আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হোমিওপ্যাথির উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য



হোমিওপ্যাথির উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য মোঃ আছাদুজ্জামান মাসুম ডি.এইচ.এম.এস. (৩য় বর্ষ) বি.এইচ.বি., ঢাকা। ওয়েব প্রোগামার, রাইটার ০১১৯৫৩১৮০৪৬, ০১৭১৯২২০৬৪০ হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক জার্মানীর ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩ ইং)। হ্যানিম্যানের পিতা ছিলেন একজন সৎ, বিচক্ষণ এবং ধার্মিক ব্যক্তি। ফলে ভালো এবং মন্দ, পাপ এবং পূণ্য, সরলতা এবং কুটিলতা ইত্যাদি স¤পর্কে পরিষ্কার ধারণা তিনি বাল্যকালেই হ্যানিম্যানের মনে দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিয়েছিলেন। তাই শিশুকাল থেকেই হ্যানিম্যান ছিলেন অত্যন্ত সরল, সৎ, ধৈর্যশীল, স্থির ও শান্ত স্বভাবের।

তিনি বাল্যকাল থেকেই অধ্যয়নশীল, জ্ঞানানুরাগী ও সত্যানুসন্ধিৎসু ছিলেন। পিতার উপদেশ এবং শিক্ষকদের উৎসাহ ও সহযোগীতা হ্যানিম্যানের শিক্ষা ও কর্মজীবনে সীমাহীন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। তিনি চিকিৎসক হিসেবে বেশ কয়েকটি চাকুরিতে যোগদান করেন কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের অপুর্ণতা এবং ব্যর্থতা লক্ষ্য করে ডাক্তারী পেশার প্রতি ধীরে ধীরে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে থাকেন। কেননা তিনি লক্ষ্য করেন যে, ঔষধের ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফলে রোগীদের স্বাস্থ্য মারাÍকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, অধিকাংশ রোগই ঔষধে নিরাময় হয় না, যে রোগ তিনি সারিয়ে দিচ্ছেন, একই রোগ নিয়ে কিছুদিন পরে রোগীরা পূণরায় ফিরে আসছে। ফলশ্র“তিতে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ডাক্তারী পেশা বর্জন করেন এবং তাঁর পরিবারের সৎ উপায়ে ভরণপোষনের জন্য ফুল-টাইম ভিত্তিতে অনুবাদকের পেশা গ্রহন করেন।

১৭৯০ সালে ডাঃ উইলিয়াম কালেন এর মেটেরিয়া মেডিকা অনুবাদ করার সময় উক্ত পু¯তকে লেখা ছিল যে, পেরুভিয়ান বার্ক (সিঙ্কোনা) কম্প জ্বরের ওষুধ, পাকস্থলির ওপর বলকারক ক্রিয়া প্রকাশ করে জ্বর ভাল করে থাকে। তিনি সুস্থ্য শরীরে কয়েকদিন স্থুলমাত্রায় সিঙ্কোনা খেয়ে শরীরের তার ক্রিয়া পরীক্ষা করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, কাঁপুনি দিয়ে শুরু হওয়া সবিরাম জ্বর তাঁর শরীরে সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে সূক্ষমাত্রায় আবার তিনি ঔষধ হিসেবে সিঙ্কোনা সেবন করতে থাকলেন এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হলেন। হ্যানিম্যান অবশেষে তাঁর পরীক্ষার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন, ”সবিরাম জ্বরের ওষুধ হিসেবে পেরুভিয়ান বার্ক (সিঙ্কোনা) কাজ করে, কারণ সুস্থ মানুষের শরীরে তা সবিরাম জ্বরের সদৃশ লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।

এ ঘটনা থেকে হ্যানিম্যান প্রমাণ করেন যে, কোন ওষুধকে সুস্থ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে পরীক্ষা করলে যে সব লক্ষণ সৃষ্টি করে, অনুরূপ সদৃশ লক্ষণের রোগীকে সেই ওষুধ আরোগ্য করতে পারে। এখান থেকেই হোমিওপ্যাথির সূত্রপাত। তিনি তাঁর এই নতুন আবিষ্কারের নাম দেন সদৃশ বিধান বা হোমিওপ্যাথি। একমাত্র সদৃশ নিয়ম অনুসারেই রোগী আরোগ্য লাভ করে, হোমিওপ্যাথির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটাই। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে সমাজে ভুল কথা প্রচার আছে, হোমিও ঔষধ ধীরে ধীরে কাজ করে।

অথচ বাস্তব সত্য হলো, হোমিও ঔষধ পুরোপুরি লক্ষণ মিলিয়ে দিতে পারলে সেটি খুব দ্রুত কাজ করে। হোমিওপ্যাথি একমাত্র বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। হোমিওপ্যাথির রয়েছে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক নীতিমালা বিগত দুইশ বছরেও যার কোন পরিবর্তন হয়নি এবং কখনও রদবদল হবে না। হোমিওপ্যাথিতে একই ঔষধ দু’শ বছর পূর্বে যেমন কার্যকর ছিল, আজও তা সমানভাবে কার্যকর। হোমিওপ্যাথিকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ বা সামগ্রিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অথবা মনো-দৈহিক গঠনগত চিকিৎসা বিজ্ঞান।

অর্থ্যাৎ এতে কেবল রোগকে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করা হয়না বরং রোগীকেও লক্ষ্য করে চিকিৎসা করা হয়। রোগীর শারীরিক এবং মানসিক গঠনে কি কি সমস্যা আছে, সেগুলোকে একজন হোমিও চিকিৎকসক খুঁজে বের করে তার সমাধানের চেষ্টা করেন। রোগটা কি জানার পাশাপাশি তিনি রোগীর মন-মানসিকতা কেমন, রোগীর আবেগ-অনুভূতি কেমন, রোগীর পছন্দ-অপছন্দ কেমন, কি ধরণের স্বপ্ন দেখে, ঘামায় কেমন, ঘুম কেমন, পায়খানা-প্রসাব কেমন, অতীতে কি কি রোগ হয়েছিল, বংশে কি কি রোগ বেশী দেখা যায়, রোগীর মনের ওপর দিয়ে কি কি ঝড় বয়ে গেছে ইত্যাদি জেনে রোগীর ব্যক্তিত্ব বুঝার চেষ্টা করেন এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ নিবর্’াচন করেন। এই কারণে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এমন রোগও খুব সহজে সেরে যায়, যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কল্পনাও করা যায় না। একজন হোমিও চিকিৎসক রোগীর শারীরিক কষ্টের চাইতে মানসিক অবস্থাকে বেশী গুরুত্ব দেন।

কেননা হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, অধিকাংশ জটিল রোগের সূচনা হয় মানসিক আঘাত কিংবা মানসিক অস্থিরতা, উৎকন্ঠা এবং দুঃশ্চিন্তা থেকে। মোটকথা মারাতœক রোগের প্রথম শুরুটা হয় মনে এবং পরে তা ধীরে ধীরে শরীরে প্রকাশ পায়। এজন্য হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলতেন যে, মনই হলো আসল মানুষটা। পৃথিবিীতে একমাত্র হোমিও ঔধধই সুস্থ একজন মানুষের শরীর ও মনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করা হয়েছে। এই কারণে হোমিও ঔষধ মানুষের শরীর ও মনকে যতটা বুঝতে পারে, অন্য কোন ঔষধের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

রোগের নাম যাই হোক না কেন রোগীর শারীরিক-মানসিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ঔষধ সেবন করলে রোগ নিরাময় যে সম্ভব তা পরীক্ষিত। রোগীর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সমস্ত লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে এবং তার মনের গভীরে যত ঘটনা-দূর্ঘটনা জমা আছে, তার সবটুকু জেনে নিতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করে খাওয়াতে হবে। প্যাথলিজীক্যাল টেষ্ট হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদেরকেও রোগের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তথ্য পেতে সহায়তা করে থাকে। হোমিওপ্যাথি কেবল রোগের নয়, সাথে সাথে রোগীরও চিকিৎসা করে থাকে।

হোমিও ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই বললেই চলে। হোমিওপ্যাথি রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। হোমিওপ্যাথি মানুষ, পশু-পাখি, জীব-জন্তু, বৃক্ষতরুলতা সকলের ক্ষেত্রেই সমানভাবে কার্যকর এবং নিরাপদ। হোমিওপ্যাথিতে রোগের সঠিক মূল কারণটিকে দূর করার চিকিৎসা দেওয়া হয়। হোমিও ঔষধ প্রয়োগ করা হয় খুবই সুক্ষ্ম মাত্রায় যা শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বৃদ্ধি করার মাধ্যমে রোগ নিরাময় করে।

বেশীর ভাগ হোমিও ঔষধ তৈরী করা হয় গাছপালা থেকে বাকীগুলো তৈরী হয় ধাতব পদার্থ, বিভিন্ন প্রাণী এবং রাসায়নিক দ্রব্য থেকে। হোমিও ঔষধ মানুষের জন্মগত নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে সাহায্য এবং শক্তিশালী করার মাধ্যমে রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধ করে। হোমিও ঔষধ দীর্ঘনি সেবনেও এমন কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় না যাতে পরবর্তীতে সেটি বন্ধ করে দিলে শরীরে কোন সমস্যা দেখা দেয়। কম খরচে এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে কম কষ্ট দিয়ে রোগ নিরাময়ের সর্বশেষ এবং সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি হলো হোমিওপ্যাথি। হোমিওপ্যাথি বিধান মতে রোগ হচ্ছে কু-মননের ফল।

শয়তানই এই কু-মননের ইন্ধন জোগায় এবং পরবর্তীতে ইহা কুকার্যে পরিণত হয়। প্রকৃতির বিরুদ্ধে বা আল্লাহ্তায়ালার বিধানের লঙ্ঘন করলে আমরা রোগাক্রান্ত হবই। আর তাই হচ্ছি। এটা সৃষ্টির শুরু থেকে আদি পিতা আদম (আঃ) এবং আদি মাতা হাওয়া (রাঃ) এর ওপর ইবলিশ শয়তান এর কুপ্ররোচনা থেকেই এ প্রচলন চলে আসছে। তাছাড়া উত্তেজক ও পরিপোষক কারণ থেকে ও আমাদের রোগের সূত্রপাত বা বৃদ্ধি হচ্ছে।

আমরা যদি রোদ, বৃষ্টি, ধূলাবালি এবং যে সব খাবার আমাদের রোগের বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে তা থেকে নিজেকে বিরত রাখি তাহলেও আমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারি। আমরা কোরআন এবং হাদীসের পরিপন্থি কোন কাজ করবনা এই প্রত্যাশা যেন থাকে সবার মনে। আল্লাহ সমস্ত রোগের প্রতিকারের ব্যবস্থা রেখেছেন। রোগ-ব্যাধি আল্লাহর তরফ থেকে আসে এবং ঔষধ খাওয়া সুন্নাত। তদুপরি ঔষধের রোগ সারাবার কোন ক্ষমতা নেই, যদি আল্লাহর দয়া না হয়।

আল্লাহর দেয়া বিধান লংঘন করার কারণেই সারা পৃথিবী জুড়ে রোগের প্রকোপ। রোগ এমন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা যার মতো সমস্যা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। তাই আসুন প্রথমত আমরা কোরআন ও হাদিসের পথ অনুসরণ করে চলি এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ না করি। তাহলে হয়ত আমরা আল্লাহর অশেষ রহমতে এই সুন্দর পৃথিবীতে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করতে পারব এবং আল্লাহর ইবাদত ও খিদমতে খালক অর্থ্যাৎ আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করতে পারব। পরিশেষে আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় বন্ধু হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ওসীলায় আমাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করে ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবি দান করুন এবং হোমিও ঔষধের মাধ্যমে রোগমুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন।

আমিন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।