

গাছের প্রতি ভালোবাসা তাহমীদ আবরার গাছ আমাদের জীবন ধারনে সাহায্য করে। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয় এবং আমাদের দোষিত বায়ু বক্ষন করে আমাদেরকে মুক্ত ভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে। গাছ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারেনা। তাই গাছের প্রতি আমাদের ভালোবাসা একান্ত কর্তব্য। ফুয়াদ।

ছোট্ট, শান্ত এবং মিষ্টি একটি ছেলে। প্রাইমারী স্কুলে ক্লাশ থ্রীতে পড়ে। শার্ট এবং লুঙ্গি পড়ে স্কুলে যায়। সবাই বলে ফুয়াদ মেধারী ছাত্র। যদিও ক্লাশে রোল এক বা দুই নয়, সাত তার রোল নম্বর।

লেখাপড়ায় খুব মনোযুগী। পড়তে বসলে পড়বে, খেলতে গেলে খেলবে। অর্থাৎ পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলাই তার প্রতিদিনের রুটিন। বাবা চাউলের ব্যবসা করেন। মা গৃহিনী।

সে মা বাবার ছোট ছেলে, তার একটি বড় ভাই আছে। সে ছোট বলে বাবা-মা এবং ভাই তাকে খুব আদর করে। তাদের একটি নতুন বাড়ি আছে, যেখানে মা বিভিন্ন শাক-সবজি লাগিয়ে সংসারে সহযোগিতা করেন। যদিও এটা মায়ের খুব সখের কাজ। সখের কাজ করতে গিয়ে সংসারের সহযোগিতা হয়।

ফুয়াদ আরো ছোট থাকতেই মায়ের সাথে সেখানে আসা-যাওয়া করে। মা শাক-সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন রকম গাছ-গাছালি লাগিয়েছেন। যেমন বড়ই, কড়ই, মেড্ডা, টিগ্গিলা, মান্দাসহ আরো অনেক গাছ। এগুলো ফুয়াদও দেখা-শোনা করে। দেখা-শোনা করতে করতে গাছের প্রতি তার এক প্রকার মায়া হয়ে গেছে।

ফুয়াদের বাবা হঠাৎ করে এক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। বহু চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজে আসেনি। ফুয়াদের বাবা ধুমপায়ী। প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০টি সিগারেট খান।

চা, সিগারেট তার খাবারের প্রথম তালিকায়। ঘুম থেকে ওঠে প্রথমেই একটি সিগারেট খেয়ে তারপর অন্য খাবার বা অন্য কাজ করেন। ডাক্তার আগেই বলেছিল, আপনি সিগারেট খাওয়া না ছাড়লে কোন এক সময় হঠাৎ করে বিপদে পরবেন। ডাক্তারের কথা তিনি আমলে আনেননি। হঠাৎ করে অসুস্থ্য হওয়ার পর ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন, প্রচুর ধুমপান করার ফলে ফুসফুস ছিদ্র হয়ে গেছে।

তাই আপনার ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় এই অজানা রোগের উৎপত্তি। আবার কবিরাজের কাছে যাওয়ার পর কবিরাজ বলেন, জ্বীনে ধরেছে। কিন্তু নির্ধারিত ভাবে কেউ রোগ নির্নয় করতে পারছেন না। বাবার এরকম অজানা রোগের কারনে ফুয়াদের লেখাপড়ায় বিরতি টানতে হয়। ক্লাশ ফোরে ওঠে আর স্কুলে যাওয়া হয়টি ফুয়াদের।

দীর্ঘ তিন বৎসর বাবা অসুস্থ্য থাকেন। এরপর আস্তে আস্তে এমনিতেই ভালো হয়ে যান। বাবা ভালো হয়ে যাওয়ার পর ফুয়াদকে ভর্তি করা হয় মাদরাসায়। মাদরাসার কড়া নিয়ম, কঠিন রুটিন ফুয়াদের জীবনকে নতুন পরিক্রমায় আবদ্ধ করে ফেলে। তারপরেও প্রতিদিন আছরের নামাযের পর থেকে মাগরিদের আযানের আগ পর্যন্ত খেলাধুলা বা ঘুরা-ফেরার জন্য সময় দেওয়া হয়।

তার সাথের ছেলেরা এ সময়ে খেলাধুলায় মেতে ওঠে, কেউবা ঘুরতে বের হয় নদীর পাড়ে, ঝিলের দ্বারে। ফুয়াদ যায় তার গাছের কাছে। সে লেখাপড়ার ফাকে ফাকে যেই সময়টুকু পায় সেই সময় কাটিয়ে দেয় গাছের যত্নে। মায়ের সাথে সাথে সেও অনেক নতুন গাছ লাগিয়েছে। যেমন- কাঠাল, আম, ঝাম, লেবু, মেহগনি, আকাশি, শিশু, পেয়ারা, বড়ই, তুলা ও দেশি-বিদেশি আরো অনেক গাছ।

সে তার নিজের জীবনের মতোই ভালোবাসে গাছগুলিকে। গাছও যেন তাকে দেখে প্রাণ ফিরে পায়। প্রতিদিন লেখাপড়া শেষ করে বিকালে সবার আগে গাছের কাছেই আসে। মনে হয় গাছও তার অপক্ষোয় বসে থাকে পথ চেয়ে। এসেই প্রথমে গাছের গায়ে হাত বুলায়।

পানি দেয়। ছোট ছোট ডাল কেটে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। এতো যত্ন, এতো ভালোবাসা গাছের প্রতি তার। কেউ গাছের পাতা ছিড়তে পারেনা, তাকে না বলে। গাছগুলোর জীবন-মরনের দায়িত্ব যেন পুরোটাই বিধাতা তার কাছে দিয়েছেন।

মনে হয় গাছের ভাষা সে বুঝে ফেলেছে। গাছ তার কথা মতোই চলে। একদিন হলোকি! তার এক চাচী তাকে না বলে একটি ছোট্ট বড়ই গাছের ডাল ছিড়ে নিয়ে যায়। এমন ভাবে ডাল ছিড়েছে গাছটির পুরো গা ছিলে গেছে। সে প্রতিদিনের মতো আজো বিকালে গাছের কাছে এলো, এসে দেখে ছোট্ট বড়ই গাছটির একটি ডাল নেই।

কেউ ছিড়েছে। এমন ভাবে ছিড়েছে গাছটি যেন তার দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। এ দৃশ্য দেখেতো তার মাথা গরম হয়ে গেল। সে দৌড়ে মায়ের কাছে এলো এবং মাকে জিজ্ঞেস করল, কে আমার গাছের ডাল ছিড়েছে? মা বলল, জানিনা। মায়ের জানিনা কথাটা শুনে তার মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেল।

সে রেগে গিয়ে বলে ওঠল, কে সেই চোর, যে না বলে গাছের ডাল চুরি করল! চোর শব্দটি শুনে তার চাচী গর্জন দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো এবং ফুয়াদকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন কটুক্তিমূলক কথা বলতে থাকলো। এক প্রকার ঝগড়াই হয়ে গেল। ফুয়াদ চোরের ব্যাখ্যা দিয়ে বলল, যে এক টাকা চুরি করে সেও চোর আর যে লাখ টাকা চুরি করে সেও চোর। গাছের ডাল হোক আর স্বর্ণের জাল হোক, মালিককে না বলে নিলে তাকে চোর ছাড়া আর কি বলা যায়? ফুয়াদের বাবা এসে তাকে বুঝিয়ে বাড়ি থেকে মাদরাসায় দিয়ে আসলেন। ফুয়াদ ভুলতে পারছেনা গাছের কথা।

পড়ায় তার মন বসছেনা। বারবার গাছের কথা মনে পড়ছে। তার চাচী ফুয়াদের কথা শুনে রাগে গাল ফুলিয়ে বসে আছেন। তার একটি চাচাতো ভাই আছে যে একটু দুষ্ট প্রকৃতির। নাম রাফি।

মানুষের ক্ষতি করতে তার মোটেও হাত কাঁপেনা। আর সেইখানে গাছের ক্ষতি করা তারতো কোন ব্যাপারই না। সেই চাচাতো ভাই ঘরে এলে চাচী ইনিয়ে বিনিয়ে তাকে বলে, আমি সাধারণ একটি বড়ই গাছের ডাল ছিড়ে এনেছি, তাতেই আমাকে এই ফুয়াদ ছেলেটা যা শুনালো। চোর বলে গালিও দিল। রাফিতো রাগে ফেটে পরছে।

সে নাপারে এখনই ফুয়াদকে গিয়ে মেরে আসে। রাফি রাগকে কন্ট্রোল করে মনে মনে স্থির করলো, গাছের জন্য মাকে গালি দিয়েছে, এই গাছই রাখবনা। সব গাছ কেটে ফেলব। শয়তানের মনে শয়তানি। রাত গবীর হলে সে চাকু নিয়ে ফুয়াদদের নতুন বাড়িতে মোটামোটি ছোট-মাঝারী যত গাছ ছিল সব কেটে মাটিতে ফেলে দিল।

ফুয়াদ সারারাত গাছের চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি। শুধু ছটফট করেছে। এ কাত থেকে ও কাতে শুয়ে কোন রকম রাত পার করেছে। সকাল হওয়া মাত্রই অসুস্থ্যতার কথা বলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে আসল। বাড়িতে আসার পর দেখে তার মা কাঁদছে।

মাকে জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলেননা। মাকে নিস্তব্ধ দেখে সে চলে গেল নতুন বাড়িতে। ওখানে গিয়ে দেখে তার মায়া ভরা গাছ গুলো লাশ হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। গাছের বাগান বিরান হয়ে গেছে। ফুয়াদ ওখানেই কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গেল।

মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এসে তাকে বাড়িতে নিয়ে এলো। বাড়িতে আসার পর তার বাবা তাকে বকা দিয়ে বলল, তুমি চোর বলে গালি দিয়েছ বলে আজ তোমার সব গাছ কেটে লাশ করে দিয়েছে। এই বলে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো তার বাবা। মা-বাবাসহ ফুয়াদ এমন ভাবে কাঁদতে শুরু করলো, যে কারো মনে হবে তাদের বাড়িতে কোন মানুষ মারা গেছে। সেই শোকে তারা সবাই এমন ভাবে কাঁদছে।

তাদের কান্না দেখে বাড়ির সকলের চোখেই পানি চলে এলো। কেউ কেউ কেঁদেও ফেলল নিজের অজান্তে। গাছের প্রতি ফুয়াদের এই ভালোবাসা সত্যিই ভুলার মতো নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।