আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালোবাসা ও একাধিক সিম - বন্দী সেনার মুক্তির অপেক্ষা



"চায়নিজ মোবাইল সেট গুলোয় যদি ৫ টা সিম ঢোকানো যেত ! আমার নোকিয়ায় কেন যে দুইটা সিম ঢোকানো যায় না ! দুইটা সিম একসাথে ব্যবহার করতে না পেরে আমার প্রেম গেলো ভেঙ্গে। মাত্র ৩ মাসের পরিচয় দোস্ত । প্রেমের বয়স ২৩ দিন । " - কথা গুলো বলছিলো গতকাল আমার এক বন্ধু। ও যখন কথাগুলো বলছিল তখন তার গলা কাপছিলো ।

আমি লক্ষ্য করেছি । এরপর ওর কাছে অনেক কিছুই শুনলাম । যদিও সে বার বার বলতেছিল যে সব দোষ তারই, কিন্তু পুরো ঘটনা শুনে আমি মেয়েটাকে সাধু বা নির্দোষ বলতে পারছিনা । বাপ্পীর প্রথম পিতু এর সাথে পরিচয় facebook এ। এক মামার facebook একাউন্ট খুজঁতে গিয়ে , কাছাকাছি নামের এক মেয়ের profile পেয়ে যায়।

profile এর ছবি বাপ্পীকে রোমাঞ্চিত করে তোলে। বাপ্পী আবার কন্যা রাশি আমার মত , তাই সে কেনো জানি হুট করে পিতু কে facebook এ বন্ধু হতে আমন্ত্রন জানায় , পিতুও সাড়া দেয় তার ডাকে। এভাবেই দিনে ১-২ টা করে mail , status এ comment করে তাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছিলো । দুজনে facebook mail এ অনেক কথা, তাদের পছন্দ , তাদের কাহিনী, প্রতিদিনের কাজ সব কিছুই শেয়ার করতো। বাপ্পী অনেক কিছু করে বেরানো ছেলে, তার মেলা মানুষের সাথে উঠা বসা।

প্রতিদিন অনেক মানুষ তাকে ফোন করে। তাই সে সব সময় একই সিম ব্যবহার করে। আমি নিজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি ৭ বছর। এর মধ্যে ৪-৫ টা সিম বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবহার করেছি । কিন্তু বাপ্পীকে আমি ১টা সিম ৪ বছর ধরেই ব্যবহার করতে দেখছি ।

একদিন বিকেলে একটা ফোন ২ মাস আগে - > হ্যালো >> হম আপনি বাপ্পী > জি । কে বলছেন প্লিজ ? >> আপনি > জি বলুন >> আমি পিতু > আরে তুমি !! তুমি তো আমাকে বলছিলা তুমি কোনদিনো ফোনে কথা বলবে না । আজ কি হল ? >> জানিনা। তুমি অনেক দিন বলেছিলে , আজ ইচ্ছা হল তাই দিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে কখনো এই ফোনে কল দিবে না।

প্লিজ। > আচ্ছা বাবা দিবনা । তবে মেসেজ দিব । না করলেও দিব। >> এখন > আমি জানি তোমার রাখতে ইচ্ছা করছে না ।

>> হম কিন্তু কথা আজ আর না। রাখি । >> বাই । এভাবে বেশ কয়েকদিন চলতে লাগলো। দিনে মেসেজ , রাতে হয়তো মিসড কল মিসড কল খেলা ।

বাপ্পী আর পিতু একে অপরের দিকে জড়িয়ে পরতে লাগলো ক্রমাগত। বাপ্পীর অনেক অনুরোধে পিতু এরপর অনেক রাতেই কথা বলতো । কথায় কথায় তাদের রাতো কেটে যেত। মজার ব্যপার হল তারা একই কোম্পানির সিম ব্যভার করতো। বাপ্পী FnF করে নিল পিতুর নম্বর।

বাপ্পী বেশির ভাগ সময় ফোন দিত , কারন পিতুর ফোন দিতে কিছু সমস্যা ছিলো । তবে চান্স পেলে পিতু নিজেই ফোন দিত বাপ্পিকে। বাপ্পি নয়া প্রেমে হাবুডুবুতে বিরাট অবস্থা । দিনে কাজ করে , রাতে চলে কথা । কথার নেই শেষ ।

২-৩ ঘন্টা কথা বলে ফোন রাখার পর মন বলে ওঠে - ইসস । এতো তারাতারি রেখে দিলাম কেন ? ওর মনের অবস্থা তখন আমার লেখা একটা কবিতার মত । কবিতার ৪ লাইন পরার পর হয়ত সবাই বুঝতে পারবে ওর মনের অবস্থা। তোমাকে দেখবো বলে এখন আমি আর আকাশ দেখিনা- তোমাকে ছুয়ে দিব বলে এখন আর স্বপ্ন বুনিনা - তোমাকে পাবো বলে , পেনসিল রংতুলি একা বসে থাকে- তুমি আমার ভেবে সবকিছু রঙ্গিন লাগে - পিতু অষ্টাদশী । তার মনে নতুন রঙ জেগে উঠেছে ।

তবে পিতুর মেসেজ গুলা পরে আমার কাছে পিতু কে অনেক বেশি চালাক মনে হয়েছে । আর একটা জিনিস মনের ভিতর ঘুরপাক খেয়ে ফেনিয়ে উঠছিলো যে , এই মেয়ে অনেক বেশি কল্পনা প্রবন। এই টাইপ মেয়েরা নিজে নিজে অনেক বেশি কিছু চিন্তা করে, নিজের মত করে সব কিছুর বাছবিচার করে, ফলাফল নিজের মত করেই ভেবে নেয়। এরা যখন কাউকে মাথায় তুলে তখন মাথায় নিয়ে লাফায় , আবার যখন কিছু নিয়ে তার সাথে মতের বনি বনা না হয় তখন এরা আগুনের শিখা হয়ে যায়, যা খুশি তাই করে , কাউকে ত্যাগ করতেও পিছপা হয়না। আমি নারী বিশারদ নই , কিন্তু আমি অনেকের সাথে মিশেছি , সেই খান থেকে যে শিক্ষা আমি পেয়েছি তা মাথায় ধরে রাখার চেষ্টা করেছি ।

যদি কন্দিন কাজে লাগে এই আশাতে। পিতুর মেসেজ গুলো পরে আমার মনে হয়েছে সে তখন electronic signal এর ভাষায় rise time এ , বাংলায় বললে বলেতে হবে বৃহস্পতি তুঙ্গে- আবারো আমার খেয়ালে ৪ লাইন অসীম কে সীমানা করে আকাশের তারা গুনি - তোমাকেই সত্ত্বা , তোমাকেই আলো জানি - একজন নৌকো, একজন তার হাল, ভালোবাসা গুন টানে - স্মৃতির পাতায় ধুলো জমে যায় , তবু কথা চলে দুরালাপনে - রাশি চক্রে অনেক বেশি বিশ্বাস পিতুর । তার দিন নাকি সেভাবেই চলে। পিতুর হটাত করে যে কি হল , সে আরেকটা সিম কিনে ফেললো। বাপ্পির সুবিধার জন্যে সে রাতে যখন কথা হত তার আগেই ১নং সিম ঢুকিয়ে রাখত ।

বাপ্পির পক্ষে একাধিক সিম ব্যবহার তখন সম্ভব ছিলনা। সেটা বুঝতে পেরেই পিতু সব কিছু আপন মনে সহজ করে সাজিনে নিয়ে এগিয়ে যাছিলো। কতদিন তাদের নাকি দিনের বেলায় ল্যান্ড ফোনেও কথা হত। আমি তখন কিছুটা শুনে একদিন বাপ্পি কে mail করে জানতে চাইলাম - কিরে দোস্ত বিয়ে কবে খাচ্ছি । বেচারা বাপ্পি বলেছিল - পিতু যখন চাইবে ।

বাপ্পি হয়ত নিজেও জানতনা যে সে কতটা পছন্দ করে পিতু কে । পিতু নিজের দুনিয়ায় মাখন লাগিয়ে পিছলা করে scatting খেলতো তখন বাপ্পিকে নিয়ে। বাপ্পিও তার উপযুক্ত সঙ্গ দিতে পারতো বলেই আমার মনে হয় । পিতু প্রায়ই বলে বলত বাপ্পি কে - তুমি থাকলে আমি তারের উপর দিয়েও হাটতে পারবো। -যদি কখনো আমি কোথাও চলে যাই -তোমাকে আমি যেতে দিলে না তুমি যাবে ।

এক্কেবারে বেধে রাখব। -যদি কখনো কষ্ট দেই -দিলে দিছ তাতে কি ? আমার বাপ্পি কে আমি জানি । যদি দিয়েও ফেলো সেটা যে ভুল করে তা আমি জানি । - যদি কখন তুমি চলে যাও ? - হম সম্ভাবনা তো আছেই । জীবন মরন তো খোদার হাতে তাই না।

যখন চলে যাব তুমি আমার পাশে থেকো বাপ্পি। -ছি এগুলো কি বল ! চুপ থাকোত হুম এভাবে চুপচাপ কেটে যায় সময় । আসে নতুন ভোর , চলে যায় দিন , মোবাইলের মেসেজ টোন সুর তোলে you have got a message !! , নেমে আসে সন্ধ্যা আকাশ এ , পৃথিবীতে ঢেকে যায় কালো অন্ধকারে । মনের ভিতরে গ্রামীন ফোনের নয়া জিঙ্গেল বাজে - কই রইলা রে বন্ধু , কই রইলা রে । মনে মনে অবারিতো আকাশের মতি অপেক্ষায় দুইজন ।

একজন সময় গুনে কখন ১নং সিম করবে এক্টিভ , আরেকজন ফোন হাতে নিয়ে অস্থির সময় কাটায় । অনুভবে পিতু এনে দিয়েছে ভালোবাসার কাঙ্খিত এক রুপ বাপ্পিকে । এ ছোয়াকে অগ্রায্য করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে আজ বাপ্পি জীবনের অনেক বসন্ত পেড়িয়ে এসে আজ সে পিতুর ভালোবাসায় নিজেকে করেছে উজার । পিতু নিজেকে করেছে সর্বহারা , নিজেকে বাপ্পির কাছে সপে দিয়েছিলো মানসিক ভাবে । হয়ত গভীর রাতে বাপ্পিকে সে তার স্বামী রুপেই কল্পনা করতো।

বাপ্পি হটাত করে তার কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরল। পিতু বাপ্পির বাসার কাছেই এক আত্মীয়ের বাসায় আসলো এক সপ্তাহ আগে । বাপ্পি দেখা করতে চাইলো। পিতু দেখা করবেই না। এক পর্যায়ে রাজি হয়ে গেল পিতু ।

সে সরাসরি দেখা করবে না, পার্কের কোন জায়গায় তার ফ্যামিলি নিয়ে যাবে তা বলে দিলো , কখন যাবে মোটামুতি তাও বলে দিলো । বাপ্পি মহা উত্তেজিত। সে ২ ঘন্টা আগে থেকেই গিয়ে হাজির। পিতু কে সে ক্রমাগত ফোন দিয়েও পাচ্ছে না। তার ২টা সিম বন্ধ।

সারাদিন অপেক্ষা করার পর বাপ্পি মহারাগ নিয়ে বাসায় চলে আসলো। পিতু যখন তার আত্মীয়ের বাসায় গেল তখন সে তার দুটা সিম নিয়ে গিয়েছিলো। বাপ্পি হাজারো অনুরোধেও তার ১নং সিম অন করাতে পারলোনা । পিতুই শুধু জানে যে সে কেন ২নং সিম নিয়ে মহা উৎসাহি । ৩-৪ দিন ধরে নানা বিষয় নিয়ে চলতে থাকে বাপ্পি আর পিতুর মতের পার্থক্য।

পিতু নিজের বাসায় চলে যায় । বাপ্পি তখন তাকে আবারো ১নং সিম অন করার জন্যে বলে , কিন্তু পিতু খেপে যায় । মহাক্ষেপা । বাপ্পি কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা । অনেক উলটাপালটা চিন্তা তাকে গোগ্রাসে গিলে খায় ।

মনে তার ঈর্ষা , ক্রোধ ১৩ নম্বর বিপদ সীমার উপরে। সেও আজে বাজে কিছু কথা বলে দেয় পিতু কে। পিতুর এই সপ্তাহের রাশি ফল হল , নিন্দার কাঁটাকে ফুল ভেবে লাভ নাই । আপনি নির্দোষ তাই প্রমান করুন । রাশিফল তো পত্রিকায় ছাপা হয় গড় করে।

এখানে যা হবে তাই করতে হবে তার কি কোন মানে আছে ? পিতু এর আগে অনেক বার অনেক কারনে শুধুই বাপ্পির জন্যে সিম বদলেছে , আজ সে এগুলোর কোনকিছুই মনে করতে চায় না , এর পিছনে অন্য কিছু আছে এটা ভাবা কি খুব অমুলক ? যে মেয়ে একদিন বাপ্পির সাথে কথা না বললে রাগ করতো সে আজ মুখের উপর বলে দেয় তুমি আমাকে আর ফোন করবে না। এটা যে শুধুই সিম বদলানো নিয়ে তা তো নয় । অন্য কারন অবশ্যই আছে । আর যদি পিতুর অভিযোগ করে যে সে কোনক্রমেই সিম বদল করতে পারবে না এর কারন বলেতেও সে বাধ্য নয় , তাহলে কি ধরা যায় না যে সে নিজের টাই বেশি বুঝছে , তার আতে একটু ঘা লেগেছে । এখন যে তার electronic signal simulation এ fall time তা না বুঝে সে ভুল বুঝে বসল বাপ্পি কে ।

বিদেশে আমি যতটুকু জানি একাধিক সিম ব্যবহার করা যায় না। আমি বিদেশ বলতে ইউরোপ - আমেরিকার কথাই বলেতেছি । প্রতিটি নাগরিকের সেল নম্বর সংরক্ষিত থাকে । এর মাঝেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটে , কিন্তু সেটা কম । এককালে আমি নিজে ৪০ টাকায় সিম কিনেছিলাম ।

এখনতো ১৪৯ টাকায় সিম কিনলে ১৫০ টাকা ফ্রি । সাথে ৫০০ sms । আররে কি মজা। একে বলা যায় মজ্জাই মজা । আজ বাপ্পি স্মৃতি গুলা নিয়ে বসে আছে ।

পিতুর অনেক ছবি এখন তাকে বন্দী করে রেখেছে । পিতু কি পারেনা তার ভুল বুঝে সেই ভুল কে ফুল বানিয়ে বাপ্পিকে দিতে। ভুল বাপ্পি করেছে , সে জন্যে সে sorry বলেছে পিতুর কাছে । কিন্তু পিতু তার স্বভাবসুলভ এখন বিপরিত মেরুর বাসিন্দা হয়ে উড়ে বেরাচ্ছে । সে নিজের মত করে অনেক কিছু ভেবে নেয় ।

সে যখন বাপ্পিকে বলছিলো আমি তোমাকে মুক্তি দিতে চাই , তখন আমার মনে হচ্ছিলো পিতু নিজেই মুক্তি চায় , আর সেটাই সে বাপ্পির কাছ থেকে চড়াদামে আদায় করে নিচ্ছে । বাপ্পি তুই এলেখা পড়েই আমাকে ফোন দিবি তাও জানি । কিন্তু কথা হল যে নিজে নিজের মত অনেক কিছু ভেবে নিয়ে , নিজের ইচ্ছা মত তোকে কাদিয়ে আজ ঈদের পরদিন ফানুস উড়াচ্ছে ? তার কাছে মুক্তি চাওয়ার কিছু থাকে ? পিতু তোকে কোনদিনো ১ মুহুর্তের জন্যে ভালোবেসে থাকেলে সে নিজেই ফিরে আসবে । definitely আসবে। আর তার সবকিছুই যদি হয় ভালোবাসাকে মূল্য না দিয়ে রাশিফল কে ঘিরে , তাহলে বন্ধু গেয়ে যাও একলা ছিলাম , একলা রবো- একলা আছি , একলা ভালো - প্রিয়তমা , তুমি সুখে থাকো ধন্যবাদ সবাইকে ।

[বিঃদ্রঃ পিতু ও বাপ্পি কে ব্যক্তিগত ভাবে যদি চিনেও থাকেন পাঠকদের কেউ , সেটা comments এ উল্লেখ করবেন না। বাপ্পির কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এ লেখা publish করা হচ্ছে। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.