আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ও যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে বিশ্ববাসীর সাহায্য কামনা



জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ও যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে বিশ্ববাসীর সাহায্য কামনা ফকির ইলিয়াস ========================================= অত্যন্ত সরগরম এখন নিউইয়র্ক মহানগরী। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গোটা বিশ্বের নেতারা এখন অবস্থান করছেন নিউইয়র্কে। কড়া গোয়েন্দা নজরদারিতে বেষ্টিত মধ্য ম্যানহাটন। কয়েকস্তর বিশিষ্ট স্পেশাল সিকিউরিটি। এমন কি ভিভিআইপিরা যখন ব্যক্তিগত হাট-বাজার করতে যাচ্ছেন তখনো গোয়েন্দারা তাদের অনুসরণ করছেন খুব কাছে থেকে।

বলা যায়, নিউইয়র্ক এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশের প্রশাসন কেও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শতাধিক বিশিষ্টব্যক্তি এখন নিউইয়র্কে। বড় ধরনের সফরসঙ্গীর বহর নিয়ে জাতিসংঘে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ভাষণগুলো রাষ্ট্রপ্রধানদের বার্ষিক কার্যবিবরণীর সংক্ষিপ্তসার ধারণ করে। কিছু রাষ্ট্রপ্রধান আছেন যারা এখানে প্রায় মল্লযুদ্ধ করার জন্য তৈরি হয়ে আসেন।

তাদের একজন ইরানের মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। তিনি প্রতি বছরই নানা হুমকি-ধমকি, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মার্কিনি সংবাদ শিরোনাম হন। এবারও হয়েছেন। বলেছেন, নাইন-ইলেভেনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধন ছিল বলে তিনি মনে করেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামন্তবাদী বলয় ভাঙতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তার এই বক্তব্যের সময় ইউএস ডেলিগেশন টিম ওয়াক আউট করে ইউএন সেশন থেকে। তারা বলে, ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান নেহায়েত প্রলাপ বকছেন। ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমার পুজো করবে, আর গোটা বিশ্বকে আণবিক বোমা থেকে দূরে থাকার নসিহত শোনাবে_ সে দিন গত হয়েছে। এখন গোটা বিশ্বের মজলুম মানুষ যা বলবে, যুক্তরাষ্ট্রকে তা শুনতে হবে। তার এই ভাষণে হেসে আনন্দ পেয়েছেন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক।

এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন বাংলাদেশের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রশাসনে তার ভূমিকার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তিনি একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মযজ্ঞে লিপ্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া বিষয়েও কথা বলেছেন তার ভাষণে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তখন একটি মহল বিদেশে থেকেও যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফরকালে একটি মহল, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় সমাবেশ করেছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে_ এসব সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের জামায়াত-বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল বেশ কিছু পাকিস্তানি-আমেরিকানও। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে বাংলাদেশে না হয়, তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পাকিস্তানিদের একটি চক্র বিভিন্নভাবে সক্রিয় রয়েছে দীর্ঘদিন থেকেই। এখন তারা যুক্ত হয়েছে জামায়াত-বিএনপি সমর্থকদের কাফেলায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে একাত্তরের রাজাকার আলবদর আলসামসদের বিচারের বিষয়টিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার খুবই তৎপর এবং আন্তরিক বলে দাবি করছে।

এ নিয়ে জেলায় জেলায় সফরও চালাচ্ছে তদন্ত কমিশন। সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে তদন্ত কাজে ব্যাপক অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হচ্ছে। একই সময়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এর পরোক্ষ বিরোধিতা করেই চলেছে। যারা বলছে এই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নাকি সরকারের মনগড়া তৈরি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।

বিএনপি কোন সময়েই রাজাকারকে রাজাকার বলেনি। 'যুদ্ধাপরাধী' শব্দটি তাদের দলীয় অভিধানে নেই। বরং তারা প্রকারান্তরে এসব অপশক্তিকে সাহায্য-সহযোগিতা করে এবং তাদের সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য চিহ্নিত আলবদর কমান্ডারদের মন্ত্রী বানিয়েছে। তাদের চেতনায় যদি মহান মুক্তিযুদ্ধের নূ্যনতম প্রাণশক্তিটি থাকত তবে তারা এমন কাজটি করতে পারত না।

দেখা যাচ্ছে, আজও তারা সেই ডানপন্থি ক্ষুদ্র দলগুলোকে মোর্চায় এনে বর্তমান মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে হাস্যকর ইস্যুতে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে। সরকারের নৈতিক বিরোধিতা করা যে কোন বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু তাই বলে অহেতুক, যুক্তিহীনভাবে দাবি, চিহ্নিত অপরাধীদের বাঁচানোর যে তৎপরতা তারা দেখাচ্ছে তা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় তারা যাদের সঙ্গে ঐক্য করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে তাদের আসল পরিচয়ও বাংলাদেশের মানুষের অজানা নয়। আর দেশের জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যেভাবে কটাক্ষ করেছেন, তা স্পষ্টই প্রমাণ করে দিয়েছে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত মূল্যবোধকে গলাটিপে হত্যা করতে এখনো তৎপর।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে বলেছেন, বর্তমান সরকার গেল দুই বছরে দেশের জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের দুর্নাম ঘুচিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে। খুবই পরিতাপের কথা, এর আগের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি জঙ্গিবাদী তৎপরতাকে মদদ দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসক জে. পারভেজ মোশাররফ যেভাবে র‌্যাডিক্যাল ইসলামী গ্রুপগুলোকে মদদ দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিলেন; বেগম জিয়ার তরিকাও ছিল এক এবং অভিন্ন। কিন্তু জানুয়ারি ইলেভেন পাল্টে দেয় তার সেই মহাপরিকল্পনা। সব লজ্জার মাথা খেয়ে এখন সেই বেগম জিয়ার কিছু চামচারাই দেশে-বিদেশে বলে বেড়াচ্ছে, মহাজোট সরকার নাকি স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

সামরিক বুলডোজার চালিয়ে একের পর এক সংবিধান পরিবর্তন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রথা পাগলের প্রলাপ ইত্যাদি হীনকর্ম এবং জনস্বার্থবিরোধী পথ অবলম্বন করে যারা দলীয় স্বার্থে স্থায়ী ইজারা চেয়েছিল তারাই এখন 'মহান' বুলি আওড়াচ্ছে। রাষ্ট্রের মানুষকে সে সব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রী তার নিউইয়র্ক ভাষণে স্পষ্টত বলেছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা খুবই জরুরি কাজ। বিদেশি মিডিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তিত্বরাও বিষয়টিকে দেখছেন ইতিবাচকভাবে। যে যুক্তরাষ্ট্র একাত্তরে পাকিস্তানি হায়েনা গোষ্ঠীকে প্রত্যক্ষ সমর্থন করেছিল, হালে বদলেছে তাদের মনোভাবও।

এই কষ্টসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করতে তাই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যে বিষয়টি গভীরভাবে খেয়াল রাখা দরকার, তা হচ্ছে কোন স্বার্থান্বেষী মহল যাতে কোনভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে। তারা সরকারি মুখোশধারী হোক আর বিরোধীদলীয় পেশিবাজই হোক, তাদের কঠোর হস্তে দমনের জন্য সরকারের তৎপর এবং জাগ্রত থাকা দরকার। এই লেখাটি যখন লিখছি তখনই টিভিতে সংবাদে দেখলাম, বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে সরকার প্রকৃত দোষীদের বিচার করুক এটা তারা চান। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার বিএনপির মতে, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধী কারা? বিএনপি একটি তালিকা প্রকাশ করে, সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে সরকারকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে আগ্রহী নয় কেন? রাষ্ট্রীয় কল্যাণের স্বার্থে তারাও তো এ কাজটি করতে পারেন।

কোন যুদ্ধাপরাধীই কোন দল কিংবা গোষ্ঠীর মিত্র হতে পারে না। বিষয়টি প্রধান বিরোধী দল যত শীঘ্রই বুঝতে পারবে, ততই মঙ্গল হবে গণমানুষের। নিউইয়র্ক, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ ---------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ / ঢাকা / ১ অক্টোবর ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.