আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফরমালিন

ফরমালিন প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংক্রমিত হতে না দেয়া। অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলতে পারে। রং তৈরী, বস্ত্রখাতে কাপড় কুঞ্চিত হতে না দেয়া, সংরক্ষণ, বিস্ফোরণ এবং পলিমার তৈরীতে এটি ব্যবহৃত হয়। ১০ জুন, ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল টক্সিকোলজি প্রোগ্রাম কর্তৃক ফরমালিনকে মানুষের ক্যান্সার রোগ সৃষ্টিতে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে জানায়। ফরমালিন মানুষের জন্য কতটা মারাত্মক তা বলে শেষ করা যাবে না।

ফরমালডিহাইডের (রাসায়নিক সংকেত HCHO) ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ জলীয় দ্রবণই হলো ফরমালিন। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মিথানল মিশ্রত থাকে। পৃথিবীর সমস্ত রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণকারী এজেন্সি ফরমালিনকে কারসিনোজেনিক হিসাবে শ্রেনীভূক্ত করেছে। প্রকৃতিতে ফরমালিন কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের সংমিশ্রণে তৈরী হয়। শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ফর্মালিনের জলীয় দ্রবনকে ফর্মালিন হিসাবে ধরা হয়।

ফর্মালিন সাধারনত টেক্সটাইল, প্লাষ্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। সভ্য কোনো দেশে খাদ্যে ফরমালিন দিয়ে বাজারজাতকরণের নজির চোখে পড়ে না। অতিলোভী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ফরমালিন মিশিয়ে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এফবিআই আমেরিকার খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান ও মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ দেশটিতে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।

ফরমালিনের মাধ্যমে অল্প খরচে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাছ সংরক্ষণ করা যায় বলে এর ব্যবহার অধিকমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। বিশেষত যেসব মৃত মাছ বিদেশ থেকে আসে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফরমালিনের উপস্থিতির খবর প্রায়ই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। কিন্তু ফরমালিন যুক্ত মাছ মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। বেশির ভাগ বড় মাছে ফরমালিন মেশানো হয়। ১ নভেম্বর রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে ফরমালিন শনাক্তকরণ যন্ত্র চালু করা হয়।

বিদেশ থেকে আমদানি করা এই যন্ত্রটির দাম এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। যন্ত্রটি মাছের ওপরে ধরলেই তাতে ফরমালিনের মাত্রা উঠছে। এ কাজ পরিচালনার জন্য দুই ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। হার্টকে দুর্বল করে দেয়।

ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই ফরমালিনমুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। সর্বোচ্চ ১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান করে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ প্রণয়ন করা হচ্ছে।

পানিতে প্রায় ১ ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফর্মালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়। ভিনেগার ও পানির মিশ্রনে (পানিতে ১০ % আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফর্মালিনই দূর হয়। ফল ও সবজি থেকে ফর্মালিনের দূর করতে-১০ মিনিট গরম লবণ পানিতে ফল ও সবজি ভিজিয়ে রাখতে হবে। এক গবেষনায় দেখা গেছে কাওরান বাজারে আসা মাছের প্রায় ৫% মাছই ফরমালিন যুক্ত। আর এই ফরমালিন যুক্ত মাছের মধ্যে সবচে বেশি হলো রুই জাতীয় মাছ ।

ফরমালিন মূলত বিভিন্ন ল্যাবরেটরি ও শিল্পে ব্যবহৃত হয়। স্কুল-কলেজ ছাড়াও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও এর বহুল ব্যবহার রয়েছে মূলত নানা জিনিস সংরক্ষণের জন্য। তাছাড়া চামড়া, টেক্সটাইল, মেলামাইন এবং হ্যাচারি শিল্পেও এর বহুল ব্যবহার যৌক্তিক কারণেই। লিচুতে বিষাক্ত রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করে গাঁড় মেজেনটা রং তৈরি করা হয়। তাই গাঁড় মেজেনটা রঙ্গের লিচু কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।