আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজীবন বাঙ্গালী বিদ্বেষী, ইতিহাসের নিন্দিত পাকিস্তানী সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের জন্মদিন আজ

আমি সত্য জানতে চাই ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খান, পাকিস্তানী সেনাপতি, সামরিক শাসক, রাজনীতিবিদ ও একজন রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৫৮ হতে১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক শাসক ও পরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর, পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা সংবিধান বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেশে সামরিক আইন জারি করে আর্মির প্রধান আইযুব খান কে প্রধান মন্ত্রী এবং জুলফিকার আলী ভুট্টকে সামরিক প্রধানের দ্বায়িত্ব প্রদান করেন। আইয়ুব খান ১৯০৮ সালের আজকের দিনে পশ্চিম পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হরিপুরের রিহানা গ্রামে এক পশতু গোত্রে জন্মগ্রহন করেন। আইযুবের পিতা মীর দাদ খান বৃটিশ ভারতীয সেনাবাহিনীর এক অশ্বারোহী রেজিমেন্টের রিসালদার মেজর ছিলেন।

আইয়ুব খান আলীগড মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও রাজকীয সেনা একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট এ সুযোগ পেয়ে যান এবং আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপডা শেষ না করেই স্যান্ডহার্স্টে রয়েলে মিলিটারি কলেজে শিক্ষালাভ করেন। ১৯২৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে যোগ দান করেন তিনি। কৃতিত্বের কারণে তাকে অফিসার হিসেবে ১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে নিয়োগ দেযা হয। এর পর ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে মেজর জেনারেল পদে তৎকালীন পুর্ব-পাকিস্তান ডিভিশনের জি. ও. সি.(জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালের ১৭ জানুযারি আইয়ুব খান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি বগুডার মোহাম্মদ আলির মন্ত্রীসভায প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দাযত্বি পালন করেন। ১৯৫৮ সালের কথা। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সংসদে বাঙ্গালী সংসদ সদস্য ও পুলিশের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। এতে ২জন মন্ত্রী এবং ডেপুটি স্পিকার মারাত্মকভাবে আহত হন। এ বছরের ৭ই অক্টোবর, পাকিস্তানের তৎকালীন লেভী রাষ্ট্রপ্রধান ইস্কান্দার মির্জা সারা দেশে সামরিক আইন জারি করে আর্মির প্রধান আইয়ুব খানকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন।

তিনি আইযুব খান কে প্রধান মন্ত্রী করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রী সভা গঠন করেন এবং জুলফিকার আলী ভুট্টকে সামরিক প্রধানের দ্বায়িত্ব প্রদান করেন। পূর্ব পাকিস্তানের মেরুদণ্ড ভাঙ্গতে এই দুজন ছিল ইস্কান্দার মির্জার পারফেক্ট চয়েস। সত্যিই ইস্কান্দার মির্জার পছন্দের প্রশংসা করতেই হয! (ডান থেকে (বসা) আইয়ুব খান ও জুলফিকার আলী ভুট্ট) কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি কি কখনো ভালো হয়? আইয়ুব খানও ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করলেন। সকল ক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নেবার তিন সপ্তাহ পরেই ইস্কান্দার মীর্জাকে সরে যেতে হয। ১৯৫৮ সালের ২৭শে অক্টোবর ইস্কান্দর মির্জাকে বিনা রক্তপাতে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন আইয়ুব খান।

আর নিজে বসলেন পাকিস্তানের ক্ষমতায়। আইয়ুব খান ২৭ অক্টোবর, ১৯৫৮ সালে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। (পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ইস্কান্দার মির্জা) ক্ষমতাহারাদের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার বাসনা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে ইস্কান্দার মির্জা এটুকু সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন যে তার ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আইয়ুবের হাতেই ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা লন্ডনের নির্বাসিত জীবনে প্রতিদিনই নাকি প্রত্যাশা করতেন, তাঁর আবার ডাক পড়বে, তিনি আবাও হয়তো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবেন।

একসময় তিনি এক মাসের জন্য নিজ দেশে ফিরতেও চেয়েছিলেন। অনুমতি পাননি। ১৯৬৯-এর ১৪ নভেম্বর মৃত্যুর পর মির্জার মরদেহ ইরানে নেওয়া হয়েছিল এবং সেখানেই তাঁর দাফন হয়েছে। পাকিস্তান তাঁর মরদেহও কবুল করেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর আইয়ুব খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ করেন এবং সোভিয়েত ইউনিযনবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করেন।

১৯৬০ সালে ভারতের সাথে সিন্ধুনদের পানিবন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয আইয়ুব সরকারের তত্ত্বাবধানে। পরবর্তীতে আইয়ুব চীনের সাথেও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করেন। আইয়ুব খান ক্ষমতায বসে স্বপ্রণীত একটি "গণতান্ত্রিক" পদ্ধতি চালু করেন এবং নিজের ক্ষমতা আরো পোক্ত করেন। ১৯৬৩ সালে ফাতিমা জিন্নাহর সাথে প্রতিদ্বদ্বিতা করে ৬১% ভোটে জিতে তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন প্রতি মাসের ১ তারিখে আইয়ুব খান রেডিওতে "মাস পহেলা বেতার ভাষন" দিতেন ইংরেজীতে।

শুরু করত "মাই ডিযার কান্ট্রি ম্যান" বলে। সেই ভাষন মুদ্রিত আকার সব স্কুল কলেজে পাঠানো হত। আইয়ুব খান ছিলো খুবই ধুরন্ধর প্রকৃতির মানুষ। সে এমন কিছু লোক দেখানো কাজ করতে লাগলো, যাতে মানুষ তাকে পছন্দ করতে শুরু করে। যেমন, দোকানদার-ব্যবসায়ীদের ধরে বেঁধে জোর করে কম দামে জিনিসপত্র বিক্রি করতে বাধ্য করা।

দুর্নীতি দমন করছে এমন কথা বলে লোক দেখানোর জন্য কিছু লোকজনকে ধরে বেঁধে অহেতুক মারপিট আর ধরপাকড় করা ইত্যাদি। তিনি বলে বেড়াতে লাগলেন দেশের দুরবস্থা দূর করতেই তিনি এসেছেন! দেশের অবস্থা ভালো হলেই আবার তিনি আর্মিতে ফিরে যাবেন। (স্ত্রীর সাথে আইয়ুব খান) এর কিছুদিন পরে আইয়ুব খান দেশে গণতন্ত্র প্রবর্তন করলো। মানে ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচন করা। সে বললো, পাকিস্তানের সব লোক তো আর ইউরোপ-আমেরিকার লোকেদের মতো শিক্ষিত নয়।

তাই ওদের গণতন্ত্রও আমাদের দেশে চলবে না। পাকিস্তানের জন্য দরকার নতুন ধরনের গণতন্ত্র। সে সেই গণতন্ত্রের নাম দিলো ব্যাসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গণতন্ত্র। এখানে পাকিস্তানের দুই অঞ্চল থেকে ৪০ হাজার করে মোট ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচিত হবে। ভোট দিতে পারবে কেবল এই ৮০ হাজার লোক।

বাকিরা কেউ-ই ভোট দিতে পারবে না। পাকিস্তানের ১৩ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ৮০ হাজার লোক নির্বাচনে ভোট দিলো। “মোহাম্মদ আইয়ুব খানের প্রতি কি আপনাদের বিশ্বাস আছে?” এই প্রশ্নের জবাবে ৯৫.৬% বাঙ্গালী উত্তর দেন, “হ্যাঁ”। এমনি করে এক আজব পদ্ধতিতে নির্বাচন করে দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বনে গেলেন আইয়ুব খান। ১৯৬০ সালের এই মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে বাঙ্গালীরা আইযূব খান কে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে।

৫ বছরের জন্য ক্ষমতা পায আইয়ুব খান। তিনি হয়ে গেলেন দেশের সকলের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। আমরা সেদিন তাকে বিশ্বাস করে ভুল করেছিলাম। এখনো সেই একই ভুল প্রতি ৫ বছর পর পর করি আমরা। (Two Field Marshals: Ayub Khan with Sir Claude Auchinleck) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই আইয়ুব খান আগের সংবিধান বাতিল করে এক নতুন সংবিধান প্রণয়ন করলো।

আর তার মাধ্যমে পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের সকল ক্ষমতা নিয়ে নিলো নিজের হাতে। আর রাজনীতিবিদরা যাতে কিছু করতে না পারে, তাই রাজধানী করাচি থেকে সরিয়ে নিলো ইসলামাবাদে। কারণ, ইসলামাবাদের পাশেই রাওয়ালপিণ্ডি, সামরিক বাহিনীর বা আর্মিদের ঘাঁটি। ওখানে বসে যে যা-ই করবে,তার খবর চলে যাবে আর্মির হেডকোয়ার্টারে। যখন দরকার পড়বে, তখনই চলে আসবে হাজার হাজার আর্মি।

এর প্রতিবাদে তখনকার বলিষ্ঠ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বেশ কিছুদিন জেলে ছিলেন। সংবিধান প্রণয়নের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সোহরাওয়ার্দী সবগুলো রাজনৈতিক দল নিয়ে একটা জোট গঠন করলেন, নাম দিলেন ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’। কিন্তু পরের বছরই তিনি মারা যান। ফলে এই জোটও আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে। এবার সংগঠিত হতে থাকে আওয়ামী লীগ।

আর আওয়ামী লীগকে তখন নেতৃত্ব দেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে আবারো প্রহসনের নির্বাচন হয়। প্রথমে আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষমেশ সবগুলো বিরোধী দল মিলে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলাফল হয় একই- আইয়ুব খান বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করে।

আসলে ওই ৮০ হাজার ভোটারদের তো আইয়ুব খান একরকম কিনেই রেখেছিলো। ওদের ভোটের নির্বাচনে আইয়ুব খান না জিতলে কে জিতবে! এ বছর অর্থাৎ ১৯৬৫ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ বাধে। এই সময আাইয়ুব খান নিজেকে ফিল্ড মার্শাল মর্যাদায উর্তীন করেন। ভারত-পাকিস্তান ভাগ করার সময় বৃটিশরা কিন্তু একটা বিশাল ঝামেলা পাকিয়ে গেছে। কাশ্মীরকে তারা না দিয়েছে পুরোপুরি পাকিস্তানকে, না দিয়েছে পুরোপুরি ভারতকে।

আসলে কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষই মুসলমান। কিন্তু রাজা আবার হিন্দু। আর তাই ওখানকার মানুষ পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে চাইলেও রাজা চায় ভারতের সঙ্গে থাকতে। আর এই নিয়ে তো দুই দেশের মধ্যে টানাটানি চলছিলো সেই ’৪৭ সাল থেকেই। আর তার ফলাফল হিসেবে ’৬৫ সালে এসে এই দুই দেশের মধ্যে এক বিশাল যুদ্ধই লেগে গেলো।

ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সীমানা অতিক্রম করে লাহোরের পথে এগোতে লাগলো। আর ওরা যেভাবে এগুচ্ছিলো, লাহোর ওরা ঠিকই দখল করে নিতো, যদি বাঙালি যোদ্ধারা অসম সাহসে ওদের রুখে না দিতো। টানা ১৭ দিন ধরে চললো ভয়ানক যুদ্ধ। অবশেষে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করলে যুদ্ধ থামলো। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি হলো যে, কাশ্মীরের সমস্যা নিয়ে আর যাই করা হোক, যুদ্ধ করা চলবে না।

এই চুক্তি করে কিন্তু আইয়ুব খান পড়লো গ্যাঁড়াকলে। পশ্চিম পাকিস্তানিরা তো তবু এতোদিন ওর পক্ষে ছিলো। এবার ওরাও গেলো ক্ষেপে। ভারতের সেনাবাহিনী তো ওদের অনেক ক্ষতি করেছিলো। তার কোনো প্রতিশোধ না নিয়ে প্রেসিডেন্ট কিনা যুদ্ধ না করার চুক্তি করে বসলো! পাক-ভারতের এই যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে বড়ো শিক্ষা হলো আমাদের, মানে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেখা গেলো, আমাদের সীমান্ত একেবারেই অরক্ষিত। ভারত যদি একবার শুধু চিন্তা করতো, পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকে পুরো পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নেবে, তাহলেই আমরা দখল হয়ে যেতাম! আর তাই এই চুক্তি হওয়াতে আমাদের দেশের মানুষ খুবই খুশি হলো। কিন্তু যুদ্ধের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের যতো ক্ষতি হলো, সব ক্ষতি পুষিয়ে দেবার দায়িত্ব পড়লো আবার আমাদেরই কাঁধে! অথচ সেই যুদ্ধে কিন্তু আমাদের কোনো লাভও হয়নি, ক্ষতিও হয়নি। শুধু শুধু আমাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ট্যাক্স নেয়া হলো। শুধু ট্যাক্সই নয়, এবার সত্যি সত্যিই বাঙালিদের উপর অত্যাচার শুরু হয়ে গেলো।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা আগে থেকেই আইয়ুব খানের ওপর বিরক্ত, এবার শান্তি চুক্তি করার কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরাও তার প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠলো। এমন সময়, ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে পাকিস্তানের সবগুলো রাজনৈতিক দলের একটা কনফারেন্স হলো। আর সেই কনফারেন্সেই শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি ঘোষণা করলেন। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বাযত্তশাসনের অধিকার সম্বলিত ৬ দফা পেশ করা হলে এই দাবির উত্থাপক দল আওযামীলীগের ওপর নিপীডনের পথ বেছে নেন। গ্রেফতার করেন শেখ মুজিব সহ আরও অনেককে।

পরে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিপেয়ে বাংলাদেশে এসে ১৮ মার্চ জনগণের উদ্দেশ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ্এ সময় পূর্ব পাকিস্তানে স্বাযত্বশাসনের তীব্র দাবি উত্থাপিত হয শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওযামী লীগের পক্ষ থেকে। অপরদিকে জুলফিকার আলি ভূট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে আইয়ুবের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবিভূর্ত হন। ১৯৬৬ এর মধ্যভাগ থেকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয এবং তা ১৯৬৮ তে প্রবল হয। এমন আন্দোলনের মুখে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তাঁর পতন ঘটে।

১৯৬৯ এর ২৪শে মার্চ তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইযাহিযা খান এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে অবসর নেন আইয়ুব খান। ১৯৬৯ এর গন আন্দোললের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শুরু হয় রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে। ১৯৭১ সালে পাক আর্মিরা অপারেশন সার্চলাইট, অপারেশন জ্যাকপট, অপারেশন পাইথন, অপারেশন চেঙ্গিসখান, অপারেশন রেড হ্যাট নামে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের জনগনের উপর অপারেশন চালায় যার মূল দায়িত্বে ছিল রিয়ার এড. শরীফ, ব্রিগে. জে. ইউলিয়াম হেরিসন, এয়ার কমোডর ইনামুল হক। বাংগালীদের এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানী বাহিনী পরাজিত হলে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান তাঁর ডায়েরিতে লিখলেন, ‘এইমাত্র শুনলাম, পূর্ব পাকিস্তানে নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেছেন।

ভারতীয় বাহিনী ঢাকার দিকে এগিয়ে আসছে। ঢাকাকে কাবু করতে মর্টার ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মুক্তিবাহিনীও সক্রিয়ভাবে ছুটে আসছে। ভারতীয়রা ঘোষণা করেছে, যেহেতু বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, আজই বাংলাদেশ সরকার শপথ নেবে। ’ পরদিন ১৭ ডিসেম্বর আইয়ুব খান তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘আমি বেশ বুঝতে পারছি, আমাদের বাহিনীর আত্মসমর্পণে ইসলামাবাদ ও পিন্ডিতে বসবাসরত বাঙালিরা আহ্লাদিত হয়ে মিষ্টি বিতরণ করছে। কিন্তু খুব শিগগির তারা মিষ্টির বিষাক্ত স্বাদটি টের পাবে।

... দেশকে এই অচলাবস্থায় ঠেলে দেওয়ার জন্য জনগণ ইয়াহিয়াকে ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়ী করে গালাগাল দিচ্ছে। এখন ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করায় তারা আমাকেও দোষ দিচ্ছে। আমি কী করতে পারতাম? ইয়াহিয়া ছিলেন সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ। আজীবন বাঙ্গালী বিদ্বেষী ইতিহাসের নিন্দিত এই সামরিক শাসক ১৯৭৪ সালের ১৯শে এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার মৃত্যুদিনে য়োল কোটি বাঙ্গালীর পক্ষ থেকে জানাই নিন্দা ও ঘৃনা।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।