আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুনিয়া কাঁপানো প্রেম

আলিঙ্গন এবং ক্রন্দন রত সম্রাট-সম্রাজ্ঞী সহজেই নিজেদের সামলে নিলেন এবং সংযত হয়ে পাশাপাশি বসলেন। অনেক বছর পর উভয়েই কাঁদতে কাঁদতে প্রায় ভুলতে বসেছিলেন নিজেদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান। মনের গহিনে জমাটবদ্ধ হাজারো বেদনার পুঞ্জীভূত মেঘ যে কেটে গেছে চোখের নোনাজলে, তা তাদের চেহারায় স্পষ্ট হয়ে উঠল। সম্রাজ্ঞী তার রেশমি রুমালের কোমল স্পর্শে সম্রাটের অশ্রুসিক্ত মুখমণ্ডল মুছে দেওয়ার পর নিজেরটা পরিষ্কার করলেন। কী কারণে যেন বেশ কিছুক্ষণ উভয়ে স্তব্ধ হয়ে রইলেন।

সম্রাটই প্রথম মুখ খুললেন। বললেন, আগামী সাত দিন কর্মব্যস্ত নিয়ম কাটাতে হবে এবং আগ্রার নিকটবর্তী দুর্গগুলোর অধিকর্তাদের সঙ্গে দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং রাজপুতদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। কাজেই ইমরুল কায়েসের প্রেমিকা উনাইজাহ সম্পর্কে আপাতত জানার সুযোগ হলো না। সম্ভবত অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই কাশ্মীর হয়ে লাহোর যাব, সঙ্গে তুমিও থাকবে। যাত্রাপথের কোনো এক বিশ্রামের মুহূর্তে প্রকৃতির সানি্নধ্যে বসে ইমরুল কায়েস সম্পর্কে শোনা যাবে।

তবে এ মুহূর্তে বিদায়ের আগে তোমার মতামত জানতে চাচ্ছি কিসুল ইবনে ইয়াসার সম্পর্কে।

সম্রাজ্ঞী নূরজাহান কোনো রাখঢাক না রেখেই স্পষ্ট করে বললেন, প্রথমত আপনার গোয়েন্দা বিভাগ ঢেলে সাজাতে হবে। অতি বিশ্বস্ত কোনো অভিজ্ঞ সেনাপতিকে দায়িত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে, ব্যর্থ ও অকর্মণ্যদের কেবল পদচ্যুতিই নয়, শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় সামনের দিনগুলোর বিপদ ও বিপত্তিকে এড়ানো যাবে না, আর পারস্য সেনাপতির সঙ্গে একান্তে কথা বলুন দিনের প্রথম ভাগে।

তারপর বিকালে তাকে আবার তলব করুন। সেনাপতির সকাল ও বিকালের ঘুমের অভিব্যক্তি এবং চাহনি লক্ষ্য করুন এবং সকালে আলোচিত বিষয়গুলো বিকালে আলোচনা করুন পুনরায়। বিকালের আলাপচারিতার সময় এমন ভাব দেখান, সকালের আলোচিত বিষয় আপনি একেবারেই ভুলে গেছেন! এরপর সিদ্ধান্ত নিন। আশা করা যায়, আপনার ভুল কম হবে। সম্রাট ভারি আশ্চর্য হয়ে গেলেন সকাল-বিকাল আলোচনার প্রসঙ্গ শুনে।

এতকাল ধরে রাজ্য চালালেন, এত দেশ-বিদেশ সফর করে হাজারো জ্ঞানী-গুণীর সানি্নধ্য পেলেন; কই কেউ তো এমন অদ্ভুত উপদেশ দিল না। কোনো বইতেও এ ব্যাপারে কোনো কিছু পড়েছেন বলে মনে পড়ছে না। কৌতূহলী সম্রাট একটু বিরক্তই হলেন অদ্ভুত উপদেশ শুনে। কিন্তু গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতায় তিনি অন্তত এই বিশ্বাসে পেঁৗছেছেন, নুরজাহান অন্তত না জেনে বা না বুঝে কোনো কিছু বলেন না। কাজেই কৌতূহল চেপে তিনি বললেন, একটু খোলাসা করে বল, কেন আমি কিসলু ইবনে ইয়াসারের সঙ্গে সকাল ও বিকাল দুবার বসে সময় অপচয় করব।

নুরজাহান নিজেও বেশ বিব্রতবোধ করছিলেন কথাটা সরাসরি বলার পর। রাজ্য শাসনের ব্যাপারে মহামান্য সম্রাটকে তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন কোন এখতিয়ারে! মাত্র তিন দিন হলো তাদের বিয়ের বয়স। বিয়ের আগে অর্থাৎ মাত্র তিন দিন আগে তিনি ছিলেন দীনহীন এক আশ্রিতা বিধবা মাত্র। তার শরীরের রক্ত-মাংস মোগল খান্দানের দয়া আর অনুকম্পায় তৈরি হয়েছে। শুধু কি তাই! তার চৌদ্দগুষ্টি ছিল পথের ফকির এবং তদাবস্থাতেই তারা ইরান থেকে ভারত পাড়ি জমিয়ে ছিল দুই মুঠো ভাত কিংবা এক টুকরা রুটির জন্য।

মহামতি আকবরের অনুকম্পায় আজ তারা মোগল সালতানাতের আমির। অন্যদিকে শাহেনশাহ কেবল ভারত সম্রাটই নন, পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক রাজপরিবারের সদস্য। তার শরীরে বহমান রাজরক্তের বয়স কম করে হলেও এক হাজার বছরের পুরনো। ৫০০ বছর ধরে এই রাজরক্তের ধারকরা পুরো পৃথিবীর তিন ভাগ ভূখণ্ডের দুই ভাগই শাসন করছেন পালাক্রমে। চীন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, ইরাক, মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্য; সমরখন্দ, বোখারাসহ সমগ্র মধ্য এশিয়া; তুরস্ক, যুগোস্লাভিয়া, রোমসহ ইউরোপের বিরাট ভূখণ্ড এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ এখনো চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, কুবলাই খান, তৈমুর লং এবং বাবরের তলোয়ারের ঝঙ্কার ও ঘোড়ার আওয়াজ শুনতে পায়।

রাজরক্ত এবং শাহি প্রাসাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশের কারণে যে কোনো সাধারণ রাজপুরুষ যে রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক ধী-শক্তির অধিকারী হতে পারেন, তা সাধারণ পরিবারের মহামানবের পক্ষেও সম্ভব হয় না। কেবল ঐশী জ্ঞানের নবী-রাসূল কিংবা আল্লার রহমতপ্রাপ্ত অলি-আল্লাহ, গাউস-কুতুবরা ক্ষেত্রবিশেষে পরিশ্রম ছাড়া কিছু বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী হতে পারেন। অন্য সবাইকে জ্ঞানার্জনের জন্য সাধনা করতে হয় এবং বছরের পর বছর ধরে জ্ঞানের ভিত্তিতে কাজ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। অর্জিত জ্ঞানের একাধিক সফল প্রয়োগের পরই কাউকে উপদেশ দেওয়া ন্যায়সঙ্গত হতে পারে। সম্রাজ্ঞী নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলেন_ আমি এমন কী কুতুব হলাম যার ফলে সম্রাটকে হুট করে উপদেশ দিয়ে দিলাম? এসব কথা ভাবতেই তার মন অনুশোচনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ল।

শাহেনশাহ সম্ভবত স্ত্রীর মনের অবস্থা অাঁচ করতে পারলেন। ফলে তিনিও মুখ থেকে বিরক্তির ভাব দূর করে ফেললেন। কোনো কথা না বলেও তারা বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে তাদের ভাব একে অন্যকে বুঝিয়ে দিলেন এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক হলেন।

সম্রাজ্ঞী বলতে শুরু করলেন, সাহেবে আলম! আমি আমার সীমা অতিক্রম করার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এত অল্প সময়ে মোগল রাজনীতির আন্তঃমহাদেশীয় বিষয় নিয়ে আমার উপদেশ যে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যেতে পারে, বা যে কারও কাছে অযাচিত ও বিরক্তিকর মনে হতে পারে, এই ভাবনা আমার আগ থেকেই করা উচিত ছিল।

কিন্তু পৃথিবীর তাবৎ নারীর মতো আমিও স্বামীর সবকিছু নিজের বলে ভাবতে শুরু করেছি বিয়ের পরমুহূর্ত থেকেই। নারী হিসেবে এই অপূর্ণতা হয়তো আমি কোনো দিনই অতিক্রম করতে পারব না, তবে সতর্ক থাকব যতটা সম্ভব। সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের সরল স্বীকারোক্তি শুনে সম্রাট হেসে দিলেন এবং হাত বাড়িয়ে স্ত্রীর গাল টিপে আদর করলেন। ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করলেন_ তাড়াতাড়ি বল, রাত গভীর হয়ে যাচ্ছে। নূরজাহান জানালেন, আলমপনা! আমি জেনেছি সত্যের রূপ একই রকম_ সব পরিবেশে, সব সময়ে সত্য একইভাবে পরিবেশিত হয়।

অন্যদিকে মিথ্যা সব সময় ঐন্দ্রজালিক হয়। একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। মিথ্যার সবচেয়ে বড় বিপদ হলো_ মিথ্যাবাদী কিছুক্ষণ পর তার মিথ্যা ভাষণ হুবহু মনে রাখতে পারে না। অন্যদিকে মিথ্যা বলার সময় প্রত্যেক মিথ্যাবাদীর মুখমণ্ডল, শরীরের নড়াচড়া, চোখের চাহনী এবং ভ্রূ কুঁচকানোর মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। সে যতবার মিথ্যা বলে ততবারই তার শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ভিন্ন ভিন্নভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করতে থাকে।

সম্রাজ্ঞী আরও বললেন, ক্ষমতাসীনদের সামনে দাঁড়িয়ে যারা সত্য বলেন তারা হয় মাথা উঁচু করে বলেন, নয় তো মাথা নিচু করে। তারা হাত ঝুলিয়ে বা আঙ্গুল উঁচিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে না। তারা কোনো অবস্থাতেই এদিক-ওদিক ঘাড় ফেরায় না বা শরীরের কোনো অংশ চুলকায় না। অন্যদিকে মিথ্যাবাদী কথায় কথায় হাত-পা নাড়ায়, কখনো কখনো আঙ্গুল উঁচিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে। হাত কচলায় এবং মুখমণ্ডল কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশে নিজের অজান্তে চুলকাতে থাকে।

মিথ্যাবাদীদের আরেকটি লক্ষণ হলো_ কথা বলার সময় অস্বাভাবিকভাবে ঘাড় দোলানো এবং মুখে কৃত্রিমভাবে হাসি বা রাগ ধরে রাখার চেষ্টা। এই সূত্র মতে, আপনি যদি সকালে কারও সঙ্গে কথা বলেন দেখবেন বিকালে সে একই রকম করছে এবং বলছে। এ ক্ষেত্রে আপনি তাকে সত্যবাদী বলতে পারেন। এর ব্যতিক্রম হলে আপনি সন্দেহ করতে পারেন বা নিজের বুদ্ধিমত্তাকে আরও সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করেন।

নুরজাহানের ব্যাখ্যায় সম্রাট যারপরনাই খুশি হলেন।

বিদায়কালে সম্রাজ্ঞী যখন কুর্নিশ করলেন তখন সম্রাট একটু সামনে এগিয়ে পরম স্নেহে তার মাথায় হাত বুলিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আপন মহলের দিকে পা বাড়ালেন। যেতে যেতে তার কেবলই মনে হচ্ছিল, অন্তত আজকের রাতটির জন্য তিনি যদি একজন সাধারণ গৃহস্থ হতে পারতেন! আপন কামরায় ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন শাহেনশাহ। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না। বার বার মনে পড়ছিল প্রয়াত পিতা মহামতি আকবরের কথা। পিতার সঙ্গে একবার মৃগয়ায় গিয়েছিলেন শাহেনশা।

আগ্রা থেকে বহু দূরে। লাহোর যাওয়ার পথে বিরাট এক জঙ্গলের পাশে তাদের কাফেলার তাঁবু পড়েছিল। সময়টা ছিল অক্টোবরের মাঝামাঝি। তার বয়সই বা কত হবে তখন, বড় জোর ১৪ কিংবা ১৫। স্থানীয় লোকজন বলল, এই বনে নীলগাই এবং চিত্রল হরিণ আছে অসংখ্য।

কিছু বাঘও আছে। আর আছে বিষধর সাপ। সবাই নিষেধ করল বনের অভ্যন্তরে না ঢোকার জন্য। অন্যান্য বিপদ তো আছেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপদ হতে পারে বনের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া। কারণ বন থেকে লোকালয় অনেক দূরে।

জঙ্গলে মনুষ্য চলাচলের কোনো পথঘাট বা নূ্যনতম দিকনির্দেশনা নেই। এত বিপত্তির কথা শুনে সম্রাট আকবর যেন আরও বেপরোয়া এবং অদম্য হয়ে উঠলেন বনের মধ্যে ঢোকার জন্য। সঙ্গে নিলেন যুবরাজ সেলিমকেও। বহুক্ষণ ঘোরার পর কোনো শিকার মিলল না। কোনো সাপ কিংবা ভয়ঙ্কর কিছুই সামনে পড়ল না।

জঙ্গলের মধ্যে গাছপালাও ছিল বেশ ফাঁকা। দিনের আলো গাছপালার ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে লম্বিতভাবে প্রতিফলিত হয়ে আলো-অাঁধারির এক অপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। শিকারের এই অভিযানে অভিযাত্রীর সংখ্যাও ছিল সাকল্যে ১০ জন এবং ১০টি ঘোড়া। আস্তে আস্তে এগোতে এগোতে একসময় সত্যিই তারা পথ হারিয়ে ফেললেন। দিন গড়িয়ে রাত এলো।

আকাশে যদিও ভরা পূর্ণিমার জ্যোৎস্না খেলা করছিল আর বাতাসে ছিল পাগল করা হাজারো বুনো ফুলের সুবাস। দিনের আলোয় কোনো শিকার না মিললেও রাতের অাঁধারে শত শত হরিণ, নীলগাই তাদের আশপাশে ছোটাছুটি করছিল এমনভাবে, যেন হাত দিয়ে ধরা যায়। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তারা ছিল ক্লান্ত। দলের সবাই প্রচণ্ড ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন কেবল সম্রাট আকবর ছাড়া। সঙ্গে সামান্য পরিমাণ পানীয় ছিল মাত্র কিন্তু কোনো খাবার ছিল না।

সবাই মিলে সাধ্যমতো চেষ্টা করলেন কিছু বুনো ফল পাওয়া যায় কি না। স্বপ্নের চাঁদের মোহময় আলোয় ১০ জন রাজপুরুষ দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও একটি বুনো ফল খুঁজে পেলেন না। অন্যদের মতো যুবরাজ সেলিমও ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলেন। রাত তখন দ্বিপ্রহর পার হতে চলছিল। সম্রাট আকবর এবার কাফেলাকে থামতে নির্দেশ দিলেন।

একটি ডোবার মতো জায়গায় কিছু পানি জমে ছিল। স্থানটিও ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। চাঁদের আলোয় তারা একে অন্যকে স্পষ্ট দেখতে পেলেন। ক্লান্ত ঘোড়াগুলো ডোবায় নেমে প্রাণ ভরে পানি পান করার পর বেশ শান্ত হলো এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লেজ নেড়ে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল।

গভীর রাতের চাঁদের আলো, ডোবার পাশের রহস্যময় নির্জনতা এবং জঙ্গলের পাখপাখালির বিচিত্র ডাকাডাকি কাফেলার সবাইকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলল।

কেউ বাঘের ভয়ে গাছে উঠতে চাইল। আবার কেউ সাপের ভয়ে ডোবায় নামতে চাইল। কিন্তু সারা দিনের ক্লান্তি, ক্ষুধা এবং অতিরিক্ত ভয়ের কারণে সবাই যার যার স্থানে বসে পড়ল। কেবল সম্রাট আকবর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর শাহজাদার সামনে এসে তাকে হাত ধরে টেনে তুললেন।

অন্যদের থেকে ২০ গজ দূরে গিয়ে মাটির ওপর যার যার ঢাল রেখে তার ওপর বসলেন। প্রিয় পুত্রকে বললেন, আমার সেলিম! অন্য সবার মতো তুমি এবং আমি ভয় পেতে পারি না। কিংবা হতাশাও আমাদের মানায় না। এ মুহূর্তে শক্তি ক্ষয় না করে সর্বোচ্চ ধৈর্য নিয়ে উচিত আমাদের অপেক্ষা করা। আমাদের শরীরের প্রবহমান রক্তে বংশানুক্রমে যেসব ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে, এর বিরাট অংশই হলো ভয়কে জয় করার ইতিকথা।

আজকের সমস্যা অতীতের হাজারো সমস্যার মধ্যে অতীব ক্ষুদ্র এবং তুচ্ছাতিতুচ্ছও বটে।

আজকের এই রাতের মতো অন্য কোনো সময় আমার জীবনে আসবে কি না জানি না। এমন একান্ত, নিভৃত এবং প্রকৃতির সানি্নধ্য হয়তো বা পাব না। আকাশ-বাতাস-মাটি এবং চাঁদের আলোর এই অভিনব দৃশ্য আমাকে বার বার টেনে নিয়ে যাচ্ছে সুদূর অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষ চেঙ্গিস খানের জমানায়। আমি আজ যে কথা তোমাকে বলব তা আমি শুনেছিলাম আমার বাবার কাছে।

আবার আমার বাবা শুনেছিলেন তার বাবা অর্থাৎ মহান বাবরের কাছে। মোগল খান্দান এশিয়ার দুই মহান বীরের রক্তের ধারক ও বাহক। চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লংয়ের সুমহান কীর্তি এবং বীরত্বগাথা আমরা স্মরণ করে আসছি আমাদের বিপদের সময়গুলোতে। কীভাবে চেঙ্গিস খান দুনিয়ার সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র স্থাপন করেছিলেন। সেই কাহিনী বলার সুন্দরতম পরিবেশ আর হয়তো নাও পেতে পারি।

যদিও তুমি ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত। একই সঙ্গে আমি বিশ্বাস করতে চাই, তুমি কাফেলার অন্য সবার মতো ভীতসন্ত্রস্ত নও। [চলবে]

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।