আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকায় বাঙালী কমিউনিটিতে ‘এফবিআই’ আতঙ্ক!

mojnu@ymail.com

আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে বাঙালীদের মধ্যে এখন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেষ্টিকেশন (এফবিআই) আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে গুটি কয়েক বাঙালী অবৈধ ব্যবসা ও চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় তাদের জন্য সেখানকার হাজার হাজার বৈধ-অবৈধ বাঙালী এখন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে বলে জানিয়েছেন সেখানে বসবাসরত বাঙালীদের অনেকে। জানাগেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমেরিকা সফরে গিয়ে প্রবাসীদের অনন্য অবদানের কথা বিভিন্ন সভায় তুলে ধরেছেন। এছাড়া প্রবাসীদের রেমিটেন্সে যেখানে দেশ সয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। মাসে মাসে তাদের ঘাম ঝরা রেমিটেন্স দিয়ে যেখানে মাতৃভূমি হচ্ছে লাভবান।

সেখানে হাতে গোনা কয়েকজন বাংলাদেশীর অনৈতিক কর্মকান্ড শুধু বাঙালী কমিউনিটিকে আতঙ্কিত করেনি, এ নিয়ে পুরো জাতিকেই শঙ্কিত করে তুলেছে। সম্প্রতিককালে মিটার টেম্পারিংয়ের দায়ে সে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ৯ জন বাংলাদেশী টেক্সি ড্রাইভারসহ ৫৯ জনকে আটক করেছে। অন্যদিকে জুলাই মাসে মেরিল্যান্ডের বাল্টিমুর থেকে অবৈধ মাদক বিক্রির সরঞ্জাম, মাদকের জেলক্যাপ, ব্যাগ, মাদক মাপার স্কেল ও বিপুল পরিমাণ ডলারসহ দুই বাংলাদেশীকে আটক করেছে। এতে করে সমগ্র বাঙালী কমিউনিটিতে এখন চলছে এফবিআই আতঙ্ক। এরআগে মাদক বিক্রির দায়ে ৮-১০ জন বাংলাদেশীর জেলা জরিমানা হওয়ায় এসব অবৈধ কর্মকান্ডে আমেরিকান সরকারের অভিযোগের আঙ্গুলিও বাঙালীদের দিকে।

যে কোন মুহুর্তে এফবিআই’র বড় ধরনের অভিযানে আশঙ্কায় সেখানে বসবাসরত বাঙালীরা তটস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। জানাগেছে, চলতি বছরের ২২ জুলাই মেরিল্যান্ডের বাল্টিমুরের ২০৯ ডব্লিউ. সারাটোগা স্টেটের ডাউনটাউন গিফ্ট এন্ড ভ্যারাইটি স্টোর এবং ৩০০ এন. হাওয়ার্ড স্টেটের আল-আমিন পারফিউমে অভিযান চালায় সে দেশের এফবিআই সদস্যরা। তারা সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক বিক্রির সরঞ্জাম (মাদক রাখার বোতল, জেলক্যাপ) মাদক মাপার স্কেল ও ১৮ হাজার ডলার উদ্ধার করে। এসময় দুই দোকান থেকে নোয়াখালী ও ফেনীর দুই ব্যক্তিকে আটক করে। এরা হচ্ছে, বাল্টিমুরের ডাউনটাউন গিফ্ট এন্ড ভ্যারাইটি স্টোরের মালিক ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সাবেক ছাত্রনেতা মাঈন উদ্দিন এবং আল-আমিন পারফিউমের কর্মচারী ফেনী এলাকার পেয়ার আহম্মদ।

অভিযানের সময় আল-আমিন পারফিউমের মালিক ফেনীর নুর আমিনকে খোঁজ করেও পায়নি এফবিআই সদস্যরা। সূত্র জানায়, এফবিআই সদস্যরা ছদ্মবেশে ক্রেতা সেজে ওই দুই দোকান থেকে অবৈধ সামগ্রী কিনে এসব দোকানে অবৈধ পণ্যের ব্যবসা করার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তদের আটক করে মামলা দায়েরের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়। আটককৃত দুই ব্যবসায়ীকে জামিন দিলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা অব্যাহত রয়েছে। এফবিআই’র দাবি, বাঙালী দোকান থেকে উদ্ধারকৃত এসব সরঞ্জাম দিয়ে মাদক বেচা-কেনা ও পাচার করা হয়।

এসব মাদক সেদেশের বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, গোষ্ঠির কাছেই সরবরাহ করা হয়। এসব মালামাল পারফিউমের জন্য আমদানি করা হলেও মূলত এটি ব্যবহৃত হয় মাদক পাচারে। আর এ ব্যবসা করে অল্প দিনে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এসব অবৈধ ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে আল-আমিন পারফিউমের মালিক নুর আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এসব সরঞ্জাম যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমদানিকৃত। তা হলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করলো কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন ধরে নিয়েছে তা আমি জানি না’।

এদিকে এরআগেও নোয়াখালী অঞ্চলের ৮-১০ জনকে সে দেশের আদালত মাদক বিক্রির দায়ে আটক এবং তা প্রমাণিত হওয়ায় সাত বছর ও এর অধিক কাল পর্যন্ত জেল-জরিমানা করেছে। এদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের ওবায়দুল হক দর্জি, রমেশ চন্দ্র সেন, আহছান উল্যাহ, ছেলামত উল্যাহ, আবদুল্লাহ, মোস্তফা কামাল অন্যতম। আটক হওয়ার পর আহছান উল্যাহ জেলে মৃত্যুবরণ করেন এবং আবদুল্লাকে সে দেশ থেকে বহিস্কার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে আমেরিকায় টেক্সি যাত্রীদের হীরা-স্বর্ণালংকার এবং নগদ অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে সুনাম অর্জনকারী বাংলাদেশী ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে গুটি কয়েকজন অর্থলোভী বাঙালী টেক্সি ড্রাইভার। তারা যাত্রীর সঙ্গে প্রতারণামূলক আচরণ করে সেখানে বাঙালীদের উঁচু গলা নীচু করে দিয়েছে।

গত সপ্তাহে মিটার ঘুরিয়ে হাজার হাজার ডলার প্রতারণার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ৫৯ জন ড্রাইভারের মধ্যে অন্তত ৯ জনই বাংলাদেশী। এর ফলে নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশীদের ইমেজ আরেক দফা হুমকির মুখে পড়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এসব ড্রাইভার যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে আসছেন। ট্যাক্সিতে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) সংযুক্ত করার মাধ্যমে এসব প্রতারণার কাহিনী উদ্ঘাটিত হয়। ২০০৮ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এরকম প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছেন অন্তত ২ হাজার ট্যাক্সি ড্রাইভার।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে দিন ও রাতের শিফটে মোট ৪৮ হাজার ড্রাইভার রয়েছেন। এর ২৫ ভাগেরও বেশি হলেন বাংলাদেশী। আরো উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক মিলিয়ন ডলারের হীরাসহ নগদ অর্থ যাত্রীকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশী কয়েকজন ড্রাইভার বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। কিন্তু গুটিকয়েক অসৎ ড্রাইভারের কারণে এহেন পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় ভিতরে ভিতরে বাঙালী কমিউনিটিতে প্রতারকদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । [বি:দ্র: - বাঙালীদের এসব অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে কেউ কোন তথ্য দিতে চাইলে নোয়াখালী ওয়েব’র মোবাইল নং- (+৮৮) ০১৮১৬৫৫৩৩৬৬, ফ্যাক্স: ০২-৮৩১১৫৩৭, ইমেইল: তে তথ্য সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। ] ইকবাল হোসেন মজনু/নোয়াখালী ওয়েব/০২ অক্টোবর/২২৪৫ঘ. তথ্যসূত্র: নোয়াখালী ওয়েব- Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।