আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হলুদ সাংবাদিকতায় সয়লাব দেশ জাতির জন্য অশনিসংকেত

নাজমুল ইসলাম মকবুল

নাজমুল ইসলাম মকবুল: ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে সাংবাদিক মহাসমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম ক’দিন পূর্বে। সেখানে সারাদেশের নবীন প্রবীণ হাজার হাজার সাংবাদিকের সাথে মুলাকাত করার ও তাদের মুল্যবান বক্তব্য শুনার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তন্মধ্যে একজন বক্তার একটি লাইন আমার হৃদস্পন্দনে বার বার প্রতিবিম্বিত হচ্ছে এখনো। আর তা হচ্ছে ‘হাটে হাড়ি ঙেঙ্গে দিলাম জানিনা বাড়ী ফিরতে পারবো কি না’। আমিও আজ এই লেখাটির মাধ্যমে গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ে হাটে হাড়ি ভেঙে দিচ্ছি এটা জেনে শুনেই যে, এর মাধ্যমে অনেকেরই বিরাগভাজন হতে হবে আজীবনের জন্য।

তাছাড়া অনেক সম্পাদক লেখাটি পড়ে গোস্বা করে তা না ছাঁপাতেও পারেন। তবুও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিবেকের তাড়নায় কলম না ধরে পারলামনা। ছয় বছরেরও অধিককাল যাবত সাংবাদিকতার সুবাধে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি তা রিতিমতো আৎকে উঠার মতো। আমাদের দেশে জাতিয় স্থানীয় দৈনিক সাপ্তাহিক পাক্ষিক মাসিক ত্রৈমাসিক অনেকগুলি পত্র পত্রিকা সুনামের সাথে অগণিত পাঠকের মনের খোরাক যুগিয়ে যাচ্ছে। যে সময় যে সরকারের শুভাগমন ঘটে তাদের সুনাম সুখ্যাতির পাশাপাশি গঠনমুলক সমালোচনা ছাড়াও দেশ বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ও নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে সর্বোপরি বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোস্টির অন্যায় অবিচার অনাচারের সচিত্র বিবরণ প্রকাশ করে দেশ ও জাতি গঠনের সর্বোপরী গণতন্ত্রের পক্ষের একটি মজবুত হাতিয়ার হলো সংবাদপত্র বা সংবাদমাধ্যম।

প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাথে গত ক’বছরে দেশ বিদেশের অনেকগুলি অনলাইন পত্রিকাও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় প্রায় অধিকাংশ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে অফিস খুলেন। অফিস প্রধান বা ব্যুারো প্রধান এবং ষ্টাপ রিপোর্টার নিয়োগ করেন। দেশের অনেক জেলা, উপজেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশের গুরুত্বপুর্ণ শহরে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। এসব প্রতিনিধির কাজ হলো নিজ এলাকার কোথায় কি গঠছে ইতিবাচক ও নেতিবাচক তা নিজে সংগ্রহ করে পত্রিকায় বা টিভি চ্যানেলে প্রেরণ করা।

কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম প্রতিনিধিদের নিয়োগ প্রদান করে নিয়োগপত্রের মাধ্যমে। নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকে চাকুরীর শর্তাবলী। পাশাপাশি উল্লেখ থাকে প্রতিনিধির বেতন কিংবা ভাতার কথাও। কিন্তু দু-একটি পত্র পত্রিকা ছাড়া প্রায় সকল পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এই ভাতার যে অংক উল্লেখ করেন তা শুধু লজ্জাজনকই নয় চরম লজ্জাজনকও বঠে। এই নিয়োগপত্রও দেন মুস্টিমেয় কিছু পত্রিকা কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু নিয়োগপত্রে উল্লেখিত বেতন বা ভাতার সামান্য টাকা এবং ফেক্স ফোন ও ই-মেইলের বিল অধিকাংশ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করেননা কিংবা তাদের কাছ থেকে আদায় করতে হলে শুধু শুধু জুতোর তলা ক্ষয় করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। আজ দেব কাল দেব এক বছরের একসাথে দেব বছর শেষে পরের বছর দেব ইত্যাদি নানান ধরনের প্রতিশ্র“তি শুনতে শুনতে পরান শেষ। আরও মজার খবর হচ্ছে অধিকাংশ পত্রিকা কিন্তু নিয়োগপত্রও প্রদান করেনা। শুধু একটা কার্ড বা পরিচয় পত্র দেয় এবং কাজ চালিয়ে যেতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়ে নিয়োগপত্রের প্রলোভন দেখিয়ে বছরের পর বছর খাটায় ইচ্ছেমতো। বেতন বা ভাতার কথা বললে কর্তৃপক্ষ বলেন বিজ্ঞাপন দেন এবং এথেকেই কমিশন পাবেন।

অনেক সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন জায়গায় জীবনের ঝুকি নিয়ে যেতে হয়। গাড়ি ভাড়া দিতে হয় কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে তেল ভরতে হয় মোবাইলের বিল পরিশোধ করতে হয় মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মুল্যবান সময় ও অর্থ নস্ট করে সংবাদ সংগ্রহ করে নিজের বাপের পয়সায় ক্যামেরা কিনে ছবি তুলে আবার কম্পিউটারে লিখে ছবিকে ঠিকঠাক করে ক্যাপশন লিখে ই-মেইলের বিল নিজের পকেট থেকে দিয়ে পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দিয়ে আবার বার্তা সম্পাদককে মমতাভরা কন্ঠে নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে ফোন করে সংবাদ প্রেরণের কথা জানিয়ে পরের দিন ছাপানোর জন্য মজবুতভাবে অনুরোধ করা হয়। অনেকে বলে থাকেন বিভিন্ন পত্রিকার বার্তা সম্পাদককে নাকি মাঝে মধ্যে সম্মানসূচক ফ্লেক্সিলোড না পাঠালে তিনি নাকি ফোনও ধরতে সময় পাননা কিংবা দেবো বলে কষ্ট ও খরছ করে পাঠানো সংবাদটিও দেননা। তাদের নাকি মোবাইলে কোন দিন নিজ থেকে ফ্লেক্সি লোড করা লাগেনা বরং বউ শালা শালিদের আরও দিতে পারেন। কিন্তু প্রতিনিধিদের ঘামে ঝরা সংবাদ দিয়ে তারা পত্রিকা ছাপেন ও চুটিয়ে ব্যবসা করেন তাদের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আদায় করেন সংবাদ পাঠাতে বিলম্ব হলে অথবা তাদের ফরমায়েশমতো যথাস্থানের গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে কোন কোন সময় ধমক দিতেও কসুর করেননা।

এখন আলোচনা করা যাক কাদেরকে খাটাতে তাদের আরাম বেশি। হাতে গোনা দু’চারটি পত্রিকা বাদে অধিকাংশ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ জেলা উপজেলা প্রতিনিধিদের নিয়োগ দেন যোগ্যতার বা শিক্ষা দীক্ষার ভিত্তিতে নয়। খাতির সুপারিশ নতুবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আদায়ের বিনিময়ে। এই অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বহু ধরনের হতে পারে যা জানতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমাদের দেশে বেকারত্বকে পুজি করে অধিকাংশ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ জেলা উপজেলা প্রতিনিধিদের বিনা বেতনে খাটাচ্ছেন একথা তাদের অজানা নয়।

আর বিনা বেতনে ইচ্ছেমতো খাটাতে হলে অযোগ্য ও অদক্ষ লোকদের দরকার। তাই প্রতিনিধি নিয়োগ দেবার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা পাঠশালা পাশ কি না, হাই স্কুলের বারান্দায় কোন দিন গিয়েছে কি না, শুদ্ধভাবে একটি সংবাদ লেখা দুরের কথা তিন দিনের ছুটি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট একটি ছুটির দরখাস্ত লিখতে পারবেনা এ ধরনের প্রতিনিধিদের নিয়োগ প্রদান করেন অধিকাংশ সম্পাদকরা। তাই দেখা যায় দেশের প্রায় অধিকাংশ জেলা উপজেলাতে প্রতিনিধিদের বিরাট একটি অংশ এস এস সি পরীক্ষার ফরম ফিলাম পুরণ করাতো দুরের কথা এ পর্যায়ে না গিয়েও সাংবাদিকতার কার্ড বুকে ঝুলিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হম্বি তম্বি করে বেড়াচ্ছে। এখন কথা হলো বেতন ভাতা না পেয়ে এরা কাজ করে কিসের বিনিময়ে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে কিছু কিছু আসাধু পত্রিকা কর্তৃপক্ষ বুদ্ধি শুদ্ধি বাতলিয়েও নাকি দেন কিভাবে রুজি রোজগার করতে হয়।

আবার অনেকে শিখে নেয় অন্যোর কাছ থেকে। বেশ কয়েক বছর পুর্বে এক সাংবাদিকের বেতন ভাতার খবর জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন ‘ভাইছাব বেতন দিয়া কিতা অইত, ধুরা জানা থাকলে বিশ পচিশ আজার টেকাতো মামুলি ব্যাপার, এর থাকি বেশিও রুজি করা যায়। কোন কোন সময় একদিনেও এর চাইতে বেশি রুজি করা যায়। ’ বললাম বুঝলামনা! বিষয়টা একটু খুলাসা করে বলো। বলল ‘পুলিশ স্পর্শকাতার কোন বিষয় নিয়ে একটা আসামী ধরিয়া আইনছে, সে মুটামুটি সম্মানি অথবা টাকাওয়ালা।

ক্যামেরা লইয়া গিয়া ছবি তুললাম আর কইলাম কাইল পত্রিকাত আপনার ছবি আইব। লোকটা মান ইজ্জতের ভয়ে বলবে ভাই দয়া করিয়া আমার ছবিটা দিয়না তখন বলব ভাই আমি চাকরি করি ছবিটা আমার দেওয়াউ লাগব। তখন লোকটা পাচ দশ হাজার কিংবা সামর্থমতো একটা ফিগার উল্লেখ করে আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে পকেটে দিয়ে দিলে আর সেই ছবি পাঠানো হয় না। এছাড়া বিপরিতও আছে রাজনৈতিক পাতি নেতাকে গ্রেফতার করা হলে তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ার জন্য ও নেতৃত্বে প্রমশন হওয়ার জন্য ছবি তুলে পত্রিকায় দেওয়া দরকার তখন ছবি তুলার পরে পত্রিকায় দেবার জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে টাকাও মিলে। আবার অনেকের চরিত্র হননের জন্য বা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যও প্রতিপক্ষ অসাধু রিপোর্টারকে বিভিন্ন অংকের টাকা দিয়ে রিপোর্ট করায়।

প্রতিপক্ষের কোমর শক্ত হলে কিংবা মানহানির মামলা করবে বলে আশংকা করা হলে বুদ্ধি শুদ্ধি বাতলিয়ে দেওয়া হয় যে, উনাকে আসামী করে এসব বিবরণ এজাহারে উল্লেখ করে একটি মিথ্যা মামলা কিংবা জিডি অথবা টিএনও বা এসপি সাহেবের কাছে অভিযোগ দায়ের করে রিসিভকৃত কপির ফটোকপি আমাকে দিয়ে দেবেন তখন নিউজ হবে। আমাদের দেশে অতিত বর্তমানে মিথ্যা মামলা করতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়না কিন্তু এরই মধ্যে সত্য মিথ্যা উদঘাটন না করে অমুকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে মামলা দায়ের। মামলার বিবরণে প্রকাশ... ইত্যাদি ইত্যাদি লিখে ভালো মানুষেরও চরিত্র হরন করে টু-পাইস কামানোর মজাদার সুযোগ হলো অভিযোগ। অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্পর্শকাতর যে কোন বিষয়আশয় জেনে ফোনে বা বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদপত্রে প্রকাশের হুমকী ধামকী দিয়েও টু-পাইস কামাতে শুনা যায়। এছাড়া সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন স্থরের কর্মকর্তা কর্মচারীর ঘুষ দুর্নীতির কিংবা অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তাদের মুখোশ উদঘাটনের হুমকী দিয়েও নিয়মিত কিংবা মাসোহারা ভিত্তিতে টু-পাইস কামাতেও শুনা যায়।

কোথাও কোথাও থানার দালালীরও অভিযোগ শুনা যায়। অসাধু স্টাপ রিপোর্টার বা বার্তা সম্পাদকরা নিউজ ছেপে কিংবা আটকে রেখেও টু-পাইস কামাতে শুনা যায়। আরও বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম চলে যা বিস্তারিত বর্ণনা করতে গেলে কলেবর বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। তবে সময়মতো লিখবো ইনশাআল্লাহ। সংবাদপত্র হচ্ছে জাতির দর্পণ।

দেশ ও জাতির উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের ত্র“টি বিচ্যুতি তুলে ধরে তা সংশোধনের পথ বাতলে দেওয়ার ধারক ও বাহকের বিরাট অংশ যদি অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মুর্খ ও দুর্নীতিবাজ থাকে আর যদি এরা বিনাবেতনে খাটতে থাকে আর মালিকেরাও খাটাতে থাকে তবে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের গতিপথ কোন দিকে যাবে সে বিচারের ভার বিজ্ঞ পাঠকদের উপরই ছেড়ে দিলাম। অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মুর্খ ও দুর্নীতিবাজ সাংবাদিকেরা নিজে সংবাদ লিখতে না পেরে অন্যের কাছ থেকে ধার করে সংবাদ প্রেরণ করে এজন্যই দেখা যায় প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় একই সংবাদ একই ধরনের লেখা যাতে কোন পরিবর্তন নেই। আবার কোথাও কোথাও কর্তৃপক্ষ নাকি বেতনতো দেওয়া দুরের কথা প্রতিনিধিদের কাছ থেকেও নাকি টু-পাইসের অংশ নিয়ে থাকেন নিয়মিত। (বি:দ্র: সম্মানিত ব্লগার বন্ধুরা, লেখাটি সংশোধন ও পরিমার্জন করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো, এক্ষত্রে আপনাদের মুল্যবান মতামত প্রয়োজন তাই আপনাদের মুল্যবান মতামত ও তথ্য আহবান করছি। লেখাটি তড়িগড়ি করে লিখে আমি আবার না পড়েই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম।

ত্রুটি বিচ্যুতি সংযোজন সংশোধন বিয়োজন ও বাদপড়া তথ্য আমাকে জানিয়ে কৃতার্থ করার বিনীত অনুরোধ করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।