আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়

তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না.....

বাংলাদেশসহ অনুন্নত বিশ্বের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যাবে অর্থনীতির কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ দেশগুলোতে আপাত অগ্রগতি অর্জন করলেও অর্থনীতিতে দারিদ্র্যের আপাতন ক্রমাগতভাবেই বেড়ে চলছে। এ বৃদ্ধি যেমন আপেক্ষিক দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে হয়েছে, তেমনি অন্যপক্ষে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রেও হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বে ক্ষুধার কারণে বছরে প্রায় ৮০ লাখ লোক মারা যায়। এপেক অঞ্চলে বর্তমানে ১শ’কোটি লোক ক্ষুধা পীড়িত এবং পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ক্ষুধার সূচকে ৬৭ নম্বরে অবস্থান করছে ভারত।

যা পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও চীনের চেয়েও নিচে। এ তালিকায় চীনের অবস্থান ৯ম এবং পাকিস্তানের অবস্থান ৫২তম, বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের পরেই ৬৮তম। গত ১১ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। ৮৪ টি দেশের তিনটি নির্দেশকের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএফ পিআরআই। নির্দেশগুলো হচ্ছে শিশুদের অপুষ্টির হার, শিশু মৃত্যুর হার এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বিশ্বে অপুষ্টির শিকার বা বয়সের চেয়ে কম ওজন সম্পন্ন শিশুর মধ্যে ৪২ শতাংশ রয়েছে ভারতে। যেখানে পাকিস্তানে রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। ভারতে অপুষ্টির মাত্রা বেশি। তাছাড়া নারীদের সামাজিক অবস্থান নিচু হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষরা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য যোগাতে পারে না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকায় এখানকার মানুষরা বেশি মাত্রায় অপুষ্টি ও খাদ্য সঙ্কটে ভুগে।

কম বয়সে অপুষ্টির শিকার হলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্য সঙ্কটের কারণে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ২০০৯ সালের তুলনায় বেড়েছে। অন্যান্য দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপালের অবস্থান যথাক্রমে ৩৯ ও ৫৬তম। আজকে বিশ্বে চরম ক্ষুধায় বাস করছে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ। ২০৩০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে প্রায় ৮৩০ কোটি।

তখন বিশ্বে চালের চাহিদা ৬১.৮০ কোটি টন থেকে ৭৭.১০ কোটি টনে উন্নীত হবে। ফি-বছর প্রায় ১ শতাংশ কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন রাস্তাঘাট, আবাসন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা-মসজিদ, শহর-বন্দর, শিল্পসহ অন্যান্য অবকাঠামো এবং নদীভাঙনে এ জমির অবক্ষয়, বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশেই খাদ্য ঘাটতি দাঁড়াবে ৫-৬ মিলিয়ন টন। চীন ব্যতীত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২০ শতাংশ মানুষের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসেব অনুযায়ী নাইজারের ১ কোটি ২০ লাখ লোকের মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ অনাহারেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ক্ষুধা, অনাহার ও অপুষ্টিতে সভ্যতার এই একবিংশ শতকে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যুবরণ করে প্রায় ২৫ হাজার লোক। তাদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই পাঁচ বছরের কম বয়েসি শিশু। খাদ্যশস্যের জন্য বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে তাদের আয়ের শতকরা ৬০ ভাগ ব্যয় করতে হয়। খাদ্য ঘাটতির কারণে একজন পূর্ণবয়স্ক লোক দৈনিক ১৬৯৪ ক্যালরি গ্রহণ করে থাকে। অথচ উন্নত দেশের পুর্ণবয়স্ক লোক দৈনিক ৩৫০০ ক্যালরি গ্রহণ করে থাকে।

জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের প্রায় ১৯ শতাংশ লোক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। হত দরিদ্ররা ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যায়। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭ বিলিয়ন দরিদ্র বাস করছে। তাদের আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। এক চরম দারিদ্র্য, দুই. মাঝারি দারিদ্র্য এবং তিন. আপেক্ষিক দারিদ্র্য।

বিশ্বব্যাংক যাদের দৈনিক আয় ১ ডলারের নিচে, বাসস্থানসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত তাদের চরম দারিদ্র্য বলছে। তারা দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষুধার্ত, স্বাস্থ্যসেবা পায় না, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত, তাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পায় না এবং প্রাথমিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত-ঝড় বৃষ্টিতে ন্যূনতম আশ্রয়ের সুযোগ পায় না, প্রয়োজনীয় কাপড় পরিধান করতে পারে নাণ্ডতারাই মূলত চরম দারিদ্র্য। আমরা এটাকে বলতে পারি দারিদ্র্য তাকে হত্যা করছে। মাঝারি ও আপেক্ষিক দারিদ্র্যের সন্ধান মিলে উন্নয়নশীল দেশসমূহে মাঝারি দারিদ্র্য হচ্ছেণ্ডযাদের দৈনিক আয় ১ থেকে ২ ডলার, মৌলিক চাহিদার সুবিধা যারা পেয়ে থাকে। আপেক্ষিক দারিদ্র্যে বসবাসকারীদের দৈনিক আয় গড়পড়তা মাথাপিছু আয়ের কাছাকাছি।

তাদের অনেকেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদের কাছাকাছি অবস্থান করে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হারুহিকো কুয়োদা বলেছেনণ্ড এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আমজনতা ব্যাপক বঞ্চনার শিকার। এই অঞ্চলের অধিকাংশ জনগণ ব্যাপক পুষ্টিহীনতায় ভোগে। বস্তিতে বাস করতে বাধ্য হয়। আবার তাদের মধ্যে অনেকে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত, অন্তত বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশের তুলনায়।

মানুষের প্রচেষ্টায় গত তিন দশকে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। খাদ্য যদি সুষম বণ্টন নীতির মাধ্যমে সব মানুষের কাছে পৌঁছানো যেত তাহলে বাংলাদেশ কেন দুনিয়ার একটি লোককেও রাতে না খেয়ে বিছানায় যেতে হতো না। স্বাধীনতা-উত্তর দারিদ্র্য বিমোচন গুরুত্ব দেয়ায় বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। তবে এ দেশে এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। দারিদ্র্যকে দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়ণ্ডআয় দারিদ্র্য এবং মানব দারিদ্র্য।

আয় দারিদ্র্যের দিক থেকে ২০০৫ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ছিল দরিদ্র। অপরদিকে ইউএনডিপি’র হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ’২০০৯-এ দেখা যায়, ২০০৭ সালে মানব দারিদ্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১২ তম। যেখানে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৮৮, ১০১, ১০২ ও ৬৬ তম। দারিদ্র্যকে যেমন জাদুঘরে পাঠানো সম্ভব নয়, তেমনি ক্ষুধার বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য একে অপরের সাথে যুক্ত।

কবি সুকান্ত তো আর এমনিতে বলেননি-“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। খাদ্যের সুষম বন্টনের মাধ্যমে ও সহজলভ্যতায় ক্ষুধাকে অনেকটা নিবারণ করা সম্ভব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।