আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈর্ষা

sorry vai

প্লাবন ইমদাদ আমার বউ খেলাধুলার কিছু বোঝে না। মনে একটু রং লাগানোর উদ্দেশ্যেই ওর সঙ্গে শুরু করলাম বিশ্বকাপ ফুটবলবিষয়ক কথোপকথন। ব্যস, আধা মাসের মাথায়ই একেবারে পেকে গেল। তখন ভাবখানা এমন যে সে ফুটবলের একজন উচ্চমার্গীয় বিশ্লেষক। অবশ্য দল সমর্থনের দিক থেকে আমার অনুকূলেই থাকল।

স্বামীভক্তি আর দলভক্তিতে তার দ্বন্দ্ব ঘটল না। তবে খেলার দিন ঘনিয়ে আসতেই লক্ষ করলাম, আমার জায়গাটা ক্রমেই দখল করে নিচ্ছে তরুণ ফুটবলার মেসি। যে মেসিকে এত দিন আমি ছোট ভাইয়ের আসনে বসিয়ে অন্তরাত্দা দিয়ে সমর্থন জুগিয়ে আসছিলাম, সে-ই কি না আজ আমার ঘরে আগুন লাগাতে এল! একবার ভাবি, ওই ছোকরার কী দোষ, আমার স্ত্রীই তো মেসির স্বপ্নে বিভোর। আবার মেসিভক্তি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বউয়ের কথায় উথলে পড়লে ভাবি, মেসি, তুই ক্যান যে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার হয়ে ঢুকে পড়লি আমাদের মধ্যে! ছুটির দিন সেলুনের উদ্দেশে বের হব, এমন সময় বউ বলল, 'এই শোনো, এবার তোমার চুলগুলো বেশ বড় হয়েছে, মেসির চুলের ডিজাইনে কাট দিলে বেশ মানাবে। আজ মেসি-কাট দিয়ে আসবে।

' আমি রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলাম। আরেক দিন রিকশায় হাওয়া খেতে খেতে বউকে নিয়ে যাচ্ছিলাম শপিং মলে। একপর্যায়ে সেলফোনটা বের করে আমার সাম্প্রতিক তোলা একটা ছবি দেখিয়ে বললাম, 'এই, দেখো তো, ছবিটা কেমন হয়েছে?' অমনি ও লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে ওপরের দিকে তাকিয়ে বলল, 'দেখো দেখো, মেসি!' বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, রাস্তার ওপর বিশাল বিলবোর্ডে আমার বউয়ের স্বপ্নের রাজপুত্তুর মেসির ছবি। শপিং মলে ঢুকে একটা শার্ট পছন্দ হয়ে গেল। কিন্তু মাপে হচ্ছিল না।

এ সময় ভরা দোকানে দোকানদারদের সামনেই বলে বসল, 'ইস, তোমার ফিগারটা যদি মেসির মতো হতো, তাহলে এই শার্টটা কী যে সুন্দর ফিট হতো!' মনের দুঃখে সেদিন শার্ট না কিনেই বাড়ি ফিরলাম। ওর সঙ্গে কথাবার্তায় আগ্রহ পর্যন্ত হারিয়ে ফেললাম। তবু ওর কোনো বিকার নেই, মেসির রস ঝরতেই থাকল। সেই রাতে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখলাম। আমি গোলকিপারের পোশাকে একটা গোলপোস্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, আর মেসি পেনাল্টি কিক করছে।

প্রিয় ম্যারাডোনা পর্যন্ত প্রবল উৎসাহ দিয়ে চলছে। তার চেয়েও কষ্টের ব্যাপার, স্বয়ং আমার বউ সোনার কাপ হাতে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে হাসছে। আর আমি? ঘামছি রে ভাই, ঘামছি। টান টান উত্তেজনায় হঠাৎ মেসির তীব্র কিক। আমার ঘুম ভেঙে গেল বিকট চিৎকারে।

পরদিন টেলিভিশনের পর্দায় ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ কিক অব কনসার্টে শাকিরাকে দেখলাম দর্শক মাতাতে। দুনিয়া মেতে ওঠে, আমি মাতি না। পরদিন সকালে বউ নতুন শাড়ি পরে আমার সামনে এল। ভাবলাম, এই বুঝি বলে বসে, 'দেখো তো, এই শাড়িতে মেসি আমাকে পছন্দ করবে কি না?' কিন্তু না, ও বলল, 'দেখো তো এ শাড়িতে আমাকে মানিয়েছে কেমন?' মনে মনে বললাম, 'এ কথা তোর পিরিতের মেসিকে বলতে পারিস না?' মুখে বললাম, 'সবই ঠিক আছে, তবে কোমরের দিকটায় খুব একটা ফিট করেনি। তোমার কোমরের ভাঁজটা শাকিরার মতো হলে পারফেক্ট লাগত।

' কথাটা শুনে মুহূর্তেই ওর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা মেঘাচ্ছন্ন। একটু পর দেখি, ভ্যানিটি ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাইরে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে বলল, 'বিউটি পারলারে। ' এই সুযোগে আমি বললাম, 'পারলারে যখন যাচ্ছই, ভ্রূ প্লাকটা আর চুলের কাটটা শাকিরার মতো করে নিয়ো। ' বউ ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, 'আমি তো আর শাকিরার মতো পপস্টার না।

তুমি শাকিরাকে নিয়েই সংসার করো। আমি চললাম। ' আমি পেছন থেকে টিপ্পনী কাটলাম, 'কোথায় যাচ্ছো, মেসির কাছে?'

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।