আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেনারেল মীর শওকতের নির্দেশে বীরউত্তম খালেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়



Click This Link রক্তাক্ত নভেম্বর নিয়ে আলাপচারিতায় কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীরবিক্রম বলেছেন, কথিত আছে জেনারেল মীর শওকত আলীর নির্দেশে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফোর্স শেরে বাংলানগর ১০ম রেজিমেন্টে গিয়ে খালেদ মোশাররফ বীরউত্তমকে বের করে এনে গুলি করে হত্যা করে। তাই শওকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জানা যাবে খালেদের প্রকৃত খুনি কে? তিনি সরকারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক জেনারেল খালেদ মোশাররফ হত্যার বিচার দাবি করেন। ৭ নভেম্বর ভোররাতে খালেদের সঙ্গে মেজর হায়দার ও কর্নেল হুদাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কর্নেল জাফর ইমাম ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংগঠিত সেনাঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এছাড়া ’৭১ সালে খালেদের নেতৃত্বে বৃহত্তর ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে যে যুদ্ধ হয়েছে তাতে মেজর হায়দার ঢাকা, কর্নেল শওকত আলী (বর্তমানে ডেপুটি স্পিকার) ফরিদপুর, কর্নেল গাফ্ফার, সালেক, মেজর ইমাম কুমিল্লা ও কর্নেল জাফর ইমাম নোয়াখালীর সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।

জাফর ইমাম বলেন, ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থান না হলে খুনি মুশতাকের টুপির রাজনীতি চালু হতো। আওয়ামী লীগ আরো কঠিন এবং করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতো। খালেদের নেতৃত্বে সেদিন আমরা খুনি মুশতাক চক্রকে উৎখাত করায় ৩ নভেম্বর এদেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক, কেউ আজ জাতীয় বীর খালেদ হত্যার বিচার করে না এবং গভীর শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণও করা হয় না। তিনি বলেন, কর্নেল তাহের এবং জাসদের হটকারী ৭ নভেম্বর রাজনীতিতে জিয়া এবং বিএনপির আবির্ভাবই ঘটায়নি অনেক অফিসার ও জওয়ানের রক্ত ঝরিয়েছিল বিনা অপরাধে।

তার ভাষায়- যারা ভাবেন ৩ নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থান ছিল ৭ নভেম্বর তারা ভুল করছেন। ৭ নভেম্বরের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘদিনের। তারা ছিল সময়ের অপেক্ষায়। দীর্ঘদিন থেকেই তাহের ও জাসদ গোপনে সেনাবাহিনীতে সৈনিক সংস্থা লালন করেছিল। এমনকি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা না হলেও জাসদ অভ্যুত্থান ঘটাতো।

৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের পর ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় রেডিও-টিভি বন্ধ রাখা, জাতিকে অন্ধকার আতঙ্কে ঠেলে দেয়া, মুশতাক গংদের হাতে ৪ নেতা হত্যা, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খালেদের সিদ্ধান্তহীনতা- সব মিলিয়ে দেশে তৈরি হওয়া শাসরুদ্ধকর অবস্থার সুযোগে তাহের ৭ নভেম্বর হটকারী অভ্যুত্থান ঘটায়। কিন্তু তাদের অভ্যুত্থানে অফিসার-জওয়ানের রক্ত ঝরলেও তারা ৭ নভেম্বর দিনটিই পার করতে পারেনি। সকালে জিয়া মুক্ত হয়ে জাসদকে সহযোগিতার আশ্বাস, দুপুরের মধ্যে জলিল-রবকে মুক্তির নির্দেশ ও বিকাল ৩টায় শহীদ মিনার থেকে জাসদের লংমার্চে যোগদানের ঘোষণাও দিলেন। কিন্তু দুপুর না গড়াতেই জিয়ার চোখ-কান খুলে গেল। দেখলেন ক্যান্টনমেন্টের বাইরে সৈনিকদের গাড়িতে মুশতাককে দেখা গেলেও রাজপথে জাসদের জনবল নেই।

অন্যদিকে ক্যান্টনমেন্টে জিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। তাই জিয়া তাহেরের সঙ্গে সম্পাদিত প্রেমের চুক্তিনামা ছুড়ে ফেলে দুই ট্রাক সৈন্য পাঠিয়ে শহীদ মিনারে লংমার্চে আসা জাসদ কর্মীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিলেন। অদূরে মুশতাকের ছবি নিয়ে যারা এসেছিল তারাও তাড়া খেল। তাই জাসদ জিয়াকে বিশ্বাসঘাতক বলতেই পারে। কিন্তু সেনা ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না হতে জিয়ার সামনে বিকল্পই বা কি ছিল? বিএনপিও এ কারণে দিনটিকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস বলে।

প্রকৃত মূল্যায়ন ইতিহাস করবে। জাফর ইমাম বলেন, ৩ নভেম্বর বঙ্গভবনে অভ্যুত্থানের নায়ক খালেদ খুনি মুশতাকের সঙ্গে দর-কষাকষি করছিলেন। সেদিন মুশতাক যখন কেবিনেট বৈঠক করছিলেন তখন কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে তারা ভিতরে ঢুকে পড়েন। মুশতাক দুই পা রাষ্ট্রপতির চেয়ারে তুলে উঠে বসেন। মন্ত্রীরা গোলটেবিলের নিচে ঢুকে বলছিল- ‘আমরা জেলহত্যার প্রতিবাদে পদত্যাগ দিয়েছি’।

টেবিলে তখন অনেকগুলো পদত্যাগপত্র। এ সময় তারা মুশতাকের দিকে এগিয়ে যান এই বলে ‘ইউ হ্যাভ সিন ডালিম, ইউ হ্যাভ নট সিন দ্য ফাদার অব ডালিম’। মুশতাককে এসকর্ট করে দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন জেলহত্যার জবানবন্দি নিলে মুশতাক তার সংশ্লিষ্টতার কথা এমনকি জেলগেটে ঘাতকদের প্রবেশে টেলিফোনে নির্দেশের কথা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু খালেদ তখনকার পরিস্থিতিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে ঘাতকদের এবং তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর চাপে দেশ ছেড়ে রেঙ্গুন চলে যাওয়ার অনুমতি দেন।

এটা সঠিক ছিল কিনা জানি না। তবে জেলহত্যার প্রতিবাদে সেদিন বাইরে কোথাও প্রতিবাদ মিছিল হলো না। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সারাদেশে প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেদিন আমি সেনাদের চোখে অশ্র“ দেখেছি। গোটা সেনাবাহিনীকে ঘুমন্ত রেখে কয়েক কর্মকর্তা কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটায়।

এর দায় সেনাবাহিনী নেয়নি। সেনানিবাস আক্রান্তের আশঙ্কায় নিরাপত্তা নেয়া হয়েছিল। সেদিন প্রতিবাদের ঝড় উঠলে ডালিমের কাছে শফিউল্লাহর আত্মসমর্পণ করে মুশতাকের প্রতি আনুগত্য দেখাতে হতো না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জিয়া নিয়ে বিতর্ক অহেতুক ও অমূলক। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, হিমালয়সম ভাবমূর্তি, নেতৃত্ব ও অভিভাবকত্ব বাঙালি জাতিকে এমন বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল যে, তার প্রতি আবেগ ও অনুভূতিকে প্রেরণা ও শক্তি হিসেবে নিয়ে সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে মরণপণ লড়েছে।

তাকে নিয়ে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছে। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে যেমন মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য দেখা যায় না তেমনি ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারতবাসীর ভূমিকা না থাকলে যুদ্ধ কতদিন হতো, পরিস্থিতি কী দাঁড়াত বলা যায় না। আমাদের মাতৃভূমির জন্য ভারতের সৈনিকদের জীবনদান গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা প্রয়োজন। ’৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ফিরে না এলে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হতো তেমনি ভারতীয় সৈন্য এত দ্রুত চলে যেত না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.