আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোমর ব্যাথা

প্রবাসী

কোমর ব্যাথাতে ভোগেন অনেকেই, অধিকাংশ পরিসংখ্যান মতে ৭০% লোকের ও বেশি জীবনের কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যাথাতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কোমর ব্যাথা কেন হয় ? চিকিৎসা বা প্রতিকার কি? এ জিঞাসা সব কোমর ব্যাথার রোগির ই। কোমর ব্যাথার কারনbr /> কোমর ব্যথা কোনো একক রোগ নয় বরং অনেক রোগেই কোমর ব্যাথা হতে পারে। অধিকাংশ (৮০-৮৫% ভাগ) ক্ষেত্রে কারন খুজে পাওয়া যায় না, যাকে বলা হয়"Non Specific Low Back Pain" বা Mechanical Low Back Pain"। কোমর এর অস্বাভাবিক অবস্থান বা পরিস্থিতি এর কারন বলা হয়ে থাকে ,যেমন বেশিক্ষন কোমরের অস্বাভাবিক অবস্থান ,ঝুকে পড়ে কাজ করা ,ভারি জিনিস তোলা, ইত্যাদি।

১৫-২০ ভাগ ক্ষেত্রে কোমরের প্রদাহ, টিউমার,বাত রোগ, আঘাত,বয়স জনিত, হাড় বা জয়েন্টের ক্ষয় রোগ যেমন Osteoporosis, Osteoarthritis ইত্যাদি। কোমরের হাড়,পেশি, ডিস্ক বা জয়েন্ যে কোনো টা থেকেই ব্যাথা হতে পারে। কোমরের বাইরের থেকেও খুব কম ক্ষেত্রে ব্যথার উৎপত্তি হতে পারে। কিডনী থেকে কি কোমরে ব্যাথা হয়? হতে পারে। তবে 0. ১% ভাগের ও কম ক্ষেত্রে কিডনিরোগ কোমর ব্যথার কারন।

আর প্রস্রাব পরীক্ষা বা কিডনির পরিক্ষা যেমন আল্ট্রাসোনোগ্রাফী, ইউরোগ্রাফি ইত্যাদিতে পরিক্ষায় কিডনী রোগ তো ধরা পড়বে। সুতরাং কোমর ব্যাথা কিডনী থেকে কিনা দুস্চিন্তা করা খুব যুক্তিপুর্ন নয়। কাদের কোমর ব্যথা বেশি হয়? ৩০ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সে কোমর ব্যথা বেশি হয় পুরুষ মহিলা সবার ই কোমর ব্যথা হতে পারে। পেশা:-যে সমস্ত পেশাতে অধিকক্ষন একনাগাড়ে বসে বা দাড়িয়ে থাকতে হয়,ঝুকে পড়ে কাজ করার দরকার পড়ে,- তাদের ঝুকি বেশি। শরীরের গঠন:-পেট মোটা , অত্যধিক ওজন,মহিলা, কর্মহীনতা,কম কায়িক পরিশ্রম ইত্যাদি ও কোমর ব্যাথার কারন।

মানসিক দুশ্চিন্তা,অবসাদ,সাংসারিক বা কর্মক্ষেএে অশান্তি ইত্যাদি ও আনুসন্গিক কারন। কোমর ব্যথা কি মারাত্মক রোগ? বেশিরভাগ ক্ষেএে নয়। নিচের ক্ষেএগুলোতে পরীক্ষা নিরীক্ষা ওচিকিৎসা করা জরুরীbr /> রোগির বয়স ২০ থেকে কম বা ৫৫ বছরের বেশি হলে। ওজন কমতে থাকলে বা জ্বর থাকলে। ব্যথা যদি রাতে বাড়ে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং বিশ্রামে ব্যথা না কমে বেড়ে যায়।

ব্যথার হেরফের না হয়ে খালি বাড়তে থাকে। প্রস্রাব পায়খানার নিয়ন্রন না কোরতে পারলে। পা বেশি দুর্বল বা অসাড় হলে বা এ গুলো ক্রমশঃ বাড়তে থাকলে। রক্ত পরীক্ষায় ESR ,CRP বেশী থাকলে। কি কি পরীক্ষা করা দরকার? প্রাথমিকভাবে:- কোমরের X-Ray, Blood routine test, urine routine Exam ই যথেষ্ট।

MRI এর দরকার আছে কি? পরীক্ষাটি ব্যায়বহুল এবং সবখানে পাওয়া যায় না। কোমর পরীক্ষাতে খুবই উপযোগী। কোমরের মাংশপেশী,ডিস্ক, হাড়, সমস্ত কিছুর দোষ ই নির্নয় সম্ভব। ডিস্ক প্রোলাপ্স , টিউমার, স্পাইনাল কর্ড,- এ গুলোর নির্নয়ে বিশেষ উপযোগি। X-Ray,MRI কতটা দরকার? খুব বেশী নয়।

X-Rayর অসুবিধা হলো মাএ ১০%ক্ষেএেX-Ray তে অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়ে। X-Ray, এর আরেকটা অসুবিধা হলো এ গুলোর সাথে রোগির উপসর্গের মিল খুজে পাওয়া যায় না অনেক যায়গায়। যেমন ৫০ বছরের পর প্রায় সবার ই হাড় ক্ষয় থাকে X-Ray বা MRI তে , কিন্ত এই বয়সের মাত্র৫% লোক কোমর ব্যথায় ভোগেন। X-Ray তে খরচ কম,প্রাথমিক পরীক্ষা হিসেবে করা যেতে পারে। MRI তে ২০-৪০% ক্ষেত্রে উপসর্গ না থাকলেও কিছু না কিছু অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে।

সুতরাং শুধু X-Ray, বা MRI এর ভিত্তিতে চিকিৎসা করা ঠিক নয়,এই রিপোর্ট গুলোকে রোগির অবস্থার সাথে মিলাতে হবে। কোমর ব্যাথার জন্য অপারেশান দরকার কিনা? অপারেশানের দরকার পড়ে ২% ভাগের কম ক্ষেত্রে। ডিস্ক প্রোলাপস হোলে অপারেশান করে ডিস্ক এর কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। ডিস্ক প্রোলাপসের অনেক ধরনের অপারেশান আছে, যন্ত্রের দ্বারা বা ছুরি কাচি চালিয়ে ডিস্ক কেটে ফেলা যেতে পারে। যন্ত্রের দ্বারা অপারেশন এ ক্ষতি কম এবং ফলাফল ভাল।

অপারেশনের তাৎক্ষনিক ফল ভাল কিন্ত দীর্ঘ কালিন ফলাফল, ততো উৎসাহব্যন্জক নয়। ডিস্ক প্রোলাপ্স কি? আমাদের মেরুদন্ড একটার পর একটা কশেরুকা (Vertebra) দিয়ে তৈরী। দুটো কশেরুকা র মধ্যে থাকে ডিস্ক(intervertebral Disc) আর ডিস্কের ঠিক পিছন দিয়ে নার্ভ গুলো নেমে যায় সারা শরীরে। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে ডিস্ক গুলো শক্ত ও ভংগুর হতে থাকে আর মেরুদন্ডের উপর চাপ পড়লে, যেমন ভারি জিনিস তুলতে গেলে, বা মেরুদন্ডের অস্বাভাবিক নড়াচড়াতে, বসা থেকে উঠে দাড়াতে গেলে, আঘাত পেলে এবং অনেক সময় স্বাভাবিক কাজকর্মতেই ডিস্ক পেছনের দিকে সরে গিয়ে নার্ভের উপর চাপ দিয়ে কোমর থেকে পায়ের পিছন দিয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত ব্যাথা করতে পারে। এ রকম এক নার্ভ হোলো সায়াটিক(Sciatic) নার্ভ, যেটা মরুদন্ডের ভিতর থেকে বেরিয়ে থাই এর পিছন দিয়ে চলে গেছে পায়ের পাতা অবধি।

এই নার্ভের মুলের উপর চাপ পড়তে পারে আর তখন কোমর থেকে উরুর পিছন দিয়ে পাতা অবধি ব্যাথা হয় , এটাকে বলা হয় সায়াটিকা, Sciatic নার্ভের ব্যাথা হল সায়াটিকা, কোমরের ব্যাথাকে বলে লাম্বাগো(Lumbago) আর দুটোকে একসাথে মিলিয়ে (Lumbago-Sciatica syndrome)লাম্বাগো সায়াটিকা সিনড্রোম। একিউট এবং ক্রনিক কোমর ব্যাথা:-আকস্মিক অল্প কিছুদিনের ব্যাথা হল একিউট এবং দীর্ঘকালীন বা ৩ থেকে ৬ মাসের বেশি কালের ব্যাথা হল ক্রনিক কোমর ব্যাথা বা ক্রনিক ব্যাক পেইন। দু ধরনের ব্যাথা কিন্ত আলাদা এবং এদের ফল ও কিন্ত দু রকম। একিউট কোমর ব্যাথা ৯৫% ভাগ ক্ষেএে এমনকি বিনা চিকিৎসায় ভাল হয়ে যায় ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে। ক্রনিক ব্যাক পেইনের চিকিৎসা কস্টসাধ্য এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরাপুরি সারে না।

কোমর ব্যাথার চিকিৎসা কি? সবচে' প্রথম কোনো কারন আছে কিনা তা বের করতে হবে। এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ এবং পরীক্ষার দরকার পড়তে পারে। আকিউট কোমর ব্যাথাতে :- বিশ্রাম(rest), ব্যাথার ঔষধ(analgesics), পেশী শিথিলকারী("Muscle relaxant"), ঘুমের ঔষধ, ভিটামিন,ইত্যাদি । বিশ্রাম: -শক্ত, সমান , বিছানায়, এক বালিশে ঘুমানো উচিত। বিশ্রাম ২/৩ দিনের বেশী নেওয়া উচিত নয়।

ব্যাথার কারনে একান্ত বাধ্য না হলে শুয়ে থাকা উচিত নয়। যথা শীঘ্র সম্ভব স্বাভাবিক চলাফেরা, কাজকর্ম শুরু করা ভাল। শক্ত মানে কাঠের উপর বা মেঝেতে ঘুমাতে হবে এমন নয়, একটা মাঝারি মানের তুলার তোষকে ঘুমানো যেতে পারে। আর খেয়াল রাখতে হবে বিছানা যেন সমান হয়। ফিজিওথেরাপী:-অধিকাংশ ফিজিওথেরাপী ব্যাথার উপশম করে।

আর এর ভাল দিক হল এটার পার্শ প্রতিক্রিয়া নেই। SWD(শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি), MWD(মাইক্রোওয়েভ ডায়াথার্মি), UST(আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপী), TENS(ট্রান্সকিউটেনাস ইলেক্ট্রিক নার্ভ স্টিমুলেশান) ,IRR(ইনফ্রারেড রেডিয়েশান)ইত্যাদি । এ গুলোর নিরাময় দীর্ঘ স্থায়ী নয়। প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক বার নেওয়া যেতে পারে। এ গুলো ধনন্তরী কিছু নয়।

ব্যাথার ঔষধ:- ব্যাথার জন্য ব্যাথা নিরাময়কারি ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এ গুলোর মধ্যে প্যারাসিটামোল, NSAIDS(Nonsteroidal Anti Inflammatory Drugs), যেমন:-ডাইক্লোফেনাক, ন্যাপ্রোক্সেন, আইবুপ্রোফেন ইত্যাদি। বেশী ব্যাথা হলে:-ট্রামাডোল,টাপেনটাডোল বা মরফিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মাংশপেশী শিথিলকারী ঔষধ যেমন:-টিজানিডিন, টলসোপ্রিন, ইত্যাদি ঘুমের ঔষধ:-যেমন ডায়াজেপাম, ব্রোমাজেপাম ইত্যাদি ভাল ঘুমের পাশাপাশি, মাংশপেশী শিথিল করে ও উত্তেজনা প্রশমনে সাহায্য করে। অবষাদ নিরাময়কারি ঔষধ :-যেমন অ্যামিট্রিপটাইলিন,নরট্রিপটাইলিন ব্যাথা নিরাময়ে সহায়ক।

এ গুলোর মানে এই নয় যে মানসিক রোগ ব্যাথার কারন। এই ওষুধগুলো ক্রনিক কোমর ব্যাথায় বিশেষ উপকারি। সহযোগী ব্যাথার ঔষধ যেমন গ্যাবাপেনটিন,প্রিগ্যাবালিন ঔষধগুলো ও ক্রনিক কোমর ব্যাথায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেএে উপকারি। সমস্ত ঔষধের ই পার্শ প্রতিক্রিয়া আছে।

সুতরাং যত কম ডোজ বা কম দিন খেয়ে পারা যায় তত ভাল। পার্শ প্রতিক্রিয়া গুলো হলbr /> প্যারাসিটামোল:- খুব খারাপ পার্শ প্রতিক্রিয়া নেই। লিভারের ক্ষতি করতে পারে। তবে খুব শক্তিশালী বেদনা নাশক নয়। NSAIDS(Nonsteroidal Anti Inflammatory Drugs);- কার্য কর ব্যাথা নিরাময়কারী এবং সবচেয়েবেশী ব্যাবহৃত হয়।

এগুলোর পার্শ প্রতিক্রিয়া হল:- গ্যাস্ট্রিক আলছার, কিডনীর জন্য ক্ষতিকর। গ্যাস্ট্রিক আলছারের ঔষধ যেমন: রেনিটিডিন, ওমেপ্রাজল,ল্যানসোপ্রাজল ইত্যাদি এই জাতীয় ঔষধের সাথে দেয়া উচিত। NSAIDS জাতীয় ঔষধ ঘুলোর মধ্যে, ছেলিকক্সিব,এটোরিকক্সিব ইত্যাদি ঔষধ পাকস্থলির ক্ষতি কম করে। ট্রামাডোল,টাপেনটাডোল ঔষধ গুলো:- বমি, মাথাঘোরা, দুর্বল লাগা করে। এগুলো বেশ শক্তিশালী এবং কিডনি বা পাকস্থলির ক্ষতি করে না।

১০%থেকে ২০%লোক এই গুলো সহ্য করতে পারেন না। মাংশপেশী শিথিলকারি ঔষধ গুলো থেকে দুর্বল লাগা থেকে মাথা ঘোরা হতে পারে। অনেকেই এ গুলো সহ্য করতে পারেন না। কোমরে ইনজেকশান:-ষ্টেরয়েড ওষুধ যেমন হাইড্রোকারটিসোন বা ট্রাইআমছিনোলোন, অসংবেদনকারী ওষুধের সাথে মিশিয়ে কোমরে ইনজেকশান দেয়া হয়। এটাকে বলা হয় এপিডুরাল ষ্টেরয়েড।

অনেক ক্ষেত্রে উপকারী কিন্ত অব্যর্থ কিছু নয়। সঠিক রোগি নির্বাচন জরুরী। অপারেশনের পুর্বে বিকল্প হিসেবে চেষ্টা করা যেতে পারে। ট্রাকশান:-কোমরে টানা দিয়ে রোগিকে শুইয়ে রাখা হয়। চিকিৎসাটি চেষ্টা করা যেতে পারে তবে খুব কম ক্ষেত্রে কার্যকর।

ঠান্ডা বা গরম সেক :-ব্যাথা নিরাময়ে সহায়ক। অ্যাকিউট কোমর ব্যাথায় ঠান্ডা এবং ক্রনিক কোমর ব্যাথায় গরম সেক বেশী সহায়ক। বরফের প্যাক, গরম প্যাক, ইলেকট্রিক প্যাড, পানির বোতল সব কিছুই ব্যবহার কার যেতে পারে । করসেট:-কোমরের সাপোর্ট হিসেবে করসেট ব্যব হার করা হয়ে থাকে। বেশিদিন ব্যব হার করা উচিত নয়।

করসেট এর সাথে ব্যায়াম করা জরুরি, না হলে কোমরের মাংশপেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কোমরের ব্যায়াম:-ক্রনিক কোমর ব্যাথায় বিশেষ উপকারী। আ্যকিউট কোমর ব্যাথায় ব্যায়াম করা উচিত নয়। একাধিক বিশেষঞ চিকিৎসা:-ইদানিং কালে দেখা গেছে যে, একাধিক বিশেষঞ চিকিতসা ক্রনিক কোমর ব্যথায় উপকারী,এটাকে বলা হয় "Multi disciplinary rehabilitation approach" কোমর ব্যথার সাধারান উপদেশbr /> শক্ত সমান বিছানায় ঘুমাবেন। ভারী জিনিশ তুলবেন না।

ঝুকে পড়ে কাজ করবেন না। কোমর বাকিয়ে কাজ কোরবেন না। সোজা হয়ে বসবেন, দাড়াবেন ও হাটবেন। দুঃশ্চিন্তা করবেন না। কোমর ব্যাথার যে কোনো প্রশ্নে বিস্তারিত জানিয়ে ই মেইল করুনbr />


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.