আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুধার দ্বিতীয় কিস্তি

আমার চিন্তাভাবনা

অন্ধকারের মধ্যেই ওর হাসি টের পেলাম। হাসিটা প্রশ্রয়ের, আশ্বস্তির। তাই আমি স্বস্তি পেলাম। আমার স্বস্তি যেন আমার ভেতরে নতুন শক্তি যোগালো। আমার হাতের মুঠোর মধ্যে ওর ভরাট বুক, স্তনবৃন্ত প্রাণ ফিরে পায়।

আমার ঠোটের কারুকাজ জীয়ন কাঠি ছোঁয়ায় ওর ত্বকের আনাচে কানাচে। জিহ্বা সাপের ফলার মত দংশন করলো এখানে ওখানে। ওর শরীরে সাড়া তো ছিলোই, তা আরো পূর্ণতা পেলো। নরম বুকের ছোঁয়া আর ওর আঙুলের স্পর্শে আমি নতুন করে জন্ম নিই। ওর উপর উঠে আসি পৃথিবীর প্রথম পুরুষ যেভাবে উঠে এসেছিলো প্রথম নারীর উপর।

শেষ নারীটিও হয়তো এভাবেই মিলিত হবে শেষ আমার সাথে। সে রাতে আমরা কতবার সঙ্গম করেছিলাম আমি জানিনা। এটা কি জানার দরকার আছে। তৃষ্ণার্ত মানুষ কি হিসেব রাখে সে কতটুকু হাইড্রোজেন অক্সিজেনের সংমিশ্রণ তার ভেতরে নিচ্ছে? তারা আসলে কিভাবে অণু গঠন করলো? শুধু জানি, আমরা পরিশ্রান্ত হয়েছিলাম। ক্লান্ত হয়েছিলাম।

তবে যদি জিজ্ঞেস করেন, তৃপ্ত হয়েছিলাম কিনা তা হলে কিন্তু ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারবোনা। কেন উত্তর দিতে পারবোনা ? সেটা তো ভাই বলতে পারবোনা। সে রাতে হয়তো আমরা তৃপ্ত হয়েছিলাম, কিন্তু আমরা কি আসলে তৃপ্ত হয়েছিলাম। তৃপ্তই যদি হবো তাহলে পরের দিন সকাল এগারোটার দিকে, দিনের বেলায় ভাই, সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখসিলাম জাকির সাহেব নাই, তারপর নাস্তা টাস্তা করে একটা সিগারেট ধরিয়ে যখন ঘরে বসে, তখন এগারোটাই বাজবে, না হয় দশ মিনিট এদিক ওদিক হবে, তখন আবার আমরা তৃপ্ত হবার কেন চেষ্টা করবো বলুন। তৃপ্ত হওয়ার জন্যই তো বাবুকে ঘুম পাড়িয়ে জানালা আর মূল দরজাটা আটকিয়ে ও আমার কাছে এসেছিলো।

সে এবার দস্যু রানীর ভূমিকায়, দ্রোপদীর উল্টা ভূমিকা পালন করছিলো। আমি অবশ্য কোন প্রতিবাদ করিনি, দ্রোপদীর মত অলৌকিকভাবে আমার ইজ্জত রক্ষা হতেই থাকবে সেটাও আমি আশা করিনি, আসলে আমি চাইনি। আমি চাচ্ছিলাম সে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়–ক, আমাকে আঁচড়ে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করুক। সে আমার চাওয়াকে বিমুখ করেনি। বাঘিনীর মতই সে আমাকে বার বার খেয়েছি, সোনার কাঠি রূপার কাঠি ছুইয়ে আবার সে আমাকে জাগিয়েছে।

আমার তলোয়ারকে সে নিপুনতার সাথে খাপবন্দী করেছে, আবার খাপমুক্ত করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে। রণক্ষেত্রে যোদ্ধা ক্লান্ত হবেই, আহত হবেই, নতুন অনুভূতির রাজ্য জয়ের আকাঙ্খা থাকা সত্ত্বেও তাই যুদ্ধ একসময় থামেই। তাই দুজনের রণ নাদের সাথে সাথে লড়াইটা থামলো। আহত দেহ আশ্রয় নেয় ঘুমের মাঝে। কিছু কিছু সময় আছে যখন সময়ের হিসেবটা পাল্টে যায়।

সময় তখন আশেপাশে ঘোরে। মানুষই তখন ঠিক করে কি গতিতে সময় যাবে, কিভাবে যাবে। আমরাও রাত দিনের, খাওয়া দাওয়ার সময়ের হিসেব নিকেশ পাল্টে ফেলেছিলাম। ভালোলাগা তখন আমাদের পায়ের নীচে কুর্নিশ করে। আমাদের সঙ্গমরত শরীরের সুগন্ধ পৃথিবীর সকল ফুলে গন্ধ ছড়িয়ে দেয়।

কখন সন্ধ্যা হয়েছে জানি না। বিছানা ছেড়েই প্রচুর খাইলাম। ক্ষিধা লাগসিলো খুব। সারা শরীর কেমন হালকা হালকা মনে হচ্ছিলো। উঠানের পাশে দুজন বসে থাকলাম।

কোন কথাবার্তা হচ্ছিলো না। পাশাপাশি বসেই যেন নিজেদের না বলা কথাগুলো না বলেই বলা হয়ে যাচ্ছিলো। আস্তে আস্তে বিকেল গড়িয়ে দুটি দেহে বিষাদময় সন্ধ্যা আসলো। মন ভালো হওয়ার পর্ব মনে হয় শেষ হয়ে গিয়েছিলো। মনখারাপ করা সন্ধ্যা গ্রাস করলো যেন আমাদের।

সে রাতে জাকির সাহেব আসতে দেরি করলেন। স্নিগ্ধা একটু টেনশন করছে বলে মনে হইলো। ওর কাছেই শুনলাম, বন্দর থেকে মাল খালাস করা সংক্রান্ত ব্যবসার সাথে জড়িত উনি। কথার মধ্যে একটু দু নম্বরির গন্ধ পেলাম। তাই টেনশানটাও বেশি।

কখন কে গুলি করে দেয় এ নিয়েই দুশ্চিন্তা দেখালো। তবে, সে রাতে জাকির সাহেব বেঁচেই ফিরে এসেছিলেন। তবে ঠিক বহাল তবিয়তে নয়। মাতাল মানুষটাকে যতœ করেই শুইয়ে দিলো স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা আর জাকির সাহেবের বেডরুমের পাশেই আরেকটা ঘর।

এখানে দিনের বেলায় বাবুরে শোয়াইয়ে রাখে। ও ঘরের পাশেই আমি। মাঝে একটা ঘর থাকায় আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা ওদের মধ্যে কি কথাবার্তা হচ্ছে। ওরা কি ঘুমিয়ে গেলো, নাকি কোন সমস্যা হয়েছে। ‘ কি ঘুমিয়েছো নাকি? ’ স্বর একটু নীচু।

‘ না, তোমাকে ছাড়া কি ঘুমানো যায়। আসো সোনা কাছে। ’ ‘ মদ খেয়ে আসছে। প্রায়ই আসে। খেয়ে ঘুমাইলে একদম সকালে উঠবে।

’ ‘ এর মধ্যে আমরা কি করবো?’ এ প্রশ্নের উত্তর ও ছাড়া আর কে জানবে। তাই আমরা দুজন দুজনকে জানিয়ে দিলাম কিভাবে বিছানায় সময় কাটাতে হয়। আমি তাকে জানালাম কিভাবে নিষ্পেষণে তার দু বুক জ্যান্ত কবুতর হয়ে আকাশে উড়ে যায। কিভাবে দেহের আগ্নেয়গিরির লাভা ছোট্ট স্পর্শে, চুম্বনে ভাসিয়ে দিতে পারে চারদিক। ঝড়, অগ্ন্যুৎপাত আর বণ্যার প্রবল তাণ্ডবে জনপদ ভাঙে গড়ে।

দু্িট বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এক হয়ে গড়ে তুলে ভিন্ন এক পৃথিবী। আদর সূর্যের প্রবল তাপ আর চন্দ্রের মায়াবী টানে সমুদ্র নদীর জল যখন উথাল পাথাল, বারবার বিশ্বমানচিত্রে ঘটে যখন অসংখ্য পরিবর্তন, তখনই ছন্দপতনের মত কর্কশ গলায় একটা ডাক শোনা গেল। আমার একটা অংশ তখন ওর ভেতরে। ও আমার সাথে তখন স্বাদে,গন্ধে, অনুভূতিতে সংযুক্ত। সব কিছু এক সাথে শেষ হলো।

অথবা শেষ হওয়ার জন্য বাধ্য হলো। ঁেপয়াজের খোসার মত ছড়িয়ে রাখা শাড়িটা একটানে তুলে স্নিগ্ধা বাবুর ঘরে দৌড় দিলো। একটু পরেই কণ্ঠটা আরো উচ্চকিত হলো। ‘ এই তুই কই। কি করস তুই।

’ একটু পরেই স্নিগ্ধার আরোপিত ঘুম জড়ানো কণ্ঠ শোনা গেলো। ‘ এই তো আমি বাবুর কাছে। কান্না কাটি করছিলো, তোমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে তাই বাবুরে এ ঘরে নিয়ে এসে শুলাম। ’ বেশ কিছুক্ষণ আর কোন কথা শোনলাম না। হঠাৎ আমার দরজার সামনে জাকির সাহেব বলে উঠলেন।

‘ দেখি, এ পোলাটা কি করে। ’ আমি চোখ মুখ বন্ধ করে দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে রইলাম। টের পেলাম, বাতিটা জ্বললো। ‘ এই এত ঘামসে ক্যান। বিছানা দেখি ভিজায়া ফেলসে।

’ স্নিগ্ধার কোন কথা শুনলাম না। একটু পর জাকির সাহেবই থেমে থেমে বললেন,‘ গরম পড়সে খুব, ফ্যানটা জোরে ছাইড়া দেতো। ’ ফ্যানের ব্লেডে নতুন কোন শক্তি সঞ্চারিত হলো কিনা জানিনা, তবে বাতিটা নিভে গেলো। ” কামাল থামলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো,‘ আজকে অফিসে তো কোন কাজই করলাম না।

সারাদিন আপনারে গল্প শোনাইলাম। আর কত শোনবেন। গল্প এখানেই শেষ। ’ ‘ গল্প শেষ মানে। তারপর কি হইলো।

’ ‘ সকালে উঠেই চলে আইলাম ঢাকা। আর কোনদিন যোগাযোগ করি নাই। ’ ‘ ফোন করে নাই। ’ ‘ করসে। আমি ধরি নাই।

ধরলেও কথা বলতাম না ঠিকমত। তারপর একসময় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলো। এখন আর ফোন করেনা। ’ ‘ ক্যান? এতকিছু করলেন। পিছায়ে গেলেন যে।

’ একটু সময় নেয় কামাল। উঠে গিয়ে এক কলিগের কাছ থেকে সিগারেট ধার করে নিয়ে আসে। লম্বা সময় নিয়ে আগুন ধরায়। দু তিন টান দেয়ার পর বললো,‘ সেদিন সকালে উঠে ঢাকায় আসলাম তো। তারপর ফোন করসিলো আবার।

রাতে। ওর স্বামী আসলে অক্ষম। বুঝছেন, বাচ্চাটা ক্যামনে হইসে জানিনা। প্রথম দিকে লোকটা নাকি ভালোই ছিলো। ড্রাগ নিতে নিতে আর মদ খাইতে খাইতে সব গেসে গা।

এখন আর জিনিস দাঁড়ায়না। সে রাতে আমরা যখন একসাথে, মনে হয় বুঝতে পারসিলো। নাকি আগে থেকেই বুঝছে জানিনা। সব মিলাইয়া, কেমন একটা অস্বস্তিতে পইড়া গেসলাম। তাই সবকিছু ছাইড়া দিলাম।

’ কামালের দৃষ্টি আকাশের দিকে। শহরটার উপর সূর্যটা আস্তে আস্তে এসে মিশছে। গরমের দিনেও বাতাসে একটু মিষ্টি আমেজ। ‘ সেদিন সকালে, ঐ বাড়ি ছেড়ে যখন ঢাকার বাসে উঠি, তখনই কেমন জানি লাগছিলো। লম্বা বিরক্তিকর জার্নি শেষে বাসায় এসে পৌঁছালাম।

বাসায় মানে, আমি ঐ যে সাবলেট থাকিনা, রোকন আর ওর বউ এর সাথে, আপনি তো ওদের চেনেন মনে হয়, তো বাসায় ফিরা আসলাম। খুব খিদা লাগসে। টেবিল চেয়ার খাইয়া ফালামু এরকম অবস্থা। আমি তো সাধারণত হোটেলেই খাই, সেদিন আলসেমি লাগছিলো। ভাবী, মানে রোকনের বউরে কইলাম, একটু ভালো মন্দ কিছু খাওয়ানতো , খুব খিদা লাগসে।

তো আমি ঘন্টা খানেক পর, গোসল টোসল করে বসে হাঁটুতে মলম লাগাইতেসি, ছড়ে গেসলোতো, ভাবী খাবার দাবার নিয়ে ঘরে ঢুইকা বললো, কি কই গেসলা, আবার হাঁটু ছিলা ফালাইসো, তোমার ঘটনাতো ভালোনা। আমি ভাবীর ইঙ্গিতের উত্তর না দিয়ে খাইতে লাগলাম। এত খিদা লাগসিলো। ইলিশ মাছ, ডাল, আলুভর্তা, ঝরঝরে মিহি চালের ভাত, বরইয়ের আচার। খাইতে যা মজা লাগলোনা।

স্বাদটা এখনো মুখে লাইগা আছে। ’ কামাল আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। ওর চোখ মুখে ক্ষুধা শেষে তৃপ্তির ঝলকানি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।