আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলাম : ব্রাহ্মণবাড়িয়া দৃষ্ঠান্ত

আমি একজন পাঠক ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলাম মানুষ খুন, পুড়িয়ে মারা, সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও, হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ কোন কিছুকে সমর্থন করে না। আর যারা ইসলামের প্রকৃত প্রচারক, ধর্মযাজক, মানুষের কাছে যারা ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন তারা কখনও হিংস্রতার আশ্রয় নেন না। ইসলামে ভন্ডামি, প্রতারনা কিংবা শঠ্তার কোন স্থান নেই। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করে, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে মানুষের কানে ভুল তথ্য দিয়ে ইসলামের অপব্যাখ্যা করে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রশাখা ইসলামী ছাত্র শিবির শুক্রবার সারাদেশব্যাপী যে তান্ডবলীলা চালিয়েছে তাদের এই কর্মকান্ডের সাথে ইসলামের কোন যোগসূত্রই খুঁজে পাওয়া যায় না।

১৯৭১ সালে এই দলটিই ইসলামের দোহাই দিয়ে, ইসলাম রক্ষার কথা বলে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতা করেছিল। তখন তারা বলেছিল, পাকিস্তানকে ভেঙ্গে বাংলাদেশ করা হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্র করার জন্য। আজকে যারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের কাঠাগড়ায় সেই গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহীদ, আবদুল কাদের মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুল আলীম, চৌধুরী মঈনুদ্দীন, আবদুল খালেকসহ তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল। শুধু বিরোধীতাই করেনি, তারা সেদিন আলবদর, আল-শামস,রাজাকার বাহিনী গঠন করে নিজেরা নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। চালিয়েছিল গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজের মত কর্মকান্ড।

আজ বাংলাদেশের বুকে যে তান্ডবলীলা চালানো হল, মা-মাটিকে যেভাবে ক্ষত-বিক্ষত করা হল, সেটি জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন কর্মকান্ডেরই প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছে। ইসলাম গেল, ইসলাম গেল এমন দোহাই দিয়ে গত কয়েকদিনে তারা মানুষকে নানা মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে শাহবাগের নতুন প্রজন্মের আন্দোলনকে ইসলামের বিরুদ্ধের আন্দোলন বলে প্রচার করেছে। আন্দোলনকারীদের ইসলামের শত্রু এবং নাস্তিক বলে প্রচার করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উস্কে দিয়েছে। গত কয়েকদিনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ইসলামী ছাত্র শিবির বিভিন্ন ব্যানারের মাধ্যমে চালানো এসব অপ্রচারে মানুষকে শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে শুক্রবার বাদ জু’মা রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

গত চার-পাঁচ দিনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘাটলে এ তথ্য পাওয়া যায়। একই সঙ্গে সংবাদপত্র নামধারী জামায়াতী দোকান দৈনিক ইনকিলাব, আমার দেশ, নয়া দিগন্ত এবং সংগ্রামের মাধ্যমেও মিথ্যা অপপ্রচার চাালানো হয়। আহ্বান জানানো হয় রাস্তায় নামার। এই ধর্মীয় উম্মাদনার জন্য এরা সরাসরি উস্কানি দিয়েছে। তাদের এসব অপপ্রচারের অন্যতম টার্গেট ছিল শাহবাগের প্রজন্ম আন্দোলনের সূচনাকারী ব্লগাদের বিরুদ্ধে।

ব্লগাররা নাস্তিক, আল্লাহ-খোদা মানে না, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলে ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে এসব কথা প্রচার করা হয়। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ শাহবাগের আন্দোলনকারী ব্লগাররা কখনই ইসলামের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য রাখেননি, কিংবা প্রচারণা চালাননি। জামায়াতীরা নিহত আহমেদ রাজীব হায়দারকে নাস্তিক বলে গত কয়েকদিন ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। অথচ রাজীব আস্তিক ছিলেন না, নাস্তিক ছিলেন সেটা জানার সুযোগ নেই।

কারণ সব কিছুই ঘটছে তার মৃত্যুর পর। আর যদি নাস্তিক হয়ে থাকে সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা নিয়ে দেশকে মৌলবাদীদের সহিংসতা ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়ার কারো কোন এখতিয়ার নেই। আর ইসলামে সুষ্পষ্ট আছে, মৃত ব্যক্তি নিয়ে কোন রকম মিথ্যা প্রচারণা, গিবত করা যাবে না। অথচ এই কাজটাই করেছে ধর্মকে বিক্রি করে খাওয়া জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির এবং কথিত সংবাদপত্রগুলো।

শুক্রবার জু’মার নামাজ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় মসজিদ রাজধানীর বায়তুল মোকাররাম থেকে জামায়াত-শিবির জঙ্গি কর্মকান্ড শুরু করে। প্রথমে তারা কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। এরপর মসজিদ থেকে বেরিয়ে ভয়ঙ্কর সহিংসতা চালায় রাজধানীর পল্টন, প্রেসকাব, মৎস্যভবন, সেগুনবাগিচা, মিরপুর, কাঁটাবন, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। এই সহিংসতাই কিছু সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সিলেট. চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, গাইবান্ধা, ফেনী, পটুয়াখালী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরে।

এসব সহিংসতায় জামায়াত যে কাজটি সুকৌশলে করেছে সেটি হচ্ছে, তারা সমমনা ইসলামপন্থি আরো ১২টি দলকে এই বিক্ষোভ ও সহিংসতায় সম্পৃক্ত করেছে। এক্ষেত্রে তারা কোন রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক ব্যানারে বিক্ষোভ না করিয়ে কোথাও তৌহিদী জনতা, কোথাও ইমাম সমিতি, ধর্মপ্রাণ মুসল্লী, ইসলাম রক্ষা কমিটির ব্যানারে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লী ও বিভিন্ন মাদরাসা ছাত্রদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়। এসব মুসল্লীদের সাথেই জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিশে গিয়ে তান্ডবলীলা চালায়। সিলেটে বাঙালীর অর্ধশত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের উপর আঘাত করে। তারা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভাংচুর করে, শহীদ মিনারে ২১শে’র রাতে শ্রদ্ধা জানানো ফুলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এরপর জামায়াত-শিবির ব্যাপক তান্ডবলীলা চালায় শহর জুড়ে। একইভাবে ফেনীতে শহীদ মিনারে ভাংচুর করে। চাঁদপুরে জামায়াত-শিবির কর্মীরা আমাদের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলে। বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠা জাগরণমঞ্চ ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে জামায়াত-শিবির আরেকবার নিজেদের পূর্ব পরিচয়টি জাতির সামনে তুলে ধরেছে।

অর্থাৎ একাত্তরে তারা যে বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছিল সেই অবস্থান থেকে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও তারা ফিরে আসেনি। তারা বিশ্বাস করে তাদের কাছে পাকিস্তান-ই সব। নতুবা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা কেন তারা ছিঁড়ে ফেলবে? কেন-ই- বা শহীদ মিনারে হামলা চালাবে। জামায়াত-শিবির যে হিংস্র জানোয়ার সেটা তারা গত ৪ ফেব্রুয়ারিও প্রমাণ দিয়েছে। ওই দিন রাজধানীর মতিঝিলে সমাবেশ করে সংগঠনটির নেতারা বলেছিল- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রইব্যুনাল ভেঙ্গে দিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের মুক্তি দিতে হবে।

একই সঙ্গে তারা বলেছিল, জামায়াত নেতাদের মুক্তি না দিলে দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধবে। তাদের এসব ভাষা এবং কর্মকান্ড পরিস্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে জামায়া-শিবির কি চাচ্ছে। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের টানা ১৭ দিনের আন্দোলনে সারাদেশেই জামায়াত-শিবির অনেকটা বিপর্যন্ত। তারা নানা কৌশল খুঁজছিল এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার। মূলত রাজীব হত্যার পর তারা নানা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে শুক্রবার নিজেদের ফায়দা লুটার চেষ্টা করে।

জামায়াতের এই অপপ্রচারে সাড়া দেয়নি মাদরাসার জেলা ব্রা‏ণবাড়িয়া। এই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিপুল সংখ্যক মাদরাসা রয়েছে। ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা প্রয়াত মাওলানা মুফতী ফজলুল হক আমিনীর বাড়িও এই ব্রা‏ণবাড়িয়ায়। কিন্তু এখানকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা এবং মাদারাসার ছাত্র-শিক্ষকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, জামায়াত-শিবির এই অপপ্রচার চালিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। ব্রা‏ণবাড়িয়ার সদর আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য উবায়দুল মুক্তাদীর চৌধুরীর উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার জেলা শহরের বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক ও আলেমদের নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক করে তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হন যে, শাহবাগ গণজাগরণ ইসলামের বিরুদ্ধে নয় এবং এখান থেকে ইসলাম সম্পর্কেও কোন কটুক্তি করা হয়নি।

স্থানীয় প্রশাসন ও এমপি’র এই বৈঠক টনিকের মত কাজ করে। যার ফলে শুক্রবার জামায়াতের আহ্বানে সাড়া দেননি এ জেলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ব্রা‏ণবাড়িয়ায় যে কাজটি প্রশাসন এবং এমপি করলেন সেটি দেশের অন্যান্য স্থানে করা হলে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসল্লীদের সামনে দিয়ে জামায়াত-শিবির যে তান্ডবলীলা চালালো সেটি চালাতে পারতো না। তাই ভবিষ্যতের জন্য ব্রা‏ণবাড়িয়া একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো সারা দেশের জন্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.