আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষা (1) - কেন?

ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।



একসময় শিক্ষা দীক্ষায় চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য ছিল মানুষের লক্ষ্য। ধীরে ধীরে সেরা শিক্ষাক্ষেত্রের মুকুটটা যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে ছিনিয়ে নিয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবে আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষা দীক্ষায় প্রতিযোগিতা কম চলছে না। তাই কোন দেশের শিক্ষাকেই আমি ছোট করি না। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রীর দিকে অনেক ঝোক মানুষের।

সবাই এখানে পড়তে আসতে চায়। কেন? কিভাবে? কারন হিসেবে আমি যেগুলো চিহ্নিত করেছি সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে ভাল চাকুরী চট করে পেয়ে যাবার নিশ্চয়তা। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বছর প্রতি 50-60 হাজার ডলারের চাকুরী পেয়ে গেলে জীবনে আর কি চাইবার থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও বেশ ভালো অবস্থা। বিশেষ করে ইলেকট্রিক্যাল আর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ আরো ভাল বেতন।

তবে তুলনা মূলক ভাবে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতিযোগিতা অনেক বেশী। চাকুরীর বাজার হিসেবে পড়াশোনার অন্যান্য ক্ষেত্রও কিন্তু খুব ভালো। তবে আর্টস বা কমর্াসে পড়তে আসলে কিন্তু ইংরেজী কমিউনিকেশনটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে বিষয়েই পড়ার চিন্তা করুন না কেন, বাজার যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন চাকুরীর ওয়েবসাইট ঘেঁেট দেখাটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

বাইরে পড়তে চাইলে আরেকটা টেনশন থাকে সেটা হলো টিউশন পে করা যাবে কিভাবে। আমেরিকায় এ ব্যাপারে সুযোগের অভাব নেই। ইউনিভার্সিটিগুলোতে টিচিং , রিসার্চ, গ্রাজুয়েট এসিসটেন্টশীপ মেলা তেমন দুষ্কর নয়। তার উপর আছে ঘন্টাচুক্তিতে চাকুরী, বাইরে বিভিন্ন দোকানে চাকুরী। আর প্রোগ্রামীং বা ওয়েব ডেভলপমেন্টের কাজ জানা থাকলে তো 'লারে লাপপা'।

টিচিং এসিসটেন্টদেরকে বিভিন্ন কোর্সের খাতা দেখা, ছাত্রদের সাহায্য করার কাজ করতে হয়। রিসার্চ এসিসটেন্টদেরকে কোন প্রফেসরের আওতায় কোন গবেষনা কাজে সাহায্য করতে হয়। এই দুইধরনের কাজে ইউনিভার্সিটি থেকে টিউশন পুরোটা দিয়ে দেয়, আর থাকা খাওয়ার জন্য মাসে বারশ থেকে পনেরশ ডলার বেতন। তবে বিভিন্ন দোকানে চাকুরীটা সত্যিই খুব কষ্টকর এবং আমাদের বাঙ্গালী মানসিকতার উপর বড় ধকল। আরেকটা ব্যাপার হলো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়তে আসলে কিন্তু এইসব চাকুরী মেলা প্রায় অসম্ভব।

তাই এক্ষেত্রে বেশীরভাগকে বাইরে ঘন্টা চুক্তির কাজ করতে হয়। কিন্তু মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আসলে এসব ফান্ডিং পাওয়া বেশ সহজ হয়ে যায়। তাই যত বড় ডিগ্রীতে এনরোল করবেন তত সুযোগ বেশী। এরপরে আসে শিক্ষাদীক্ষা। আমেরিকার শিক্ষা পদ্ধতি সারা দুনিয়ায় স্বীকৃত।

তাই এখান থেকে একটা ডিগ্রী বাগাতে পারলে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় সেটার স্বীকৃতি থাকবে বলাই বাহুল্য। গবেষনা, বা সাধারন পড়াশোনা এত বাস্তব কাজের সাথে সম্পৃক্ত যে চাকুরীর ক্ষেত্রে কোন অসুবিধাই হয়না। যে সমস্ত বিষয়ের বাস্তব এপ্লিকেশন নেই সেসব জিনিস এরা সিলেবাস থেকে কবেই বের করে দিয়েছে! এব্যাপারে আমার প্রফেসরের একটা কথা মনে পড়ল। তিনি বলছিলেন, 'আমরা এখানে শিক্ষা প্রদান করি না, শিক্ষা বিক্রী করি। তাই যারা শিক্ষা কিনছে তারা যেন না ঠকে সেটা আমাদের দেখতে হয়।

' তাছাড়া আরো একটা কিছু কিছু কারন আছে। তার মধ্যে একটা হল এখানকার সমাজ ব্যবস্থা। অরূপ সেদিন যেমনটা বলল, মানুষের ব্যবহার এখানে এত ভাল! সকাল বেলা দেখা হলে চেনে না জানে না এমন লোকও কি সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলে গুড মনিং। বিদায়ের সময় কি সুন্দর করে বলে হ্যাভ অ্যা নাইস ডে। এই সমস্ত সোশ্যাল এলিমেন্ট সত্যিই অতুলনীয়।

তাছাড়া জীবন যাপনে, ভাল এবং সেরা চিকিৎসার নিশ্চয়তা, খাবার দাবার শতকরা ভাগ ভাল হবার নিশ্চয়তা, পৃথিবীর সেরা যে কোন পন্য বা সেবা পাবার নিশ্চয়তা এসব তো আছেই। আর আপনি আপনার ধর্ম কর্ম নিয়ে আপনার মতো করে বাঁচুন আপনাকে কেউ ঘাঁটাবে না, বরং আপনাকে সাহায্যই করবে। আগে আমেরিকান সমাজকে মিশ্র সমাজ ব্যবস্থা বলা হত। কিন্তু সব জাতির লোক এখানে তাদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে থাকতে পারে বলে এখন এটাকে 'সালাদ সোসাইটি' বলা হয়। এই সমস্ত বিষয় ইউরোপের বা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক আকর্ষণীয় বলে আমেরিকা সত্যিই উচ্চতর শিক্ষার জন্য একটি ভাল পছন্দ।

(সাদিককে কৃতজ্ঞতা বিষয়টি তুলে ধরবার জন্য। পরবতর্ী অংশে থাকবে কিভাবে কি করতে হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।