আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাবুলের মেয়রের অভিমান



অনুমতি না নিয়ে আফগান ভূখণ্ডে আমেরিকা-রাশিয়ার মাদক বিরোধী যৌথ সামরিক অভিযানে বেশ অভিমান করেছেন কাবুলের মহামান্য মেয়র ড. হামিদ কারজাই। সরি, মাফ করবেন! আফগানিস্তানে আমেরিকার 'গৃহপালিত রাষ্ট্রপতি' হামিদ কারজাইয়ের প্রশাসনিক প্রভাব এখন রাজধানী কাবুলকেন্দ্রিক হয়ে যাবার কারণে খোদ আফগানবাসীই তাকে 'কাবুলের মেয়র' বলে উপহাস করেন। অবশ্য গাল-ফুলানো অভিমানকে যে আমেরিকা-রাশিয়া মোটেও পাত্তা দেবে না, তা কারজাই নিজেও ভালো করে জানেন যাক, এসব কথা। এটা ঠিক যে, কারজাই আমেরিকার ইঙ্গিতেই শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ আমেরিকা এটা ভালো করেই বুঝে গেছে, 'অজেয়' আফগান যুদ্ধে ঠিক এখনই পরাজয় মেনে নেয়া মোটেও সম্ভব নয়।

অবশ্য আফগান নীতি নিয়ে খোদ হোয়াইট হাউজ এখন দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে গেছে। আর এ বিভক্তির দৃশ্যমান প্রমাণ হচ্ছে আফগানিস্তানে দখলদার বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল স্ট্যানলি ম্যাকক্রিস্টালকে পত্রপাঠ প্রত্যাহার করে নিয়ে ইরাকে সামরিক আগ্রাসনে নেতৃত্ব দেয়া ডেভিস পেট্রাউসকে তার জায়গায় বসানো। কারণ ম্যাকক্রিস্টাল এটা মোটেও চাচ্ছেন না যে, শান্তি আলোচনায় তালেবানদের জড়ানো হোক। ম্যাকক্রিস্টালের চাওয়া না চাওয়া হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষের কাছে বিবেচ্য কোনো বিষয় নয়। তাদের মাথা ব্যথার কারণ হচ্ছে চীনের সমরশক্তি বাড়ানোর প্রক্রিয়া।

উদীয়মান সুপার পাওয়ার চীনের উপর কৌশলগত চাপ বজায় রাখার স্বার্থে আমেরিকা ভারতকে দলে টেনেছে, যাতে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে পুরনো জুতোর মতো পরিত্যাগ করা যায় অন্যদিকে ভারতও আফগানিস্তানে শান্তি চাইছে। আফগানিস্তানে শান্তি ফিরলে কাশ্মীরও বেশ শান্ত থাকতে পারবে--এই প্রত্যাশায়। এটা হচ্ছে ভারতের সমীকরণ। কিন্তু মার্কিনী সমীকরণ একেবারেই আলাদা। তারা দেখতে পাচ্ছে, চীনের দিকে নজর দিতে পারলে আমেরিকার লাভ বেশি হবে।

আর এক্ষেত্রে ন্যাটোর জায়গায় যদি মুসলিম দেশগুলোকে বসিয়ে দেয়া যেতে পারে, তাহলে কেল্লাফতে। কারণ আমেরিকা এ মুহূর্তে আফগানিস্তানে নতুন করে সৈন্য পাঠানোর ব্যাপারে তার ইউরোপীয় মিত্রদেরকে বাগে আনতে পারছে না। আশার কথা হচ্ছে, পরিকল্পনা মাফিক, হোয়াইট হাউজ বাংলাদেশকে রাজি করিয়ে ফেলেছে পাকিস্তানকে আফগান যুদ্ধে জড়ানো বেশ কঠিন হবে বলেই তারা বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে। কূটনীতির খেলা আরেকটু বিস্তার করতে পারলে আরও কয়েকটি মুসলিম দেশ শান্তি মিশনের ব্যানারে আফগানিস্তানে যেতে রাজি হবে (বের হতে পারবে কিনা, সেটা পরের কথা)। আমেরিকা কিন্তু ইরাক ছাড়লেও এ মুহূর্তে আফগানিস্তান ত্যাগের ঝুঁকি মোটেও নেবে না।

কারণ পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানকে কৌশলগত চাপে রাখতে হলে কাবুলে তার উপস্থিতি ঠিকই জরুরি। আমেরিকার সৃষ্টি লাদেন-ফাদেন এখানে মোটেও ফ্যাক্টর নয়। আমাদের সমস্যা ভিন্ন মাত্রার। আমেরিকা যুদ্ধের মাধ্যমে 'শান্তি প্রতিষ্ঠা'য় বিশ্বাসী। আর আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মণি জানিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকা 'শান্তি প্রতিষ্ঠা'র জন্যই বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে।

মারহাবা! মারহাবা!! আমেরিকা আর বাংলাদেশের উদ্দেশ্য দেখছি একাকার! কাবুলের মেয়রকে স্যালুট। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেমিটেন্সের জন্য বাংলাদেশী সৈন্যরা আফগানিস্তানে অবশ্যই যাবে। তবে যুদ্ধের পরে পুনর্গঠন কাজে অংশ নিতে। আফগানিস্তান এখন সার্কভুক্ত দেশ। সার্কভুক্ত কোনো দেশে সৈন্য পাঠানোর ম্যান্ডেট সার্কে নেই।

তালেবানরা কি হুমকি দিয়েছে বা দেয়নি, ওটা নিয়ে রাজনীতি করার দরকার নেই। কারণ বাঙ্গালি মোটেও ভীত নয়। তবে জোটনিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করে বলে বাংলাদেশ যে কোনো দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানিয়েই যুদ্ধে জড়ায় না। কাবুলের মেয়রকে আরেক দফা স্যালুট!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।