আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউনিপেটুইউ: সিলেটে গা বাঁচাতে মরিয়া গণ্যমান্যরা



সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি সিলেট: ইউনিপেটুইউ’র অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা দিয়ে এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন সিলেটের বিনিয়োগকারীরা। নিজেদের ভুলের জন্য একে অন্যকে দুষছে তারা। তবে দোষের ভাগীদার হতে রাজি নন গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তারা এখন নিজেদের গা বাঁচাতে মরিয়া। অথচ মাত্র ক’দিন আগেও এসব গণ্যমান্য ব্যক্তির কথার ওপর ভরসা করেই ইউনিপেটুইউর কথিত সোনা ব্যবসায় টাকা দিতে সিলেটজুড়ে হিড়িক লেগেছিল।

দ্বিগুণ লাভের আশায় সহায় সম্বল বিক্রি করে সাধারণ মানুষ তাদের সর্বস্ব জমা রাখছিল। অথচ এখন তারা নিঃস্ব হওয়ার আশঙ্কায় বুক চাপড়ানো শুরু করলেও দায় নিতে রাজি নন গণ্যমান্যরা। তাই লাভ দূরে থাক, মূলধন ফেরত পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা এখন ধর্ণা দিচ্ছেন ইউনিপেটু’র গোপন বুথগুলোতে। হন্যে হয়ে ছুটে যাচ্ছেন এজেন্টদের আস্তানায়, ঘুরছেন ব্যাংকের শাখায় শাখায়। কিন্তু এজেন্টরা রাতারাতি ভোজবাজির মতো হাওয়া হয়ে যাওয়ায় আরও বেশি মুষড়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

সিলেট থেকে ফিরে এসব চিত্রই তুলে ধরেছেন বাংলানিউজ’র সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সাঈদুর রহমান রিমন। গত ১১ মাসে ইউনিপেটুইউ’র অনলাইন অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখেরও বেশি টাকা জমা দিয়েছেন নগরীর সোবহানীঘাটের ডা. আনোয়ার হোসেন। গত কয়েক দিনে বাংলানিউজ’র ধারাবাহিক প্রতিবেদনে ইউনিপেটুইউ’র প্রতারণা ব্যবসার গোমর ফাঁস হওয়ায় সিলেটজুড়ে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, তাতে নিজের ভুলটা ভালোই ধরতে পেরেছেন তিনি। তবে বিশেষ লাভ হয়নি তার। বরং ঘোর বিপদের আশঙ্কায় দিন কাটছে তার।

গত চার মাসে আড়াই লাখ টাকা তুলতে পারলেও বাকি টাকা তোলার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। পাগলের মতো এখানে ওখানে ছুটছেন, এজেন্টদের খুঁজছেন। কিন্তু কাউকেই খুঁজে পাচ্ছেন না। ডা. আনোয়ার যে শুধু নিজে প্রতারিত হয়েছেন তাও নয়। তার কথায় আস্থা রেখে আরও অনেকেই নাম লিখিয়েছেন এ প্রতারণার ব্যবসায়।

সোবহানীঘাট শিশুপার্ক এলাকার বাসিন্দা আলকিছ চৌধুরী, লুৎফুন্নাহার, মতিউর রহমান, মেজবাহউদ্দিন, কলেজ ছাত্র রুবেলসহ কয়েকজন বাংলানিউজকে বলেন, ডাক্তার সাহেবের কথা বিশ্বাস করেই এক দেড়শ’ মানুষ বহু টাকা জমা দিয়েছি। টাকাগুলো মার গেলে আমরা তাকেই ধরব। তবে ডা. আনোয়ারের ভাইয়ের ছেলে সামসিদ আলী চাচাকে বাঁচাতে বলেন, ‘নিজেরা টাকা জমা দিয়ে ডাক্তার সাহেবের ওপর দোষ চাপালে তো চলবে না। কেউ তো ডাক্তার সাহেবের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেয়নি। যার অ্যাকাউন্টে দিয়েছে তাকে গিয়ে ধরুক।

’ শুধু সিলেট নগরীতেই নয়, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারেও বিনিয়োগকারীরা একে অন্যকে দুষছে। ইউনিপেটুইউ’র সোনা বাণিজ্যের প্রতারণার কথা ছড়িয়ে পড়ায় সুনামগঞ্জের গ্রাহকদের মধ্যেও হাহাকার শুরু হয়েছে। এ জেলার সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী রয়েছে জগন্নাথপুর থানায়। এ থানার সৈয়দপুর সিনিয়র আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রেজোয়ান আহমেদের তৎপরতায় ৫/৬ হাজার বিনিয়োগকারী কোটি কোটি টাকা ইউনিপেটুইউ’র অ্যাকাউন্টে জমা দেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষও ভোল পাল্টে ফেলেছেন।

রেজোয়ান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইউনিপেটুইউ নামের কোনো ভুয়া সংস্থার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। ওই সংস্থায় টাকা জমা রাখা হালাল কি হারাম, সেটাও আমার জানা নেই। ’ একজন শিক্ষক হিসেবে এ ধরনের ব্যবসায় নিজেকে জড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তবে এর সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রহমত আলী। তিনি বাংলানিউজকে জানান, সংস্থাটির দায়িত্বশীল কয়েকজনের পরামর্শে তিনি নিজে সদস্য হয়ে বেশ কিছু টাকা ইউনিপেটুইউ’র অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন।

তবে এখন পর্যন্ত কোনো লাভ বা টাকা ফেরত পাননি তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে বলেছি ঝুঁকি নিতে চাইলে নিজ দায়িত্বে টাকা বিনিয়োগ করেন। ’ সমাজের একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি হিসাবে কোনো খোঁজ খবর না করে অন্যকে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা উচিত কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে রহমত আলী বলেন, ‘ইউনিপেটুইউ’র সঙ্গে সম্পৃক্তরা সবাই ভাল ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। সংস্থার চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা সংস্থাটি ভুয়া নয় বলে আমাকে নিশ্চিত করেছেন। ’ তিনি নিজের অবস্থানকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে আরও বলেন, ‘আমার জানামতে বেশ কয়েকজন নগদ এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করেছে।

সেখানে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে ভয়ের কী আছে?’ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা চিন্তাহরণ দাসের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ইউনিপেটুইউ’র এ অবৈধ বাণিজ্যের প্রচারণা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত ওই শিক্ষা কর্মকর্তা কয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষকের বাসায় রীতিমত অফিস সাজিয়ে এ ব্যবসা চালাচ্ছেন। তার অধীনে উপজেলার ৭ শ’ শিক্ষক সরাসরি ইউনিপেটুইউ’র এজেন্টে পরিণত হয়েছেন। শিক্ষকদের বাসায় বাসায় গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিনিয়োগকারী (গ্রাহক) বানানোর তৎপরতা। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে চিন্তাহরণদাস বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ইউনিপেটুইউ’র একজন গ্রাহক মাত্র।

দাপ্তরিক ক্ষমতা খাটিয়ে কোনো শিক্ষককে ইউনিপেটুইউতে সম্পৃক্ত করার অভিযোগটি ডাহা মিথ্যা। ’ তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, সমাজের বিশিষ্ট লোকদের সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে ইউনিপেটুইউ সিলেটজুড়ে প্রতারণার জাল ছড়ায়। এসব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পাশাপাশি চিকিৎসক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দায়ী করে তারা বলেন, ‘এরাও ইউনিপেটুইউ চক্রের অন্যতম সদস্য। এখন ইউনিপেটুইউ’র প্রতারণা ফাঁস হতে থাকায় নিজেরা গাঢাকা দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। ’ তারা বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ল্যাপটপ কাঁধে মানুষের বাড়িতে হাজির হয়ে সহজ সরল মানুষকে নানা লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগে করতে আগ্রহী করে তুলেছে।

Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।