আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাফিসের ধারণা ছিল, সাজা হবে ২০ বছর

তবে ব্রুকলিনের ফেডারেল আদালতের বিচারক ক্যারল আমন শুক্রবার যে রায় ঘোষণা করেছেন, তাতে নাফিসকে আমেরিকার কারাগারে কাটাতে হবে ৩০ বছর। তার সাজা গণনা শুরু হবে গ্রেপ্তার হওয়ার দিন, অর্থাৎ গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে।
মুক্তির পর বাংলাদেশি এই যুবককে দেশে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ। তবে যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন ততদিন তাকে কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে থাকতে হবে বলে রায় দিয়েছেন বিচারক।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ না থাকলেও শাস্তি নিয়ে কিছু বলার থাকলে নাফিসকে ১৪ দিনের মধ্যে দরখাস্ত দিতে বলেছেন বিচারক।


তবে নাফিসের পক্ষে আদালত নিযুক্ত আইনজীবী হেইডি সিজার জানিয়েছেন, তারা আপিল করবেন না।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ ও এফবিআইয়ের কথিত ‘স্টিং অপারেশনে’ গতবছর ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন নাফিস। তার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, এক হাজার পাউন্ড বিস্ফোরক দিয়ে তিনি ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ভ্যানে ‘সত্যিকারের বিস্ফোরক’ না থাকায় সেটি আর ফাটেনি।
২২ বছর বয়সি নাফিসের গ্রেপ্তারের খবরে সে সময় সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নাফিস গত ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে দোষ স্বীকার করে নিলে ৯ অগাস্ট রায়ের দিন রাখে আদালত।


রায়ের নির্ধারিত দিনে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে পিনপতন নিরবতার মধ্যে বিচারক এজলাসে প্রবেশ করেন। এর পরপরই আলাদা দরজা দিয়ে আদালত কক্ষে নেয়া হয় নাফিসকে। তিনি বসেন ফেডারেল ডিফেন্ডার (নাফিসের পক্ষে আদালতের নিয়োগ করা আইনজীবী) হেইডি সিজারের পাশের চেয়ারে।
আর তাদের সামনে বসেন এ মামলা পরিচালনার নেতৃত্বে থাকা সহকারী এটর্নি জেমস লুন্যাম।
দর্শক গ্যালারিতে ছিলেন এফবিআই ও নিউ ইয়র্ক পুলিশের সেই সদস্যরা, যারা জঙ্গি সেজে নাফিসকে বোমা হামলায় সহযোগিতা করার অভিনয় করে ফেডারেল রিজার্ভের সামনে ফাঁদ পাতেন।


নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম, কয়েকজন মানবাধিকার আইনজীবী এবং চার বাংলাদেশিসহ ডজনখানেক সাংবাদিকও আদালতে উপস্থিত ছিলেন রায় দেখার জন্য।
নাফিসের আইনজীবী হেইডি সিজার সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বয়স বিবেচনায় ২০ বছরের বেশি শাস্তি না দেয়ার আবেদন জানান বিচারকের কাছে। নাফিসের মায়ের পাঠানো একটি আবেদনও তিনি তুলে ধরেন।
বিচারকের সহানুভূতি টানতে ঢাকায় নাফিসের শৈশবের কিছু পরিস্থিতি আদালতে উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী। তিনি বলেন, সেখানে খেলার কোন মাঠ নেই, ভাল বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগও নাফিসের হয়নি।

এসব কারণে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
“তার মা-বাবা সবসময় চেয়েছেন তাদের মেধাবি এ সন্তানটি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক। গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রায়ই তারা টেলিফোনে কথা বলেছেন। অর্থাৎ, পারিবারিক একটি বন্ধন তাকে নিবিড়ভাবে আঁকড়ে রেখেছে। এমন মানুষের পক্ষে বড় ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হওয়া সাধারণত সম্ভব হয় না।


“তারপরও যে কোনো কারণেই হোক নাফিস যে মারাত্মক অপকর্মে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন তা দণ্ডনীয় অপরাধ। নাফিস তা নিজেও স্বীকার করেছেন। নাফিস এখন ভাল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চান। তাকে সে সুযোগ দেয়া উচিত। ”
এই আইনজীবী বলেন, নাফিস কখনোই আল কায়েদার সদস্য ছিলেন না।

তবে তাদের কাজ তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেমস লুম্যান বলেন, নাফিস যে ‘জঘন্য অপকর্মে’ লিপ্ত হয়েছিলেন তা মারাত্মক অপরাধ। তার ওই হামলা সফল হলে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিহত হতো। সম্প্রতি বস্টন ম্যারাথনে যে ধরনের বোমা হামলা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতার বিস্ফোরক ফাটানোর চেষ্টা করেছেন নাফিস।
স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগেই নাফিস এ ধরনের সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন সহকারী অ্যাটর্নি লুম্যান।


তিনি নাফিসকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার আবেদন জানান।
ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ইসলামিক উগ্রপন্থী কয়েকজন সহপাঠীর চিন্তাভাবনা তার ওপর প্রভাব ফেলেছিল- এ কথা নাফিসও আদালতে স্বীকার করেন।
সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত লজ্জিত, দুঃখিত, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি সত্যিই দুঃখিত যে, উগ্রপন্থী ইসলামিক আদর্শে ধাবিত হয়েছিলাম।
“একইসাথে আমি খুবই কৃতজ্ঞ, আমি যে মারাত্মক অপকর্ম ঘটানোর চেষ্টা করেছিলাম, তাতে সত্যিকারের বিস্ফোরক ছিল না।


“আমেরিকানদের কাছে, আমার অভিভাবকদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী; আমি তাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছি। আমাকে মাফ করে দেবেন।
“আমি মাননীয় আদালতের কাছে নিবেদন করছি, আমাকে ক্ষমা করে দিন। নতুন জীবন শুরুর সুযোগ দিন। ”
এই রায়ের আগে গত ৩১ জুলাই কারাবন্দি নাফিস বিচারককে একটি চিঠি লিখে তাকে ক্ষমা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।


চিঠিতে নাফিস লেখেন, তিনি একটি ‘বিরাট ভুল’ করেছিলেন এবং ওই সময় মানসিকভাবে বিপর্যন্ত ছিলেন তিনি।
নাফিস দাবি করেন, ছোটবেলার তোতলামির সমস্যা, লেখাপড়ায় ভাল করতে না পারা, ভাগ্যান্বেষণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও সফল হতে না পারা এবং মনের মানুষের বিশ্বাসভঙ্গের হতাশাই তাকে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
তবে রায় শোনার পর নাফিস ছিলেন অনেকটাই ভাবলেশহীন।
তার আইনজীবী জানান, প্রথম থেকেই তদন্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা দিয়ে আসছেন বলে নাফিস আশা করেছিলেন, তার সর্বোচ্চ ২০ বছর সাজা হবে।
রায় ঘোষণার পর আদালতের বাইরে হেইডি সিজার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব না।


এ সময় তার পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ সরকার নাফিসকে আইনি সহায়তা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তা নেননি; হেইডি সিজারের পরামর্শ নেয়াই ভাল বলে মনে করেছেন। ”
নাফিসের পরিবারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ এবং ঢাকা কলেজে পড়াশোনার পর নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।
২০১২ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান বা-মার একমাত্র ছেলে নাফিস। মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে পড়াশোনা করতে যান তিনি।


কিন্তু ওই কোর্স শেষ না করেই জুনের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে একটি টেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হন নাফিস।   এই কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায়ই গ্রেপ্তার হন তিনি।
এরপর গত ১৫ নভেম্বর গ্র্যান্ড জুরি নাফিসের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তাদের দেয়া অভিযোগপত্র অনুমোদন করে। এতে ‘ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্যে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা’ এবং ‘একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার চেষ্টার’ অভিযোগ আনা হয়। এর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।


গত ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে দোষ স্বীকার করে নাফিস বলেন, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত তিনি তছনছ করে দিতে চেয়েছিলেন।
অবশ্য গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় নাফিসের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার।
এর আগে ২০০৭ সালে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এহসানুল সিফা সাদেকীকে (২৭) একই ধরনের অভিযোগে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় মার্কিন আদালত।  
এরপর নিউ ইয়র্কের আস-সালাম মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের নোয়াখালীর সন্তান মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় ২০০৮ সালে।
এফবিআইয়ের পাতা ফাঁদে গ্রেপ্তার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে বিচার হয় তার।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.