আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত-অভিনন্দন হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক



যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইতিহাস গড়ে জয়লাভ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক। এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের মর্যাদাসম্পন্ন কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হলেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলীর জয়লাভের পর বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে নতুন পালক যোগ করলেন হ্যানসেন ক্লার্ক। পেশায় স্থপতি হ্যানসেন হাসিম ক্লার্কের পৈতৃক বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার শ্রীধরা গ্রামে। আর রুশনারা আলীও একই জেলার বিশ্বনাথের মেয়ে।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী কংগ্রেসনাল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হলার জনকে পরাজিত করে বিজয়ের মুকুট পরেন হ্যানসেন ক্লার্ক। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভরাডুবি হলেও ক্লার্কের বিজয়ের মাধ্যমে এ আসনে ৬১ বছরের আধিপত্য ধরে রাখল ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাট। বিজয়ের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক সাংবাদিকদের বলেন, 'বাবার জন্য আমি গর্বিত। ইমিগ্রেশনের একটি ফেয়ার পলিসি হওয়া দরকার, যাতে করে সব ইমিগ্র্যান্টকে ফেয়ারলি দেখা হয়। আমার বাবাও ইমিগ্র্যান্ট ছিলেন।

তাই আমি ইমিগ্র্যান্টদের কষ্ট বুঝি। ' কংগ্রেসম্যান হিসেবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবেন জানিয়ে মি. ক্লার্ক বলেন, 'আমি প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে কংগ্রেসম্যান হতে পেরে নিজেকে সম্মানিত ও গর্বিত বোধ করছি। ' বারাক ওবামার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মিশিগান থেকে কংগ্রেসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হ্যানসেন ক্লার্ক। যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা আধিপত্য ধরে রাখতে না পারলেও উঠতি কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশিরা ইতিহাসের অংশ হলেন। আর এ ইতিহাসের নায়ক হচ্ছেন মিশিগান থেকে বিজয়ী কংগ্রেসম্যান হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক।

হাসিম ক্লার্ক ১৯৯০ সাল থেকেই মিশিগান স্টেটের সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এবার কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হওয়ায় জাতীয় পর্যায়ে তাঁর কর্মপরিধি বিস্তৃত হলো। একই সঙ্গে মূলধারায় বাংলাদেশি আমেরিকানদের উত্থানের ক্ষেত্রে তিনি হলেন পথপ্রদর্শক। এর আগে গত ৩ আগস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি নির্বাচনে হাসিম ক্লার্ক ইউএস কংগ্রেসম্যান (মিশিগান কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-১৩) হিসেবে বিজয়ী হন। তিনি ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত করেন সাত মেয়াদের কংগ্রেসওম্যান ক্যারলিন চিকস কিলপ্যাট্রিককে।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ২টা) পর্যন্ত একটানা কংগ্রেসনাল নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সারা দেশের চিত্র ভিন্ন থাকলেও মিশিগান শহরে বরাবরের মতো এবারও ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভোটারদের সমর্থন ছিল। আর মিশিগানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সমর্থন থাকায় হাসিম ক্লার্কের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনা সহজ হয়ে ওঠে। ১৯৪৯ সাল থেকে কংগ্রেসের এ আসনটি ডেমোক্র্যাটদের দখলে রয়েছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে এ নির্বাচনে মিশিগান স্টেট সিনেট প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে ড. দেবাশীষ মৃধা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু তিনি জয়ী হতে পারেননি। একইভাবে জর্জিয়া স্টেট সিনেটেও পরাজিত হয়েছেন ড. রশিদ মালিক নামের আরেকজন বাংলাদেশি। তবে তিনি ভোট পেয়েছেন মোট ভোটের এক-তৃতীয়াংশ_১৯০০০। প্রসঙ্গত, হ্যানসেন হাসিম ক্লার্কের বাবা সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শ্রীধরা গ্রামের আবদুল হাসিম।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহরে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন ক্লার্ক। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা গেলে মা তেলেমা হাসিম স্কুল গার্ডের চাকরি করেন। ১৯৮৪ সালে বিশ্ববিখ্যাত জর্জ টাউন থেকে জুরিস অব ডক্টর ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে যোগ দেন ক্লার্ক। '৯০, '৯৮ ও ২০০০ সালে পরপর তিনবার মিশিগান স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ এবং ২০০২ ও ২০০৬ সালে স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হন। হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি অনাবাসী (এনআরবি) সম্মেলনে যোগ দিতে ২০০৭ সালে ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন।

সম্মেলন শেষে পৈতৃক ভূমি শ্রীধরা গ্রামে বেড়াতে এলে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ক্লার্ক একজন সৎ, মেধাবী ও সুশিক্ষিত রাজনীতিক হিসেবে সব মহলে পরিচিত। আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ক্লার্কের বিজয়ে সারা আমেরিকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস চলছে। গভীর রাত পর্যন্ত আনন্দে মেতে থাকেন বাংলাদেশিরা। নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা প্রভৃতি স্টেটে এখন বিজয় উৎসবের আয়োজন চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেটের একটি বেসরকারি কম্পানির সেলস ম্যানেজার সুফি ইসলাম বলেন, 'এখানে আমরা বিজয় মিছিল করব, ঠিক বাংলাদেশে যেভাবে বিজয় মিছিল হয়, সেভাবে। ' বিয়ানীবাজার থেকে আহমেদ ফয়সাল জানান, হ্যানসেন হাসিম ক্লার্কের বিজয়ের সংবাদ শুনে সিলেটের বিয়ানীবাজারে আনন্দের বন্যা বইছে। আনন্দ আর অভিনন্দনের জোয়ার বইছে বিয়ানীবাজার উপজেলার সর্বত্র। ভোরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হ্যানসেন হাসিম ক্লার্কের বিজয়ী হওয়ার বার্তা আসতে থাকে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে উপজেলাজুড়ে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।

শুরু হয় নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি, মিষ্টি বিতরণ আর অভিনন্দনের জোয়ার। বিয়ানীবাজার পিএইচজি হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক শিক্ষাবিদ আলী আহমদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'শুধু বিয়ানীবাজার নয়, এ গৌরব সব বাঙালির। এ বিজয়ের মাধ্যমে আরেক স্বপ্নের সোপান রচিত হলো। ' কসবা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, 'এত দিন শুনে এসেছি, বাংলাদেশিরা একদিন পৃথিবী জয় করবে, এখন তা বাস্তবে রূপ লাভ করছে। ' বিয়ানীবাজার স্বদেশ সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি প্রভাষক ফয়ছল আহমদ বলেন, 'আমাদের মেধা ছিল, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে না ওঠায় আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না।

হ্যানসেন ক্লার্ক, রুশনারা আলীদের দেখে যদি কিছু শিখতে পারেন আমাদের রাজনীতিবিদরা। ' উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান বলেন, 'এ বিজয় আমাদের জন্য গৌরবের। এ থেকে আমাদের শিখতে হবে। ' উপজেলা জাতীয়তাবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক নজমুল হোসেন পুতুল বলেন, 'হ্যানসেন ক্লার্ককে নিয়ে বাঙালির অহংকার এ বিজয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা পেল। আশা করি, বাংলাদেশেও একদিন স্বচ্ছ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।

' শ্রীধরা গ্রামের আবদুল মানিক বলেন, 'কত খুশি হয়েছি, কিভাবে তা প্রকাশ করব বুঝতে পারছি না। আমেরিকার মতো দেশে আমাদের ছেলে এমপি (কংগ্রেসম্যান) হয়েছে। ' ক্লার্কের বিজয়ে আজ বিয়ানীবাজারে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হবে। বি:দ্র: লেখাটি কালের কন্ঠ থেকে কোন পরিবর্তন না করে সম্পূর্ণ কপি পেষ্ট।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.