আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোরকা বনাম পাশ্চাত্য কালচার

দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি... বুক পাঁজর আজ ফাঁকা। দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়... দুঃখের ছবি আঁকা।
"বোরকা পোশাক না। কালচার না। এটা নিয়ম।

" চরম উদাসের একটা কোট দিয়ে শুরু করলাম। লিঙ্ক দিলাম নিচেঃ বোরকা না বিকিনি - What is Dress ?? "বোরকা বনাম পাশ্চাত্য কালচার" বলে আমি ২ টিকে মুখোমুখি করার ইচ্ছা পোষণ করছি না বরং এই তুলনা যে নেহায়াতই অযৌক্তিক সেইদিকে ইঙ্গিত করার একটা ফেইল্বড এটেম্পট নিচ্ছি বলা যায়। স্বেচ্ছায় বোরখা পরিধানকারী নিয়ে আমার কোন কথা নাই, কিন্তু বেশিরভাগই পারিবারিক অনুশাসন/ধর্মীয় অনুশাসন থেকে বোরকা পরেন বা পর্দা করেন । অনেকে তর্ক টানবেন গ্রামের মহিলারা নিজ ইচ্ছায় বোরকা পড়েন, আমার মতে ইহা ভুল নিজের ব্যাখা হল গ্রামের মেয়েগুলো এই স্পেসিফিক কালচারেই বড় হয়, তাদের পায়ে বেড়ি পরানো শহুরে স্বাধীনচেতা মেয়েগুলোর চাইতে সোজা। অনেকে লজ্জা থেকে বোরকা পড়েন ( মুরিব্বি চাচি, ফুপি, নানুদের দেখছি ) তাদেরো আমি এই আওতায় আনছি না।

বোরকা পরার পক্ষে বিপক্ষে মত থাকবেই, আমার মত বোরকার বিপক্ষেই কিন্তু আর সবার মত পাশ্চাত্য পোশাক পরা গেলে কেন বোরকা নয় এই তুলনা টা কেমন জানি মানায় না, যেমনটা বলছেন চরম উদাসের টেবিলক্লথ আর সিন্দুকের তুলনায়, এটা হয়তো আমার খানিক নারীবাদি চিন্তারই ফল। যাক, একটা ছোট্ট ঘটনা বলি নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে, আমার মা অনেক প্রগতিশীল মহিলা, তিনি এই বয়সে (৫৬বছর) পি এইচ ডি করছেন রাজনীতির পাশাপাশি, সাথে প্রচণ্ড ধার্মিকও বটে, আমি এইবার দেশে আসার পর মায়ের পরিচিত এক ভদ্রলোকের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে একটু বিরক্তি প্রকাশ করি আম্মার কাছে কয়েকদিন আগে, শুনে আমার মা প্রথম কথাই যেটা বলল "এইজন্যই বলি গায়ে ওড়না ঠিক করে দাও!" "ওইলোকের সামনে তোমার ওড়না ঠিক ছিলো না, তোমার দোষ নাই, বাইরের দেশে এইসব ব্যাপার না, তোমার অভ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে আর ওইখানে কেউ তাকায় না কিন্তু দেশের লোকজন লক্ষ্য করে"। আম্মার সাথে কিভাবে এই করেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ঘরে ঘরে মেয়েগুলো আটকে যাচ্ছে এইটা নিয়ে বিশাল তর্ক দেয়া যেত কিন্তু আমি জানি আম্মা প্রটেকশন সেন্স থেকেই বলেছে সো কথা বাড়াই নাই। কিন্তু কথা হল পাশ্চাত্য কালচাল নিয়ে আমাদের এত ভয় কিন্তু আমার মাই স্বীকার করছে সেখানে কেউ তাকাচ্ছে না, আর আমরা এত ঢেকেও ধর্ষণ বন্ধ করতে পারছি না। তাহলে সমস্যা টা আসলে কোথায়? (উল্লেখ্য আমি দাবী করছি না পাশ্চাত্যে ধর্ষণ হয় না, অনেকের ভাষ্যমতে আমাদের দেশের চাইতে নাকি বেশী হয়!, একটু মনে করিয়ে দিতে চাই ওইসব দেশে ইন্সিডেন্টগুলো অধিকাংশ সময় রেকর্ড করা হয়, আমাদের দেশে চক্ষুলজ্জার ভয়ে/ টাকার জোরে গোপন করা হয়, তাই এই পরিসংখ্যানের তুলনা টা আমার কাছে সর্বদাই যুক্তিহীন লাগে) এবার এক বান্ধবীর কথা বলি, সে একটা অদ্ভুত কিন্তু সত্য যুক্তি দিয়েছিলো, তার ভাষ্যমতে সে যেদিন উগ্র(!) পোশাক পড়ে বের হয় সেইদিন কেউ টিজ করলেও গায়ে হাত দিবার সাহস করে না, কিন্তু কোয়াটার স্লিভ ফুল হাতা জামা পড়ে বের হলেই তাকে আক্রান্ত হতে হয়েছে, এই ব্যাপারে তার যুক্তি হল গায়ে ভদ্র পোশাক থাকলে লোকে ভাবে কিছু বলবে না, উগ্র(!) পোশাক পড়লে চড় খাবার বা অপদস্ত হবার আশংকা থেকেই যায়! খেয়াল করবেন উগ্র কথাটা একটু এক্সক্লেমেটরি সাইন দিয়ে বলছি কারন উগ্রতা কথাটা প্রেক্ষিত ভেদে পরিবর্তন হয়, গুলশানের পার্টিতে যা শালীন তা হয়তো দিনের বেলা মোহাম্মদপুরের রাস্তায় শালীন নয় দেশের পরিস্থিতিতে, কিন্তু শালীনতা অশালীনতা নিয়ে কথা বলার আগে কয়জন রাতে নীল লাল ছবি দেখে আর সেটা কতটুক শালীন কেই বা ভাবে? কেউ দেখছে না গোপনে করলে শালীন কিন্তু একখানা স্লিভলেস টপের সাথে হাঁটু ঢাকা প্যান্ট পড়ে বের হলে "টাকনু" কেন ঢাকা নাই জাতি রসাতলে গেল বলে জীবন বাহির করে ফেলা ঠিক কেমন? পবিত্র কুরানেও পর্দার কথায় নারী পুরুষ দুজনের কথাই বলা হয়েছে, নারীর বুকে চাদর স্থাপনের পরের আয়াতেই পুরুষের দৃষ্টি সংযত রাখতে বলা হয়েছে।

বোরকার কথা কোথাও বলা হয় নাই। হু তবে অনেকে শারীরিক অবয়ব ঢাকার জন্য এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য বোরকা পরেন। সেই ব্যাপারে তর্ক নাই। কোরানে দু পক্ষকেই লজ্জাস্থানের হেফাযত করতে বলা হয়েছে, তাহলে নারী বোরকা পরার সাথে সমানহারে পুরুষের আলখাল্লা পড়ার হার বাড়ছে না কেন জানতে মুঞ্চায়! মিতা হকের বোরকা মানেই বাঙ্গালী নয় এই কথায় যেমন আমার আপত্তি একইভাবে হেফাজতের হিজাবে ঊদবোদ্ধকরণ নীতিতে সমর্থন দিতে পারি না। মিতা হকের বক্তব্য যেই পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে হোক না কেন প্রজেন্টেশন ভুল ছিলো তার, কিন্তু তার যোক্তিক সমালোচনা না করিয়া গালাগাল করে দেশ ছাড়া করিতে চায় যারা তাদের প্রতি সমর্থন জানাইতে পারতেসি না বলে ক্ষমা চাইতেসি।

তার বক্তব্য প্রেক্ষিতে সচেতন জনসাধারণ (!) এর মন্তব্য দেখলে বুঝা যায় দেশ আসলে কৈ আছে? সর্বোপরি বলতে চাই জায়গা ভেদে আমিও কখনো এক পাশে ওড়না দেই আবার কখনো গায়ে পেঁচিয়ে মাথায় কাপড় দেই, মুরুব্বী দেখলে সালাম দেই কিন্তু মুরুব্বী বিশেষ কোন দিকে নজর দিচ্ছে বলে বুঝতে পারলে মাথা উঁচু করে সালামের গুষ্টি কিলায়ে হেঁটে যাই। আমরা সবাই ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে জীবনের ফিলসফি ঠিক করি। আমাদের সবাই চিন্তাই আল্টিমেটলি বায়াসড। বোরকার প্রতি আরক্তি কিংবা বিরক্তি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কারনেই আসে। কিন্তু তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করমের আস্ফলন এক্সটিমিজমকেই আস্কারা দিবে।

মিতা হকের বক্তব্য বিপক্ষে পুরুষ সমাজকেই (নারীবেশি ছাইয়া অন্তর্ভু্ভুক্ত) আস্ফলন করতে দেখা যায়, নারীর ইজ্জত বোরকা পড়াইয়া বাঁচাইবার জন্য তারা কেমন উন্মুখ হয়া ওঠেন কিন্তু নারী মন্তব্যকারী মিতা হককে বেশ্যা বলতে ভুলেন না কিংবা রাস্তার শালীন পোশাকের মেয়েটিকে টিজ করতে ছাড়েন না, ১৮ ঊর্ধ্ব পাতা গুলোতে হয়তো নিয়মিত ঢুঁ মারেন। সত্যি সেলুকাস! কি বিচিত্র এই নগরী! সবশেষে শরীফুদ্দিনের গানের একখানা লিঙ্ক দিয়া প্রমাণ করিতে চাই যে বোরকা পরাই পর্দা নহে! মনের আর চোখের পর্দাই আসল পর্দা!
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।