আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুঁজিবাদী মননের বীজ বপন? বেবি লুনি টিউনস এবং আমেরিকান চিন্তাধারা



বেবি লুনি টিউনস অনেক পরের দিককার একটা কার্টুন। আমরা যখন কার্টুন দেখার বয়স পার হয়ে এসেছি প্রায় তখন কার্টুন নেটওয়ার্কে এর জন্ম। লুনি টিউনস ক্লাসিক পর্যায়ের একটা কার্টুন। টম এন্ড জেরির সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্ত বাগস, ড্যাফি, রোড রানার আর কায়োটি, সিলভেস্টার আর টুইটি.............এরাই। এছাড়া আর যত কমেডি ছিলো সেসময়কার, সবই আমেরিকান জীবনযাত্রার সাথে কোন না কোন ভাবে সম্পর্কিত, ডেক্সটার, জনি ব্রাভো.........।

পিওর সার্বজনীন সিটকম হল টম এন্ড জেরি, লুনি টিউনস আর হোয়াট আ কার্টুন শো। তবে সেটা আরেক প্রসঙ্গ। প্রথম প্রথম ছোট ভাই-র সাথে বসে বসে দেখতাম বেবি লুনি টিউনস। ভাদাইম্যা লোকেদের অনেক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ থাকে। তো ওদের দেশে একটু ছোটদের জন্য কার্টুন মানেই শিক্ষামূলক।

মরাল এডু। এক পর্যায়ে বিরক্তি ধরে যায়। কার্টুন নির্মাতারা নিজেদের এরিস্টোটল প্লেটো মনে করতে থাকে। এটা ঠিক, ওটা ভুল হ্যানাত্যানা........এরই মাঝে হঠাৎ একটা এপিসোড দেখে ধাক্কা খেলাম। গল্পটা এরকম যে ছোট লুনি টিউনসদের দিদিমা তাদের প্রতিদিন ঘরের কাজকর্ম করার জন্য চারআনা করে দেয়।

তা দিয়ে প্রত্যেকে প্রতিদিন আইসক্রীম কিনে খায়। তো এদের মধ্যে একটি মেয়ে (শূকরী), পিটুনিয়া, টাকাটা খরচ না করে জমিয়ে রাখে। সবাই এটা নিয়ে হাসাহাসি করে। তারপর হঠাৎ একদিন আইসক্রীমওয়ালা এসে বলে "আজকে রয়েছে একটা স্পেশাল........ডাবল স্কুপ ট্রিপল ড্রিপ ইত্যাদি".....বলে বিশাল একটা আইসক্রীম বের করে বলে, "কিন্তু এটার দাম বারোআনা!" তখন বাকি ছেলেমেয়েগুলো ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে এবং পিটুনিয়া একটা কিনে নিয়ে যায়। পরে অবশ্য সে বাকিদের সাথে আইসক্রীমটা ভাগ করে খায় (কারণ অতো বড়োটা তার পক্ষে একা খাওয়া সম্ভব না)।

গল্পের মোরালঃ সঞ্চয়ের মাহাত্য। আমার প্রশ্নঃ ১। আইসক্রীমটা যখন একজনের খাবার জন্য একটু বেশিই বড়, তখন ছ'জন মিলে দু'টো আইসক্রীম তো কিনতেই পারতো? সমবায়টা কি ট্যাবু আইডিয়া? ২। বাকি বন্ধুরা যখন প্রতিদিন আইসক্রীম কিনে খেয়েছে তখন পিটুনিয়া কষ্ট করে না খেয়ে থেকেছে, এর মানে কি এই, যে যারা scrooge তাদের পুরষ্কার বেশি হবে? (এমন কিন্তু নয় যে কেউ কাজ কারো থেকে কম করেছে)। ৩।

প্রতিদিনের সাদামাটা চারআনার ললি, কাপ বা চকোবারের থেকে ওই বারোআনার ডাবল স্কুপ ট্রিপল ড্রিপটাই কি বেশি বাঞ্ছনীয়, যদিও সেটা খেতে হলে আমাকে প্রতিদিনের আনন্দ বিসর্জন দিতে হবে? আমার এই আলোচনার প্রতিপাদ্য আদৌ এরকম নয় যে আমেরিকানরা ষড়যন্ত্র করে এসব আইডিয়া সার্কুলেট করছে (দুঃখিত, NWO theorist বন্ধুরা), বরং আমি বলতে চাইছি যে তারা সজ্ঞানে হোক আর অবচেতনে হোক নিজেদের অর্থনৈতিক মোরালগুলো পরের প্রজন্মের হাতে ঠিকই ধরিয়ে দিচ্ছে। আমাদের সমাজের চিন্তাভাবনাগুলো কিন্তু এরকম নয়, একটু ভিন্ন। ভালো কি মন্দ সেই তর্কে আমি যাবোনা। ছোটদের হাতে সেগুলো তুলে দেওয়ার মতো কোন কাজটা আমরা করছি? ১। শিশুতোষ অনুষ্ঠান বলতে বিদেশী প্রোগ্রামের ডাবিং বা (একটা ধাপ এগিয়ে, সিসিমপুর) বাংলা ভার্সন।

২। "প্রগতিশীল" নামক চলচ্চিত্রনির্মাতাদের "পরের বউকে কিভাবে **গাতে হয়" শীর্ষক সুস্থধারার ছবি নির্মাণ যেখানে "ফার্মেসীতে গিয়ে বেলুন কিনতে লজ্জা পেলে হয়না" শিক্ষাপ্রাপ্তি, এবং মধ্যবিত্তের এই উপলক্ষে সপরিবারে সিনেমা হলে প্রত্যাবর্তন। ৩। হিন্দি সিরিয়ালের পদাঙ্ক অনুসরণে অসংখ্য "লাল নীল সবুজ হলুদ" মেগাসিরিয়াল যেখানে উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্তের (ভাদাইম্যা+বাপের অনেক টাকা+নর্মালি **গাইতে আর ভাল্লাগেনা) মনস্তত্ত্ব নিয়ে ব্যাপক গবেষণা। তো এসবের ভীড়ে আমরাও বড় হইসি (আমাদের সময় আরও ছিলো জাহিদ হাসানের বিড়ির য়্যাড) আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও হইতেসে।

সমধানটা কি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.