আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুখে দাঁড়াল বিক্ষুব্ধ শাহবাগ

সতর্ক করন " জামাত শিবির , যে কোন রকমের মৌলবাদী, ধর্ম ব্যাবসাই ও বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত সকল জানয়ারের প্রবেশ নিষেধ" সারা দেশে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের উন্মত্ততার জবাবে আবার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে ফিরে এসেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত জনতার এই ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে নতুন দাবি ও শপথে আবার জেগে উঠেছে শাহবাগ। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে গতকাল শুক্রবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, শুক্রবারের সহিংসতা, জাতীয় পতাকা ও শহীদ মিনারের অবমাননার প্রতিবাদে আজ বিকেল ৩টায় সারা দেশে জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। আরো ডাক দেওয়া হয়েছে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের ঘোষিত রবিবারের হরতাল প্রতিরোধের। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা করা সব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

সে অনুযায়ী আজ রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পূর্বঘোষিত সমাবেশের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। সেখানে শপথ পাঠ করা হবে জাতীয় পতাকা হাতে। এদিকে শাহবাগে আজ থেকে অবস্থান কর্মসূচি আর থাকছে না। এখন থেকে শাহবাগে যানবাহন চলাচল করবে। তবে সেখানে প্রতিদিন গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হবে সকাল ১০টায়।

অন্যদিকে আন্দোলনের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো কেবল ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের নেতৃত্বে নয়, এবার দেশের সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি ও আন্দোলনের রূপদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল রাতে ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্লগারদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার তা জানিয়ে দেন। এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সহিংসতার উসকানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে 'আমার দেশ' পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (আজ সন্ধ্যা ৬টা) গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেন ইমরান এইচ সরকার।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গণজাগরণ মঞ্চ থেকে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এভাবে আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে শাহবাগ। চলতে থাকে একের পর এক স্লোগান। এই পর্যায়ে গণজাগরণ মঞ্চে আসেন স্লোগানকন্যা লাকী। তাঁর ইস্পাত কণ্ঠের স্লোগানে আবারও উত্তাল হয় প্রজন্ম চত্বর।

উদ্বেলিত হয় জনতা। চারদিক বিদীর্ণ করে ধ্বনিত হতে থাকে- 'ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার'। রাত ১১টার দিকে আবার গণজাগরণ মঞ্চে আসেন ডা. ইমরান এইচ সরকার। এ সময় তিনি রাতের শেষ বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরনো কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি আজ বিকেল ৩টায় জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।

এ ছাড়া রবিবারের হরতাল প্রতিরোধেরও ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে গতকাল রাতে দুটি বৈঠক হয়। এসব বৈঠক বামপন্থী ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা ও ব্লগারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রতিটি সংগঠন থেকে দুজন করে প্রতিনিধি নেওয়া হবে। এই প্রতিনিধিরা মিলে ঠিক করবেন আন্দোলনের কর্মসূচি ও কৌশল।

এর পরই ইমরান এইচ সরকার মঞ্চে এসে কর্মসূচির বিষয়ে বক্তব্য দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি জনতার : গণজাগরণ মঞ্চকে ঘিরে উত্তাল জনস্রোত গতকাল সোচ্চার হয়েছে আরো কয়েকটি দাবি নিয়ে। জনতার নতুন দাবি- শহীদ মিনার ও জাতীয় পতাকায় আগুন দেওয়ার ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ। শুক্রবারের সহিংসতার পেছনে উসকানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত 'আমার দেশ' পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। জনতার দাবি ছিল, এখন থেকে প্রজন্ম চত্বরে আর কোনো রাজনৈতিক দলকে সংহতি জানাতে দেওয়া হবে না।

এখানে শুধু সাধারণ মানুষ তাদের দাবি নিয়ে সমবেত হবে। কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে দেওয়া যাবে না। প্রজন্ম চত্বরে কেবল প্রতিবাদী গান, নাটক ও স্লোগান চলবে। নেওয়া হবে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার শপথ। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের গণজাগরণ মঞ্চে চলে গণস্বাক্ষর অভিযান।

কিন্তু দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের একের পর এক তাণ্ডবের খবর জানার পর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে প্রতিবাদী মানুষ। দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে তারা জড়ো হতে থাকে শাহবাগে। বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসে ১৭ দিন ধরে চলতে থাকা প্রজন্ম চত্বরের চেনা দৃশ্যপট। আবার লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প উচ্চারিত হয় জনতার কণ্ঠে। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার খবরে উত্তেজিত জনতা বিকেলে শাহবাগ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এ সময় আন্দোলনকারীরা শাহবাগের চৌরাস্তার মাঝখানে লাল কালিতে লিখে দেন- 'সংসদের চলতি অধিবেশনে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ' আন্দোলনকারীদের কয়েকজন জানান, তাঁরা বাধ্য হয়েই আবার মূল চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন। চারদিক থেকেই আসছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এরই মধ্যে শাহবাগ থেকে জনতার স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে শাহবাগে আসেন ডা. ইমরান এইচ সরকার।

উপস্থিত জনতার মধ্যে তিনিও বসে পড়েন। এ সময় শাহবাগ দখলে নেওয়া সাধারণ মানুষ স্লোগান দেয়, 'একজোটে রাজাকার, আরেক জোটে স্বৈরাচার, রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র হয় না, স্বৈরাচার সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র হয় না; জামায়াত-শিবির হামলা করে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করে; জামায়াত-শিবির হামলা করে পুলিশ প্রশাসন কী করে; জাতীয় পতাকা পুড়ল কেন, মহাজোট জবাব চাই। '- ইত্যাদি স্লোগানে উপস্থিত জনতা সোচ্চার হয়ে উঠলেও কিছু সময়ের মধ্যে এসব স্লোগান দেওয়া বন্ধ হয়। এর আগে গতকাল সকালে ১৭ দিন ধরে আন্দোলনে যুক্ত থাকা বেশ কিছু মানুষ শাহবাগে গিয়ে আগের মতো অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ওই পুলিশ ও আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন এসে তাদের বিরত রাখেন।

দুপুর আড়াইটার দিকে ইমরান এইচ সরকার প্রথম দফায় শাহবাগ গেলে সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষ জামায়াত-শিবিরের হামলার পর কী করণীয় সে বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চায়। এ সময় ইমরান সাংবাদিকদের কাছে বলেন, 'আমরা মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রার্থনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার কর্মসূচি দিয়েছিলাম। তাতে ভয় পেয়ে ওই কর্মসূচি বানচাল করার জন্যই জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে। তবে সবাইকে অনুরোধ করব যুক্তি ও বিচার-বুদ্ধির মাধ্যমে পুরো বিষয়টি বিবেচনা করার। ' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাদমান সাকিব বলেন, 'জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে না দেওয়ার কারণে আজ সারা দেশে তারা হামলা চালিয়েছে।

সংসদের চলতি অধিবেশনে সরকারকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। তা ছাড়া সারা দেশের গণজাগরণ মঞ্চ ও শহীদ মিনারের নিরাপত্তা দিতে না পারার কারণে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। ' শাহবাগ থেকে সন্দেহভাজন ২২ জন আটক : গণজাগরণ মঞ্চ ও আশপাশের এলাকা থেকে গতকাল সন্দেহভাজন ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ছদ্মবেশে নাশকতা চালানোর চেষ্টা করতে পারে- এমন তথ্য পেয়েই এ এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এদিকে গতকাল বিকেলে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হলে হামলা চালায়।

এতে হলের চার ছাত্র আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা নিমতলী এলাকায় এশিয়াটিক সোসাইটির কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চারজনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় শাহবাগ এলাকায় হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন কর্মী লিফলেট বিলি করতে থাকে। ওই সময় সেখানকার লোকজন তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

শাহবাগ থানার পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাত পর্যন্ত লিফলেট বিলিকারীসহ ২২ সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। রাতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হলে হামলার ঘটনার ব্যাপারে প্রক্টর ড. আমজাদ আলী বলেন, 'বিকেল পৌনে ৪টার দিকে লালবাগ ও পল্টন এলাকা থেকে আসা দুটি মিছিল থেকে একুশে হলের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে কমপক্ষে চার ছাত্র আহত হন। ওই এলাকায় মিছিল ছত্রভঙ করে পুলিশ চারজনকে আটক করেছে বলে শোনা গেছে।

' শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল জলিল বলেন, 'আটককৃতদের পরিচয় ও কর্মকাণ্ড নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। ' ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।