আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুদে বিঞ্জানী তারেক ভাই

sorry vai

আমি যদি আবৃত্তি করি, "বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই" অমনি তারেক ভাইয়া ভেংচি কেঁটে বলে, " উ: চাঁদ কি কখনও বাঁশবাগাছের আগায় ওঠে? যতসব আজগুবি কথা। " আবার যখন পড়ি," মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাঁচি নাঁচি, দাড়াও না একবার ভাই" তখনও ধমক দেয়, "গাঁধা মৌমাছি কি মানুষের কথা বুঝে? যতসব অবৈঞ্জানিক ধারণা। " কবিতাকে এভাবেই খোঁচা দেয় তারেক ভাই। আমার প্রচন্ড খারাপ লাগলেও বলতে পারতাম না কিছুই। কারন আমি জানি যে চাদ কখনও বাঁশগাছের আগায় ওঠেনা আর মৌমাছিও মানুষের কথা বুঝে না।

তবু ভীষণ ভাল লাগে বলেই কবিতা পড়ি। ভাইয়ার এমন আক্রমনে আহত হয়ে দেয়ালে ঝুলানো রবিঠাকুর নজরুলের ছবির সামনে গিয়ে তাই মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আহা, উনারা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে ভাইয়ার মুখের উপর উচিত জবাবটা দিয়ে দিতেন। তারেক ভাইয়া ক্ষুদে বিঞ্জানী। সব জিনিসেই তাই যুক্তি খোঁজেন।

নিউটন সাহেব নামক এক বিঞ্জানী আপেল কেন অন্য কোন দিকে না গিয়ে নিচে পড়লো জাতীয় প্রশ্ন করায় তার সুযোগ্য উত্তরসুরি তারেক ভাইয়াও তাই এরকম আজগুবি প্রশ্ন করে আমাকে জর্জরিত করে বেশ মজা পায়। একবার আমাকে বলে, আকাশ কেন নীল হয়জানিস? আমি তো হা। াাকাশ নীল না হয়ে কি খয়েরি বেগুণী হবে নাকি? কি সব ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে আমাকে বৈঞ্জানিকভাবে বুঝিয়ে দিল আকাশ নীল ছাড়া অন্য রঙের হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। ভাইয়রি ঘরভর্তি নানা রকম জিনিসপত্র। ছোটখাটো গবেষণাগার বলা চলে।

ব্যাঙ কাটার যণ্ত্র থেকে শুরু করে এসিড পর্যন্ত কি নেই। গোপনে ব্যাঙের নাড়িভুড়ি কেটে বের করে দাঁত কেলিয়ে দানবের মত হাসে। আর আমি আক্রান্ত ব্যাঙের যন্ত্রণার চিন্তায় অস্থির। এটার সাথে ওটা মিশিয়ে গ্যাস বানিয়ে দিব্যি বেলুন উড়িয়ে দেয়। একদিন তো আমাকে এক আজব সমস্যায় ফেলে দিল।

এক বাটি পানিতে একটা কয়েন ছেড়ে দিলে হাত না ভিজিয়ে খালি হাতে কয়েনটা উদ্ধার করতে পারবি? আমার চোখ তো কপালে উঠার যোগাড়! হাত না ভিজিয়ে আবার পানি থেকে পয়সা তুলে কিভাবে? আমার হা করা মুখ গহব্বর দেখে বেশ তৃপ্তি সহকারে বিদঘুটে হাঁসি হেসে এবারও সে আমার কবিতাকেই আঘাত করে বসলো, এমন অসম্ভব ব্যাপার কবিতা টবিতা দিয়ে সম্ভব করা যায়না, বুঝলি গাধা? আমি চুপ। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি। একটা হরলিক্সের খালি বোতলে এক টুকরা কাগজে আগুন ধরিয়ে ছেড়ে দিল। তারপর ওটা উপুড় করে পানিভর্তি বাটিতে ধরতেই সব পানি যাদুর মত বোতলে ওঠে এলো। ভাউয়া তারপর বীরের মত হাত না ভিজিয়েই পয়সাটা তুলে আনলো।

আমার কবিতাকে আরেক ঘা বসিয়ে দিতেও ভুললোনা। আমি কিন্তু ভাউয়ার প্রতিভায় অবাক হলাম। তাকে সেদিন থেকে নিউটনের চেয়ে বড় মাপের বিঞ্জানী হিসেবেই গন্য করা শুরু করলাম। কিন্তু সে আমাকে আহতই করে গেল। তার ব্যাক্তিগত গবেষণাগারেও আমার প্রবেশের উপর কড়া নিষেধাঞ্জা আরোপ হল।

কেননা, আমার মত গাঁধাদের ও ঘরে প্রবেশ বিঞ্জান জগতের জনৗ বিরাট অসম্মানের ব্যাপার। আমিও নিরবে মেনে নিয়ে দিন কাটাতে থাকলাম। এভাবে অনেকদিন। আমি বড় হলাম। ক্লাস এইট তেকে নাইনে উঠব।

ভাইয়াও ততদিনে কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে পা দিয়েছে। একদিন পূজার ছুটিতে বাড়ী এলো। বিমর্ষ দেখাচ্ছে ভাইয়াকে। আমি আশেপাশে ঘুরঘুর করছি। কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা।

হঠাৎ সে ই আমাকে নরম স্বরে কাছ ডেকে নিল। তারপর যা বলল তা একেবারে অকল্পনীয়্। নিচু স্বরে বলল, তোর কাছে কিছু ভাল কবিতার বই হবে? আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বিনয়ের সাথে বলল, জীবনানন্দ হলে ভাল হয়। আমি আরও অবাক।

নিউটন আইনস্টাইনদের দ্বারা আচ্ছন্ন চোখে জীবনাননন্দের ছায়া সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার। আমার ভেতরে জিঞ্জাসা বেড়েই চলছে। বিঞ্জাণীর হঠাৎ কবিতার প্রয়োজন! আমি তবু চুপ। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বিব্রত ভঙ্গিতে বললো, " ভার্সিটিকে করবী নামের এক মেয়ের সাথে কথা হয়। ওকে আমার ভাললাগে।

কি সুন্দর গড়গড় করে কবিতা আবৃত্তি করে। আমি হা করে চেয়ে থাকি। তাল মিলাতে পারিনা। ভীষণ কষ্ট হয় তখন। " আমি কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে একগাদা কবিতার বই এনে সামনে হাজির করলাম।

যাবার সময় একটুখানি টিপ্পনি কেটে বললাম, "সব অযৌক্তিক ব্যাপারগুলো করবী আপার মুখে গিয়ে যৌক্তিক হয়ে গেল বুঝি!"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।